চুটিয়ে প্রেম করছেন, অথচ ১৪ ই ফেব্রুয়ারিতে আপনার কাছের মানুষটির সাথে খানাপিনা ,ঘোরা আর বেলা শেষে পার্কে গিয়ে বসার প্ল্যান নেই, এ তো হতেই পারে না। হ্যাঁ, মানছি আপনার বাকি ৩৬৪ দিন প্রেম এতটুকুও কম পড়ে না, কিন্তু বিশেষ দিনের তো একটা আলাদা ‘ইয়ে’ থাকে নাকি! থাকে বলেই তো অ্যামাজন, ফ্লিপকার্ট খুঁজে আপনার ভালোবাসার মানুষের পছন্দের জিনিসটি অর্ডার করে রেখেছেন তাঁকে সারপ্রাইজ গিফট দেবেন বলে, ভেবে রেখেছেন ভিক্টোরিয়ার কোনও এক কোণে দু’জনে মিলে খানিক একা হবেন। মনে মনে ওই দিনের অনেক ছকই কষছেন জানি। কেননা, মনের মানুষটির মন পাওয়ার জন্য যাই বলুন, এই একটা দিনের আলাদা গুরুত্ব আছে।
এতরকম প্ল্যানই তো করছেন, কিন্তু এই ভ্যালেন্টাইন’স ডে দিনটিতেই কেন করছেন জানেন কি? আসলে এর পেছনে আছে ইতিহাসের একটা চিত্তাকর্ষক গল্প। সেই ইতিহাসকে আজও আপনি বয়ে নিয়ে বেড়াচ্ছেন অজান্তেই।
ভালোবাসার জন্য আলাদা দিন!
২৫ শে ডিসেম্বরের পরে এখন এই দিনটিতেই সব থেকে বেশী কার্ড আর উপহার বিনিময় হয়। ভাবতে অবাক লাগে এই দিনটির পেছনে রয়েছে একজন রোমান ক্যাথলিক ধর্মযাজকের নাম ও তাঁকে ঘিরে তৈরি হওয়া ইতিহাসের গল্প। তাঁর নাম সেন্ট ভ্যালেন্টাইন। তাঁর নামেই এই ভ্যালেন্টাইন’স ডে শুধু এই ভারতে নয়, লাতিন আমেরিকা ও এশিয়ার বহু দেশে ভালোবাসার দিন হিসেবে পালিত হয়ে আসছে।
জানুন এই দিনটির গুরুত্ব
কে এই সেন্ট ভ্যালেন্টাইন ? ইনি একজন খ্রীষ্টান ধর্মযাজক ও চিকিৎসক, যিনি ২৬৯ সালে ইটালির রোম নগরীতে সম্রাট দ্বিতীয় ক্লডিয়াসের সময়ে খ্রীষ্ট ধর্ম প্রচার করতেন। আর ঠিক সেই সময়েই রোমে সম্রাটের তরফে খ্রীষ্ট ধর্ম প্রচারে বিধি-নিষেধ আরোপ করা হয়। ফলত, স্বাভাবিক ভাবেই ভ্যালেন্টাইনের ওপর ধর্ম প্রচারের অভিযোগ আনা হয়। এ ছাড়াও আরও একটি অভিযোগের কথা শোনা যায়।
দ্বিতীয় ক্লডিয়াস নাকি মনে করতেন, রোমান সেনা বাহিনীকে আরও বেশী শক্তিশালী করে তোলা যাবে, যদি সৈন্যদের অবিবাহিত রাখা যায়। তাই তিনি সৈন্যদের বিবাহের ওপরেও নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেন। কিন্তু এই ধর্মযাজক ভ্যালেন্টাইন গোপনে সেনাদের মধ্যে বিয়ে দেওয়ার কাজটি চালিয়ে যেতে থাকেন। এই দুই অভিযোগেই তাঁকে দ্বিতীয় ক্লডিয়াসের সামনে হাজির করা হলে তিনি নাকি সম্রাটকেও খ্রীষ্ট ধর্মে দীক্ষিত করার চেষ্টা করেন। এতবড় ধৃষ্টতার অপরাধে তাঁকে দন্ড হিসেবে কারাবাসে পাঠানো হয়।
এর পাশাপাশি শোনা যায় কারাবাসের আগে এই ধর্মযাজক নাকি অলৌকিক চিকিৎসায় একজন কারারক্ষীর অন্ধ মেয়েকে দৃষ্টিদান করেন। পরিণামে, যীশুর প্রতি অনুরক্ত হয়ে পরে ওই অন্ধ মেয়েটির পরিবারের ৪৬ জন সদস্য একত্রে খ্রীষ্ট ধর্ম গ্রহণ করে। ধর্মযাজক ভ্যালেন্টাইনের এহেন জনপ্রিয়তা ও ধর্মপ্রচারের কারণে দ্বিতীয় ক্লডিয়াসের আদেশে কারারুদ্ধ ভ্যালেন্টাইনকে মৃত্যুদন্ড দেওয়া হয়। কিন্তু ইতিমধ্যেই ওই কারারক্ষীর যে মেয়েটি দৃষ্টি ফিরে পেয়েছে, তার সাথে ভ্যালেন্টাইনের প্রণয়ের সম্পর্ক তৈরি হয়ে গেছে। আর তাই, মৃত্যুদণ্ডের আগের দিন রাতে জেলে বসে একজন প্রেমিক তার প্রণয়ীর উদ্দেশ্যে লিখলেন একটি চিঠি। সেই চিঠির শেষে ছিল ‘তোমার ভ্যালেন্টাইন’– এই কথাটি।
ভাবতে অবাক লাগে আজ থেকে দেড় হাজারেরও বেশী সময় আগে এভাবেই প্রথম ‘ভ্যালেন্টাইন কার্ড’টি লেখা হয়েছিল। ‘তোমার ভ্যালেন্টাইন’ এই কথাটি আজও একই অভিব্যক্তি বজায় রেখেই আপনি যখন কার্ডে লেখেন, তখন এই দেড় হাজার বছরের ইতিহাস সাক্ষী রয়ে যায়। এমন হাজারো কার্ড ভালোবাসা প্রকাশ করতে দেওয়া হয়ে থাকে আজ ওই বিশেষ দিনটিতে, যেদিন সেন্ট ভ্যালেন্টাইনকে মৃত্যুদন্ড দেওয়া হয়েছিলো- ১৪ই ফেব্রুয়ারি, ভ্যালন্টাইন’স ডে।
ভ্যালেন্টাইন’স ডে’র স্বীকৃতি
৪৯৬ খ্রীষ্টাব্দে পোপ গেলাসিয়াস এই দিনটিকে ভ্যালেন্টাইন’স ডে হিসেবে ঘোষণা করেন। ১৭০০ খ্রীষ্টব্দে ব্রিটেনের সৌজন্যে দিনটি আলাদা জনপ্রিয়তা পায় হাতে লেখা কার্ড আর উপহার বিনিময়ের মাধ্যমে। এরপরে বানিজ্যিকরণের মাধ্যমে ভ্যালেন্টাইন কার্ড ও উপহার ছড়িয়ে পড়তে থাকে সারা বিশ্বে।
➡ ফ্রেন্ডশিপ ডে কেন পালন করা হয় জেনে নিন
তাই ইতিহাস মিশে যাক আপনার প্রেমে। সামনেই ভ্যালেন্টাইন’স ডে, ভাবতে থাকুন কীভাবে আপনি এই দিনটি উদযাপন করবেন। তবে হ্যাঁ, প্রেম বছরের বাকি দিনগুলিতেও একইভাবে ছড়িয়ে পড়ুক। প্রেমে থাকুন।
মন্তব্য করুন