২০১২ সালে আমাদের পশ্চিমবঙ্গে ‘পরিবর্তন’ হয় রাজনৈতিক ক্ষেত্রে। ৩৪ বছরের বাম শাসনের পরিবর্তে শাসন ক্ষমতায় আসে তৃণমূল কংগ্রেস। মুখ্যমন্ত্রী হন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।
ত্রিপুরাতে ‘পরিবর্তন’ কি আসতে চলেছে
সিঙ্গুর, নন্দীগ্রামের হাত ধরে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় যে পরিবর্তনের ডাক দেন, সেই পরিবর্তন এবার তিনি ঘটাতে চান পার্শ্ববর্তী রাজ্য ত্রিপুরাতে। সেখানেও দীর্ঘ ২৮ বছর ধরে চলে আসছে বাম শাসন। পশ্চিমবঙ্গের মতো ত্রিপুরাকেও বলা হয় বাম ঘাঁটি। কিন্তু, পশ্চিমবঙ্গে পালাবদল ঘটাতে পেরেছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়, যদিও সহজে নয়। ঠিক সেভাবেই ত্রিপুরাতেও কি তৃনমূল কংগ্রেস পারবে দ্বিতীয়বার ‘পরিবর্তন’ আনতে! আসুন খানিক আলোচনা করা যাক।
সদস্যগণ ও মতাদর্শ
২০১৬ সালে কংগ্রেস থেকে ৬ জন এম.এল.এ. তৃনমূল কংগ্রেসে যোগ দেন। এই ৬ জন হলেন সুদীপ রায় বর্মন, আশিস সাহা, প্রাণজিত সিংহ রায়, দিবাচন্দ্র রাঙ্কাওাল, দিলীপ সরকার, বিশ্ববন্ধু সেন । এঁরা ২০১৩ সালে কংগ্রেসের টিকিটে স্টেট অ্যাসেম্বলিতে জয়ী হয়ে আসেন। ২০১৬ সালে এঁরা তৃনমূলে যোগ দেন। নেতৃত্ব দেন সুদীপ রায় বর্মন।
তৃনমূলে যোগ দেবার কারণ হিসাবে সুদীপ বাবুরা বলেন যে তাঁরা পশ্চিমবঙ্গে বাম-কংগ্রেস যোগ সমর্থন করবেন না কারন ত্রিপুরাতে তাঁরা দিনের পর দিন ধরে বামেদের বিরুদ্ধেই লড়াই করেছেন। নানারকমের আঘাত সহ্য করেছেন। দুটি দল এক রাজ্যে বন্ধু ও অন্য রাজ্যে শত্রু হিসাবে লড়াই করবে এই দ্বৈত আচরণ তাঁদের পছন্দ হয়নি। তাই বামেদের সঙ্গে কংগ্রেসের যোগ তাঁরা মানবেন না। তাই তাঁরা বামেদের বিরুদ্ধে লড়াইয়ের জন্য তৃনমূলকেই বেছে নেন। এর থেকে মনে হয়েছিল যে তৃণমূল হয়তো ধীরে ধীরে শক্তিশালী হচ্ছে ত্রিপুরাতে এবং এই ৬ জন যোগদানের ফলে দ্বিতীয় শক্তিশালী দল হিসাবে তৃণমূল উঠেও আসছিল। কিন্তু, সমস্যা দেখা দিল বি.জে.পি.র আসার সঙ্গে সঙ্গে।
প্রতিযোগীতায় আরেক দল
২০১৭ সালে ত্রিপুরাতে এসে অমিত শাহ ২০১৮’র ভোটে বাম শাসন সরিয়ে বিজেপির সরকার স্থাপনের টার্গেট স্থির করেন।
অবশ্য এর আগেই বাই-ইলেকশনে খোয়াই আসন ও বরজলা আসনে বামেরা জয়ী হন। কিন্তু, দেখার বিষয় ছিল যে দ্বিতীয় স্থানে কে উঠে আসে। বরজলাতে বিজেপি দ্বিতীয় স্থানে আসে ও তৃণমূল পায় ৫,৬৯২ মতো ভোট। খোয়াইতে বাম প্রার্থী বিশ্বজিৎ দত্ত পরাজিত করেন নিকটতম প্রতিদ্বন্দী তৃণমূল প্রার্থী মনোজ দাসকে ১৬,০৪৭ মতো ভোটে যেটা প্রায় অনেকটা ব্যবধানই বলা যায়। এর পরেই বি.জে.পি’র মৃণালকান্তি দেব বলেন যে লড়াই আসলে বাম ও বিজেপি’র-ই।
দলাদলি চলছে চলবে
কিন্তু, এখানেই শেষ নয়। যে ৬ জন কংগ্রেস থেকে তৃণমূলে যোগ দেন তাঁরাই আবার তৃণমূল থেকে বি.জে.পি তে যোগ দেন। তার সঙ্গে যোগ দেন সুরজিত দত্ত ও রতন চক্রবর্তী।
সুরজিত বাবু স্টেট ইউনিট প্রেসিডেন্ট হিসাবে ও রতন বাবু পার্টি কো-অর্ডিনেশন কমিটির চেয়ারম্যান হিসাবে পদত্যাগ করেন। এই দুই জন তৃণমূলকে ত্রিপুরাতে শক্ত ভিত গড়ার দিকে নিয়ে গিয়েছিলেন। তাই এঁদের পদত্যাগ আসলে তৃণমূলকে অনেকটাই বড় আঘাত দেয়। রতন বাবু অভিযোগ করেন যে তৃণমূলের অনেকেই মানিক সরকারের কথায় চলছে অর্থাৎ এখানে একটা অন্তর্ঘাতের প্রসঙ্গ আসছে। তার ওপর আবার ৬ জন দলত্যাগের সময় দলের নেতৃত্বের ওপর আস্থা হারান, যদিও মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ওপর নয়। ২০১৭ সালের ৩ জুলাই পার্থ চট্টোপাধ্যায় বলেন যে ৬ জনের সঙ্গে দলের আর কোন সম্বন্ধ নেই।
তাই সবদিক বিচার করে এটা হয়তো বলা যায় যে ত্রিপুরাতে তৃণমূল খুব একটা যে স্বস্তির জায়গায় আছে তা নয়। লড়াইয়ের ময়দান খুবই কঠিন। দেখা যাক ভবিষ্যতে তৃণমূল কংগ্রেস কোন জায়গায় অবস্থান করে।
মন্তব্য করুন