সুজলা-সুফলা, শস্য-শ্যামলা, অপরূপ সৌন্দর্যের লীলাভূমি বাংলাদেশের ট্যুরিস্ট স্পটের কমতি নেই। প্রায় সব জেলাতেই আছে ঐতিহাসিক বহু স্থাপনা, নিদর্শন। আরো আছে সমুদ্র সৈকত, পাহাড়, বনাঞ্চল, পার্ক ইত্যাদি। দেশ-বিদেশের অনেক মানুষ যেকোন ছুটি বা মৌসুমে ভিড় করেন এসব জায়গায়।
অগণিত ট্যুরিস্ট স্পটের সঠিক তালিকা করা কঠিন। তাছাড়া বাংলাদেশ এখনো পর্যটন শিল্পে তেমন উন্নত হয়ে উঠেনি, প্রচারের অভাবে বাংলাদেশের ঐতিহ্য বিশ্বের দরবারে তুলে ধরা কঠিন হয়ে পড়েছে। তবে সরকারি পৃষ্ঠপোষকতায় হারিয়ে যেতে বসা ট্যুরিস্ট স্পটগুলো মানসম্মত করা সম্ভব হচ্ছে।
আজকে কথা বলব বাংলাদেশের সেরা ১০ টি ট্যুরিস্ট স্পট নিয়ে, যা না দেখলে মিস করবেন অনেক কিছু। সময় আর সুযোগ পেলে বেরিয়ে পড়তে পারেন এই ১০টি জায়গা ঘুরে দেখার জন্য। কথা দিচ্ছি ভ্রমণ শেষ করে আর ফিরতে মন চাইবে না সহজে।
তো দেরি না করে চলুন শুরু করা যাক স্পটগুলোর ব্যাপারে বিস্তারিত জানতে।
সুন্দরবন
ম্যানগ্রোভ ফরেস্ট সুন্দরবন বাংলাদেশের অন্যতম সেরা ট্যুরিস্ট স্পট এবং ওয়ার্ল্ড হেরিটেজের মধ্যে একটি। হরেক রকমের গাছ আর প্রাণীর সাথে কখন সময় কেটে যাবে টেরও পাবেন না। পুরো সবুজে ঘেরা প্রকৃতির মাঝে নৌকা করে ঘুরে বেড়াবেন আর দেখবেন হরিণ, বানর, কুমির, গুইসাপ, কাঁকড়াসহ আরো নানা প্রাণীর পদচারণা। ভাগ্য ভালো থাকলে বাঘের দেখাও পেতে পারেন।
সুন্দরবনের পুরোটা আবার পর্যটকদের জন্য না, নির্দিষ্ট কিছু স্পটে ঘোরার অনুমতি আছে। স্পটগুলো হচ্ছে – করমজল, হারবাড়িয়া, কটকা, শেখেরহাট, কলাগাছিয়া, এবং মান্দারবাড়িয়া। এইসব জায়গায় বন্য অসুস্থ প্রাণীর পরিচর্যা কেন্দ্র ছাড়াও আছে ট্যুরিজম সেন্টার ও অভয়ারণ্য।
সুন্দরবনে ঘুরতে হলে আগে আপনাকে খুলনা শহরে আসতে হবে, এসে হোটেলে উঠে ট্যুর অপারেটরদের সাথে যোগাযোগ করে তারপর সুন্দরবনে রওনা হবেন। আর চাইলে হোটেলে না উঠেও সরাসরি ট্যুর অপারেটরদের সাথে যোগাযোগ করে জাহাজে করে সুন্দরবন ঘুরতে পারবেন।
আপনার হাতে সময় আর বাজেট দুটোই কম থাকলে করমজল হবে আপনার জন্য শ্রেষ্ঠ অপশন। মংলা বন্দর থেকে ইঞ্জিনচালিত ছোট নৌকায় মাত্র এক ঘন্টায় করমজল পৌঁছে যাবেন। চাইলে আপনি হিরণ পয়েন্টও ঘুরতে পারেন। এই অসাধারণ অভয়ারণ্য ঘুরতে হবে নৌকায় করেই, নৌকায় বসে নদীর দু পাশে দেখতে পাবেন মনোরম দৃশ্য।
কক্সবাজার
পৃথিবীর সর্ববৃহৎ সমুদ্রসৈকত কক্সবাজারে যদি ঘুরতে না আসেন, তবে আপনার জীবন অর্ধেকটাই বৃথা। কি নেই কক্সবাজারে? সামনে বিশাল সমুদ্র, সৈকতের নরম বালুরাশি, ঝাউবন, সমুদ্রের সাথে ভেসে আসে শামুক, ঝিনুকসহ অনেক জলজ প্রাণী। সৈকতে পাবেন আরাম কেদারা, আরামসে বসে সূর্যোদয়-সূর্যাস্ত উপভোগ করতে পারবেন।
কক্সবাজারের অল্প দূরে পাবেন হিমছড়ি, ইনানী বিচ, মহেশখালি, কুতুবদিয়া, সোনাদিয়া। এসব জায়গায় ইঞ্জিনচালিত নৌকা করেই ঘুরতে পারবেন৷ হিমছড়ি কক্সবাজার থেকে মাত্র কয়েক ঘন্টার পথ, ইজি বাইকে করে যেতে পারবেন। হিমছড়িতে উঠাটা একটু কষ্টকর ঠেকবে, কারণ ১০০টা সিঁড়ি পেরিয়ে পাহাড়ের চূড়ায় উঠতে হবে। একবার চূড়ায় উঠতে পারলে পুরো কক্সবাজারটা একসাথে ধরা পড়বে আপনার চোখে।
হিমছড়ি ছাড়াও ইনানী বিচ (পাথরের সৈকত), ডুলাহাজরা সাফারি পার্ক, মহেশখালীর আদিনাথ মন্দির দর্শনীয় স্থান হিসেবে আছে। কক্সবাজারের আরেকটি মূল আকর্ষণ হল বার্মিজ মার্কেট। এই বার্মিজ মার্কেটে সামুদ্রিক প্রাণীর খোলস থেকে বানানো গয়নাসহ বিভিন্ন স্বাদের আচার, রাখাইন পোশাক, জুতা, ছাতা, এবং আরো নানা জিনিসপত্র পাবেন।
ঢাকা থেকে সরাসরি কক্সবাজারে যাওয়ার বাস আছে, আবার ঢাকা থেকে চট্রগ্রাম হয়ে কক্সবাজার যাওয়ারও ব্যবস্থা আছে। বাসে যাতায়াতের খরচ জনপ্রতি ৫০০ থেকে ৮০০ টাকা পড়তে পারে। সৈকতের কাছাকাছি অনেক হোটেল এবং কটেজ আছে, কটেজগুলো হোটেলের চাইতে সস্তা পড়বে। সমুদ্রের কাছে পাবেন অসংখ্য খাবার হোটেল ও শুটকির দোকান।
কুয়াকাটা
সূর্যোদয় আর সূর্যাস্তকে আরো পরমভাবে অবলোকন করার জন্য কুয়াকাটার চাইতে আর দারুণ জায়গা আর দ্বিতীয়টি পাবেন না। কুয়াকাটায় ঘোরার মূল আকর্ষণ এটাই। ‘সাগর কন্যা’ নামে পরিচিত এই নৈসর্গিক সমুদ্রসৈকত কক্সবাজারের চাইতে একটু এগিয়ে থাকবে।
সমুদ্রের জলরাশি সূর্যের আলোয় যখন ঝকমক করে, তখন একেবারে তাক লেগে যায়। সূর্যোদয়-সূর্যাস্ত ছাড়াও আরো মনোরম বর্ণিল দৃশ্য উপভোগ করতে পারবেন। মনোরম দৃশ্যের সাথে লোভনীয় স্বাদের খাবারও পাবেন একদম নামমাত্র মূল্যে।
যদি আপনি বাসে করে কুয়াকাটা যেতে চান, তাহলে ৮ ঘন্টা লাগবে ঢাকা থাকে কুয়াকাটা যেতে। আবার ঢাকা থেকে লঞ্চযোগে কুয়াকাটা যেতে লাগবে ১৪ ঘন্টা। বিকালের লঞ্চে কুয়াকাটা গেলে পটুয়াখালী শহরে গিয়ে সকালবেলা নামতে পারবেন। তারপর রিকশা/অটোরিকশা/বাসে করে দুই ঘন্টায় কুয়াকাটা পৌঁছে যাবেন।
কুয়াকাটায় থাকার জন্য অনেক হোটেল, মোটেল, ও গেস্টহাউজ আছে। ওগুলোতে আগে থেকে বুকিং করে রাখলে ভাল। পৌঁছানোর পরে তাৎক্ষণিক বুকিং নাও হতে পারে। খাবারের জন্য সৈকতের কাছাকাছি অবস্থিত হোটেল ও রেস্টুরেন্টে পাবেন মজাদার খাবার তাও স্বল্প দামে।
সেন্টমার্টিন
বাংলাদেশের একমাত্র প্রবাল দ্বীপ হিসেবে খ্যাত সেন্টমার্টিন বাংলাদেশের সর্বদক্ষিণে অবস্থিত শেষ স্থলভাগ। প্রচুর নারিকেল পাওয়া যায় বলে এটা ‘নারিকেল জিঞ্জিরা’ নামেও পরিচিত। এই জনপ্রিয় পর্যটন কেন্দ্র উপভোগ করার জন্য আছে সূর্যোদয়-সূর্যাস্ত, জলরাশির খেলা, নানা সামুদ্রিক উদ্ভিদ ও প্রাণীর আনাগোনা।
শহরের কোলাহলপূর্ণ জীবন থেকে একটুখানি প্রশান্তির জন্য শহরবাসীরা এই দ্বীপে ছুটে আসেন। ছেঁড়া দ্বীপ সূর্যাস্ত দেখার জন্য একেবারে পারফেক্ট জায়গা। সমুদ্রের স্ফটিক স্বচ্ছ পানিতে যখন সূর্যাস্তের আভা পড়ে, সে যেন এক চোখ ধাঁধানো সৌন্দর্য। এই দ্বীপে নানা প্রজাতির প্রবালের সাথে শামুক, ঝিনুক, গুপ্তজীবী উদ্ভিদ দেখতে পাবেন। আরো রয়েছে সামুদ্রিক নানা প্রাণী ও পাখি।
সেন্টমার্টিনের স্থানীয় দোকানগুলোতে প্রবাল, শামুক, ঝিনুকের তৈরি গয়না ও নানা মনোহারী জিনিসও পাবেন। দ্বীপে বেড়াতে আসলে কিন্তু এখানকার খাবার টেস্ট করতে ভুলবেন না যেন। যেহেতু সামুদ্রিক মাছ সহজলভ্য, স্থানীয় খাবার হোটেলগুলোতে পাবেন মাছ দিয়ে তৈরি নানা মুখরোচক খাবার। আরেকটা জিনিস ট্রাই না করলেই নয়, সেটা হচ্ছে সেন্টমার্টিনের মিষ্টি ও সুস্বাদু ডাব।
শীতকাল হল এই প্রবাল দ্বীপে বেড়াতে যাওয়ার জন্য সবচাইতে উপযোগী সময়, তখন জাহাজ চালু থাকে, যা সম্পূর্ণ নিরাপদ। এখানে পর্যটকদের জন্য রয়েছে ভালো মানের আবাসিক হোটেল ও সরকারি ডাকবাংলো। এছাড়াও বাংলাদেশের বিখ্যাত কথাসাহিত্যিক হুমায়ূন আহমেদের বাড়ি ‘সমুদ্রবিলাসে’ অগ্রিম বুকিং দিয়ে থাকতে পারবেন।
রাতারগুল
রাতারগুল সোয়াম্প ফরেস্ট বর্ষাকালে বেড়াতে যাওয়ার জন্য দারুণ একটা জায়গা৷ কারণ বর্ষাকাল ছাড়া রাতারগুলের সৌন্দর্য উপলব্ধি করা সম্ভব না। বর্ষাকালে চারমাস পুরো রাতারগুল পানিতে মগ্ন থাকে। পানি নেমে গেলে তখন পায়ে চলার পথ তৈরি হয়। জানা-অজানা নানা রকমের গাছে ভরা রাতারগুল বন এক অন্যরকম প্রশান্তির ছোঁয়া এনে দেয়৷
করচ গাছ বেশি এখানে, আরো আছে হিজল ও বট গাছ। বর্ষাকালের পানিতে প্রায় সব গাছই ডুবে থাকে৷ বড় বড় গাছের কারণে সূর্যের আলো একটু কম আসে। স্বচ্ছ পানির সাথে সবুজ গাছ আর অল্প আলো মিলে কেমন একটা আলো-আঁধারীর খেলা চলতে থাকে। শীতকালে মূর্তা ও জালিবেতের সমাহার লক্ষ্য করা যায় এই বনে৷
নৌকায় করে ঘুরতে ঘুরতে দেখতে পাবেন গাছে আশ্রয় নিয়েছে সাপ, আবার দেখতে পাবেন মাছের জন্য জাল পেতে রেখেছে জেলেরা। মাঝে মাঝে বানর, ব্যাঙ, নানা প্রজাতির পাখি আপনার চোখে ধরা দিয়ে যাবে। বর্ষাকালে স্থানীয় একটা কাঠের নৌকা ভাড়া করে সারাদিন রাতারগুল ঘুরতে পারবেন।
রাতারগুল যেতে হলে আগে সিলেট যেতে হবে। সিলেট-জাফলংয়ের গাড়িতে উঠে প্রথমে সারিঘাট নামবেন, সারিঘাট থেকে টেম্পোতে উঠলে গোয়াইনঘাট বাজারে নামিয়ে দিবে। বাজারের পাশে নৌঘাট আছে, সেখান থেকে রাতারগুলে যাওয়া-আসার নৌকা রিজার্ভ করবেন। কিন্তু এই নৌকা দিয়ে রাতারগুল বনের ভিতরে ঢোকা যাবেনা৷ বনের ভিতর ঢোকার জন্য স্থানীয় ডিঙি নৌকা ভাড়া করতে হবে।
চর কুকরি মুকরি
চর কুকরি মুকরি এক ভয়াল সৌন্দর্যের আধার, যে একবার গেছে সে বারবার মন্ত্রমুগ্ধের মত ছুটে গেছে পুনরায় ভ্রমণের জন্য। অপরূপ প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে ভরা এই চর ‘দ্বীপকন্যা’ নামেও পরিচিত। প্রায় ৫০০ বছরের পুরনো এই চর এখনো সভ্যতার ছোঁয়ামুক্ত। এটার আরেটা পরিচয় হচ্ছে, এটা বাংলাদেশের সংরক্ষিত বনাঞ্চলদের মধ্যে একটি।
এই চরের নামকরণের ইতিহাসটাও বেশ মজার। ১৯১২ সালে জার্মান যুবরাজ প্রিন্স ব্রাউন এই জনশূন্য চরে শিকার করতে এসে বিড়াল-কুকুরের ছোটাছুটি দেখতে পান। সেই থেকে এই নির্জন চরের নামকরণের কথা তার মাথায় আসে। এই চরে আগে শুধু কুকুর আর ইঁদুরের আধিক্য বেশি ছিল। ইদুঁরকে স্থানীয়ভাবে অনেকে ‘মেকুর’ নামে ডাকে, এজন্যই এই চরের নাম হয়ে যায় কুকরি মুকরি।
বৃহৎ এই বন্যপ্রাণী অভয়ারণ্যে আছে চিত্রা হরিণ, বানর, উদবিড়াল, শিয়াল, বিভিন্ন প্রজাতির বক, বনমোরগ, শঙ্খচিলসহ নানা জাতের পাখি ও সরীসৃপ প্রাণী। শীতকালে নানা অতিথি পাখি জড়ো হয়। বিপুলসংখ্যক কেওড়া, গেওয়া, সুন্দরী, পশুর, বাঁশ, বেত বন, এবং নারিকেল গাছ মিলে এখানে তৈরি হয়েছে আকর্ষণীয় ম্যানগ্রোভ বনাঞ্চল।
ভোলা জেলায় অবস্থিত এই চরে যাওয়ার জন্য নৌপথ ছাড়া কোন সহজ অপশন নেই। এখানে ঘুরতে আসার জন্য আপনাকে ভোলা সদরে নামতে হবে। সদরে নেমে গাড়িতে উঠে ১০০ কিলোমিটার গিয়ে কচ্ছপিয়াতে নামতে হবে৷ এবার কচ্ছপিয়া থেকে নৌকা/ট্রলার/স্পিডবোটের মাধ্যমে মেঘনা নদী পাড়ি দিয়ে চর কুকরি মুকরিতে পৌঁছে যাবেন।
চরের কাছাকাছি থাকার জন্য ইউনিয়ন পরিষদ, জেলা পরিষদ ডাকবাংলো, দুইটি আবাসিক হোটেল, এবং একটি আন্তর্জাতিক মানের রিসোর্ট আছে। আপনি যদি একটু ভিন্ন চিন্তা করেন তাহলে ম্যানগ্রোভ বনের পাশের বিস্তৃত বালুর চরে ক্যাম্পিং করেও থাকতে পারেন।
বালুর চর ছাড়াও ইউনিয়ন পরিষদ কার্যালয়ের মাঠেও ক্যাম্পিং করতে পারেন। খাবারের জন্য স্থানীয় মাত্র দুইটি হোটেল আছে, ক্যাম্পিং করলে নিজেরাও নিজেদের মত ব্যবস্থা করে খেতে পারবেন। তবে এর জন্য মিষ্টি পানির ড্রাম ভাড়া করতে হবে।
সাজেক ভ্যালী
বেশ কয়েক বছর ধরে সাজেক ভ্যালী বাংলাদেশের অন্যতম একটি পর্যটন কেন্দ্র হয়ে উঠেছে। সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে ১৮০০ ফুট উঁচুতে অবস্থিত সাজেক ভ্যালী ‘রাঙামাটির ছাদ’ হিসেবে পরিচিত। রাঙামাটি শহর থেকে ৯০ কিলোমিটার উত্তর-পশ্চিমে অবস্থিত সাজেক বাঘাইছড়ি উপজেলার কাসালং রেঞ্জের পাহাড়ের মধ্যে অবস্থিত।
সাজেকের সৌন্দর্য অল্প কথায় বর্ণনা করা সম্ভব না। এখানকার প্রধান আকর্ষণ হচ্ছে মেঘের আনাগোনা। সাজেকের সর্বোচ্চ চূড়া কংলাকে একবার উঠতে পারলে মেঘ আপনার পায়ের নিচে আসা-যাওয়া করবে, আবার হাত দিয়েও ছুঁতে পারবেন। পাাহাড়ি এই অঞ্চল পুরোটাই সবুজে ঘেরা, সাথে শান্তিপ্রিয় আদিবাসীদের আনাগোনা।
সাজেকে ঘুরতে আসলে আদিবাসীদের জীবনযাপন ও সংস্কৃতিও উপভোগ করতে পারবেন। এছাড়াও সাজেক নদী আর সাজেক উপত্যকা আরো দুটি দর্শনীয় স্থান আছে। সাজেকের পাহাড়গুলোতে ট্রেকিং করে যেতে হবে তবে সাবধানে৷ সার্বিক নিরাপত্তায় আছে দায়িত্বরত বিজিবি ক্যাম্প। স্থানীয় হোটেল-মোটেলগুলোতে পাবেন আদিবাসী ধাঁচে তৈরি নানা মুখরোচক খাবার।
সাজেকে ঘুরতে আসলে আদিবাসীদের জীবনযাপন ও সংস্কৃতিও উপভোগ করতে পারবেন। এছাড়াও সাজেক নদী আর সাজেক উপত্যকা আরো দুটি দর্শনীয় স্থান আছে। সাজেকের পাহাড়গুলোতে ট্রেকিং করে যেতে হবে তবে সাবধানে৷ সার্বিক নিরাপত্তায় আছে দায়িত্বরত বিজিবি ক্যাম্প। স্থানীয় হোটেল-মোটেলগুলোতে পাবেন আদিবাসী ধাঁচে তৈরি নানা মুখরোচক খাবার। সাজেকে যাওয়ার পথে হাজাছড়া ঝর্ণা পড়বে, চাইলে গাড়ি থামিয়ে সামান্য ট্রেকিং করে ঝর্ণাটা ঘুরে আসতে পারবেন।
বাগেরহাট
মসজিদের শহর নামে খ্যাত বাগেরহাটের মূল আকর্ষণ হচ্ছে প্রাচীন কারুকার্যময় মসজিদগুলো। ১৯৮৩ সালে ইউনেস্কো পুরা শহরটাকে বিশ্ব ঐতিহ্যবাহী স্থান হিসেবে মর্যাদা দেয়। এই বিলুপ্ত নগরীর গোড়াপত্তন হয়েছিল তুর্কি সেনাপতি খান-ই-জাহানের হাত ধরে, ১৫শ শতকে।
বাগেরহাটের অন্যতম এবং জনপ্রিয় নিদর্শন হচ্ছে ষাট গম্বুজ মসজিদ। ঠাকুর দীঘি জলাশয়ের পূর্বে অবস্থিত এই মসজিদটির নির্মাতা হচ্ছেন খান জাহান আলী। এই মসজিদ নির্মাণে লেগেছে প্রচুর সময় এবং অর্থ। দেয়ালে করা হয়েছে টেরাকোটার কারুকার্য, পাথর আনতে হয়েছিল রাজমহল থেকে।
মসজিদের অংশবিশেষ হিসেবে আছে খান জাহানের সমাধি, যেটা ঠাকুর দীঘি জলাশয়ের উত্তর দিকে অবস্থিত। এই জলাশয়ে কুমির আছে। সমাধিতে একটি গম্বুজ রয়েছে। নয় গম্বুজ মসজিদ হচ্ছে ষাট গম্বুজের আরেকটি অংশবিশেষ যেটা ঠাকুর দীঘির পশ্চিমে অবস্থিত।
নয় গম্বুজ মসজিদের দেয়ালের ভিতরে ফুলের নকশার টেরাকোটা আছে, আর মসজিদটির চার কোণায় চারটি গোলাকার টাওয়ার আছে। সিংগরা মসজিদ ষাট গম্বুজ মসজিদের দক্ষিণ-পূর্ব দিকে অবস্থিত। এই সিংগরা খান জাহানের নিজস্ব স্থাপত্যশৈলী অনুযায়ী তৈরি৷ এর দেয়াল অত্যন্ত পুরু এবং উপরে রয়েছে বাঁকানো কার্নিশ।
এগুলো ছাড়াও দর্শনীয় স্থান হিসেবে আরো আছে রনবিজয়পুর মসজিদ ও চুনাখোলা মসজিদ। আপনি যদি প্রথমে খুলনা আসেন, তাহলে বাসে বা সিএনজিতে করে ষাট গম্বুজ মসজিদ যেতে লাগবে এক ঘন্টা। বা সরাসরি বাগেরহাটে এসে বাসস্ট্যান্ড থেকে রিকশা বা ইজিবাইকে করেও মসজিদে যেতে পারবেন।
বাগেরহাটে আবাসিক হোটেল ও খাবারের হোটেলের সংখ্যা কম এবং সেগুলো মাঝারি মানের। খরচ একটু বেশি পড়তে পারে সেগুলোতে।
পাহাড়পুর বৌদ্ধ বিহার
এটি বাংলাদেশের আরেকটি বিশ্ব ঐতিহ্যবাহী স্থান এবং পৃথিবীর সবচেয়ে বড় বৌদ্ধবিহার। আয়তনে এই মহাবিহার ভারতের নালন্দা মহাবিহারের কাছাকাছি। উপমহাদেশের পাশাপাশি মায়ানমার, মালয়েশিয়া, ইন্দোনেশিয়া, তিব্বত থেকে বৌদ্ধরা এখানে আসতেন ধর্মজ্ঞান অর্জনের জন্য।
এই বৌদ্ধ বিহারের প্রকৃত নাম সোমপুর বিহার, স্থানীয়ভাবে এটি ‘গোপাল চিতার পাহাড়’ নামেও পরিচিত। সমতল ভূমি থেকে ৩০.৩০ মিটার উঁচুতে অবস্থিত এই পাহাড়সদৃশ স্থাপনা তৈরি হয়েছিল অষ্টম শতকের শেষের দিকে, পাল বংশের দ্বিতীয় রাজা শ্রী ধর্মপালের দেবের হাত দিয়ে। ৩০০ বছর ধরে এটি ছিল বৌদ্ধদের ধর্মশিক্ষার কেন্দ্র। খ্রিষ্টীয় দশম শতকে অতীশ দীপঙ্কর এখানে আচার্যের দায়িত্ব পালন করেছিলেন।
বিহারে ১৭৭ টি কক্ষ আছে, যেখানে বৌদ্ধ ভিক্ষুরা বাস করতেন। বাইরের দেয়ালে বৌদ্ধমূর্তি, হিন্দু দেবীর মূর্তি, এবং অসংখ্য পোড়ামাটির ফলকচিত্র আছে। কেন্দ্রীয় মন্দিরের দেয়ালে থাকা অপূর্ব পোড়ামাটির ফলকে প্রাচীন বাংলার জনসাধারণের জীবনযাত্রা ফুটে উঠেছে।
বিহারের দক্ষিণ-পূর্ব কোণে আছে সন্ধ্যাবতীর ঘাট, ১২ মিটার পশ্চিমে আছে গন্ধেশ্বরী মন্দির, এবং ৩৬৫ মিটার পূর্বে আছে সত্যপীরের ভিটা। এছাড়াও আছে ১৩২ টি নিবেদন স্তূপ।
বর্তমানে পাহাড়পুর বৌদ্ধ বিহারের ধ্বংসাবশেষ টিকে আছে। আপনি যদি পাহাড়পুর বৌদ্ধ বিহারে ঘুরতে যেতে চান, তাহলে নওগাঁ বা জয়পুরহাট থেকে যেতে পারবেন। নওগাঁ থেকে গেলে নওগাঁর বালুডাঙ্গা বাস টার্মিনালে নেমে সেখান থেকে বাসে করে সরাসরি পাহাড়পুর যেতে পারবেন। যদি জয়পুরহাট থেকে যেতে চান তাহলে জয়পুরহাট শহরে নামবেন প্রথমে, এরপর বাস বা অটোরিকশা যোগে ১৫ মিনিটে বৌদ্ধ বিহার পৌঁছে যাবেন।
বৌদ্ধ বিহারের সীমানা প্রাচীরের ভিতর প্রত্নতাত্ত্বিক রেস্ট হাউস আছে থাকার জন্য, কাছাকাছি অন্য কোন আবাসিক হোটেল নেই বললেই চলে। এখানে ঘুরতে আসলে দিনের মধ্যেই ঘোরা শেষ করে ফিরে যাওয়া ভাল। বিহারের কাছাকাছি খাবারের হোটেল আছে কিন্তু সেগুলো ততটা মানসম্মত না। খাবারের জন্য জয়পুরহাট বা নওগাঁ শহরের হোটেলগুলো ভাল।
মহাস্থানগড়
ইতিহাসের পাতায় পুন্ড্রনগর বা পুন্ড্রবর্ধন নামে পরিচিত এই মহাস্থানগড় একটি অন্যতম প্রাচীন পুরাকীর্তি। মৌর্য, গুপ্ত, পাল, এবং সেন আমলে মহাস্থানগড় প্রশাসনিক কাজে ব্যবহৃত হতো। এখানে দর্শনীয় অনেক স্থান রয়েছে। তার মধ্যে গোকুলমেধ, খোদার পাথর ভিটা, কালিদহ সাগর, শীলাদেবীর ঘাট, ও জিয়ৎ কুন্ডু বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য।
খোদার পাথর ভিটা একটি দীর্ঘাকার ও চৌকণাকৃতির মসৃণ পাথর, যা রাজা পরশুরাম বলি দেয়ার কাজে ব্যবহার করতেন। হিন্দু রমণীরা এই পাথরটিকে দুধ ও সিঁদুর দিয়ে স্নান করাতো। এই ধরণের মসৃণ পাথর প্রকৃতিতে পাওয়া দুষ্কর। গোকুলমেধ একটি বৌদ্ধ স্তম্ভ যেটা ‘বেহুলার বাসর ঘর’ নামেই বেশি পরিচিত।
কালিদহ সাগরে প্রতিবছরের মার্চ মাসে হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের রারুন্নীস্নান, গঙ্গাপূজা, এবং সংকীর্তন অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়৷ পরশুরামের বোন শীলাদেবীর নামে শীলাদেবীর ঘাট নামকরণ করা হয়। এই ঘাটে প্রতিবছর হিন্দুদের স্নান হয় এবং একদিনের জন্য মেলা বসে।
জিয়ৎ কুন্ডু এর আশ্চর্য ক্ষমতার জন্য জনপ্রিয়৷ পরশুরামের আহত সৈন্যরা এই কূপের পানি পান করে সুস্থ হয়ে যেত বলে বিশ্বাস করা হয়, যদিও এর সঠিক কোন ভিত্তি নেই। মহাস্থানগড়ের জাদুঘরে মৌর্য থেকে শুরু করে বিভিন্ন রাজবংশের ব্যবহৃত ধাতব পদার্থ, মূর্তি, অস্ত্র, তৈজসপত্র, শিলালিপি, এবং অলঙ্কারসহ নানা ধরণের জিনিস সংরক্ষিত আছে।
মহাস্থানগড় যেতে হলে আগে নামতে হবে বগুড়ায়। বগুড়া বাস টার্মিনাস থেকে বাস/সিএনজি/অটোরিকশা করে মহাস্থানগড় যাওয়া যাবে। এখানকার খাবারের মধ্যে কটকটি নামের মিষ্টি একজাতীয় খাবার হচ্ছে মাস্ট ট্রাই আইটেম। থাকার জন্য আবাসিক বিভিন্ন হোটেল সব বগুড়ায় আছে, মহাস্থানগড়ে নেই।
মন্তব্য করুন