নেল স্যালোনে যাবার অভ্যাস থাকলে যে জিনিসটি আপনার চোখ এড়ায়নি তা হলো একটি সাদা বা গোলাপী সল্যুশন বা দ্রবণ যেখানে দেখে থাকবেন অনেককেই হাত ও পা ডোবাতে। মনের ভেতরে এই নিয়ে জিজ্ঞাসা ও তৈরি হয়েছে নিশ্চিত! বার বার ভেবেছেন কি হতে পারে ওটা?
আসলে ওই লিকুইডটার নাম হলো প্যারাফিন ওয়াক্স যা বেশিরভাগ মেশানো হয়ে থাকে বিউটি প্রোডাক্টসে চামড়া নরম ও মসৃণ করবার জন্য। স্কিনে হাইড্রেসন ও মেরামতির কাজে এটি বর্তমানে এক অভিনব দিশা। স্পা বা স্যালোনের চড়া দামের মহার্ঘ ট্রিটমেন্ট আপনি এবার বাড়িতেই ট্রাই করতে পারেন।জেনে নিন কিভাবে।
প্যারাফিন ওয়াক্স কি?
- প্যারাফিন ওয়াক্স হলো একটি বর্ণহীন, নরম স্যাচুরেটেড হাইড্রোকার্বন। এটা মূলত তেল শুদ্ধিকরনের উপজাত দ্রব্য।
- এখন অবশ্য পেট্রোলিয়াম বেসড ওয়াক্স মোমবাতি, ওয়াক্স পেপার, কসমেটিকস দ্রব্য এবং ইন্সুলেটর ইত্যাদি তৈরিতে ব্যবহৃত হচ্ছে।
- স্পা ও স্যালোনে হাত ও পা এ প্যাডিকিউর করানোর কাজে এটির সাহায্য নেয়া হচ্ছে। এর পিচ্ছিল ও লুব্রিকেন্ট উপাদান হাড় ও মাসলে আরাম এর অনুভব দেয়।
- প্যারাফিন ওয়াক্স করলে কালো দাগ হয় না ওয়াক্স করা অংশে।
- এর সাথে এখন নানা এসেন্সিয়াল অয়েল মিশিয়ে একটা সেন্টেড ফ্লেভার দেবার চেষ্টা করা হয়। এগুলো ল্যাভেন্ডার, ভ্যানিলা, রোজমেরি, মিন্ট ইত্যাদিতে উপলব্ধ।
প্যারাফিন ওয়াক্স এর সুবিধা:
- শুধুমাত্র বিউটি ট্রিটমেন্ট ই নয় নানা মেডিক্যাল ভ্যালু রয়েছে এই ওয়াক্স এর।এটি ব্যথা কমাতে ও রক্ত সঞ্চালন বাড়াতে সহায়ক।
- এটা একধরনের হিট থেরাপি যার দ্বারা আপনি নিজের ক্লান্ত হাত পা কে দিতে পারেন একটা তরতাজা ভাব সাথে অন্যান্য অঙ্গপ্রত্যঙ্গ হয়ে ওঠে সতেজ।
- ফাইব্রোম্যালগিরা, আর্থ্রাইটিস, অস্টিও আর্থ্রাইটিস, টেনডোনাইটিস, মাসল স্ট্রেসের মতো নানা যন্ত্রনা দায়ী অসুখের আরোগ্যের চাবিকাঠি কিন্তু এটি।এর মধ্যে থাকা থেরাপিক উপাদান সক্রিয় ভাবে আমাদের দেহে কাজ করে।
- স্কেলেরোডার্মার এর ফলে স্কিনকে সফ্ট বানাতে এই প্যারাফিন ওয়াক্স এর জুড়ি নেই। কোলাজেন উৎপাদন নিয়ন্ত্রণ করে স্কিনকে নতুন জীবন দেয় একপ্রকার।
- ত্বকের স্থিতিস্থাপকতা বজায় রাখা এর অন্যতম গুন।ফলে ত্বকের সংকোচন ও প্রসারণ স্বাভাবিক থাকে। মাসল ও আঙুলে ঝট করে ক্র্যাম্প হয়না।
- শরীরের ডিটক্স করায়। বন্ধ সেলের পোরস খুলে দেয়, টক্সিন নিষ্কাশন করে।বাকি শরীরের কলকব্জা তাই ঠিক ভাবে কাজ করতে পারে।
বাড়িতে বসে প্যারাফিন ওয়াক্স প্যাডিকিউর করার উপায়:
প্রাথমিক ধাপ:
- এই স্টেপে একটা মাইক্রোওয়েভ বোল নিয়ে তাতে ৭০০-১০০০গ্রাম মতো মোম নিয়ে সেটা গরম করতে দিতে হবে।
- গরম করে সেটা তরল এ পরিণত করে ফেলুন।
- তরলটিকে ঠান্ডা হতে দিন। থার্মোমিটার দিয়ে উষ্ণতা পরীক্ষা করতে থাকুন।১২৫৹ফারেনহাইট হলে বুঝবেন সেটা ইউজ করার উপযুক্ত হয়েছে।
- তরল এর উপরে একটা আস্তরণ পড়তে দেখলেও বুঝতে পারবেন যে তরল এবার ঠান্ডা হওয়া শুরু হয়েছে।
যেভাবে স্কিনে লাগাবেন:
- লাগানোর আগে দুটো হাতে যতদূর অব্দি করাতে চান সেই অব্দি অলিভ অয়েল বা বডি লোশন মেখে নেওয়া আবশ্যক।ওয়াক্স লাগানোর জন্য আর্দ্রতা জরুরি কারণ ওটা এবসর্ব হয়ে যায়।
- এবার গলিত মোমে দুটো হাত একসাথে ডোবান। তারপর বের করে ৫ সেকেন্ড মতো হাওয়ায় রাখুন ও তারপর আবার ডোবান।
- এইভাবে করতে থাকুন যতক্ষন না পর্যন্ত ত্বকে ৫-৭টা লেয়ার পড়ছে।
শেষ পর্যায়:
- লাগানোর পর দুটো হাত নাড়াচাড়া করবেন না।কিছু প্লাস্টিক বা তোয়ালে দিয়ে ঢেকে রেখে দিন।
- এবার আপনি এসব ভুলে যান। মনের আনন্দে বসে নিজের টিভি শো দেখুন কারণ এই প্যাডিকিউর কমপক্ষে ৩০মিনিট রাখা দরকার। কাজেই বুঝতে পারছেন।
- ৩০মিনিট পার হলে টিস্যু পেপার দিয়ে মোম ছাড়িয়ে নেবেন।
- এরপর এক্সেলেন্ট রেজাল্ট পেতে ময়েশ্চারাইজিং ক্রিম হাতে মেখে নেবেন।দারুন ফল পাবেন।
উপকার:
হাতের ফাটা ভাব ও রাফনেস গায়েব হতে দেখবেন নিমেষে। সাথে নখ ও হবে মোলায়েম ও ঈর্ষণীয়।
সাইড এফেক্টস:
- দেখুন সেই অর্থে এই প্যাডিকিউর এর কোনো পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া নেই।তবে এটা করার সময় নখে নেল পলিশ পরবেন না। চাইলে কিউটিকল তেল লাগিয়ে রাখতে পারেন।
- এটা সম্পূর্ণ হাইজেনিক ল্যাব পরীক্ষিত প্রক্রিয়া। প্যারাফিন কম উত্তাপেই গলে যায়।তাই ত্বক পুড়ে যাবার ভয় নেই।
- স্পর্শকাতর ত্বকে রাশ,রেড বাম্প ও চুলকুনি দেখা দিতে পারে। তাই সাবধান।
- ত্বকে ফোলাভাব, অসাড়তা এবং ডায়াবেটিস এর সমস্যা থাকলে ভুলেও ট্রাই করবেন না।
মন্তব্য করুন