শীতকালে সবচেয়ে বেশি যা ভোগায়, তা হল ত্বকের শুষ্কভাব। শীতকালে ত্বক এতটাই শুষ্ক হয়ে যায় যে, প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা না নিলে ত্বক ফেটে গিয়ে রক্তও পড়তে পারে। এই শুষ্কতার হাত থেকে বাঁচাতে বাজার চলতি অনেক কোল্ড ক্রিম বা ময়েশ্চারাইজার ব্যবহার করা হয়।
তবে সবকিছুর মধ্যে ভ্যাসলিন পেট্রোলিয়াম জেলির কিন্তু সবার সেরা। শীতে রুক্ষ শুষ্ক ত্বককে জেল্লাদার ত্বক বানাতে বিশেষ ভুমিকা পালন করে ভ্যাসলিন।
এক ঝলকে দেখে নিন ভ্যাসলিন কী কীভাবে ব্যবহার করা যায়-
ভ্যাসলিন নানা ভাবে ত্বকের যত্ন নিতে ব্যবহার করা যেতে পারে। এমনকি চুলের শুষ্কভাব দূর করতেও ভ্যাসলিনের হেয়ার স্পা দারুন কাজ করে। তবে আজ ত্বকের যত্ন নিতে ভ্যাসলিনের ৬টি ব্যবহারের কথা আপনাদের জানাবো।
১) শীতকালে ত্বক রুক্ষ হওয়ার হাত থেকে বাঁচতে
- শুষ্ক হয়ে যাওয়ার অন্যতম কারণ হল শীতের আবহাওয়া শুষ্ক হওয়ার জন্য ত্বকও তার আর্দ্রতা হারিয়ে ফেলে, তাই ত্বকের হারিয়ে যাওয়া আর্দ্রতা ফিরিয়ে আনতে বিশেষভাবে সাহায্য করে ভ্যাসলিন।
- শীতকালে অনেক সময়ে ত্বক এতটাই শুষ্ক হয়ে যায় যে গায়ে নখ দিয়ে আঁচড় কাটলে অনেক সময়ে খড়ি উঠে যায়। সেক্ষেত্রে ত্বককে সুস্থ সুন্দর ও কোমল বানাতে বিশেষ ভাবে সাহায্য করে ভ্যাসলিন। সেইসঙ্গে ত্বক শুষ্ক হয়ে গিয়ে যদি ফেটে যায় তাহলেও সেই স্থানেও লাগানো যেতে পারে ভ্যাসলিন ।
- ত্বক পরিষ্কার করে অর্থাৎ স্নানের পর ভ্যাসলিন ভালো করে শুষ্ক ত্বকে লাগিয়ে নিন। হালকা ম্যাসাজ করে লাগাবেন যাতে এটি স্কিনের ভিতরে প্রবেশ করে ভালো ভাবে স্কিনকে নরম রাখতে সাহায্য করে ২৪ ঘণ্টা।
২) আন্ডার আই ক্রিম হিসাবে ভ্যাসলিন
- শীতকালে সত্যি বলতে ত্বকের আর্দ্রতা কমে যাওয়ার জন্য ত্বক অনেকটা প্রাণহীন দেখতে লাগে। বিশেষত চোখ। চোখ হল মনের আয়না। আর সেই চোখের চারিপাশের চামড়া খুবই নরম হয়ে থাকে।
- তাই চোখের চামড়ার যত্ন নেওয়াটা খুবই জরুরী। আর শীতকালে আন্ডার আই ক্রিম হিসাবে কিন্তু ভ্যাসলিন খুবই আদর্শ একটি উপকরণ।
- শীতকালে তাই রাত্রিবেলা চোখের চারপাশে বিশেষত চোখের নীচে আলতো হাতে লাগিয়ে নিন ভ্যাসলিন। তফাৎটা লক্ষ্য করুন পরের দিন সকালে উঠে।
৩) শীতে অ্যাকনের সমস্যাকে দূরে রাখে ভ্যাসলিন
- যাদের সেন্সিটিভ স্কিন, তাদের ত্বকে শীতকালেও ব্রণ, ফুসকুড়ি বা অ্যাকনের সমস্যা দেখা দেয়। তাই সময় থাকতে শীত পরার আগেই ভ্যাসলিন ব্যবহার করা শুরু করুন।
- কারণ ভ্যাসলিন খুবই হাল্কা, এটি আপনার ত্বকে অ্যাপ্লাই করলে তা কখনওই আপনার রোমকূপের ছিদ্র বন্ধ করে দেয় না। বরং রোমকূপে জমে থাকা ময়লা পরিষ্কার করতে সাহায্য করে, ফলে ত্বকের ওপর অবাঞ্ছিত ব়্যাশ, অ্যাকনে হওয়া থেকে আটকায়।
- তবে একটা কথা বলতেই হয়, কারো ত্বকে যদি আগে থেকেই ব্রণ বা অ্যাকনের সমস্যা থাকে তাহলে ভ্যাসলিন অ্যাপ্লাই করার আগে চর্ম বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নিন।
৪) ত্বকের আর্দ্রতা ধরে রাখতে ভ্যাসলিন
- আগেই বলেছি শীতকালে ত্বক তার জেল্লা হারিয়ে ফেলে, কারণ এইসময়ে ত্বকের আর্দ্রতা হারিয়ে যায়। ত্বকের হারানো আর্দ্রতা ফিরিয়ে আনতে বিশেষ ভাবে সাহায্য করে ভ্যাসলিন পেট্রোলিয়াম জেলি।
- আদতে এর ঘনত্বও কিন্তু অনেকটা জেলির মতো। এর কোনও চিটচিটে ভাব অনুভব হয় না। দিনের যেকোনও সময়ে এটি ত্বকে ব্যবহার করা যেতে পারে।
- এতে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে মিনারেল অয়েল, আর এটি জেল বেসড হওয়ার জন্য ত্বকের আর্দ্রতা আরও বেশি করে ধরে রাখতে সাহায্য করে।
৫) আদর্শ নাইটক্রিম হিসাবে ভ্যাসলিন
- অনেকেই এমন রয়েছেন যারা আলাদা করে নাইট ক্রিম ব্যবহার করেন। তাঁদের জন্য বলে রাখি, নাইট ক্রিম হিসাবে ভ্যাসলিন কিন্তু আদর্শ।
- কারণ সারা রাত ভ্যাসলিন ত্বকের ওপর অ্যাপ্লাই করলে তা ত্বকের আর্দ্রতা লক করে রাখে। একটা আদর্শ নাইটক্রিম যা যা কাজ করে ভ্যাসলিনও তাই করে। এতে ত্বক একদিকে যেমন সুস্থ থাকে তেমনই দেখতে লাগে আকর্ষণীয়।
৬) ময়েশ্চারাইজার হিসাবে ভ্যাসলিন
- বিশেষত যাদের তৈলাক্ত ত্বক, তারা ময়েশ্চারাইজার ব্যবহার করতে ভয় পান। কারণ অনেকেই মনে করেন ময়েশ্চারাইজার ত্বকের তৈলাক্তভাব বাড়িয়ে দিতে পারে।
- কিন্তু শীতকালে ত্বক শুকিয়ে যাওয়ার কারণে ত্বক অনেকটা প্রাণহীন দেখায়, সেক্ষেত্রে প্রাকৃতিক ময়েশ্চারাইজারের মতোই কাজ করে ভ্যাসলিন। শীতকালে ত্বকের ময়েশ্চারাইজিং খুবই প্রয়োজনীয়, আর ভ্যাসলিনের থেকে ভাল ময়েশ্চারাইজার আর কীই বা হতে পারে।
মন্তব্য করুন