তেঁতুল হল এক প্রকারের টকফল। তেঁতুল সম্পর্কে অনেকের ভুল ধারনা আছে। যে তেঁতুল খেলে শরীরের রক্ত পাতলা হয়ে যায়। তেঁতুল খেলে নানা সমস্যা দেখা দেয়।কিন্তু এই ধারনা ভুল। সম্প্রতি একটি গবেষণা থেকে জানা গিয়েছে তেঁতুল শরীরের জন্য উপকারি একটি ফল। তেঁতুলের উপাদান সমূহ মানব শরীরের জন্য প্রয়োজনীয়।
তেঁতুলের যে সমস্ত পুষ্টিকর উপদান সমূহ থাকে তা হলঃ
ক্যালরি – ২৩৯ গ্রাম, প্রোটিন-২.৮ গ্রাম, সরকরা-৬২.৫ গ্রাম, ফাইবার-৫.১ গ্রাম, চর্বি-০.৬ গ্রাম, ফস্ফরাস-১১৩ মিলিগ্রাম, ক্যালশিয়াম-৭৪ মিলিগ্রাম, ভিটামিন সি-২ মিলিগ্রাম, ভিটামিন বি -০.৩৮ মিলিগ্রাম, ভিটামিন ই-০.১ মিলিগ্রাম, কারতিন-৬০ মাইক্রোগ্রাম, সোডিয়াম-২৮ মিলিগ্রাম, ম্যাগনেসিয়াম-৯২ মিলিগ্রাম, মিনারেল বা খনিজ পদার্থ-২.৯ গ্রাম। এই সমস্ত উপাদান তেঁতুলে থাকায় তেঁতুল শক্তিশালী জৈব যৌগ, অ্যানটিঅক্সিডেনটের কাজ করে।
তেঁতুল হল নন- স্টার্চ পলিস্যাকারাইড বা ডায়াটারি ফাইবারের চমৎকার উৎস। যা খাবার সহজে হজম করাতে সাহায্য করে থাকে। খাবার হজমের সমস্যা থাকলে তেঁতুল খেলে সেই সমস্যা দ্রুত কমে যায়। টারটারিক নামক অ্যাসিড তেঁতুলে থাকে। এই অ্যাসিড খাবার হজম করতে সহায়তা করে। পেটের সমস্যার জন্য তেঁতুল খুবই উপকারি। পেটে গ্যাস জমে গেলে তেঁতুলের শরবত বানিয়ে খেলে দ্রুত উপশম পাওয়া যায়। তেঁতুল খিদে বাড়াতে সাহায্য করে। শিশুদের পেটে কৃমির সমস্যা বেশি হয়। তেঁতুল কৃমিনাশক হিসেবে কাজ করে। পাইলসের সমস্যায় অর্থাৎ পাইলস থেকে সমাধানে তেঁতুলের ব্যবহার করা হয়। তেঁতুলে ফাইবার থাকায় কোষ্ঠ কাঠিন্য প্রতিরোধে সাহায্য করে। এক্ষেত্রে তেঁতুল জোলাপ বা কোষ্ঠ পরিষ্কারক হিসেবে কাজ করে। পিত্ত রোগ বা অ্যাসিড রিফ্লাক্সের মত পেটের রোগ প্রতিরোধে সাহায্য করে।
তেঁতুল রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে। তেঁতুলে উপস্থিত পটাশিয়াম দেহে তরলের ভারসাম্য রক্ষা করে। ফলে রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে থাকে। হার্ট রেট এই একই কারনে নিয়ন্ত্রনে থাকে। তেঁতুলে থাকে আয়রন। আয়রন লাল রক্ত কণিকার উৎপাদন স্বাভাবিক রাখে। লাল রক্ত কণিকা উৎপাদনে সাহায্য করে। তেঁতুল শরীররে কোলেসটরল জমতে দেয় না। রক্তে কোলেসটরল কম থাকে তেঁতুল খেলে। ফলে হার্ট সুস্থ্য থাকে। হার্ট অ্যাটাক হওয়ার সম্ভাবনা অনেক কমে যায়।
হাইড্রোক্সিসাইটিক অ্যাসিড থাকে তেঁতুলে। এই অ্যাসিড ওজন কমানোর পাশাপাশি ফ্যাট শরীরে জমতে দেয় না। তাছাড়া তেঁতুল সেরেটোনিন নিউরোট্রান্সমিটার বাড়িয়ে দেয় যার ফলে অতিরিক্ত খাবার ইচ্ছা কমে যায়। তাছাড়া তেঁতুল আলফা অ্যামাইলেজ এনজাইম কার্বোহাইড্রেট শোষণে বাঁধা দেয়। যা সহজে চিনি বা ফ্যাটে পরিবর্তিত হয়ে থাকে। ডায়াবেটিসের রোগীদের শরীরে অধিক মাত্রায় কার্বোহাইড্রেট গ্রহণ ইন্সুলিন ও গ্লুকোজের মাত্রা বাড়িয়ে দেয়। তেঁতুল এই ইন্সুলিন ও গ্লুকোজের মাত্রার ওঠা নামাকে খুব সহজে নিয়ন্ত্রণে রাখতে পারে।
ফাইবার থাকে তেঁতুলে। এই ফাইবার কোলন ক্যান্সার সৃষ্টিকারী জীবাণুকে খুব সহজে প্রতিরোধ করে থাকে। ফলে কোলন ক্যান্সার হওয়ার সম্ভাবনা কমে যায়। আগেও বলেছি তেঁতুলে টারটারিক অ্যাসিড থাকে। যা ফ্রি র্যাডিকেলের ক্ষতি থেকে দেহকে রক্ষা করে। ফলে ক্যান্সার হওয়ার ঝুঁকি কমে। স্কার্ভি, ঠাণ্ডা লাগা, ও ফ্লোরেসিস ইত্যাদি সংক্রামক রোগ হওয়ার থেকে তেঁতুল রক্ষা করে। প্রতিরোধ করার সাথে সাথে তেঁতুল জ্বর কমাতেও সাহায্য করে।
তেঁতুলে আছে ভিটামিন ‘এ’। ভিটামিন ‘এ’ চোখের জন্য ভালো। ভিটামিন ‘এ’ মুখে বার্ধক্য জনিত বলিরেখা পরতে দেয় না। ফলে তেঁতুল খেলে ত্বকের শুষ্কতা ও রুক্ষতা কমে যায়। ত্বকের জেল্লা বাড়ে। তাছাড়া তেঁতুলে একপ্রকার রাসায়নিক আছে যা মিউসিনের মত কাজ করে। মিউসিন কর্নিয়ার সুরক্ষা করে। ১ গ্লাস জলে ১ চামচ তেঁতুলের ক্বাথ মিশিয়ে খেলে চোখ ভালো থাকে। তেঁতুল হালকা পোড়া বা জ্বলন থেকে নিরাময়ে সহায়তা করে।
তেঁতুলের গুনাগুন বা উপকারিতা অনেক। মুখে ঘা বা ক্ষত হলে জলে তেঁতুল দিয়ে সেই জলে মুখ কুলকুচি করলে ঘা কমে যায়। গর্ভবতী মহিলাদের বমি বমি ভাব দূর করতে তেঁতুল সাহায্য করে। তেঁতুল রক্ত পরিষ্কার রাখে। তেঁতুলে বাতের ব্যথা বা জয়েন্টের ব্যাথা কমে যায়। পুরনো তেঁতুল খেলে কাশি কমে যায়। তেঁতুল পাতার ভেষজ গুন ম্যালেরিয়া জ্বর থেকে নিরাময়ের ঘরোয়া উপায়।
মন্তব্য করুন