বর্তমানে ওজন হ্রাস, জিরো ফিগার ছোঁয়ার হাইপ দেখা দিলেও অনেকেই আছেন যাদের কাছে এই ওজন বাড়ানোর ঘরোয়া প্রাকৃতিক উপায়গুলো একটা টাটকা বাতাস বয়ে আনবে।
প্রয়োজনের চেয়ে অতিরিক্ত ওজন যেমন সমস্যায় ফেলে, তেমনি বয়স অনুপাতে স্বাভাবিক ওজনের অধিকারী হতে না পারলেও তা কপালে ভাঁজ ফেলে বৈকি! বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বা WHO ‘এর রিপোর্ট অনুযায়ী ৪৬২ মিলিয়ন মানুষ পৃথিবীতে বর্তমানে রুগ্ন বা স্বাভাবিক এর চাইতে কম ওজনবিশিষ্ট।
রুগ্নতার সংজ্ঞাটা ঠিক কি?
কিন্তু এই রুগ্নতার সংজ্ঞাটা ঠিক কি? এটা প্রথমে জেনে নেওয়া অবশ্যই দরকার।
- সেন্টার ফর ডিজিজ কন্ট্রোল বলছে যে বডি মাস ইনডেক্স বা দেহ ভর সূচক নির্ধারণ করে দেবে যে আপনি মোটা না রুগ্ন না স্বাভাবিক স্বাস্থ্যের অধিকারী।
- একজন মহিলার বিএম আই যদি ১৮.৫ এর কম হয় তবে তাকে কম ওজন বিশিষ্ট বা রুগ্ন বলা যেতে পারে।
- রুগ্নতা ওবেসিটির মতোই আজকাল কর্মব্যস্ত মানুষের জীবন যাত্রাকে প্রভাবিত করে চলছে।
- এর অনেক কারণ থাকতে পারে।স্ট্রেস,অনিদ্রা,উচ্চ মেটাবলিক রেট, ডিপ্রেশন,অস্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস, জিনগত ইত্যাদি নানা কারণে রুগ্নতার শিকার হয় মানুষ।
- কম ওজন নিয়ে আসে ক্লান্তি, কাজকর্মে অনীহা এবং হীনমন্যতা। তাই সুঠাম, সুগঠিত স্বাস্থ্যের অধিকারী হতে নিচের ঘরোয়া পদ্ধতিগুলি একবার ট্রাই করেই দেখুন না।
ক্যালোরি জেনিক ডায়েট:
- দৈনিক খাদ্যতালিকার উপর নজর দেয়া খুব জরুরি প্রথমেই। তাও সে জন্য কার্বোহাইড্রেট ও ফ্যাট জাতীয় খাদ্য অবশ্যই অবশ্যই রাখুন নিজের খাবার টেবিলে।
- শাক সব্জি খান বেশি করে। এতে পুষ্টির সাথে সাথে শরীরের নানা উপকারে আসবে।
- অ্যাভোকাডো,চিজ,ওটস, গোটা ডিম,ভাত,দানাশস্য অবশ্যই জায়গা করে নিক আপনার ডায়েটে।
- এইগুলো ডায়েটে রাখলে প্রতিদিনের রুটিন মাফিক ক্যালোরি চাহিদা পূরণ করেও আপনি আরো অতিরিক্ত ৫০০ ক্যালোরি পাবেন যা দু সপ্তাহেই আপনার ওজন বাড়িয়ে দেবে পুরো ১ কিলো মত!
পরিমান নয়, বরং জোর দিন বারবার খাবার উপর:
- ডাক্তারী বিজ্ঞান বলছে আপনি যদি খাবার একসাথে অনেক পরিমানে গ্রহণের পরিবর্তে বারবার অল্প অল্প করে খান তবে তা পাচনক্রিয়ার স্বাভাবিক গতিকে ত্বরান্বিত করে।
- এক্ষেত্রে খাবার চার্ট তৈরী করে নিতে পারেন সময় অনুযায়ী।
- দিনের শুরুতে ফল মাখন মিষ্টি ইত্যাদি জাতীয় খাবার খেয়ে শুরু করুন আর হালকা খাবার তোলা থাক রাতের জন্য।
খাবারের পুষ্টিগুণের উপর নজর:
- যতই চিপস,পিৎজা,বার্গার হাতছানি দিয়ে ডাকুক না কেন আপনাকে সযত্নে ওগুলো সুইপ করেই এগোতে হবে।
- উচ্চ প্রোটিনযুক্ত খাবার খান যাতে তা মাংস পেশির গঠনে সহায়ক হয়।
- বড় মাছ,রেড মিট,নাটস, দুগ্ধ জাত দ্রব্য এসব প্রোটিন এর মূল উৎস।
- তবে ফ্রোজেন বা প্রক্রিয়া করনজাত খাদ্য এড়িয়ে চলাই শ্রেয় কারণ ওতে রাসায়নিক ও অতিরিক্ত চিনি ইত্যাদি ওজনের বারোটা বাজাতে যথেষ্ট।
শুকনো ফল বা ড্রাই ফ্রুটস:
- শুকনো ফল বা ড্রাই ফ্রুটস হলো ওজন বাড়ানোর আরেকটি আদর্শ উপায়।
- কলোরাডো বিশ্ববিদ্যালয় সম্প্রতি জানিয়েছে যে বাদাম, আমন্ড, আখরোট, খেজুর, কাজুবাদাম ইত্যাদি কাঁচা বা এদের দ্বারা নির্মিত বাটার উচ্চপরিমানে প্রোটিন, ভিটামিন ই এবং মনো স্যাচুরেটেড ফ্যাট এ পরিপূর্ণ।
- তাই খালি মুখে বা মেনকোর্সের সাজসজ্জাতে টপিং হিসেবে খাবার জন্য অবশ্যই থাকুক এগুলি।
নিয়মিত শরীরচর্চা:
- মোটা হতে গেলে শক্তি বাড়ানো অত্যন্ত দরকার।
- তার জন্য জিম জয়েন করতে পারেন বা খেলাধুলার অভ্যেস থাকলে তা আরো ভালো।
- এর ফলে আপনার শরীরে থাকা অতিরিক্ত ক্যালোরি চর্বিতে পরিণত না হয়ে বার্ন হবে।
- হৃদযন্ত্রের ব্যায়াম গুলোতে মনোনিবেশ করলে ফল দ্রুত পাবেন।
- সবল মাংস পেশী ও হাড়ের সুন্দর গঠনযুক্ত দেহ হবে আপনার সম্পদ।
অন্যান্য টিপস
এছাড়াও এই বিষয় গুলি মাথায় রাখলে দেখবেন কিভাবে অল্প কয়েক দিনেই আপনার সুস্থ সবল দেহ পাওয়ার স্বপ্ন পূরণ হবে।
- দিনে ৩-৪ লিটার জল অবশ্যই পান করুন যা আপনার কলা কোষকে সতেজই করবেনা বরং ক্ষতিকারক টক্সিনগুলো শরীর থেকে বার করে দেবে।
- পর্যাপ্ত পরিমাণে ঘুমান যা এনার্জি সঞ্চয়ে সাহায্য করবে।
- শাকসবজি বেশি করে খান তা ফাইবারের ঘাটতি পূরণ করবে।
- ধুমপান ইত্যাদি নেশা থেকে দূরে থাকুন।
- স্বাস্থ্য সম্মত জীবনশৈলী গড়ে তুলুন।
- ধৈর্য ও অনুশীলন বজায় রাখুন।
মন্তব্য করুন