আজকাল লুক নিয়ে এক্সপেরিমেন্ট করতে সকলেই ভালোবাসেন। আর তাই বেশিরভাগ মহিলাই পার্লারে ছোটেন পার্মানেন্ট হেয়ার স্ট্রেটনিং করানোর জন্য। কিন্তু শুধু দর্শনধারী হলেই তো আর হল না, চুলের স্বাস্থ্য ভালো রাখাও বিশেষভাবে দরকার। আর এই জন্যই প্রয়োজন কেরাটিন ট্রিটমেন্টের।
কেরাটিন হেয়ার ট্রিটমেন্ট কেন করবেন?
- কেরাটিন হল চুলের মধ্যেই থাকা একপ্রকার প্রাকৃতিক প্রোটিন।
- দূষণ, চুলে বারবার কেমিক্যাল প্রোডাক্ট ব্যবহার করা, অতিরিক্ত মাত্রায় ড্রায়ার বা স্ট্রেটনার ব্যবহার করার ফলে চুলে একটু একটু করে এই প্রোটিনের অভাব দেখা দেয়।
- যার ফলে চুল হারিয়ে ফেলতে পারে তার প্রাকৃতিক জৌলুস, সেইসঙ্গে অকালে চুল ঝরে যাওয়া, ডগা ফেটে যাওয়ার মতো সমস্যাও দেখা দিতে পারে।
- আর এই কারণে বাইরে থেকে চুলের প্রোটিনের যোগান দেওয়া খুবই জরুরী।
- এতে চুলের গোড়া মজবুত হওয়ার পাশাপাশি চুলের হারিয়ে যাওয়া জেল্লাও ফিরে আসে।
- খসখসে অনুজ্জ্বল চুলে প্রাণ ফেরাতে কেরাটিন ট্রিটমেন্ট করানোটা খুবই দরকার।
কেরাটিন ট্রিটমেন্টে কী কী থাকে?
চুলে কেরাটিন ট্রিটমেন্ট করার জন্য ফরম্যালডিহাইড কেমিক্যাল (Formaldehyde) এর সঙ্গে কন্ডিশনার এবং কেরাটিন হেয়ার প্রোটিন মিশিয়ে ব্যবহার করা হয়। এই ফর্মুলা চুলের ড্যামেজ কন্ট্রোলে বিশেষভাবে সাহায্য করে।
কেরাটিন ট্রিটমেন্ট করালে চুলের কী উপকার হবে?
প্রতিদিনের ধূলো-বালি-দূষণের পাশাপাশি অল্প সময়ে সুন্দর লুক পেতে আপনারা যেসব কৃত্রিম পদ্ধতির সাহায্য নেন, আর তার ফলে আপনার চুলের যা যা ক্ষতি হয় সেই সব ক্ষতি নিরাময় করে দেয় কেরাটিন ট্রিটমেন্ট। যেমন-
- চুলের হারিয়ে যাওয়া প্রাকৃতিক আর্দ্রতা ফিরিয়ে দিতে সাহায্য করে।
- চুলের ড্রাইনেস ও ফ্রিজিনেস এবং কোকড়ানোভাব দূর করতে বিশেষভাবে কার্যকরী।
- কেরাটিন ট্রিটমেন্টে চুলের একটা প্রাকৃতিক স্ট্রেট লুক আসে, তার ফলে আপনাকে আলাদা করে চুলে স্ট্রেটনিং করার প্রয়োজন পড়ে না।
- তবে যারা ইতিমধ্যেই হেয়ার স্ট্রেটনিং করিয়ে ফেলেছেন, তারা চুলের সৌন্দর্য ধরে রাখতে কেরাটিন ট্রিটমেন্ট করাতে পারেন।
- যারা অনেকদিন আগেই হেয়ার স্ট্রেটনিং করিয়েছেন, এবং যাদের নতুন চুল গজাতে শুরু করে দিয়েছে তারা আবার হেয়ার স্ট্রেটনিং না করিয়ে কেরাটিন ট্রিটমেন্ট করুন।
- এতে চুলের পুষ্টি ও সৌন্দর্য আরও বাড়বে।
কেরাটিন ট্রিটমেন্ট আর হেয়ার স্ট্রেটনিং’এর তফাত কোথায়?
- অনেকেই এমনটা ভাবতে পারেন যে, কেরাটিনেও তো স্ট্রেট লুক পাওয়া যায়, তাহলে কেরাটিন ট্রিটমেন্ট আর হেয়ার স্ট্রেটনিং কি এক?
- হেয়ার স্ট্রেটনিং একটা পার্মানেন্ট হেয়ার স্টাইলিং, যেখানে চুলের সামান্য থেকে সামান্য কার্ল সরিয়ে চুলকে সার্প স্ট্রেট লুক দেওয়া হয়।
- অন্যদিকে কেরাটিন হল একটি ট্রিটমেন্ট, যা চুলের হাজারও সমস্যা দূর করে চুলের মধ্যে প্রোটিন যোগ করে, যা আদতে চুলের খাবার।
- কেরাটিন ট্রিটমেন্ট করলে চুলের ক্ষয় রোধ হয়। চুল পড়া কমায়। চুলে একটা ফ্রেস ভাব বজায় রাখে সর্বক্ষণ।
কতদিন অন্তর করাবেন কেরাটিন ট্রিটমেন্ট?
চুলের টেক্সচার ঠিক রাখতে চার থেকে পাঁচ মাস অন্তর এই কেরাটিন হেয়ার ট্রিটমেন্ট করানো উচিত। তবে এমনিতে কিন্তু ছয় মাস পর্যন্ত কেরাটিন ট্রিটমেন্টের এফেক্ট কার্যকর থাকে।
কেরাটিন ট্রিটমেন্টের সাইড এফেক্ট!
- আগেই বলেছি কেরাটিন ট্রিটমেন্টের সময়ে চুলে ফরম্যালডিহাইড কেমিক্যাল ব্যবহার করা হয়, তবে যাদের কেমিকেল প্রোডাক্টে অ্যালার্জি রয়েছে, তাদের কিন্তু এই কেমিকেল ব্যবহারে উল্টো ফল মিলতে পারে।
- কারণ এই কেমিক্যাল ব্যবহারে অনেক সময়ে চোখ এবং নাকে চুলকানি অনুভব হতে পারে।
- চোখের ক্ষেত্রে ইরিটেশনের ফলে চোখের সমস্যা হতে পারে।
- এছাড়াও, কাশি, গলা ব্যথা, শ্বাসকষ্টের সমস্যাও দেখা দিতে পারে। বিশেষজ্ঞরা এও বলেন যে, ফরম্যালডিহাইড কেমিকেল ক্যান্সারের কারণ। তবে এজন্য ভয় পাওয়ার কোনও প্রয়োজন নেই। আগে ডারমেটোলজিস্ট-এর কাছ থেকে ভাল করে পরীক্ষা করে নিতে হবে যে, আপনার চুলে ফরম্যালডিহাইড কেমিক্যাল ব্যবহার করা যাবে কি না।
- শুধু তাই নয় পার্লারে কেরাটিন ট্রিটমেন্ট করানোর আগে ফরম্যালডিহাইড কেমিক্যালের পরিমাণ কম রয়েছে এমন প্রোডাক্ট দিয়ে ট্রিটমেন্ট করা উচিত।
- গর্ভবতী মহিলারা এই ট্রিটমেন্ট থেকে দূরে থাকবেন। সন্তান প্রসবের পরেও এটি করাবেন না। যতদিন না আপনার সন্তান মাতৃ দুগ্ধ খাওয়া বন্ধ করছে।
মন্তব্য করুন