১৪ ই ফেব্রুয়ারি বা ভ্যালেন্টাইন’স ডে-টা অবশেষে এসেই গেল, কি বলেন? আপনার পার্টনারের সাথে আপনি নিশ্চয়ই এই দিনটা নিয়ে অনেক প্ল্যান আগে থেকেই করে ফেলেছেন? নাকি কী প্ল্যান করবেন এখনও বুঝে উঠতে পারছেন না? বুঝতেই পারছি, এতবড় কলিকাতা শহরে আপনাদের যাওয়ার জায়গা একটু বেশী পড়িয়াছে, এই আর কি, তাই তো?
কোন রেস্টুর্যান্ট ছেড়ে কোথায় যাবেন, বা কোন সিনেমা দেখবেন বা কোথায় কোথায় ঘুরবেন, এখনও চাপে আছেন তো সেই নিয়ে? আর বুঝতেই পারছেন, ভ্যালেন্টাইনস ডে-র প্ল্যান যদি গুছিয়ে জম্পেশ করে না করতে পারেন, তাহলে আপনার কপালে কিন্তু আগামী বেশ কয়েকদিনের জন্যে শনি নাচছে! আর আছে আপনার পার্টনারের থেকে জমিয়ে ধাতানি খাওয়াও! তবে ‘দাশবাসে’র জমানায় এসব ছোট্ট বিষয় নিয়ে আর টেনশন করবেন না। আপনার প্ল্যানকে সুন্দর করে গুছিয়ে দিতে এবার আসরে হাজির আমরা। রইলো ডেটে যাওয়ার জন্য ৫ টি দারুণ প্ল্যানের খবর। দেখে নিন।
১. সিনেমা দেখুন
ভ্যালেন্টাইন’স ডে মানে বুঝতেই পারছেন, একটা মুভি দু’জনে একসাথে তো বনতাহি হ্যায়, কি বলুন? আর পরিচালকদেরও বলিহারি। আপনাদের সুবিধার জন্যই কিন্তু ভ্যালেন্টাইন’স ডে-তে তাঁরা একগাদা মুভি রিলিজ করাচ্ছেন। আর প্রত্যেকটা সিনেমাই কিন্তু বেশ ভালো। যেমন, ৯ ফেব্রুয়ারিই বেরোচ্ছে নীরজ পান্ডের ‘আইয়ারি’ আর অক্ষয় কুমারের ‘প্যাডম্যান’। আর এই দুটো সিনেমারই ট্রেলার যারা দেখেছেন, তাঁরা নিশ্চয়ই প্ল্যানও করে ফেলেছেন এগুলো দেখার। আর আপনার পার্টনারের যদি হলিউডের সিনেমা দেখার শখ জাগে? সে ব্যবস্থাও কিন্তু আছে। আপনাদের বহু প্রতীক্ষিত সিনেমা ‘ফিফটি শেডস ফ্রীড’ রিলিজ করছে ৯ তারিখ। একটু খোঁজ নিয়ে নিন বাংলা সিনেমা কী কী বেরোচ্ছে। আর এবার দু’জনে একসাথে বসে প্ল্যানটা করে ফেলুন দু’জনের পছন্দ বুঝে।
এমনিতেই ভ্যালেন্টাইন’স ডে-র দিন ভিক্টোরিয়া আর নর্মাল প্রেমের জায়গাগুলোতে বেশ ভিড় থাকে। আপনার যদি ভিড়ে যেতে ইচ্ছে না হয়, বা রোদ এড়াতে চান, তাহলে কোনো একটা শপিং মলে চলে যান।গার্লফ্রেন্ডকে নিয়ে একটু হালকা করে উইন্ডো শপিং সারুন বা কিছু গিফট কিনে দিন। এরপর ফুড কোর্টে খাওয়া-দাওয়া বা গল্প-টল্প করে কিন্তু একটা মুভি অনায়াসে দেখে ফেলতে পারেন। আর আপনার যদি বাজেট না থাকে মাল্টিপ্লেক্সে মুভি দেখার! তাহলেই বা চাপ কীসের? এমনি অনেক হলেই রিলিজ করবে সিনেমাগুলো। খোঁজখবর নিয়ে পছন্দের শো টাইম বেছে দেখে ফেলুন। আর হ্যাঁ, আগে থেকে ‘বুক মাই শো’তে টিকিট কেটে রাখুন। কোন হলের টিকিটের কত দাম, কখন শো টাইম—সব খবর আপনি কিন্তু ওখানেই পাবেন। আর ভ্যালেন্টাইন’স ডে-র ক্রেজ—বুঝতেই পারছেন! তাই প্ল্যানটা গুবলেট হয়ে গেলে ঝাড় কিন্তু আপনার কপালেই!
২. ইকো পার্ক গেছেন?
অনেকদিন ধরেই যাবো যাবো করেও যাওয়া হয়ে ওঠেনি তো? তাই ভ্যালেন্টাইন’স ডে-র দিন আর ভাবতে বসবেন না কোথায় যাবেন। ভিক্টোরিয়া বা খোদ কলকাতার বুকে কোথাও যদি যাওয়ার প্ল্যান করে থাকেন, ক্যানসেল করুন। কারণ ওইসব জায়গায় খুবই ভিড় হবে। আর ভিক্টোরিয়াতে তো যেকোনো দিনই যেতে পারবেন! কলকাতার মধ্যেই যদি একটু দূরে কোথাও যেতে চান, তাহলে বেস্ট অপশন কিন্তু ইকো পার্ক। ২.৩০ থেকে ৮.৩০ অবধি খোলা পাবেন। এন্ট্রি ফি এক একজনের ৩০/-। গ্লাস হাউজ, ট্রপিক্যাল ট্রি গার্ডেন, রোজ গার্ডেন, মিউজিক্যাল ফাউন্টেন এমনকি খাস কলকাতা শহরের বুকে আপনি চায়ের বাগানও দেখতে পাবেন।
অনেককিছু দেখার জায়গা আছে। সারাদিন সময় নিয়ে যান। ঘুরে দেখুন। এছাড়া আপনি কিন্তু ওখানে প্যাডেল বোটিং, রোইং, বার্ড ওয়াচিং, গান শুটিং ইত্যাদি অ্যাক্টিভিটিসও করতে পারবেন। আর খেতে যদি চান, তাহলে ইকো পার্কের মধ্যেই পাবেন ‘ক্যাফে একান্তে’। ভরপুর বাঙালী খাবার পাবেন। মেনু দেখে নিন ‘জোম্যাটো’তে। আর তারপর প্ল্যান করে ফেলুন। মোটামুটি সারাদিনের একান্তে ঘোরা কিন্তু ওখানেই হয়ে যেতে পারে। আর মুভি দেখতে যদি ইচ্ছে হয় সারাদিনের ঘোরাঘুরির পর, তাহলে কাছেই সিটি সেন্টার ২ আছে, চলে যেতে পারেন ক্যাব ভাড়া করে, খাওয়াটাও সিসি ২-এর ফুড কোর্টেই সারতে পারেন। তবে হ্যাঁ, ইকো পার্কই বলুন কি সিসি ২, দুটোই একটু অড জায়গা। তাই তাড়াতাড়ি ফিরতে চেষ্টা করবেন। আর বাস নয়তো ক্যাব—পেয়ে যাবেন কিন্তু সবই।
৩. গঙ্গাবক্ষে ভ্রমণ!
ভেবে দেখুন, খোদ গঙ্গার ওপরেই প্রায় বাস আপনার, আর নিশ্চয়ই আপনি এমন সুন্দর জিনিসটার কথা জানতেন না? আজ্ঞে লন্ডন না হোক, কলকাতা শহরেই কিন্তু গঙ্গাবক্ষে ভ্রমণের সুন্দর ব্যবস্থা আছে। আর বাকি ডেটগুলো তো নর্মাল ডেটের মতোই হয়। কিন্তু ভ্যালেন্টাইনস ডেটকে যদি খানিক স্পেশাল করে তুলতে চান, দিনটাকে একদম অন্যরকম করে তুলতে চান, তাহলে এটা আপনাকে ট্রাই করতেই হবে। তবে হ্যাঁ, ট্যাঁকের খানিক জোর থাকা কিন্তু দরকার। তাহলেই আপনি বুক করে ফেলতে পারবেন গঙ্গার ওপর এই ক্রুজ রাইড। সকাল থেকে ৪ টে টাইম স্লটে আপনি পাবেন এই রাইড। সবকটাই ৩ ঘণ্টার করে। পার হেড ১০০০-১৫০০/- টাকা মতো পড়বে। আর হ্যাঁ, গঙ্গার ওপর ক্রুজে কিন্তু আপনাকে খালি পেটে বসে থাকতে হবে না। সে ব্যবস্থাও আছে। স্লট ওয়াইজ ব্রেকফাস্ট, লাঞ্চ, ইভিনিং স্ন্যাক্স, ডিনার—সবই আপনি পেয়ে যাবেন। শুধু প্ল্যান করে নিজেদের পছন্দের স্লটটা বেছে নিন। সব খবর পেয়ে যাবেন নীচের লিঙ্ক থেকে।
আর অতও যদি বাজেট না থাকে, কিন্তু গঙ্গাবক্ষের লোভ যদি ছাড়তে না চান, তাহলেও কিন্তু আপনার জন্য অপশন আছে। ‘ফ্লোটেলে’র ‘দ্য ব্রিজে’ ডিনারটা সারতে পারেন খোলা আকাশের নীচে। দু’জনের জন্যে মোটামুটি ১৬০০/- পড়বে। গঙ্গার ওপর সূর্যাস্ত দেখতে দেখতে রোম্যান্টিক একটা ডেট—দিনটা কিন্তু জমে যাবে।
৪.পছন্দের রেস্টুর্যান্টে যান
আপনারা কি দুজনেই খেতে ভালোবাসেন? কিন্তু কাজের চাপে বা অন্যান্য নানা কারণে পছন্দের রেস্টুর্যান্টে যাওয়া হয়ে ওঠেনি? তাহলে একটা দিন অন্তত কাজ থেকে ছুটি নিন। কোথাও বসে দুজনে গল্প করুন। ভেবে দেখুন, ব্যস্ততার কারণে সেভাবে তো কথাই বলা হয়ে ওঠে না। একটা দিনের সুযোগে যদি খানিক কথাই বলা যায়, মন্দ কিন্তু হয় না! কোনো পার্কে বা নন্দনে বসে চা’য়ে চুমুক দিতে দিতে এমনিই গল্প করতে পারেন। আর তারপর ‘জোম্যাটো’ সার্চ করে পছন্দের রেস্টুর্যান্টে টেবল বুক করে ফেলুন। আগে থেকে বুক না করলে কিন্তু ওইদিন আপনার কপালে ঢুঁঢুই নাচবে! আর তারপর ক্যাবে উঠে পড়ুন।
রোম্যান্টিক ডেট যদি রুফটপে সারতে চান, তাহলে ‘হোয়াটস আপ’ বা ‘জুক্কা লাউঞ্জ’ তো আছেই। নাহলে এমনিই খুঁজে নিন নিজেদের বাজেট অনুযায়ী রেস্টুর্যান্ট। গোটা দিন একসাথে কাটিয়ে, গল্প করে আবার পরদিন থেকে নতুন উদ্যমে লাগুন কাজে।
৫. ব্যস্ত ডেট?
এবারের ভ্যালেন্টাইন’স ডে তো পড়েছে বুধবার। তা আপনাদের মধ্যে এমন অনেকেই দুর্ভাগা মানুষ থাকবেন যারা অফিস থেকে ছুটি পাবেন না। সেক্ষেত্রে একজন যদি ম্যানেজ করতে পারেন, তাহলে পার্টনারকে বোঝান ভালো করে। তিনি নিশ্চয়ই আপনার সমস্যা বুঝবেন। আর দু’জনেই ব্যস্ত মানুষ হলে তো আর কথাই নেই। দুঃখ করবেন না। ম্যানেজ করে একটু অন্তত তাড়াতাড়ি ছুটি নিন। সন্ধের আগে মিট করতে চেষ্টা করুন। তারপর কোথাও একটা দিয়ে ক্যান্ডেল লাইট ডিনার সেরে নিন।
বুঝতেই পারছেন, একেই আপনি দেরী করে মিট করেছেন, তাই রেস্টুর্যান্টটা তো একখানা জম্পেশ সিলেক্ট করতেই হবে। বাজেটে কুলোলে পার্ক স্ট্রীট বা সাদার্ন অ্যাভিনিউয়ের কোনো একটা রেস্টুতে ঢুকুন। রোম্যান্টিক ক্যান্ডেল লাইট ডিনারের ব্যবস্থা ওইদিন অনেক রেস্টুর্যান্টেই থাকবে। আগে থেকে একটু খবর নিয়ে যান। আর তারপর? ইচ্ছে হলে মাল্টিপ্লেক্সে গিয়ে একটা মুভি দেখে ফেলতে পারেন নাইট শোতে, যদি কারুর কোনো সমস্যা না থাকে। তারপর গার্লফ্রেন্ডকে ড্রপ করে ফিরুন বাড়ি! কাজও হবে, ভ্যালেন্টাইন’স ডেটও হবে!
তাহলে ভ্যালেন্টাইন’স ডে-র জন্য মারকাটারি প্ল্যান তো আপনাদের বলে দিলাম। এবার নাহয় খানিক সময় করে দু’জনের সলিড করে একটা প্ল্যান করে ফেলুন। তারপর? বাকিটা নাহয় উহ্যই থাক!
মন্তব্য করুন