সুস্বাস্থ্যের প্রধান শর্তই হলো সঠিক খাদ্যাভ্যাস। বর্তমানে গ্রামের হাট থেকে শহরের মল সবেতেই ক্ষতিকর রাসায়নিক, ফল, সবজি সবকিছুতেই প্রয়োগ করা হচ্ছে। যা শরীরের পক্ষে কোনো ভাবেই নিরাপদ নয়। এরফলে নিজেদের অজ্ঞাতসারেই শরীরে বাসা বাঁধছে মারণ রোগ ব্যাধি।
অর্গানিক ফুড বলতে আসলে কি বোঝায়?
অর্গানিক ফুড হলো সেই খাদ্য যা কোনোরকম রাসায়নিক সার বা কীটনাশক ছাড়া সম্পূর্ণ প্রাকৃতিক উপায়ে উৎপাদিত হয়। এটির রক্ষণাবেক্ষণে কোন কৃত্রিমতা থাকে না। পাশাপাশি পরিবেশ-বান্ধব এই চাষে ফসল পরিবর্তন, জৈব পেস্ট ইত্যাদির উপর নজর দেওয়া হয়। কৃষি-বাস্তুসংস্থান গত নীতি অনুসারে এই উৎপাদন আমাদের জীববৈচিত্র ও সুন্দর ভবিষ্যৎ স্বাস্থ্য সুনিশ্চিত করে।
কেন খাবেন অর্গানিক ফুড?
১. ভেজাল খাবার একেবারে এড়িয়ে যেতে
- দীর্ঘায়ু লাভে অর্গানিক ফুডের বিকল্প বোধয় খুঁজে পাওয়া কঠিন ব্যাপার। তবে প্রক্রিয়াকরণ জাত বা প্যাকেটজাত খাদ্যে কি পরিমানে ভেজাল মেশানো হচ্ছে জানলে হতবাক হতে হয়।
- ফলমূল পাকাতে ব্যবহার করা হচ্ছে ইথিলীন বা কার্বাইড। মাছ, মাংস, দুধ, শাকসবজি, ফলমূল এগুলো বেশি সময় অব্দি টাটকা রাখার জন্য স্প্রে করা হচ্ছে ফরমালিন।
- বিস্কুট, সেমাই, নুডলস, পাউরুটির রং উজ্জ্বল করার জন্য তাতে দেয়া হচ্ছে লেদার এর রং।
- মুড়িতে মেশানো হচ্ছে ক্ষতিকারক ইউরিয়া। ভেজাল খাবার যা বুঝতে পারবেন না এমনিতে।
- আটা ময়দা বা চিনিতে অবাধে চলছে বিষাক্ত চক পাউডার এর ব্যবহার।চালে মেশানো হয় প্লাস্টিক।
- মুরগি ও মাছের খাদ্যে ক্রোমিয়াম ও বিষাক্ত রাসায়নিক বর্জ্য ব্যবহৃত হচ্ছে।
- তরমুজ বা লিচু বা স্ট্রবেরি সবেইতেই থাকছে ইনজেকশন এর ছোঁয়া।
- সফট ড্রিংকসে ব্যবহার করা হচ্ছে ক্যাফেইন এবং সিলদেনাফিল্ড সাইট্রেট।
- এছাড়াও চকলেটে নিম্নমানের রং ও বিষাক্ত মোম এর পালিশ দিয়ে তার গুণমান নষ্ট করা হচ্ছে।
- সরষে থেকে সয়াবিন তেল সবেতেই গন্ধ ও রং বজায় রাখতে সায়ানাইড এর সাথে পাম তেল,পশুর চর্বি বা স্টার্চ মেশানো চলছে।
২. নানা রকমের রোগ থেকে মুক্ত থাকতে
- পশু ও মাছের খাদ্যে উচ্চমাত্রার এন্টিবায়োটিক দীর্ঘদিন ধরে ব্যবহার এর ফলে মানুষের শরীরে তা দীর্ঘস্থায়ী পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া তৈরি করছে। যার ফল হচ্ছে ভয়াবহ।
- রাসায়নিক এর দীর্ঘদিন ধরে প্রভাব এর দরুন হৃদযন্ত্র, কিডনির কার্যকলাপ, স্নায়ু চরম ভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়।
- ফরমালিন, কার্বাইড বা আজিনামোটোর মতো ক্ষতিকর রাসায়নিক শরীরে প্রবেশ করার ফলে পেটব্যথা, শুকনো কাশি, ডায়রিয়া, আলসার ও ফুসফুস এর বহুবিধ রোগ সৃষ্টি হচ্ছে।
- হাইড্রোজেন পারক্সিডের দ্বারা নানা প্রকার চর্মরোগ এমনকি শ্বাসনালী, কিডনি, পাকস্থলীতে ডেকে আনছে প্রাণঘাতী ক্যানসার।
- প্লেটলেট এর সংখ্যা হ্রাস পাচ্ছে অচিরেই ফলে ছড়াচ্ছে অ্যানিমিয়া। শিশু বয়স্ক থেকে শুরু করে গর্ভবতী মহিলা ঝুঁকি থাকছে সবারই। পেটে থাকা সন্তান জন্ম নিতে পারে প্রতিবন্ধকতা ও অটিজম এর মত মারাত্মক রোগ নিয়ে।
- অ্যাসিটিক এসিড ও ফরমালডিহাইড শরীরের কোষে কোষে অক্সিজেন সঞ্চালন এ বাধা দেয় ফলে স্ট্রোক, মাথাঘোরা বা ব্লাড প্রেসার এর সম্ভাবনাকে বহুগুণে বাড়িয়ে দেয়।
- স্মৃতিভ্রংশ বা দুরারোগ্য মানসিক ব্যাধি আসাও অসম্ভব কিছু নয়।
কিভাবে বুঝবেন কোন খাবার অর্গানিক?
- সম্প্রতি সিকিম রাজ্যটিকে ইউনাইটেড নেসন ১০০% অর্গানিক স্টেট হিসেবে ঘোষণা করায় অর্গানিক ফুড নিয়ে হইচই পড়ে গেছে।
- কিন্তু কিভাবে বুঝবেন কোন খাবার অর্গানিক? ন্যাশনাল প্রোগ্রাম ফর অর্গানিক প্রোডাকশন নামের একটি সংস্থা রয়েছে যাদের অধীনে রয়েছে বহু সার্টিফাইং এজেন্সি এমনকি ফুড সেফটি এবং স্ট্যান্ডার্ড অথরিটি অফ ইন্ডিয়া। ফার্ম গুলোকে এদের কাছ থেকেই সার্টিফিকেট আদায় করতে হয়।
- গ্রীন পার্ক অর্গানাইজেশন এর এক কর্তার কথায় ক্রেতাদের অবশ্যই কেনার সময় ১০০% অর্গানিক লেবেল দেখেই কেনা উচিত।
- এবার যেহেতু সার বা পেস্টিসাইড না দিয়ে এইসব খাবার উৎপন্ন হচ্ছে তাই এগুলোর দাম অবশ্যই বাজারচলতি জিনিসের থেকে বেশি হবে এবং এগুলিতে ব্যবহৃত হয় রেন ওয়াটার হার্ভেস্টিং।
অর্গানিক খাবারের গুন
- অর্গানিক ফুড বিশ্বব্যাপী চর্চার কেন্দ্রে। ‘অর্গানিক ফুড এন্ড ফার্মিং, মিথ এন্ড রিয়ালিটি’ টপিকটির ওপর বিশ্বের ৩৬টি প্রতিষ্ঠান গবেষণা করে দেখেছে যে এই প্রকার খাদ্যে প্রচুর পরিমানে এন্টি অক্সিডেন্ট থাকে যা শরীরের পক্ষে খুব উপযোগী।
- মার্কিন যুক্তরাজ্যের হাউজ অব লর্ডস এর বিজ্ঞান বিষয়ক কমিটির রিপোর্টে বলা হয়েছে যে পশু ও মাছের খাবারে যে এন্টি বায়োটিক ব্যবহার করা হয় তাতে মানুষের শরীরে নানা মাইক্রোবায়োলজিক্যাল রোগ বাসা বাঁধছে।
- তাই অর্গানিক ফুড ব্যবহার করুন যা পুষ্টিগুণে সমৃদ্ধ এবং পরিবেশের স্থিতিশীল উন্নয়নের কান্ডারী।
মন্তব্য করুন