পুরো বাড়িঘর পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন থাকলেও দরজা-জানালার কোণায় উৎপন্ন হওয়া ধুলো-ময়লা, ফাঙ্গাস থেকে হতে পারে কঠিন অসুখ। মোল্ড হচ্ছে ঠিক সেরকমই এক ধরণের ফাঙ্গাস, যা বাইরে থেকে দেখতে উলের বা পশমের মতো লাগে। উষ্ণ ও আর্দ্র বাতাসে কাঠের জানালার কোণায় ও খাঁজে ধীরে ধীরে এই ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্র ফাঙ্গাসের জন্ম ও বৃদ্ধি হয়। সময়মতো নিধন না করলে মোল্ডের একটি পুরু স্তর তৈরি হয়ে জানালার গরাদ ও গর্ত ঢেকে ফেলে। পরবর্তীতে এই ফাঙ্গাস ঘরের সকল সদস্যের স্বাস্থ্যে বিরূপ প্রভাব ফেলে। জানালার ধুলো-ময়লা ফাঙ্গাস পরিষ্কারের পদ্ধতি স্টেপ বাই স্টেপ।
মোল্ড পরিষ্কারের জন্য কি কি লাগবেঃ
জানালায় লেগে থাকা মোল্ড পরিষ্কারের জন্য আপনার প্রয়োজন –
- ফেস মাস্ক
- গ্লাভস
- আই প্রোটেক্টিভ গ্লাস
- খালি স্প্রে বোতল
- সাদা ভিনেগার
- বেকিং সোডা
- প্লাস্টিকের স্ক্রাবার
- পরিষ্কার ন্যাকড়া
- পেপার টাওয়েল
- প্লাস্টিকের বড় বড় কভার
মনে রাখবেন, ফাঙ্গাস বা মোল্ড চামড়ার সংস্পর্শে আসলে অসুস্থ হওয়ার সম্ভাবনা আছে। তাই খেয়াল রাখবেন জানালা থেকে মোল্ড পরিষ্কারের সময় মোল্ডের কণা যেন কোনভাবেই আসবাবপত্রের উপর বা শরীরের উপর না পড়ে। আসবাবপত্র প্লাস্টিকের কভার দিয়ে তো ঢাকবেনই, দরকার পড়লে গ্লাভস, গ্লাস, মাস্কের পাশাপাশি ফুল হাতার জামা, ফুল পায়জামা, এবং হ্যাট পড়ে নিবেন।
সঠিক দিনে পরিষ্কারের কাজ করুনঃ
যেহেতু মোল্ড নিজেই উষ্ণ ও স্যাঁতসেঁতে আবহাওয়ার কারণে তৈরি হয়, সেহেতু শুষ্ক আবহাওয়া ছাড়া এই জাতীয় ফাঙ্গাস নিধনের কাজ করা উচিত নয়। বৃষ্টির দিনে ফাঙ্গাস পরিষ্কারের কাজ সহজে করা মুশকিল হয়ে যাবে। বৃষ্টির পানির কারণে মোল্ড ঘরের মেঝে, ত্বক, বা আসবাবপত্রে লেগে থাকতে পারে যা আপনি চট করে বুঝতে পারবেন না। তাই ফাঙ্গাস রিমুভালের জন্য শুষ্ক একটি দিন বেছে নিন, যেদিন পর্যাপ্ত রোদ আছে কিন্তু আবহাওয়া খুব বেশি গরম না। আর কাজের সময়ে জানালা পুরোপুরি খোলা রাখবেন যাতে মোল্ড ঝাড়লে সব বাইরে চলে যায়।
জানালার ফাঙ্গাস পরিষ্কারের পদ্ধতি স্টেপ বাই স্টেপঃ
স্টেপ ১ – স্ক্রাবার দিয়ে শুরু করুনঃ
কাঠের জানালায় লেগে থাকা মোল্ড আগে প্লাস্টিকের স্ক্রাবার দিয়ে ঘষে তুলে ফেলবেন। এতে ফাঙ্গাসের উপর জমে থাকা বাড়তি ময়লা অনেকটাই আলগা হয়ে পড়বে। জানালার ফ্রেমের দিকটাও পরিষ্কার করতে ভুলবেন না। স্ক্রাবার দিয়ে বেশি জোরে ঘষবেন না, এতে কাঠ ছিদ্র হয়ে মোল্ডের কণা ভিতরে ঢুকে যেতে পারে। পরবর্তীতে ছিদ্রের ভিতরেই নতুন করে ফাঙ্গাস জন্ম নিতে পারে। যদি মোল্ডের কণা এবং ধুলা সহজে জানালার বাইরে যেতে না পারে, তাহলে ভ্যাকুয়াম ক্লিনার দিয়ে ঝরে পড়া ময়লা তুলে ফেলবেন। পরে ভ্যাকুয়ামের নজলটা সাবান পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলবেন।
স্টেপ ২ – ভিনেগার ব্যবহার করুনঃ
স্ক্রাবিং বা ড্রাই রিমুভালের পরে ভিনেগার দিয়ে ওয়েট ওয়াইপিং করতে হবে। স্প্রে বোতলে ভিনেগার ঢেলে জানালার খাঁজ ও গর্তগুলোতে স্প্রে করুন। চাইলে স্প্রে করার পরে ৫-৭ মিনিট অপেক্ষা করতে পারেন। তবে ভিনেগার যেন বেশি স্প্রে করা না হয় সেদিকে খেয়াল রাখবেন। ভিনেগারের কারণে লেগে থাকা মোল্ড বেশ অনেকটা আলগা হয়ে যাবে। তারপর শুকনো কাপড় দিয়ে ঘষে ঘষে সেগুলো তুলে ফেলবেন। এবারেও সতর্ক থাকবেন যাতে ঘষার জোরে কাঠ ছিদ্র হয়ে না যায়। যতক্ষণ পর্যন্ত মোল্ড আলগা হবে ততক্ষণ পর্যন্ত কাপড় দিয়ে ঘষবেন। প্রতিবার ঘষার পরে কাপড়টা ধুয়ে নিবেন।
স্টেপ ৩ – ডিপ ক্লিনিং করুনঃ
ফাঙ্গাস পরিষ্কারের সর্বশেষ ধাপ হচ্ছে ডিপ ক্লিনিং। এই পর্যায়ে ভিনেগার পুনরায় স্প্রে করতে হবে সেসব জায়গায় যেখানে প্রথম দুই ধাপের পরেও মোল্ডের অস্তিত্ব থাকবে। ভিনেগার স্প্রে করার পরে জানালার প্রতিটা কোণা, গর্ত, এবং খাঁজে অনেকটা বেকিং সোডা ছিটিয়ে দিন। ১০-১৫ মিনিট ওভাবে রেখে দেয়ার পরে পরিষ্কার কাপড় দিয়ে বেকিং সোডা ছিটানো জায়গাগুলো যতোটা সম্ভব ঘষবেন।
বেকিং সোডা জানালা থেকে ফাঙ্গাসের সর্বশেষ অস্তিত্ব তুলে ফেলবে। আর ভিনেগার জানালায় পুনরায় মোল্ডের জন্মকে প্রতিরোধ করবে। একবার ঘষা হলে কাপড়টা ভিজিয়ে আবার ঘষুন, যতক্ষণ না পর্যন্ত সোডা পুরোপুরি পরিষ্কার হচ্ছে ততক্ষণ পর্যন্ত কাপড় ভিজিয়ে ঘষতে থাকবেন। সবশেষে শুকনো কাপড় দিয়ে পুরো জানালা দুই-তিনবার মুছে নিন আর চেক করে দেখুন এখনো ফাঙ্গাস লেগে আছে কিনা।
ফাঙ্গাস রিমুভালের জন্য বাড়তি টিপসঃ
এরপর থেকে যখনই দেখবেন জানালার গরাদে বৃষ্টির পানি, শিশির, বা অন্য যেকোন ন্যাচারাল লিকুইড লেগে আছে, তখনই সাথে সাথে সেটা শুকনো কাপড় দিয়ে মুছে ফেলবেন। এতে আর্দ্রতা থেকে ফাঙ্গাস উৎপন্ন হওয়ার ঝুঁকি কমে যাবে।
বর্ষা বা শীতের দিনে জানালা পুরোপুরি খুলে রাখবেন যাতে বাতাসে জানালার গর্তে জমে থাকা বৃষ্টির পানি ও শিশির শুকিয়ে যায়। প্রতি দুই মাস অন্তর জানালার কোণা ও গর্তগুলো পরিষ্কার করলে ফাঙ্গাস জন্মাতে পারবে না।
সতর্কতাঃ
এমনিতে মোল্ড তেমন ঝুঁকিপূর্ণ না, সঠিক সময়ে সঠিকভাবে পরিষ্কার করলে এটা থেকে অসুস্থতার ঝুঁকি থাকে না বললেই চলে। কিন্তু ব্ল্যাক মোল্ডের ক্ষেত্রে এই নিশ্চয়তা থাকে না। পরিষ্কার দূরের কথা, ব্ল্যাক মোল্ডের সংস্পর্শে আসলেই স্কিন ইরিটেশন, সাইনোসাইটিস, শ্বাসকষ্ট দেখা দিতে পারে। কিন্তু কিভাবে বুঝবেন আপনার ঘরের জানালায় লেগে থাকা মোল্ডটি ব্ল্যাক মোল্ড নাকি নয়?
যখন প্রথম ধাপে বাড়তি ময়লা পরিষ্কার করবেন, তখন মোল্ডের প্যাটার্নটা লক্ষ্য করুন। ব্ল্যাক মোল্ড সবসময় বৃত্তাকারে উৎপন্ন হয়, কিন্তু যে জায়গায় জন্মেছে সে জায়গার ময়েশ্চার কমে গেলে তখন আকার পরিবর্তন করে। নতুন বা পুরনো মোল্ডের অস্তিত্ব আবিষ্কার করতে গিয়ে যদি সার্কুলার প্যাটার্ন দেখতে পান তাহলে ভুলেও সেটা নিজে পরিষ্কার করতে যাবেন না, প্রফেশনাল ক্লিনারের সাহায্য নিবেন।
মন্তব্য করুন