ছোটদের পড়তে বসানো নিঃসন্দেহে খুব কঠিন একটা কাজ। আসলে ছোটরা তো তাদের খেয়াল খুশিমতো চলতে পছন্দ করে, তাই পড়াশোনা করার জন্য যে নুন্যতম মনোসংযোগের প্রয়োজন হয়, সেটুকুও তাদের নেই। আর তার ওপর বাচ্চা যদি চঞ্চল হয় তাহলে তো বাবা-মায়েদের আরও বেগ পেতে হয়।
১. প্রথমে সহজ বিষয়ে পড়ান
শুরু করতে পারেন মাতৃভাষা দিয়ে। মাতৃভাষার থেকে গুরুত্বপূর্ণ পাঠ জীবনে আর কীই বা হতে পারে। একটি শিশু মাতৃভাষায় দক্ষ হলেই কিন্তু তাকে বাকি সকল জটিল-কঠিন বিষয় পাঠ দান করাটা সহজ হয়। তাই খেলার ছলেই ছোটদের ছড়া বা কবিতা শেখান। নিত্যনতুন ছড়ায় শিশুর আগ্রহ জাগবে।

২. আপনার শিশুর প্রতিভাকে উৎসাহ দিন
পড়াশোনা ছাড়া আপনার শিশুর নিশ্চয় অন্যান্য অনেক বিষয়ে আগ্রহী। এই যেমন ধরুন নাচ, গান, আঁকা আরও অনেককিছু। পড়াশোনার জন্য তাদের এইসব ক্ষেত্রে প্রতিভাগুলিকে অনুৎসাহিত করবেন না। এতে কিন্তু তাদের ওপর চাপ তৈরি হয়ে হিতে বিপরীত হতে পারে।
৩. পড়াশোনার সঠিক পরিবেশ গড়ে তুলুন
পড়াশোনার উপযু্ক্ত পরিবেশ বাড়িতে গড়ে তোলাটা খুবই জরুরী। যেমন ধরুন শিশুর পড়ার ঘরে কখনওই যেন টিভি না থাকে। পড়তে বসার সময় তার সামনে কোনও খেলনা রাখবেন না, এতে কিন্তু শিশুর মনোযোগ নষ্ট হতে পারে। তাই পড়াতে বসার আগে পড়ার উপযোগী একটা পরিবেশ অবশ্যই গড়ে তুলুন।
৪. মা-বাবা, সন্তানের প্রতি একটু সহনশীল হোন
প্রথম প্রথম পড়তে বসার সমময় শিশুরা অনেক দুরন্তপনা করে। কথা শোনে না, জেদ করে এমনকি কান্নাকাটিও করে। এতে পড়াশোনার ইচ্ছাটাই চলে যায়। তাই এক্ষেত্রে মা কিংবা বাবা যেই সন্তানকে পড়ান না কেন আপনার তরফে একটু সহনশীলতা কিন্তু একান্ত কাম্য। বকাবকি করে তাদের ইচ্ছেটাকে আরও নষ্ট করে দি আমরা অনেকেই। তাই বকাবকি করবেন না।
৫. নিত্যনতুন কৌশল প্রয়োগ করুন
ছোটদের কাছে পড়াশোনা বিষয়টা খুবই ভয়ঙ্কর লাগে। আর পড়াশোনার সেই ভীতি কাটিয়ে ওঠান জন্য আপনাকে নিত্যনতুন কৌশল অ্যাপ্লাই করতে জানতে হবে। যেমন ধরুন। বাংলা বা ইংরেজির ক্ষেত্রে কোনও গল্প বা কবিতা আপনার শিশুকে আপনি পড়ে শোনালেন, তারপর তাকে পড়তে দিন। বা অঙ্কের ক্ষেত্রে যদি নামতা পড়ান তাহলে খাতায় ছক কেটে শূণ্যস্থান পূরণ করতে দিন। একঘেয়ে পড়ার রীতি থেকে এই পদ্ধতি কিন্তু কাজে দেবে।

৬. নিত্যনতুন অভিজ্ঞতার সম্মুখীন হতে শেখান
মনোবিদরা বলেন গতানুগতিক জীবন কিন্তু শিশুর মনে আলস্য ডেকে আনে। তাই প্রত্যেকদিন একটা নির্দিষ্ট সময় পড়তে বসালে শিশু যদি কান্নাকাটি বা জেদ করে, তাহলে অফ টাইমে শিশুকে নিয়ে বসুন। পাঠ্য বইয়ের বাইরে ব্যক্তিগত স্বাস্থ্যবিধি এই যেমন হাত-মুখ ধুয়ে পড়তে বসা, পড়ার মাঝে চোখে মুখে জল দেওয়া এইসব শেখান, দেখবেন পড়ায় একঘেয়েমি কেটে গিয়েছে।
৭. বারবার পাঠ্য বই আওড়ানো নয়

কোনও একটা পড়া ধরুন অনেকক্ষণের প্রচেষ্টার পর আপনার শিশুকে আপনি শিখিয়েছেন, তার মানে কিন্তু এই নয় যে, ঘুরতে ফিরতে তাকে ওই একই পড়া জিজ্ঞাসা করবেন। বারবার এক প্রশ্নের উত্তর দিতে দিতে শিশুরা বিরক্ত হয়ে যেতে পারে। তাই খেলার সময় যেমন খেলা তেমনই পড়াশোনার সময়েই তাদের সঙ্গে পড়ার কথা বলুন।
8. পুরস্কার দিন
কোনও টাস্ক দিয়ে একটা পুরস্কার ঘোষণা করুন। এই যেমন নামতা মুখস্থ করে ফেলতে পারলে বা নির্ভুল বানান লিখলেই পুরস্কার। পুরস্কারে থাকুক চকোলেট বা চিপস। তবে হ্যাঁ ঘন ঘন একেবারেই নয়। সপ্তাহে একদিন করে পুরস্কার ঘোষাণা করা যেতেই পারে।
৯. ইতিহাসে ভয় দূর হোক গল্পের ছলে
ইতিহাস নাম শুনলেই অনেক শিশু আতঙ্কিত হয়। এত নাম, সাল, তারিখ মনের মধ্যে ঘেঁটে যায়। সেক্ষেত্রে ইতিহাসের গল্পগুলি প্রতিদিন তাকে খেলার ছলে গল্প করে শোনান। ঘাড় ধরে পড়তে বসানোর চেয়ে গল্প করে কোনোকিছু শেখালে তা কিন্তু বেশি ভালো করে মাথায় থাকে।
১০. ভুল শুধরে দিন খেলার ছলে
শিখতে গেলে ভুল হবেই। এতে হতাশার কিছু নেই। কিন্তু ধরুন কোনও একটা বিষয়ে আপনার শিশু দিনের পর দিন একই ভুল করে চলেছে। সেক্ষেত্রে আপনাকেই এমন কোনও কৌশল অ্যাপ্লাই করতে হয় যাতে ঠিক কোনটা তা আপনার শিশুর মনে গেঁথে যায়। তবে সেই কৌশল কী হবে তা আপনাকেই ঠিক করতে হবে। ভুল হলে বকাবকি বা মারধর কিন্তু কখনওই করবেন না, এতে যাও বা সে চেষ্টা করছিল, সেই আগ্রহটুকুও নষ্ট হয়ে যাবে।
সব শেষে বলবো আপনার সন্তানকে ভালো করে বুঝুন, যদি সেটা করতে পারেন তাকে তার মত করে আপনি অনায়াসে পড়াশোনা করিয়ে নিতে পারবেন।
মন্তব্য করুন