চুল মানুষের সৌন্দর্যের অন্যতম অংশ। মাথায় চুল না থাকলে বা চুলের ঝরে পরা বেড়ে গেলে তা ছেলে-মেয়ে উভয়েরই চিন্তার কারণ হয়ে দাঁড়ায়। এমনিতেই চুলের ঠিকমত যত্ন না নিলে চুল রুক্ষ ও শুষ্ক হয়ে যায়। তার উপর এখন শীতকাল। আবহাওয়া ঠান্ডা। এই সময়টায় চুলের যত্ন না নিলে চুল হয়ে পরে আরো প্রাণহীন। তাই শীতে চুলের দরকার বাড়তি যত্ন।
অনেকেই শীতে নিয়মিত স্নান করেন না, স্নান করলেও ভেজা চুল বেধে রাখেন, চুলে তেল দিতে চান না। এসবের প্রভাব পরে চুলের উপর। গোসল না করে চুল পরিষ্কার করা যায় না। আর ভেজা চুল বেধে রাখলে চুল ঠিকমত শুকায় না। যার ফলে চুলে দুর্গন্ধ হয়, খুশকি ও ফাঙ্গাস আক্রমণ করতে পারে খুব সহজেই। শীতে যেহেতু চুলের নানা সমস্যা দেখা দেয় তাই চুল ঠিক রাখতে এই সময়টায় দরকার চুলের এক্সট্রা কেয়ার। চলুন জেনে নেই কিভাবে করবেন চুলের এই এক্সট্রা কেয়ার।
১. নিয়মিত চুলে তেল দিনঃ
শীতকালে আর্দ্রতা কমে যাওয়ায় ত্বকের মতন আমাদের মাথার স্ক্যাল্পও ময়েশ্চার হারিয়ে হয়ে যায় শুষ্ক। এমন অবস্থায় স্ক্যাল্পে খুশকি ও ফাঙ্গাস আক্রমণ করতে পারে খুব সহজেই। তাই স্ক্যাল্প আর্দ্র রাখা উচিত, এমন কিছু ব্যবহার করা উচিত যা স্ক্যাল্পে আর্দ্রতা ধরে রাখতে সাহায্য করে। আর সেটিই হচ্ছে তেল। নারকেল তেল, অলিভ অয়েল, ক্যাস্টর অয়েল, বাদাম তেল যে কোন ধরনের তেল বা কয়েক ধরনের তেল একসাথে মিশিয়েও মাথায় লাগাতে পারেন। তবে লাগানোর আগে তেল অল্প গরম করে নিন। গরম তেল স্ক্যাল্পে ম্যাসাজ করলে মাথার ত্বকে রক্ত সঞ্চালন বাড়ে যা চুলের স্বাস্থ্যের জন্য খুবই উপকারী।
২. নিয়মিত স্নান করুনঃ
মানবদেহের জন্য স্নান খুবই গুরুত্বপূর্ণ। স্নান না করলে চুল আর্দ্রতা হারিয়ে খসখসে হয়ে যায়। চুলের কোমল ভাবটা আর থাকে না। এই শীতে স্ক্যাল্পের আর্দ্রতা কমে গেলে চুল পরে যাবার সমস্যা বেড়ে যায়। সামান্য কুসুম গরম জল দিয়ে স্নান করলে ত্বক ও স্ক্যাল্পে রক্ত সঞ্চালন বৃদ্ধি পায়। নিয়মিত স্নান করলে মাথার স্ক্যাল্প পরিষ্কার থাকে এবং চুলও ভালো থাকে।
৩. ভিটামিন ই ক্যাপসুল ম্যাসাজ করুনঃ
শীতে কম-বেশি সকলের চুলই নিষ্প্রাণ ও রুক্ষ হয়ে পরে। চুলের এই রুক্ষতা, শুষ্কতা ও প্রাণহীনতা দূর করতে ভিটামিন ই ক্যাপসুল স্ক্যাল্পে ম্যাসাজ করুন। রাতে ঘুমানোর ঘন্টাখানেক আগে পুরো স্ক্যাল্পে সময় নিয়ে ভিটামিন ই ক্যাপসুল ম্যাসাজ করুন। নিয়মিত ব্যবহার করলে চুল হয়ে উঠবে ঝলমলে ও স্বাস্থ্যোজ্জ্বল। তাছাড়া ভিটামিন ই ক্যাপসুল চুল পরা রোধ করতে, নতুন চুল গজাতে এবং চুলের মলিন ভাব দূর করতে খুবই উপকারী।
৪. ভেজা চুল বেধে রাখবেন নাঃ
শীতকালে অনেকেই এই কাজটি করেন, বিশেষ করে যাদের চুল একটু লম্বা ও ঘন। কাজটি হচ্ছে ভেজা চুল বেধে রাখা। শীতকালে এমনিতেই চুল শুকাতে একটু বেশিই সময় নেয়। তার উপর যদি ভেজা চুল বেধে রাখেন তাহলে চুলের সমস্যা বাড়বে বৈ কমবে না। ভেজা চুল বেধে রাখলে চুলে দুর্গন্ধ তো হয়ই সাথে ফাঙ্গাস, খুশকি, উঁকুন হওয়াও অস্বাভাবিক কিছু নয়। তাই যত যা-ই হোক, ভেজা চুল বেধে রাখা যাবে না। প্রয়োজনে ফ্যান ছেড়ে চুল শুকিয়ে নিন অথবা সুতি কাপড় বা তোয়ালে দিয়ে ভালো করে চুল মুছে ফেলুন কিংবা রোদে চুল শুকিয়ে নিন।
৫. অ্যালোভেরা জেল ব্যবহার করুনঃ
শীতের সময়টাতে চুল নেতিয়ে পরে, বিবর্ণ হয়ে যায়, কিছু কিছু ক্ষেত্রে চুলের আগা ফেটে লাল হয়ে পরে। এগুলো শীতকালে চুলের খুব কমন সমস্যা। এই সমস্যার মুক্তি মিলবে আপনার বাগান কিংবা বারান্দাতেই। প্রায় প্রত্যেকের ঘরেই অ্যালোভেরার গাছ আছে। এই অ্যালোভেরা আপনার চুলের এই সমস্যা দূর করবে। প্রথমেই একটা অ্যালোভেরা পাতা ছিড়ে নিয়ে ছেড়া অংশটা নিচের দিকে করে দশ-পনের মিনিট রাখুন। হলদে ধরনের ক্ষতিকর পদার্থ বের হয়ে যাবে। এবার অ্যালোভেরার শ্বাসটা আলাদা করে স্ক্যাল্প বাদে আগাসহ পুরো চুলে মেখে নিন। এক ঘন্টা পর গোসল করে ফেলুন। এটি চুলের হারানো কোমলতা ফিরিয়ে আনবে, আগা ফাটা রোধ করবে, চুলের রং ঠিক রাখবে।
আরো কিছু টিপসঃ
- চুল খুব টাইট করে বেধে রাখবেন না।
- চুলের আগা লাল হয়ে গেলে বা ভেঙ্গে যেতে থাকলে আগা কেটে ফেলুন।
- নিয়মিত চুল আঁচড়ান।
- হেয়ার ড্রায়ারের খুব গরম বাতাসে চুল শুকোবেন না।
- হেয়ার স্ট্রেটনার খুব বেশি হিট করে চুলে দেবেন না কারণ এতে চুল ভেঙ্গে যায়।
মন্তব্য করুন