আমাদের খুব সাধারণ, সহজলভ্য এবং জনপ্রিয় পানীয় হচ্ছে চা। পানির পরেই চা বিশ্বের সর্বাধিক উপভোগ্য পানীয়। সকালবেলায় গরম এক কাপ কড়া চা না পেলে আমাদের দিনের শুরুটা ভালো হয় না। ঘুম তাড়াতে, ক্লান্তি দূর করতে, মনে প্রশান্তি আনতে চায়ের জুড়ি মেলা ভার।
চায়ে রয়েছে প্রচুর পরিমানে অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট। এতে থাকা এপিগ্যালোক্যাটেচিন-গ্যালেট (ইজিসিজি) নামের রাসায়নিক পদার্থ (এক ধরনের অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট) ভিটামিন ‘সি’-এর চেয়েও ১০০ গুণ বেশি ফলদায়ক। তাছাড়া কালো চা স্ট্রোকের ঝুঁকি কমায় ও ওজন কমাতে ভূমিকা রাখে, গ্রিন-টি ডায়াবেটিস ও রক্তচাপ নিয়ন্ত্রনে সাহায্য করে। এসবের পাশাপাশি ক্যান্সার প্রতিরোধী গুণও রয়েছে চায়ের।
কিন্তু জানেন কি, এই চা আপনার সৌন্দর্য চর্চায়ও দারুন ভূমিকা রাখতে পারে? শরীর ও মনকে চাঙ্গা করার পাশাপাশি চুল ও ত্বককে তরতাজা করতেও খুবই কার্যকর চা-পাতা। চায়ে থাকা উপাদানসমূহ ত্বকের উপরের স্তরে জমে থাকা ধুলোবালি দূর করে ফেলে সহজেই এবং ত্বকের ক্ষয়রোধ করে। চুলকে করে তোলে আরো লম্বা, ঝলমলে ও প্রাণবন্ত।
চলুন জেনে নেই সৌন্দর্য চর্চায় চায়ের কিছু ব্যবহারঃ
ত্বকের যত্নেঃ
টোনার হিসেবে
একটা গ্রিন-টি ব্যাগ এক কাপ গরম পানিতে পানি ঠান্ডা হওয়া পর্যন্ত ভিজিয়ে রাখুন। ঠান্ডা হলে সেই লিকার দিয়ে ত্বক ধুয়ে নিন। চমৎকার প্রাকৃতিক টোনার হিসেবে কাজ করবে এটি। সেই সাথে ত্বকের আর্দ্রতা বজায় রাখতেও সাহায্য করবে।
ডার্ক সার্কেল দূর করতে
চোখের আশেপাশের ডার্ক সার্কেল দূর করার পাশাপাশি চোখের ফোলা ভাবও কমাতে পারে টি ব্যাগ। ব্যবহৃত গ্রিন-টি ব্যাগ সামান্য কুসুম গরম পানিতে ডুবিয়ে রাখুন ত্রিশ সেকেন্ড। অতিরিক্ত পানি নিংড়ে চোখের উপর দিয়ে রাখুন ১৫ মিনিট। চায়ের পাতায় থাকা অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট চোখের আশেপাশের বলিরেখা ও ফোলা ভাব কমাবে খুব দ্রুতই।
ব্রণ ও তৈলাক্ততা দূর করতে
কালো চা পাতা বেশ কিছুক্ষণ জ্বাল করে নিন। ঠান্ডা করে তাতো কয়েক ফোঁটা এসেনশিয়াল অয়েল মেশান। এই মিশ্রণটি বোতলে সংরক্ষণ করুন। প্রতিদিন তুলা ভিজিয়ে ব্রণের উপর চেপে দশ মিনিট অপেক্ষা করুন। এটি আপনাকে ব্রণ থেকে মুক্তি দেবে। ত্বকের তৈলাক্ততা দূর করতে এউ মিশ্রণটি তুলা দিয়ে পুরো মুখমন্ডলে লাগিয়ে নিন। শুকিয়ে গেলে পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলুন।
স্ক্রাবার হিসেবে
ব্যবহৃত টি ব্যাগ ফেলে না দিয়ে সেগুলো স্ক্রাবার হিসেবে ব্যবহার করতে পারেন। এক্ষেত্রে ব্যবহার করা টি-ব্যাগ রোদে শুকিয়ে নিন। তারপর এটিতে থাকা চা পাতা স্ক্রাবার হিসেবে মুখে ব্যবহার করুন। চায়ে থাকা অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট ত্বককে করবে উজ্জ্বল, নরম ও মসৃণ করবে।
দাগ দূর করতে
চায়ের লিকার প্রাকৃতিক অ্যাস্ট্রিনজেন্টের কাজ করে। যে কোনো ধরনের ত্বকের জন্য এটি উপকারী। চা পাতা ভালো করে জ্বাল দিয়ে ঠানেডা করে এই লিকার দিয়ে নিয়মিত মুখ ধুয়ে নিলে মুখের ছোপ ছোপ দাগ দূর হয়, রোদে পোড়া ভাব কমে। ইচ্ছে করলে লিকারটা বরফ করেও ব্যবহার করা যায়।
চুলের যত্নেঃ
কন্ডিশনার হিসেবে
বাজারে যেসব কন্ডিশনার পাওয়া যায় সেসবের পরিবর্তে চা-পাতা দিয়ে খুব সহজে ঘরেই বানিয়ে নিতে পারেন কন্ডিশনার। দুই কাপ পানিতে এক চামচ কালো চা-পাতা দিয়ে ভালোভাবে ফুটিয়ে নিন। শ্যাম্পু করার পর চুলে লাগালে এটি কন্ডিশনারের কাজ করে, চুল হয়ে ওঠে মোলায়েম। যে কোনো ধরনের চুলেই এটি ব্যবহার করা যায়।
খুশকি দূর করতে
খুশকি কমাতে গ্রিন-টি কিন্তু দারুন কাজ করে। একটা গ্রিন-টি ব্যাগ এক কাপ পানিতে এক ঘন্টা ভিজিয়ে রাখুন। খোসাসহ লেবু কুচিয়ে নিন। চুলের পরিমানে নারিকেল তেল নিয়ে তাতে গ্রিন-টি ভেজানো পানি ও লেবু মিশিয়ে ভালো করে জ্বাল করুন। মিশ্রণটি ঠান্ডা করে চুলে লাগিয়ে আধ ঘন্টা পর শ্যাম্পু করে ফেলুন। সপ্তাহে একবার এই মিশ্রণের ব্যবহারে খুশকির সমস্যা দূর হবে নিমিষেই।
চুলের বৃদ্ধিতে
চা-পাতায় রয়েছে ভিটামিন সি, ভিটামিন ই এবং প্যান্থেনল। এগুলো চুলের বৃদ্ধিতে সহায়ক। এক কাপ পানিতে এক চামচ চা পাতা ফুটিয়ে গাঢ় করে নিন। তারপর একে ঠান্ডা করে চা-পাতা ছেঁকে নিন। এবার তাতে অল্প পরিমানে নারকেল তেল, মধু ও লেবু যোগ করে চুলে লাগান। দশ মিনিট পর শ্যাম্পু করে ফেলুন।
চুল কালো করতে
প্রাকৃতিকভাবে চুল কালচে ও চকচকে করতে ব্যবহার করতে পারেন চা-পাতা। মেহেদী পাতার সঙ্গে চা-পাতা মিশিয়ে বেটে নিন। অথবা মেহেদী গুড়ার সাথে জ্বাল দেয়া চা-পাতা মিশিয়ে পেস্ট করে নিন। ঘন্টাখানেক রেখে শ্যাম্পু করে ফেলুন। এতে চুলের ফ্যাকাশে ভাব দূর হয় ও পাকা চুল সাময়িকভাবে কালো হয়।
উঁকুন দূর করতে
উঁকুন দূর করতে চা পাতা খুবই কার্যকর। বিশ-পঁচিশটা কাঁচা চা পাতা ও সমপরিমান তুলসী পাতা একত্রে সিদ্ধ করে মাথায় মেখে রাখুন। প্রতিটি চুলের গোড়ায় যেন মিশ্রণটি যায় এমনভাবে মাখুন। পনের মিনিট পর শ্যাম্পু করে ফেলুন। এতে করে উঁকুন দূর হয়ে যাবে।
সূর্যের ক্ষতিকর আল্ট্রাভায়োলেট রশ্নি থেকেও কিন্তু চুল আর ত্বককে রক্ষা করতে পারে চায়ের ব্যবহার। চায়ে উপকারী উপাদানের অভাব নেই। এতে রয়েছে ভিটামিন সি, ভিটামিন ই, ম্যাগনেসিয়াম, পটাশিয়াম, জিংক, ট্যানিন, পলিফেনল ও ফ্লোরাইড। এই উপাদানগুলো ত্বক ও চুলের পুনর্গঠনে চমত্কার কাজ করে। ফলে বলিরেখা, বয়সের ছাপ, চুল পড়া ইত্যাদি নানা সমস্যা দূর করে থাকে।
তো আর দেরি কেন? আজ থেকেই শুরু করুন সৌন্দর্য চর্চায় চায়ের ব্যবহার। আর পেয়ে যান চমৎকার ত্বক ও ঝলমলে চুল।
মন্তব্য করুন