সুন্দর ঝকঝকে সাদা দাঁতের হাসি যে কারো সৌন্দর্য বাড়িতে তুলতে সক্ষম। কিন্তু বিভিন্ন রকমের খাদ্য, নেশার বদঅভ্যাস, এবং রোগজীবাণুর কারণে দাঁতে দাগ পড়ে যায় তাড়াতাড়ি। কারো কারো আবার জন্মগতভাবেই দাঁতের পাথর হলুদ থাকে। আবার বাজারের টুথপেস্ট দাঁতকে আশানুরূপ সাদা করতেও পারেনা। কিন্তু ঘরোয়া উপায়ে অল্প খরচেই ঝকঝকে সাদা দাঁত পাওয়া সম্ভব। এই আর্টিকেল জেনে নিন দাঁত সাদা করার ঘরোয়া টোটকাগুলো, সাথে পাবেন নীরোগ দাঁত এবং সতেজ শ্বাস একদম গ্যারান্টিড।
১. লেবু ও বেকিং সোডাঃ
- দাঁত ব্রাশ করার পরে এক টুকরা লেবু দাঁতে ৫ মিনিট ধরে ঘষতে থাকুন। এরপরে কুলি করে ফেলুন। টানা ১ সপ্তাহ প্রতিদিন দুই বেলা ব্রাশ করার পরে লেবু ঘষলেই পাবেন চমৎকার ফল। এতে আছে উচ্চমাত্রার সাইট্রিক অ্যাসিড, যা প্রাকৃতিক ব্লিচিংয়ের কাজ করে। দাঁত পরিষ্কারের সাথে সাথে দাঁতের রংও ফিরে আসবে।
- লেবু ও বেকিং সোডার পেস্ট সহজে ও নিরাপদে দাঁত সাদা করার জন্য কার্যকরী একটি উপায়। বেকিং সোডা দাঁতের উপর পড়া হালকা নোংরা প্রলেপ বা দাগ দূর করে। তার সাথে এটি লেবুর অ্যাসিডিটি প্রশমিত করে।
- ১ টেবিল চামচ লেবুর রসের সাথে ১ টেবিল চামচ বেকিং সোডা মিশিয়ে পেস্ট তৈরি করে নিন। তারপরে টুথপেস্টের সাথে মিশিয়ে প্রতিদিন অন্তত ১ বার দাঁত মাজলেই হবে। দাঁতে ব্যথা থাকলে এর সাথে লবঙ্গের গুঁড়া মেশাতে পারেন। চাইলে শুধু বেকিং সোডা টুথপেস্টের সাথে মিশিয়েও ব্যবহার করতে পারেন।
- সমপরিমাণ বেকিং সোডা ও সামুদ্রিক লবণ মিশিয়ে অ্যান্টিব্যাকটেরিয়াল টুথ স্ক্রাব তৈরি করে নিন৷ ব্রাশে লাগিয়ে প্রতিদিন একবার টুথ স্ক্রাবিং করুন। মুখের অ্যাসিড ও ব্যাকটেরিয়া নির্মূল হবে এবং দাঁতের দাগও দূর হবে।
২. লবণঃ
লবণ দাঁতের মাড়ি থেকে রক্তপাত বন্ধ করে এবং দাঁত মজবুত ও সাদা করে। সকালে ও রাতে দাঁত ব্রাশ করার পরে আঙুলে একটু লবণ নিয়ে দাঁতে ৫ মিনিট ধরে ঘষুন। সবশেষে কুলি করে ফেলুন। এক সপ্তাহ এভাবে ব্যবহার করলেই পেয়ে যাবেন কাঙ্ক্ষিত সাদা দাঁত।
৩. স্ট্রবেরিঃ
তিনটি পাকা স্ট্রবেরি ভালো করে শুকিয়ে গুঁড়া করে সাথে এক চিমটি লবণ মিশিয়ে নিন। এবারে ব্রাশে স্ট্রবেরি গুঁড়া লাগিয়ে দাঁত ব্রাশ করুন। ৫ মিনিট পেস্ট মুখে রেখে তারপর ধুয়ে ফেলুন। এরপরে এক চিমটি সোডিয়াম বাইকার্বোনেট পানিয়ে গুলিতে কুলি করে মুখ ধুয়ে ফেলুন। স্ট্রবেরিতে থাকা অ্যাসিডিক উপাদান হালকাভাবে দাঁতকে ব্লিচ করে। এটি দিয়ে ব্রাশ করার পরে সোডিয়াম বাইকার্বোনেট বা বেকিং সোডা ব্যবহার না করলে দাঁতের অ্যাসিডিটি এবং অন্য যেকোন ধরণের ক্ষতি হতে পারে। দাঁতে ব্যবহারের বদলে নিয়মিত স্ট্রবেরি খেলেও উপকার পাবেন।
৪. নারিকেল তেলঃ
আপনি কি জানেন নারিকেল তেল দাঁতকে সাদা ও জীবাণুমুক্ত করে? না জেনে থাকলে আজই মাউথওয়াশ হিসেবে ব্যবহার করা শুরু করে দিন এই তেল। প্রাচীন ভারতীয় পদ্ধতি স্বীকৃত এই মাউথওয়াশ ব্রাশের পরে মুখে কয়েক মিনিট রেখে কুলকুচি করবেন এবং পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলবেন। এটি দাঁতের প্লেক, হলদেটে ভাব, এবং মাড়ির রোগ হ্রাস করতে সাহায্য করে। চাইলে ব্রাশে খানিকটা তেল মেখেও দাঁত মাজতে পারেন।
৫. ফলের খোসাঃ
ফল খাওয়ার পরে এর খোসা আর্বজনা ছাড়া আর কিছুই হয় না। মজার ব্যাপার হচ্ছে, ফলের খোসা থেকেও হতে পারে দাঁত ঝকঝকে সাদা, যা আমাদের অনেকেরই অজানা। পরিষ্কার দাঁত পাওয়ার জন্য বেছে নিতে পারেন কমলার খোসা। এই খোসায় কোন অ্যাসিডিক উপাদান থাকেনা কিন্তু লিমোনিন থাকে।
লিমোনিন হচ্ছে ন্যাচারাল সলভেন্ট ক্লিনার যা কর্মাশিয়াল বিভিন্ন টীথ হোয়াইটেনিং প্রোডাক্টে ব্যবহার করা হয়। কমলার খোসা দাঁতের এনামেলকেও রাখে সম্পূর্ণ নিরাপদ। প্রতিদিন এই খোসার ভিতরের দিকটা দাঁতে ঘষতে পারেন, দাঁত হবে আরো সাদা এবং আরো শক্তিশালী।
কলার খোসাও কিন্তু কমলার খোসা মতো সমান উপকারী। দাঁতের হলদেটে ভাব দূর করার জন্য কলার খোসা নিয়মিত ব্যবহার করতে পারবেন। খোসার ভিতরের সাদা অংশ দাঁতে ঘষবেন কমপক্ষে এক সপ্তাহ। তবে একটি কথা, ফলের খোসা দাঁতে ব্যবহার করার পরে অবশ্যই হালকা গরম পানি দিয়ে কুলকুচি করবেন।
৬. তুলসী ও সরিষার তেলঃ
তুলসীপাতা ও সরিষার তেলের কম্বিনেশনে আছে অ্যান্টিব্যাকটেরিয়াল, অ্যান্টিফাঙ্গাল, এবং অ্যান্টিইনফ্লেমেটরি উপাদান। এগুলো দ্রুত দাঁত সাদা এবং মুখের ভিতরের রোগজীবাণু দমনে সহায়তা করে। শুকনো তুলসীপাতার গুঁড়া বা তাজা তুলসীপাতা বাটার সাথে সরিষার তেল মিশিয়ে পেস্ট করে নিন। এরপর ব্রাশে লাগিয়ে দাঁতে প্রয়োগ করুন৷ কয়েকদিন নিয়মিত ব্রাশ করলে ভালো ফল পাবেন।
৭. অ্যাক্টিভেটেড কাঠকয়লাঃ
প্রাকৃতিক টীথ হোয়াইটেনিং এজেন্ট হিসেবে অ্যাক্টিভেটেড কাঠকয়লার জুড়ি নেই। এই কয়লা তৈরি হয় অক্সিজেন, ক্যালসিয়াম ক্লোরাইড, এবং কাঠকয়লার বিশেষ প্রক্রিয়াকরণের মাধ্যমে। চা, কফি, ওয়াইন থেকে ট্যানিন নামক এক পদার্থ দাঁতে দাগ ফেলে দেয়। অ্যাক্টিভেটেড কয়লা দাঁত থেকে ট্যানিন শুষে নেয়ার জন্য সর্বোত্তম। ব্রাশে অ্যাক্টিভেটেড কাঠকয়লার পাউডার লাগিয়ে নিয়মিত দাঁত মাজবেন।
৮. অ্যাপেল সিডার ভিনেগারঃ
অ্যাপেল সিডার ভিনেগারের অ্যান্টিব্যাকটেরিয়াল যেমন স্বাস্থ্যের জন্য ভালো, তেমনি দাঁতের দাগ দূর করার জন্যও সমান উপকারী। ১ টেবিল চামচ অ্যাপেল সিডার ভিনেগার দিয়ে দাঁত ব্রাশ করুন। তারপরে এই ভিনেগারকেই মাউথওয়াশ হিসেবে ব্যবহার করুন নির্মল শ্বাস পাবার জন্য এবং মাড়ির ব্যাকটেরিয়া দূর করার জন্য। তারপর পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলবেন। অথবা শুধু ভিনেগার দাঁতে ২ মিনিট ঘষে পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলতে পারেন।
৯. হলুদ গুঁড়াঃ
১ টেবিল চামচ হলুদ গুঁড়া প্রথমে আঙুলের সাহায্যে দাঁতে ঘষুন তারপরে ভালোমতো ব্রাশ করে মুখ ধুয়ে ফেলুন। হলুদে আছে অ্যান্টিব্যাকটেরিয়াল, অ্যান্টিইনফ্লেমেটরি, এবং অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট উপাদান। এটি মৃদুভাবে দাগ দূর করে দাঁতকে ইনস্ট্যান্টলি সাদা বানায়। তাছাড়া এটি মাড়ির রোগের চিকিৎসায়ও দারুণ কার্যকরী। তবে সাবধান, ঠিকমতো ব্রাশ না করলে এই গুঁড়াই দাঁতের ফাঁকে জমে আরো ক্ষতি করবে।
১০. হোমমেইড টুথপেস্টঃ
বাজারের টুথপেস্টের বদলে ঘরেই বানিয়ে ফেলতে পারেন দাঁত সাদা করার জন্য কার্যকরী হোমমেইড টুথপেস্ট। কি কি লাগবে এবং কিভাবে বানাবেন দেখে নিন চটজলদি।
১১. তেজপাতার টুথপেস্ট
- তেজপাতা বাটা বা মিহি গুঁড়া করা – ২ টেবিল চামচ
- কমলার খোসা বা পাতিলেবুর খোসা গুঁড়া – ২ টেবিল চামচ
- লবঙ্গ – ২-৩টি
- লবণ – ১ চিমটি
- জল – পরিমাণমতো
তেজপাতা বাটা/গুঁড়ার সাথে কমলা বা পাতিলেবুর খোসা গুঁড়া মিশিয়ে নিন। সাথে লবঙ্গও গুঁড়া করে মিশিয়ে নিবেন। তবে মুখে দুর্গন্ধের সমস্যা বা মাড়ির ব্যথা না থাকলে লবঙ্গ দেয়ার দরকার নেই। তারপরে লবণ আর পরিমাণমতো পানি মিশিয়ে পেস্ট বানিয়ে নিন।
সপ্তাহে সর্বোচ্চ ৩ দিন একবেলা বা দুইবেলা এই পেস্ট দিয়ে ব্রাশ করুন, যদি দাঁত বেশি হলুদ থাকে। হলদে ভাব কম থাকলে ২ দিন ব্যবহার করলেই হবে। প্রতিদিন ব্যবহার করবেন না, তাতে দাঁতের ক্ষতি হতে পারে।
১২. তেলের টুথপেস্ট
- নারিকেল তেল – ১ টেবিল চামচ
- পিপারমিন্ট অয়েল – ১ ফোঁটা
- বেকিং সোডা – ১ টেবিল চামচ
- লেবুর রস – আধা চা চামচ
সব উপকরণ একসাথে মিশিয়ে সপ্তাহে ২ দিনের বেশি ব্যবহার করবেন না৷ এই পেস্ট একইসাথে টীথ হোয়াইটেনিং, অ্যান্টিব্যাকটেরিয়াল, এবং অ্যান্টিইনফ্লেমেটরি।
মন্তব্য করুন