পুদিনাপাত, ধনেপাতা বা এইধরনের শাক ধরণের সবজি আমরা কীভাবে অনেক দিন রাখতে পারি এই নিয়ে আমাদের চিন্তা থেকেই যায়। অনেক সময়ে ফ্রিজে রাখলেও দেখা যায় দু’দিন পরেই তা শুকিয়ে গেছে। আবার ফ্রিজ ছাড়া রাখলেও যে খুব ভাল থাকে তাও নয়। অনেক সময়ে ফ্রিজ খারাপ থাকলে তখন চিন্তা শুরু হয়ে যায়। তাই ফ্রিজ ছাড়া সাধারণ ঘরের তাপমাত্রায় কীভাবে অনেক দিন এই শাক বা পাতাওয়ালা সবজি ভাল রাখা যায় তা দেখে নেওয়া যাক।
১. অর্গানিক কটন ব্যাগঃ
আজকাল আমরা একে ইকোব্যাগ বলেও জানি। এই ব্যাগ কিন্তু খুব ভাল চলে অনেকদিন ধরে। খুব হাল্কা হয়, তার সঙ্গে সবজি সাধারণ তাপমাত্রায় ফ্রেশ রাখে। যেহেতু প্লাস্টিক নয়, তাই হাওয়া চলাচল করতে কোনও সমস্যা হয় না। কিন্তু এই ব্যাগ কখনই ফ্রিজে রাখবেন না।
২. ক্লথ ম্যাস ব্যাগঃ
এই ব্যাগ আমরা দেখে থাকি মূলত শপিং মলে গেলে। সেখানে কোনও কিছু কিনলে এই ব্যাগেই দেওয়া হয়। এই ব্যাগে যেহেতু ছিদ্র থাকে, তাই সহজেই হাওয়া চলাচল করতে পারে। তাই সবুজ পাতাওয়ালা সবজি নিঃশ্বাস নিতে পারে। অক্সিজেনের কোনও অভাব হয় না। এই ব্যাগ কিন্তু ফ্রিজেও ব্যবহার করা যেতে পারে।
৩. ফ্রেঞ্চ টেরি ব্যাগঃ
সবজি বা শাক রাখার অল্টারনেটিভ মাধ্যম হিসেবে খুব ভাল। এর মধ্যে একেবারে তিন দিনের জন্য সবজি রাখা যেতে পারে। তারপর অবশ্য একবার বের করে কিছুক্ষণ বাইরে রেখে আবার এই ব্যাগে রাখতে পারেন। যেহেতু এই ব্যাগ খুব হাল্কা তাই খ্যুব একটা সমস্যা হয় না সবজি রাখতে।
৪. ফুরোসিকি কিচেন টাওয়েলঃ
আমরা খুব একটা এই জিনিসটির সঙ্গে পরিচিত নই। কিন্তু এটি খুব কাজের জিনিস। এর মধ্যে সবুজ শাকওয়ালা সবজি বা যে কোনও পাতা মুড়ে রেখে দিতে পারেন। দিনে একবার অন্তত খানিক সময়ের জন্য খুলে রাখবেন। তারপর আবার মুড়ে দেবেন। এতেও বেশ কয়েক দিন খুব ভাল শাক রাখা যাবে।
৫. জল ব্যবহার করুনঃ
মূলত ধনেপাতার ক্ষেত্রে আমরা এটি করে থাকি। অন্য শাকের ক্ষেত্রেও বা পাতার ক্ষেত্রেও এটা করা যেতে পারে। একটি বড় পাত্রে জল নিন। তারপর তার ওপর একটি ঝাজরি রাখুন। এর মধ্যে এবার পাতা বা শাক এমন করে রাখুন যাতে মূল বা শিকড় ওই ঝাঁজরির ছিদ্র দিয়ে জলে চলে যায়। এতে শাক জল পাবে আর সঙ্গে সাধারণ তাপমাত্রাও পাবে। ফলে অনেক দিন ভাল থাকবে। তবে একে রাখতে হবে কম রোদ আসা জায়গায় আয় জল মাঝে মাঝে বদলে দিতে হবে।
৬. কিছু জিনিস সঙ্গে রাখবেন নাঃ
যদি শাক বা অন্য যে কোনও সবজি অনেক দিন ভাল রাখতে চান তাহলে এই শাকের বা পাতাওয়ালা সবজির সঙ্গে কিছু জিনিস রাখবেন না। এর মধ্যে সবচেয়ে আগে রাখা উচিত পেঁয়াজ আর রসুন। আলু, টম্যাটোও সঙ্গে রাখা ঠিক নয়। এইগুলি খুব তাড়াতাড়ি পচে যায়, খুবই পচনশীল। আর এই সময়ে এক ধরণের অ্যাসিড বের হয় এই আলু বা পেঁয়াজ থেকে। এই অ্যাসিড অন্য জিনিসকে আরও তাড়াতাড়ি পচিয়ে দেয়। তাই শাকের সঙ্গে এই জিনিস কখনই রাখবেন না।
৭. ভিজে কাপড়ের ব্যবহারঃ
যদি ওপরে বলা ব্যাগের মধ্যে কিছু না থাকে বাড়িতে তাহলেও কোনও সমস্যা নেই। শুধু সুতির কাপড় হলেই চলবে। সুতির কাপড় একটু জলের ছিটে দিয়ে ভিজিয়ে নিন। পুরো জলে চুবিয়ে নেবেন না। আমাদের খানিক ময়েশ্চার দরকার। এবার এই কাপড়ের মধ্যে শাক রেখে মুড়ে দিন। এর ওপর আরেকটু জল ছিটিয়ে দিন। তারপর কোনও সাধারণ ঠাণ্ডা জায়গায় রেখে দিন। ঘরের তাপমাত্রায় রাখলেই হবে। পরের দিন আবার একটু জলের ছিটে দিন। এভাবে কিন্তু অন্তত চার থেকে পাঁচ দিন রাখা যায়।
৮. পাতা আলাদা করে নিনঃ
পাতাগুলি আলাদা করে নিলে সেই পাতা অনেকদিন রাখা যেতে পারে। আগে পাতা আলাদা করে নিন। তারপর একটি এয়ার টাইট কনটেইনারে সেই পাতা রেখে ভাল করে মুখ বন্ধ করে দিন। তারপর ফ্রিজে রেখে দিন। এক্ষেত্রে কিন্তু ফ্রিজে রাখা আবশ্যক।
৯. মাটির পাত্রে রাখাঃ
এটা আজকের দিনে শুনতে খুব অবাক লাগে। কিন্তু আজর আপনি যদি এটি ট্রাই করেন তাহলে এর ম্যাজিক দেখতে পাবেন। একটি মাটির পাত্র নিন। সেটি ভিজিয়ে নিন বেস কয়েকবার। তারপর শুকিয়ে নিন। এই পাত্রে এবার শাক বা পাতাজাতীয় সবজি রেখে দিন ঢাকা দিয়ে। এই মাটির থেকেই ময়েশ্চার নিয়ে নেবে পাতা। শুধু মাঝে মাঝে মাটির পাত্রের গায়ে অল্প জল ছিটিয়ে দেবেন।
১০. অল্প তেলের ব্যবহারঃ
পাতা তাড়াতাড়ি শুকিয়ে যায় কেন! কারণ বাতাস তার থেকে ময়েশ্চার নিয়ে নেয়। তাই আপনি যদি এই ময়েশ্চার লোক করতে পারেন তাহলে কিন্তু পাতা সাধারণ ঘরের তাপমাত্রার মধ্যেও ভাল থাকবে। তাই অল্প একটু তেল হাতে নিয়ে পাতার ওপর মাখিয়ে নিন। খুব বেশি ব্যবহার করবেন না। এতে তেলের আবরণ পড়বে পাতার ওপর আর সেটি ময়েশ্চার হারাবে না।
এই দশটি পদ্ধতি মেনে যদি শাক বা পাতাজাতীয় সবজি স্টোর করা শুরু করেন তাহলে আর সবজি নষ্ট হবে না। ফ্রিজ ছাড়াও অনেকদিন ভাল থাকবে।
মন্তব্য করুন