একথা তো ছোট থেকেই শুনে আসছেন যে মেয়েদের শত্রু মেয়েরা নিজেই। পুরুষতান্ত্রিক সমাজে একথা মানতে কষ্ট হলেও পেন্সিলভেনিয়ার এক বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষণায় এই তথ্যই প্রকাশিত হয়েছে।
মেয়েদের এরকম আচরণের কারণ প্রধানত সামাজিক কাঠামোর জেন্ডার বিল্ডিং এর ধারণা থেকেই তাদের মননে গেঁথে যায়। যার ফলস্বরূপ এই স্ব লিঙ্গবিদ্বেষ তৈরি হয়। আপাত সদ্ভাবের আড়ালে মেয়েরা কিন্তু নিজেদের মধ্যেই বিভেদ রাখে। চলুন দেখে নেয়া যাক অন্দর থেকে বাইরের জগতে মেয়েরা ঠিক কি কি কারণে এইরকম আচরণ করে থাকে।

সম্পর্কের টানাপোড়েন:
- বিশেষ কোনো আকর্ষক পুরুষকে কেন্দ্রকরে মেয়েদের মধ্যে দ্বন্দ্ব চলা আশ্চর্যের নয়।
- কারণ যথার্থ সঙ্গী পেতে এরকম করেই থাকেন নারীকুল। যেখানে লক্ষ্য এক কিন্তু প্রতিদ্বন্দ্বী একাধিক হয় সেখানে অপোনেন্টকে পরাজিত করেই সাফল্য আসে।
- হয়তো আপনার বেস্ট ফ্রেন্ডকেই আপনার ক্রাশ ভালোবাসেন। যেটা ভালোচোখে নেয়া সত্যি সহজ কাজ নয়, ফলে সম্পর্কের একটা টানাপোড়েনের জায়গা রয়েই যায়।

প্রতিদ্বন্দ্বী মনোভাব:
- ডারউইন এর সারভাইভাল অব দ্য ফিটেস্ট থিওরি থেকেই জানি যে প্রতিযোগিতা মনুষ্যধর্মের অন্যতম বৈশিষ্ট্য। তাই মেয়েদের মধ্যে সহজাত প্রতিযোগিতার মনোভাব বিরাজ করেই।
- অন্তরমনে দুজন সহপাঠীর মধ্যে যেমন পরীক্ষায় প্রথম হবার জন্য এক নিরপেক্ষ কম্পিটিশন দেখা দেয়। মেয়েদের মধ্যেও অনেকটা সমধর্মী চিন্তাভাবনা কাজ করে থাকে।
- কর্মক্ষেত্রে কর্পোরেট জগৎ হোক কি সাধারণ কোম্পানী সব জায়গাতেই বেস্ট ফিমেল স্পট দখলের লড়াই কিন্তু তুঙ্গে থাকে। অর্থাৎ নেতৃত্বদান বা কাজের সাফল্যের ক্ষেত্রেও মেয়েরা একে অপরকে ছাপিয়ে যেতে চায়।

জেলাসি:
- আচরণবাদী বিজ্ঞান অনুযায়ী মেয়েদের মধ্যে ঈর্ষা ও হিংসার মনোভাব পুরুষের তুলনায় খানিক বেশি হয়ে থাকে এবং সেটা তাদের নিত্যদিন হ্যাবিটে প্রতিফলিত হয়।
- জেলাসির অনুভূতি থেকেই তাদের মধ্যে এক অসন্তুষ্টি তাদের তাড়া করে বেড়ায়। তাদের অন্তর্নিহিত অতৃপ্তি এর মূলে রয়েছে। এই মানসিকতা অন্য মেয়ের থেকে বিউটি কমপ্লেক্স, চেহারার ধরণ বা মেকআপ লুক ইত্যাদি সব নিয়েই হতে পারে।
- হয়তো রেস্টুরেন্টে গেলেন এবং দেখলেন সামনের টেবিলে বসা মেয়েটির স্টাইল স্টেটমেন্ট খুবই ঈর্ষণীয়। নিজেকে তার জায়গায় কল্পনা করে কিন্তু সেই মুহূর্তে একটা হীনমন্যতা সৃষ্টি হতে পারে। তাই এটি সামাজিক প্রতিষ্ঠা, শিক্ষাগত যোগ্যতা, সম্পদ সব নিয়েই হয়।
ইগোর লড়াই:
- সংসার জীবনে বৌমা শাশুড়ি হোক কি কলেজের দুই বান্ধবী ঘটনাচক্রে প্রত্যাশা বা অ্যাটিচিউডগত কারণে উভয়ে এক তুলনামূলক পরিস্থিতির সন্মুখীন হয়। সেখানে ব্যক্তিগত স্পেস এর চাহিদা পূরণ না হলে তখন ইগো প্রবলেম দেখা দেয়।
- আত্ম অহং ও স্বাভিমান এই দুই এর মিশেলে মেয়েদের নিজেদের মধ্যে একটা পরিচিতি বা রেকগনিশন পাবার ইচ্ছে থাকে ও জীবনযাত্রাকে উন্নত করার জন্যই মেয়েরা ইগো কে ঘৃণা করে থাকে।
- অনেকসময় আবার ভুল করলে তা স্বীকার করে ক্ষমা না চাওয়ার সৎ সাহস এর অভাব এর জন্যও ইগোর ভুলবোঝাবুঝি তৈরি হয়।
নিরাপত্তাহীনতা:
- শিক্ষা বা মানসিকতার ত্রুটি থেকেই একটা ইনসিকিউরিটি মেয়েদের মধ্যে একে অন্যকে নিয়ে কাজ করে। নিজেদের মধ্যে আত্মবিশ্বাস এর অভাব থেকেই একে অপরের মধ্যে দূরত্ব অব্দি তৈরি হচ্ছে।
- তাদের দক্ষতা ও অনুভূতি ও মতামতকে নিজের পরশ্রীকাতরতার বাইরে কদর দিতে পারার অক্ষমতাই মনোমালিন্য ও নিরাপত্তাহীনতা ডেকে আনে।
- অপরের মতকে মানতে না পারলেও তার প্রতি সহনশীল মনোভাব দেখানোর মানসিকতা রাখুন।
- নিরাপত্তাহীনতার জন্যই পিএনপিসি বা গসিপ করে কুৎসা ছড়ানোর লক্ষণ দেখা যায়।
দূরে নয় আর, হাতে রাখি হাত!
- উপরের কারণ ছাড়াও চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য, ব্যক্তিগত টেস্ট ও আর্থসামাজিক নানা কারণে মেয়েরা একে অপরের সাথে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে চলেছে।
- কিন্তু বর্তমান সমাজে যেভাবে মেয়েদের ওপর হিংসাত্মক ও নির্যাতনমূলক কার্যকলাপ বেড়ে চলেছে সেসব মাথায় রেখে তাদের নিজেদের মধ্যে দূরত্ব কমিয়ে একজোট হয়ে উইমেন এমপাওয়ারমেন্ট এর মাধ্যমে নিজেদের জাগরণ ও ঐক্য গড়ে তুলে একে অপরের সহমর্মী হওয়া উচিত।
- যা ইতিমধ্যে হওয়া শুরু হয়ে গিয়েছে। মেয়েদের এই হিংসা আর নেই বললে চলে। কারন সমাজের বানানো এই দূরত্বকে মেয়েরাই ঐক্যবদ্ধ হয়ে দূর করতে এগিয়ে আসছে।
মন্তব্য করুন