আমরা সকলেই আমাদের ভবিষ্যতের জন্য সঞ্চয় করে থাকি। সেই কোন ছোট্টবেলা থেকে আমরা লক্ষ্মীর ঘটে পয়সা জমাই একটু একটু করে। ওটা নাহয় কম বয়সের ছেলেমানুষি। কিন্তু একটা সময়ের পর তো আমাদের ভাবতেই হয় যে ঠিক কীভাবে আমরা আমাদের অর্থ সঞ্চয় করতে পারি, যাতে পরবর্তীকালে কোনো দরকারে তা লেগে যেতে পারে।
টাকা জমাবেন?
বুদ্ধিমান মানুষেরা বলেন চাকরি পাওয়ার শুরু থেকেই এই সঞ্চয় সম্বন্ধে ভাবা উচিত। কিন্তু অনেকসময়েই আমরা ঝোঁকের বশে প্রলোভনে পা দিয়ে ভুল পথে টাকা লগ্নি করি। আর তার ফলে সব টাকা অনেকসময়েই হারাতে হয়। তাই ভাবা উচিত এমন বিনিয়োগের পথ সম্বন্ধে যা সুরক্ষিত আর অনেকটা লাভ দেয়। তাই আজ ‘দাশবাসে’র পক্ষ থেকে মিউচুয়াল ফান্ড ( Mutual Fund) সম্বন্ধে আপনাদের জানানো হবে।
মিউচুয়াল ফান্ড কি? | What is a Mutual Fund?
অর্থ সঞ্চয়ের নানান উপায় আমরা জানি। সেভিংস অ্যাকাউন্ট ( Savings Bank Account), ফিক্সড ডিপোসিট ( Fixed Deposit ), রেকারিং ডিপোসিট (Recurring Deposit) এই সব পথেই তো আমরা টাকা জমিয়ে থাকি। কিন্তু যদি আমরা একটু অন্যভাবে টাকা সঞ্চয় করতে চাই বা বাড়াতে চাই, তাহলে কিন্তু নিঃসন্দেহে মিউচুয়াল ফান্ডে বিনিয়োগ ( Investment in a Mutual Fund ) করা উচিত। এক্ষেত্রে ব্যাপারটা খুবই সোজা।
এর সঙ্গে শেয়ার বাজারের (Stock Market) যোগ আছে। ধরুন আপনি একটি নির্দিষ্ট কোম্পানীকে টাকা দিলেন। এটা ‘ইউনিট’ কেনা নামে পরিচিত। এইরকম আরও অনেকে ধরুন টাকা দিলেন। এই কোম্পানী এবার টাকাটা খাটাবে। এবং যে টাকাটা আসবে সেটা বিনিয়োগকারীদের মধ্যে ভাগ করে দেওয়া হবে এবং আপনি সেই টাকাটাই পাবেন সেটার বর্তমান বাজার মূল্য আছে।
ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র বিনিয়োগ কোনো বড় কোম্পানীর মারফতে যখন শেয়ার বাজারে খাটতে থাকে, আর তার থেকে যে টাকা পাওয়া যায়, এই সম্পূর্ণ পদ্ধতিটাই হল মিউচুয়াল ফান্ড স্কিম। অর্থাৎ আপনি শেয়ার বাজার, স্টক মার্কেট এইসব সম্বন্ধে বিশেষ কিছু না জানলেও নির্দিষ্ট কোম্পানীর সাহায্যে টাকা খাটিয়ে বেশি রিটার্ন পেয়ে গেলেন। আর আমাদের মনে রাখতে হবে যে সব মিউচাল ফান্ড নথিভুক্ত হয় SEBI* র কাছে। মিউচুয়াল ফান্ড পরিচালনা করে থাকে AMC বা অ্যাসেট ম্যানেজমেন্ট কোম্পানী। আর এই AMC’কে অবশ্যই তথ্য নথিভুক্ত করাতে হয় SEBI’র কাছে। যদিও কোম্পানীগুলোর প্ল্যান আলাদা আলাদা হয়, তাও সবচেয়ে কম ১০০০টাকা মিউচুয়াল ফান্ডের জন্য রাখতেই হয়।
*SEBI: Securities and Exchange Board of India
কত রকমের মিউচুয়াল ফান্ড হয় ? | What are the different Types of Mutual Funds?
মিউচুয়াল ফান্ড অনেক রকমেরই হতে পারে। আসুন সেগুলো সম্বন্ধে জেনে নেওয়া যাক।
১. ইক্যুইটি ফান্ড (Equity Fund)
এইরকম মিউচুয়াল ফান্ডে টাকা রাখা খুবই ঝুঁকিপূর্ণ। কারণ যদি শেয়ার বাজারে ধস নামে অর্থাৎ দাম যদি পড়ে যায়, তাহলে কিন্তু আপনার টাকা মার যেতে পারে। তাই খুব একটা এই স্কিমে টাকা না রাখাই ভালো।
২. ডেট ফান্ড (Debt Fund)
সরকারী, বেসরকারী কর্পোরেট ঋণপত্রের মাধ্যমে টাকা লগ্নি করা হয়। এখানে ততটা ঝুঁকি থাকে না। টাকা ফেরত পাওয়া নিয়ে এখানে অনেকটাই নিশ্চিন্তে থাকা যায়।
৩. ব্যালান্সড ফান্ড (Balanced Fund)
ইক্যুইটি আর ডেট এই দুই ক্ষেত্রেই টাকা বিনিয়োগ করা যায় এই পদ্ধতিতে। বিনিয়োগকারীকে মোটা অঙ্কের টাকা ফেরত দেওয়াই এই ব্যবস্থার লক্ষ্য।
৪. মানি মার্কেট মিউচুয়াল ফান্ড (Money Market Mutual Fund)
স্বল্পমেয়াদের বিনিয়োগ করা হল এই ব্যবস্থার অন্যতম শর্ত। একে লিক্যুইড ফান্ডও বলা হয়। ট্রেজারি, কমার্শিয়াল পেপারে বিনিয়োগ হয়ে থাকে।
৫. গিল্ড ফান্ডস (Gilt Fund)
এখানে সরকারি সিকিউরিটিজে (Government Securities) টাকা ঢালা হয়। তাই আপনার টাকা সম্পূর্ণভাবে নিরাপদে এখানে রাখতে পারেন। এটাই সবচেয়ে নিরাপদ ফান্ড।
মিউচুয়াল ফান্ডের আরেকরকম শ্রেণীবিভাগও করা যায়। সেটা হল দুই প্রকার- ওপেন এন্ডেড স্কিমস আর ক্লোসড এন্ডেড স্কিমস। ওপেন এন্ডেড স্কিমে নতুন শেয়ারের প্রচলন বা পুরনো শেয়ারের পুনঃক্রয় করা যায়। কিন্তু ক্লোসড স্কিমে তা করা যায় না। এছাড়াও ওপেন এন্ডেড স্কিমে ম্যানেজারেরা জনপ্রিয় পদ্ধতি বিনিয়োগকারীদের সামনে তুলে আনেন। অন্যদিকে ক্লোসড এন্ডেড স্কিমে এই ধরণের নমনীয় ব্যবস্থা থাকে না।
কারা করতে পারেন এই ইনভেস্টমেন্ট? | Who all can invest?
ভারতের সকল অধিবাসী, NRI বা Non-residents Indians, POI বা Persons of Indian Origin অর্থাৎ জন্মসূত্রে যারা ভারতীয়, কো-অপারেটিভ সোসাইটি, কোনো ট্রাস্টি বা ধর্মীয় সংস্থাও এই বিনিয়োগ করতে পারেন।
বিনিয়োগের নিয়ম | Rules for Investing in a Mutual Fund
কী, কেন’র পর এবার আসা যাক আসল প্রসঙ্গে। কিভাবে বিনিয়োগ করা যায় সেটা এবার আপনাদের জানতে হবে। বিনিয়োগের জন্য প্রথমেই ফর্ম পূরণ করতে হবে। আপনাকে বেশ কয়েকটি ফর্ম আগে ডাউনলোড করতে হবে। যেমন Common Mutual Fund application form, Mutual fund ECS mandate form, Risk profile form ইত্যাদি। আপনার যদি KYC থাকে, তাহলে সেটাও দিতে হবে। আর যদি না থাকে, তাহলে দিতে হবে KYC indivisual form, ১টা পাসপোর্ট সাইজের ছবি, যে কোনো একটা পরিচয় পত্র যেমন প্যান কার্ড, আধার কার্ড, পাসপোর্ট, ভোটার কার্ড ইত্যাদি। আর মিউচুয়াল ফান্ডে বিনিয়োগ করার জন্য আমরা যে প্রতিষ্ঠানের কাছে যাব, সেই সেই প্রতিষ্ঠানের নিজস্ব নিয়ম থাকে। তাই যে প্রতিষ্ঠানের থেকে মিউচুয়াল ফান্ডের ইউনিট কিনবেন, সেই প্রতিষ্ঠানের আবেদন করার পদ্ধতি দেখে নিন ভালোভাবে।
তাহলে এখন থেকে আর শুধু চিরাচরিত অর্থ সঞ্চয়ের পথ থেকে সরে এসে এভাবে ইনভেস্ট করে দেখুন। কম সময়ে এমন সহজ আর বিশ্বাসযোগ্য পথে টাকা রিটার্ন কিন্তু আর কোনো ভাবেই পাবেন না। হ্যা, যদি মাঝে মাঝে একটু ঝুঁকি নিতে হয়, আশা করি তা নেবেন। কারণ কথায় বলে না, নো রিস্ক, নো গেইন।
মন্তব্য করুন