আমাদের পোশাক সাধারণত আমাদের বহিরঙ্গের সৌন্দর্য্য বৃদ্ধিকারক। সুন্দর পোশাক আমাদের নিজের চোখে এবং অন্যের চোখ সুন্দর ও আকর্ষণীয় করে তোলে। অনেকে ঢিলেঢালা পোশাকে স্বচ্ছন্দ বোধ করেন অনেকে আবার স্কিনি বা টাইট ফিট পোশাক পড়তে পছন্দ করেন। তবে বর্তমান ট্রেন্ড অনুযায়ী এখন স্কিনি বা টাইট পোশাকই যুব সমাজের কাছে বেশি আকর্ষণীয়। স্কিনি জিন্স, বডি হাগিং ড্রেস, স্লিম ফিট টি -শার্ট এসবই এখন ফ্যাশন। তবে আমরা যদি কিছু সময় পিছিয়ে যাই তবে দেখবো ভিক্টরিয়ান যুগেও মহিলাদের মধ্যে কর্সেট ড্রেস এর প্রচলন ছিল।
এই স্কিনি বা টাইট পোশাক আমাদের আকর্ষণীয় করে তুললেও এর ফলাফল যে কতটা ক্ষতিকারক হতে পারে ভেবে দেখেছেন কি কখনো ? আসুন জেনে নি এই স্কিনি বা টাইট পোশাক আমাদের শরীরে কি কি ক্ষতি করতে পারে।
ক্যানডিডা ইয়াস্ট ইনফেকশন
এটি একধরণের স্কিন ইনফেকশন যা সাধারণত টাইট প্যান্ট পরার ফলে হয়ে থাকে। বেশি টাইট প্যান্ট পড়ার ফলে দীর্ঘ সময় ধরে পিউবিক অংশে হাওয়া চলাচল করতে পারেনা। ফলত অংশটি গরম ও ঘর্মাক্ত হয়ে যায়। ফলে ওই অংশে ব্যাকটেরিয়া বা ফাঙ্গাস জমে এই ধরণের ইনফেকশন হয়। যা অত্যন্ত যন্ত্রণাদায়ক হয়ে উঠতে পারে।
ব্যাক পেন
অতিরিক্ত টাইট ড্রেস। টি-শার্ট বা প্যান্ট পরে বেশিক্ষন থাকলে ঐসব অঞ্চলের নার্ভ গুলি চেপে যায়। এর ফলে আমাদের ঐসব অঞ্চলে ব্যাথার সৃষ্টি হয়। বিশেষ করে টাইট জিন্স বা লো রাইস জিন্স পড়লে এই ব্যাক পেন হওয়ার সম্ভাবনা বেড়ে যায়। এই ধরণের প্যান্ট গুলি আমাদের কোমরের মাংসপেশী গুলিতে চাপের সৃষ্টি করে আমাদের হিপ বোনের স্বাভাবিক নড়া চড়াতে বাধার সৃষ্টি করে, এছাড়া আমাদের স্পাইনের ওপর অতিরিক্ত চাপের সৃষ্টি করে।
ব্রিদিং প্রব্লেম
আজকাল সাধারণত সকলেই সবসময় পরার পোশাক হিসেবে টাইট ফিট কাপড়কেই বেঁচে নেয়। কিন্তু এর ফলে অনেকসময় আমাদের নিঃশ্বাস প্রশ্বাস এর স্বাভাবিক প্রক্রিয়াতে বাধার সৃষ্টি হয়। ফলত দেহে অক্সিজেন গ্রহণের পরিমান কমে যায়। ফলে আমাদের দেহে কার্বন ডাই অক্সাইড এর পরিমান বেড়ে যায়। বেশিক্ষন ধরে এইসমস্ত পোশাক আমাদের শরীরে সাফোকেশন এর সৃষ্টি করে। এর ফলে অনেক সময় অনেকেই জ্ঞান হারিয়ে ফেলতে পারে।
স্লো ডাইজেশন
অতিরিক্ত টাইট ড্রেস বা টাইট প্যান্ট বা স্কার্ট পরলে বা এই সমস্ত পোশাকের সাথে ব্যবহৃত বেল্ট বেশি টাইট হয় , খাবার খাওয়ার পর আমাদের অবডোমিনাল অংশটিকে চেপে রাখে। ফলত আমাদের হজমের স্বাভাবিক প্রক্রিয়াটি বাধাপ্রাপ্ত হয়। এর ফল স্বরূপ আমাদের এসিডিটি, ইনডাইজেশন ইত্যাদি নানা রকম সমস্যা হয়। এছাড়া এর ফলে কনস্টিপেশন এর সমস্যা ও হতে দেখা যায়।
স্কিন প্রব্লেম
বেশি টাইট পোশাক বা নন ব্রিদেবল কাপড় বেশিক্ষন পরে থাকলে সেই সমস্ত অঞ্চলে স্বাভাবিক রক্ত চলাচল বাধা পায়। এছাড়া অক্সিজেন চলাচল করতে পারেনা। ফলত সেখানে চুলকানি বা র্যাশ ও নানা ধরণের সমস্যা যেমন ওই নির্দিষ্ট জায়গা গুলি লাল হয়ে যাওয়া, বা ফুলে যাওয়া ইত্যাদি নানা রকমের সমস্যা তৈরী করে। এছাড়া এর ফলে শরীরে নানা অংশে যেমন পায়ের তলায়, বগলের অংশে ঘাম জমেও নানা রকম ইনফেকশন হয়ে যেতে পারে।
আবডোমিনাল পেন
টাইট জিন্স বা বডি হাগিং ড্রেস আমাদের পাকস্থলীতে চাপ সৃষ্টি করে। ফলততা পেটে ব্যাথার কারণ হয়ে দাঁড়ায়। এছাড়া চাপের ফলে হজম প্রক্রিয়াটি না হওয়ার ফলে পাকস্থলী থেকে যে অ্যাসিড নির্গত হয় তা খাদ্যনালি দিয়ে উল্টো দিকে প্রবাহিত হয়। যার ফলে আমাদের গলা বা বুক জ্বলতে শুরু করে।
থাই সিনড্রোম
ডাক্তারি ভাষায় এই রোগটিকে মেরালজিয়া পারেসথেটিকা বলা হয়। এটি একধরণের নার্ভ জনিত সমস্যা। অতিরিক্ত টাইট জিন্স বা প্যান্ট বা ফর্মাল স্কার্ট পরার ফলে অনেক সময় একটি বিশেষ নার্ভ ফেমোরাল কিউটেনিয়াস(femoral cutaneous )চাপা পরে যায়। ফলত ঐ পুরো অংশটি অনুভূতি শূন্য হয়ে যায়। ফলত অনেক্ষন টাইট পোশাক গুলি পরে এক নাগাড়ে দাঁড়িয়ে কাজ করলে বা অনেক্ষন বসে কাজ করার পর উঠে দাঁড়ানোর সময় আমাদের অসুবিধা হয়। এর ফলে পায়ে ব্যাথার সমস্যাও দেখা দিতে পারে।
এগুলি ছাড়াও আরো নানা ধরণের সমস্যা দেখা যায়। যেমন গর্ভবতী মহিলারা আঁটোসাঁটো বা টাইট পোশাক পরলে সন্তান জন্মের সময় বা পরে নানারকম সমস্যার সম্মুখীন হয়। এছাড়া আমাদের অন্তর্বাস বেশি টাইট হলেও আমাদের স্কিনে নানান ধরণের সমস্যা হয়। এছাড়া অতিরিক্ত টাইট পোশাক বেশিক্ষন পরে থাকলে আমাদের শরীরে রক্ত চলাচলের স্বাভাবিক গতিকে ব্যাহত করে। এরথেকে ভেরিকোসে ভেইন্স নামক রোগ হতে পারে। এছাড়া কখনো কখনো অতিরিক্ত টাইট পোশাক আমাদের শরীরের স্বাভাবিক গঠনকে খারাপ করে দিতে পারে।
মন্তব্য করুন