দাঁত হলুদ হয়ে যাওয়া কিন্তু একটি বড় সমস্যা হয়ে দাঁড়ায় অনেকের ক্ষেত্রেই।দাঁত এর ঠিক যত্ন না নিলে কিন্তু দাঁতের বাকি সমস্যা এর সাথে সাথে দেখা দেয়।দাঁত হলুদ হয়ে গেলে দেখতে খুবই বিশ্রী লাগে।তাই আমি কিছু উপায় বলতে চলেছি যা আপনার দাঁত কে হলুদ হওয়ার হাত থেকে বাঁচাতে সাহায্য করবে।
১. সবচেয় জরুরি রোজ ব্রাশ করা
রোজ দুবেলা ব্রাশ করা অত্যন্ত জরুরী আমাদের দাঁতের স্বাস্থ্যের পক্ষে।কিছু খাওয়ার পরে ব্রাশ করতে হবে নাহলে সেই খাওয়ার কণা আমাদের দাঁতের মাঝে আটকে থাকে। আর দীর্ঘদিন সেইটি থাকা দাঁত হলুদ হওয়ার একটা অন্যতম কারণ।তাই অবশ্যই দুবেলা ব্রাশ করা জরুরী।৩ মাস পরে টুথব্রাশ পাল্টানো দরকার কারণ টুথব্রাশ পুরোনো হলে তার দাঁড়াগুলোতে ক্ষয় ধরে আর তার ফলে পরিষ্কার করার শক্তি কমে যায় ।
২. হাইড্রোজেন পেরোক্সিড আর জল
সমান পরিমান জল আর হাইড্রোজেন পেরোক্সিড মেশান আর ১ মিনিট মুখে কুলকুচু করুন।তারপর মুখ ধুয়ে ফেলুন। হাইড্রোজেন পেরোক্সিড একটি এন্টিব্যাক্টেরিয়াল এজেন্ট এবং এটি মুখ ও দাঁত পরিস্কার করার জন্য খুবই উপযোগী।এটি দাঁতকে সাদা করতে সাহায্য করে এবং তার সাথে দাঁতের হওয়া বিভিন্ন রোগকেও দূরে রাখে।
৩. হাইড্রোজেন পেরোক্সিড এবং বেকিং সোডা
অল্প পরিমানে বেকিং সোডা নিয়ে তার মধ্যে অল্প পরিমানে হাইড্রোজেন পেরোক্সিড মিশিয়ে একটা পেস্ট তৈরি করে নিন।তারপর সেটি দিয়ে ৩০ মিনিট ব্রাশ করুন। আপনার দাঁতকে সাদা করতে এটি খুবই উপকারী।বেকিং সোডা সাহায্য করে দাঁতকে পরিষ্কার করতে।কিন্তু খেয়াল রাখতে হবে যে বেকিং সোডা যেন বেশি পরিমাণে না দেওয়া হয়। বেশি পরিমাণের বেকিং সোডা কিন্তু আমাদের দাঁতের এনামেল এর ক্ষয় করতে পারে।তাই খেয়াল রাখতে হবে যে পেস্টটা যেন একেবারে মসৃণ হয়।
৪. বেকিং সোডা,নুন আর স্ট্রবেরী
বেকিং সোডা যেমন খুবই উপকারী দাঁতকে সাদা করার জন্য আবার স্ট্রবেরী তে ভিটামিন সি আছে যা প্লেক সারাতে সাহায্য করে।স্ট্রবেরীতে ম্যালইক অ্যাসিড থাকে যেইটা আমাদের দাঁতের হলুদ দাগ কে দূর করে। প্লেক আমাদের দাঁতকে হলুদ করে তোলে। স্ট্রবেরির মাধ্যমে প্লেক থেকে উদ্ধার পাওয়া যেতে পারে।নুন একধরণের অমসৃণতা যোগায় যা সাহায্য করে হলুদ দাঁতকে পরিষ্কার করে তোলার জন্য।
৫. নারকেল তেলের মাজন
নারকেল তেল খুবই উপকারী আমাদের দাঁতকে সাদা করে তোলার জন্য। নারকেল তেলে ৪৭% লাউরিক অ্যাসিড থাকে যা মুখের ভিতরের ব্যাক্টেরিয়া দূর করতে সাহায্য করে।আর প্লেক দূর করে যা দাঁত হলুদ করার একটি মোক্ষম কারণ।
৬. স্বয়ংক্রিয় কাঠকয়লার দাঁত মাজন
স্বয়ংক্রিয় কাঠকয়লা আমাদের দাঁতকে সাদা করে তোলে এবং প্লেকের থেকে রক্ষা করে।কাঠকয়লা আমাদের মুখের ভিতরের খাওয়ার কনা কে ধারণ করে এবং এইভাবে দাঁতেকে সাদা করে তোলে।সপ্তাহে ২-৩ বার স্বয়ংক্রিয় কাঠকয়লার দাঁত মাজা খুবই কার্যকরী।ব্রাশটাকে একটু অল্প জল দিয়ে তারপর তাতে সামান্য কাঠকয়লা দিয়ে মাজতে হবে ।তারপর সাধারণ ভাবে ব্রাশ করার পর মুখ ধুয়ে ফেলতে হবে ।এইভাবে মাজলেই কিছুদিনের মধ্যে দাঁত সাদা হয়ে উঠবে।
৭. কেওলীন মাটি
কেওলীন মাটিও কিন্তু দাঁত পরিষ্কার করতে উপকার করে।সমান পরিমানে কেওলীন মাটির সাথে বেকিং সোডা মিশিয়ে সেটি দিয়ে দাঁত মাজলে কিন্তু দাঁতের হলুদ ভাব অনেকটাই কমে যায়।
৮.ফলের খোসা দিয়ে দাঁত মজা
বিভিন্ন ফলের খোসা দিয়ে দাঁত মেজে দাঁত কে পরিষ্কার করে তোলা যেতে পারে।এটি দাঁতকে সাদা করে এবং হলদেটে ভাব কাটিয়ে তোলে।কমলা লেবুর খোসা কিংবা কলার খোসা দিয়ে মুখ ধোয়া একটি ভালো অভ্যাস।কমলা লেবুর খোসাতে কিছু উপকারী তেল থাকে যা আমাদের দাঁত কে সাদা করে তুলতে সাহায্য করে। ফলের খোসা দিয়ে দাঁত মাজার পরে কিন্তু অবশ্যই দাঁত ভালো করে ধুতে হবে। কারণ বেশি পরিমাণে ফলের খোসার অ্যাসিড মুখে থেকে গেলে সেইটা আমাদের দাঁতের এনামেলের ক্ষয় করে।তাই ফলের খোসা দিয়ে দাঁত মাজা হয়ে গেলে তা ধুয়ে ফেলতে হবে মুখ থেকে।
৯. প্রচুর পরিমানে ক্যালসিয়াম যুক্ত খাওয়ার খাওয়া
আমাদের দাঁতের এনামেলের ক্ষয় হলে নিচের ডেন্টিন বেরিয়ে আসে ।এই ডেন্টিন হল হলুদ রঙের।তাই এনামেলের ক্ষয় হলে আমাদের দাঁত হলুদ হয়ে ওঠে। তাই আমাদের উচিত প্রচুর পরিমানে ক্যালসিয়াম যুক্ত খাওয়ার খাওয়া।ক্যালসিয়াম জাতীয় খাওয়ার যেমন দুধ,ব্রকোলি,মাখন ইত্যাদি আমাদের এনামেল কে ক্ষয় এর থেকে রক্ষা করে এবং দাঁত কে সাদা করে তোলে।
১০. দাঁতের যত্ন
এইসব ছিল দাঁত হলুদ হয়ে গেলে কিভাবে সাদা করতে হয়।কিন্তু সবচেয়ে ভালো হতো যদি দাঁত হলুদ না হতো।কিছু উপায় আছে যা প্লেকেরর থেকে রক্ষা দেয় আমাদের।সেইসব উপায় হল বেশি পরিমাণে কোল্ডড্রিংক ,কফি এবং মিষ্টি জাতীয় খাওয়ার কম খাওয়া।প্রচুর পরিমানে মিষ্টি খেলে আমাদের মুখে সট্রেপ্টোককাস মিউটেন্স ব্যাক্টেরিয়া বৃদ্ধি করে যা প্লেকের একটি মোক্ষম কারণ।মিষ্টি খেলে তারপর ব্রাশ করা জরুরী।
মন্তব্য করুন