রোগা হবার ডায়েট মানেই ভাত বাদ দিতে হবে এই ধারণা অনেকেরই। তার বদলে চলতে থাকে ওটস, ব্রাউন ব্রেড, আটার রুটি ইত্যাদি। কিন্তু ছোটবেলা থেকে মাছে ভাতে বড় হয়ে হঠাৎ করে কি ভাত ছাড়া যায়? তাহলে উপায় কি? উপায় হল রাইস ডায়েট। কি সেটা? দেখুন।
কি এই রাইস ডায়েট?
১৯৩৯ সালে মেডিকেল সার্চার ওয়াল্টার কেপনার এই রাইস ডায়েট পদ্ধতিটি প্রথম সামনে আনেন। এটি হল লো ক্যালোরি, লো সোডিয়াম ডায়েট। এক্ষেত্রে মূলত শর্করার ওপর জোর দেওয়া হয়। ভাতের পাশাপাশি ফল, সবজী, শস্যদানা রাখা হয়। নুন, ক্যালোরি, চর্বি জাতীয় খাবার কম রাখা হয়। এছাড়া দুগ্ধ জাতীয় এবং সোডিয়াম কম থাকে যেসব খাবারে সেইসব খাবার রাখা হয়।
ড. কেপনার ওবেসিটি, হাইপারটেনশন, হার্টের অসুখ ইত্যাদি থেকে মানুষকে দূরে রাখতে এই ডায়েটের প্ল্যান করেছিলেন। এক্ষেত্রে মোটামুটি ডায়েটকে এমনভাবে সাজানো হয় যাতে তাতে ৮০০ ক্যালোরির বেশি না থাকে। এক্ষেত্রে একজন পূর্ণ বয়স্কের জন্য প্রতিদিন ১৬০০ ক্যালোরি স্বাভাবিক বলা হয়। কিন্তু রোগা হবার প্ল্যান থাকলে সেক্ষেত্রে ক্যালোরি কমিয়ে ১০০০এ আনলে উপকার পাওয়া যায়।
খাদ্য তালিকায় কি কি থাকে
সাধারণত কি কি খাওয়া যায় আগেই বলেছি। ভাত, ফল, শাকসবজি, হোল গ্রেন জাতীয় খাবার, লো ফ্যাট প্রোটিন জাতীয় খাবার ইত্যাদি। দুগ্ধ জাতীয় খাবার খেলেও সেটা লো ফ্যাট যুক্ত হতে হবে।
কি কি চলে না
অবশ্যই বাদ দিতে হবে জাঙ্ক ফুড, সোডা জাতীয় পানীয়, বাজার চলতি ফলের রস। গোটা একটা ফল চিবিয়ে খাওয়াই ভালো। এছাড়াও মিল্ক চকোলেট, ভাজা খাবার, ট্রান্স ফ্যাট যুক্ত খাবার, অতি মিষ্টি খাবার বিশেষত চিনি যুক্ত, ফ্রজেন ফুড, রিফাইন্ড খাবার যেমন রিফাইন্ড তেল, চিনি ইত্যাদি।
হোয়াইট নাকি ব্রাউন রাইস?
একটা প্রশ্ন নিশ্চয়ই মাথায় ঘুরছে হোয়াইট রাইস নাকি ব্রাউন রাইস কোনটা ভালো। এক্ষেত্রে বলব যদি আপনি সাদা চালের ভাত পছন্দ করেন বা এতদিন এটা খেয়ে থাকলে এটাই খেতে পারেন। হঠাৎ করে সাদা ভাত থেকে ব্রাউন রাইসে আসা মুশকিল। কিন্তু খেতে পারলে ডায়েটে যোগ করতে পারেন। অবশ্যই ব্রাউন রাইস বেশি উপকারী। এতে ডায়েটারি ফাইবার বেশি থাকে। এছাড়াও পুষ্টিগুণ বেশি থাকে। সাদা চালে কিন্তু সমস্যা কিছু হবে না তাই খেতেই পারেন।
কেমন হতে পারে রোজের মেনু
রাইস ডায়েটের ক্ষেত্রে পুরোটাই ভাত, সবজী, ফল গ্রিলড বা বেকড খাবার এসবের ওপর হয়। রোজের মেনুর ক্ষেত্রে মাথায় রাখতে হবে ক্যালোরির পরিমাণ। এই ডায়েটের ক্ষেত্রে সাধারণত ক্যালোরির পরিমাণ রাখা হয় ৮০০। আপনাকে সেইমত হিসাব করে খাবার নির্বাচন করতে হবে। কোন খাবার থেকে কত ক্যালোরি হচ্ছে এবং পরিমাণ। তাই এক্ষেত্রে অবশ্যই একজন ডায়েটিশিয়ানের পরামর্শ নিন। উনি আপনাকে একটা প্রতিদিনের সঠিক চার্ট ঠিক করে দেবেন। বুঝিয়ে দেবেন কীভাবে খাবেন কতটা খাবেন।
স্পেশালি কাদের জন্য ভালো এই ডায়েট?
মোটামুটি সবাই মেনে চলতে পারেন কিন্তু তার মধ্যে যদি –
- হাই ব্লাড প্রেশারের সমস্যা থাকে।
- ডায়বেটিসের সমস্যা থাকলে।
- হার্টের সমস্যা থাকলে।
- হাই কোলেস্টেরলের সমস্যা থাকলে।
- হাইপারটেনশনের সমস্যা থাকলে।
- ওবেসিটি বা অতিরিক্ত মোটা হয়ে যাবার প্রবণতা থাকলে।
রাইস ডায়েটের ভালো দিক
- অতিরিক্ত মোটা হয়ে যাবার সমস্যা থাকলে এবং কন্ট্রোল করতে না পারলে এই ডায়েট ভালো।
- এটা শরীরের কোলেস্টেরলের পরিমাণ কমায়।
- হার্টের সমস্যার ঝুঁকি থেকে দূরে রাখে।
- ডায়বেটিস নিয়ন্ত্রনে রাখে।
- উচ্চ রক্তচাপের ঝুঁকি কমায়।
রাইস ডায়েটের খারাপ দিক
এই ডায়েট খাবার থেকে পর্যাপ্ত পুষ্টি অনেক সময় নাও পাওয়া যেতে পারে। কারণ এতে প্রোটিনের পরিমাণ কম থাকে। ক্যালোরিও অনেকটাই নিয়ন্ত্রন করা হয়। তাই অনেক সময় খেয়েও মন ভরবে না। অন্যদিকে প্রোটিনের পরিমাণ কম থাকায় মাংসপেশিতে এর প্রভাব পড়তে পারে। দুর্বল লাগতে পারে।
তাহলে জানলেন তো রাইস ডায়েট কি এবং এর উপকারিতা। কিন্তু এটির জন্য অবশ্যই আগে ডাক্তার বা পুষ্টিবিদের পরামর্শ নিয়ে তবেই করবেন। এই ডায়েট মেনে চলার আগে অবশ্যই জেনে নেবেন আপনার শরীরের জন্য এটি উপযুক্ত কিনা।
মন্তব্য করুন