প্রবাদে বলে চকচক করলেই সোনা হয় না। কিন্তু বর্তমানে বিশ্বজুড়ে করোনার ত্রাস ও লকডাউনের জোড়াফলায় সোনার দাম চকচক তো করছেই এমনকি আকাশ ও ছুঁয়ে ফেলেছে। কেন? তা জানার চেষ্টা করি এবং আর পাঁচজনের মতো আপনাদের মনে উঁকি দেওয়া প্রশ্নের উত্তর খোঁজার প্রয়াস করি।
সোনার সাথে বাঙালির আত্মিক যোগ:
করোনা ভাইরাসের প্রকোপে মার্চ থেকেই সামাজিক অনুষ্ঠানে তালা ঝুলেছে। বাঙালি বিয়েবাড়িতে সোনা ছাড়া কোনো আচারই যে সম্পন্ন হয়না তা বলাই বাহুল্য। সোনা বিলাসিতার চাইতেও উৎসব ও অনুষ্ঠানে অবিচ্ছেদ্য আটপৌরে সংস্কৃতির ঐতিহ্যকে বহন করে।
বাঙালির কাছে সোনার কদর যতটা না বৈভবের কারণে তার চেয়ে ঢের বেশি ভরসার গচ্ছিত এসেট হিসেবে, দুঃসময়ের হাতটান রূপে। এই সোনার দাম ঊর্ধ্বমুখী হতে চিন্তার ভাঁজ যে মধ্যবিত্ত বাঙালিকে হয়রান করেছে সেটা বোঝাই যায়।
মহার্ঘ্য সোনা তবু লাগছে ধাঁধা:
২০২০সালে জুন মাসের কোয়ার্টারে ভারতে মাত্র ১৩টন সোনা আমদানি হয়েছে। চাহিদার তুলনায় যা নগন্য। আগের থেকে সোনার চাহিদা কমেছে ৯৬%। লকডাউনের জেরে পরিবহন ব্যবস্থার বেহাল দশার জন্যেই এই বিপর্যয় ঘটেছে। রুপোর দামেও লেগেছে আগুন সাথে। প্রতি কেজি দর ৭২ হাজার ছড়িয়ে গিয়েছে।
অর্থনীতির মন্দা চলার কারণে বহু কর্পোরেট ও বহুজাতিক সংস্থায় কাজ করা মানুষ এই সময়ে কাজ হারাচ্ছেন। টান পড়ছে রুজিরোজগারে আর সামাজিক অনুষ্ঠান ও বন্ধ ফলে সোনা কেনা এখন স্বপ্নই বলা চলে সবার।
অর্থের যোগান না থাকায় চাহিদা তলানিতে ঠেকার কথা হিসেব মতো। সাধ ও সাধ্যের মধ্যে এটাই ব্যালেন্স রাখার নিয়ম। কিন্তু আশ্চর্যের কথা করোনার সংক্রমণের সাথে সমানে পাল্লা দিচ্ছে কি করে সোনার দর? এই ধাঁধা কিন্তু আমআদমির মাথায় কিছুতেই এঁটে উঠছে না। এর সমাধান পেতে নীচের অংশ অবশ্যই পড়ে দেখুন!
সোনার দাম নাগাল পেরোনোর কারণ:
- খুচরো বাজারে সোনা দুর্মূল্য হওয়া শুরু হতেই বিশ্ববাজার মাত হতে সময় লাগেনি খুব একটা। ২৫% এর ও বেশি দাম বৃদ্ধি করে ২৪ক্যারেট ১০গ্রাম সোনার দাম প্রায় ৫৬ হাজার টাকা ও ২২ক্যারেট গহনা সোনার ১০গ্রাম এর দাম বর্তমানে ঠেকেছে ৫২,২৬০টাকায়।
- এই দর একদশকের সর্বোচ্চ রেকর্ড ভেঙে খানখান করে রেখে দিয়েছে। বিশ্ববাজারে ভরি প্রতি বৃদ্ধির পরিমাণ প্রায় ১৮৫০ ডলার।
- করোনার থাবায় আর্থিক মন্দা বিশ্ব-অর্থনীতির মেরুদন্ড ভেঙে রেখে দিয়েছে। মার্চ থেকেই দেশজুড়ে লকডাউনের জেরে বিকিকিনির ভাটা চলায় ইকুইটি মার্কেট ক্র্যাশ করে যায়। তরতর করে কমতে থাকে সোনার দর। কিন্তু সোনার উপরে একটা দেশের কারেন্সির মূল্য ও মুদ্রাস্ফীতি নির্ভর করে তাই বাজারে সমতা ফেরাতে সোনার দর বাড়ানোর পরিকল্পনা নেওয়া হয়।
- যেসব লগ্নিকারীরা শেয়ার ও বন্ডে বিনিয়োগ করতেন তারা মহামারীর কারণে সেই ঝুঁকির রাস্তায় হাঁটতে চাইছেন না মোটেই। তারা সোনাকেই বিকল্প হিসেবে বেছে নিচ্ছেন। সোনা শেয়ার বাজারের মতো অনিশ্চিত নয় আর সময় এর পর খাঁটি রিটার্ন দেবার প্রতিশ্রুতি ও প্রদান করে। লগ্নিকারীরা সোনা স্টক করার ফলে এর দাম বেড়ে যাচ্ছে।
- ডলার এর দাম প্রতিদিনই পতন হচ্ছে। বিশেষজ্ঞদের মতে, বিশ্ব-অর্থনীতির অবস্থাকে সঠিক অবস্থানে দাঁড় করানোর জন্য সোনার দাম বাড়ানোকে এক প্রকার ইতিবাচক উদ্দীপক হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছে।
- মার্কিন-চীন শুল্ক যুদ্ধ, আমেরিকা-ইরান কূটনৈতিক সম্পর্কে অবনতির আঁচ সোনার উপর পড়েছে ভালোমতোই। দুনিয়া জুড়েই বিদেশি মুদ্রা থেকে বিমুখ হয়ে মানুষ টাকা ঢালছেন ও মজুত করছেন সোনায়। ফলে আমদানির নেট অংশ কমে যাচ্ছে আর অগ্নিমূল্য হচ্ছে সোনা।
সোনায় বিনিয়োগ কতটা বুদ্ধিমানের কাজ?
- সমীক্ষায় দেখা হচ্ছে বিশ্বে যেসব দেশে সোনা গচ্ছিত করে তাদের মধ্যে ভারত প্রথম সারিতেই রয়েছে। ভারতে ২/৩ সম্পত্তি-সঞ্চয় সোনাতে ইনভেস্ট হয়।
- করোনার কারণে অর্থনীতির বাজে পরিস্থিতিতে ব্যাঙ্কে সুদের হার আরো কমবে বলা যায় সাথে শেয়ারবাজারে বিনিয়োগ ও হবে ঝুঁকিপূর্ণ। এই অবস্থায় নিরাপদে থেকে যারা মোটামুটি ভদ্রস্ত রিটার্ন পেতে চান তাদের জন্য সোনাতে বিনিয়োগ বেস্ট হবে।
- গোল্ড এক্সচেঞ্জ ট্রেডেড ফান্ডে বিনিয়োগ করলে দ্বিগুন এর বেশি লাভের মুখ দেখতে পারেন আপনি। টাকা খাটানোর ঝক্কির পরিবর্তে এটা সুরক্ষিত উপায়।
- গোল্ড এনালিস্টদের মতে, আগামী ১৮-২৪ মাসে ১০ গ্রাম সোনার দাম ৬৫হাজারের গন্ডি অতিক্রম করে যাবে। আর এমনিতেও সোনার দাম প্রতি বছর ১.৬% হারে বেড়ে যায় তবে বুঝতেই পারছেন আপনার সোনায় সোহাগা হবার ঠিকানা কোনটা!
মন্তব্য করুন