আবহাওয়ার পরিবর্তনে স্কিনেরও পরিবর্তন হয়। আর স্কিন অয়েলি হলে তো কথাই নেই আরও তেলতেলে লাগে। বাইরে বেরলেই মুখ কালো। আবার সেনসিটিভ স্কিনে রাশ, ব্রন লেগেই আছে। তাই আজ এনেছি সমস্ত স্কিন টাইপ এর জন্য বেসিক স্কিন কেয়ার রুটিন। যেটা প্রত্যেকর জেনে রাখা দরকার।
১. ফেসওয়াশ বদলানোর সময় এসেছে
শীতের তুলনায় গরমকালে মুখ অনেক বেশী অয়েলি হয়ে যায়। আর অয়েলি স্কিন হলে তো কথাই নেই। তাই স্কিন যদি অয়েলি হয় তাহলে ফোমিং ফেসওয়াশ ভালো। স্কিন ড্রাই হলে ভালো কোন মাইল্ড ফেসওয়াশ ব্যবহার করুণ। যাতে সাবানের পরিমাণ কম। কম্বিনেশন স্কিনের ক্ষেত্রেও এটা প্রযোজ্য। আর নর্মাল স্কিনের জন্য জেল ফেসওয়াশ ভালো হবে।
২. স্কিনের দরকার একটু অ্যান্টি অক্সিডেন্ট
সবুজ শাকসবজি, গ্রীন টি থেকে তো অ্যান্টি অক্সিডেন্ট পেতেই পারেন। এছাড়াও ব্যবহার করতে পারেন সিরাম। যেটা স্কিনকে ভেতর থেকে ঠিক রাখে। এক্ষেত্রে ভিটামিন সি ফেস সিরাম ভালো। যেটা স্কিনকে বাইরের দূষণ, ধুলো থেকে রক্ষা করে। স্কিনের বুড়িয়ে যাওয়া রোধ করে। স্কিনকে ভেতর থেকে উজ্জ্বল রাখতে সাহায্য করে। রাতে মুখ পরিষ্কার করে টোনার লাগানোর কিচ্ছুক্ষণ পর সিরাম লাগান। তার কিচ্ছুক্ষণ পর ময়েশ্চারাইজার।
৩. সানস্ক্রিন ভুললে চলবে না
রোদের ইউভি রে থেকে স্কিন ভীষণ ড্যামেজ হয়। ট্যান তো আছেই, এছাড়াও বয়সের আগেই স্কিন বুড়িয়ে যায়। এমনকি স্কিন ক্যান্সার পর্যন্ত হতে পারে। তাই রোদে বেরোবার মিনিট ১৫ আগে সানস্ক্রিন লাগিয়ে নিন। অন্তত এসপিএফ ৩০ সানস্ক্রিন ব্যবহার করার চেষ্টা করুণ। এর কম এসপিএফ চড়া রোদে লাগিয়ে তেমন লাভ নেই। বাইরে ঘোরার কাজ থাকলে দিনে দুবার সানস্ক্রিন ব্যবহার করুণ।
৪. বেশী করে ফল ও শাকসবজি
স্কিনকে সুন্দর রাখতে শুধু ওপর থেকে ক্রিম বা অন্যান্য প্রোডাক্ট লাগালেই হবে না। স্কিনেরও দরকার পুষ্টি। যেটা প্রতিদিন শাকসবজি, ফল থেকে পাবেন। এগুলো রোজ খান। এগুলো থেকে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট তো পাবেনই সাথে, গুরুত্বপূর্ণ ভিটামিনস, নিউট্রিয়েন্ট যেটা স্কিনের দরকার।
৫. স্কিনকে রাখুন হাইড্রেটেড
জল খাবার পরিমাণ বাড়িয়ে দিতে হবে। জল স্কিনকে ভেতর থেকে রাখবে হাইড্রেটেড। এছাড়াও জল শরীরকে পরিষ্কার রাখে। যত জল খাবেন শরীর থেকে টক্সিন বেড়িয়ে যাবে। যেটা স্কিনকে ড্যামেজ করে। মুখে ব্রন কালচেভাব ও অন্যান্য সমস্যার জন্য দায়ী এই টক্সিন। তাই স্কিনকে পরিষ্কার ও হাইড্রেটেড রাখতে পরিমিত জল একান্ত দরকার।
৬. বেশী ভারী মেকআপ নয়
গরমকালে ভারী মেকআপ স্কিন নিতে পারে না। যেখানে বাইরের আবহাওয়া খুব গরম ও আর্দ্র সেখানে স্কিনে যাতে হাওয়া চলাচল করতে পারে সেই ব্যবস্থা রাখতে হবে। তাই হালকা মেকআপ করুণ আর স্কিনকে শ্বাস নিতে দিন।
৭. এক্সফলিয়েট করা জরুরী
গরমকালে স্কিনে অনেক বেশী তেল, ময়লা, ধুলো, মৃত কোষ জমে। যেগুলো খালি একটা ফেসওয়াশ দিয়ে ভালোভাবে পরিষ্কার হয় না। তাই দরকার স্কিনকে এক্সফলিয়েট করা। সপ্তাহে অন্তত দুদিন এটা করুণ।
৮. সাথে রাখবেন টোনার
গরমকালে স্কিনের যত্নে অবশ্যই রাখতে হবে টোনার। সারাদিন পর বাড়ি ফিরে ক্লিঞ্জার দিয়ে মুখ পরিষ্কার করার পর টোনার ব্যবহার করুণ। ভালো টোনার যেমন স্কিনকে ওয়েল ফ্রী রাখতে সাহায্য করে তেমনই পরিষ্কারও রাখে।
৯. রাতে ময়েশ্চারাইজার
অনেকেই ভাবেন গরমকালে আবার ময়েশ্চারাইজার লাগে নাকি। এটা শুধু শীতকালে। এটা ভুল ধারণা। স্কিনের ময়েশ্চারকে ধরে রাখতে সারাবছর ময়েশ্চারাইজার দরকার। নাহলে স্কিন শুকিয়ে যাবে। কিন্তু গরমে নিশ্চয়ই শীতের ক্রিমটা চলবে না, তাই ব্যবহার করুণ হালকা ওয়েল ফ্রী ময়েশ্চারাইজার। গরমের ময়েশ্চারাইজার আলাদা হয় শীতেরটাই চালিয়ে দিলে হবে না।
১০. পায়ের যত্ন ভুললে চলবে না
আমরা সবাই মুখের যত্ন তো করি। কিন্তু পা? পায়ের যত্ন প্রায় ভুলেই যাই। তাই পায়ের স্কিনও ড্রাই হয়ে ফেটে যায়। গরমকালে বেশী করে পায়ের স্কিনের যত্ন করা উচিত। কারণ গরমকালে অনেকেই খোলা জুতো পরেন। শীতে মোজা, ঢাকা জুতো পাকে কিছুটা রক্ষা করে। গরমকালে সেটা হয়না। তাই বাড়ি ফিরে পাও ভালো করে পরিষ্কার করা দরকার। এরপর কোন ফুট ক্রিম বা ময়েশ্চারাইজার পায়ের পাতাতেও লাগিয়ে নিন। এবং সানস্ক্রিন পায়েও লাগান যদি খোলা জুতো পরেন।
১১. স্কিনকে রেস্ট দিন
স্কিন ভালো রাখতে প্রতিদিন সঠিক ঘুম দরকার। রাতে ৭ থেকে ৮ ঘণ্টা ঘুম জরুরী। এইসময়ই স্কিন নিজেকে সারিয়ে তোলে। মৃত কোষের বদলে নতুন কোষ জন্মায়। রাতে ঠিকমত না ঘুমলে এমনই দেখতে ভালো লাগে না। চোখের তলায় কালি ও স্কিনেরও ক্ষতি হয়। স্কিন তাড়াতাড়ি বুড়িয়ে যায়। তাই শরীর তথা স্কিঙ্কে পর্যাপ্ত সময় রেস্ট দিন।
১২. চোখের চারপাশটা এড়িয়ে যাবেন না
বয়স হলে চোখের চারপাশই আগে জানান দেয়। চোখের চারপাশের স্কিন কুঁচকে যায়। তাই এই জেয়গায় বেশী যত্ন দরকার। রাতে শোবার আগে আন্ডার অ্যাই ক্রিম ব্যবহার করুণ। ক্রিম একদম হালকা হাতে চোখের চারপাশে ম্যাসেজ করুণ। চোখের চারপাশের স্কিন খুবই নরম হয় তাই চাপ দেওয়া উচিত নয়। এছাড়াও শসা, আলু বা টম্যাটোর রস লাগাতে পারেন। তিনটে একসাথে লাগাতে পারলে খুবই ভালো। এটা চোখকে ঠাণ্ডা রাখে। চোখের চারপাশের মাসেলকে আরাম দেয়।
১৩. ব্যবহার করতে পারেন হাইড্রেটিং স্প্রে
গরমকালে ঠাণ্ডা ফেসিয়াল স্প্রে খুব ভালো স্কিনকে ঠাণ্ডা রাখতে। এটা কিনে নিতে পারেন বা বাড়িতে বানিয়েও নিতে পারেন।
একটি মিডিয়াম শসার রস করে নিন। এবার এতে এক চামচ লেবুর রস, এক চামচ গোলাপজল এবং ১চামচ পুদিনার রস দিন। সবটা ভালো করে মিশিয়ে নিন। একটা স্প্রে বোতলে ভরে রাখুন। এটা ব্যাগে রাখুন দিনে দু তিনবার স্প্রে করতে থাকুন। বাড়িতে ফ্রিজে রেখে দিন।
১৪. চোখের প্যাক
চোখের চারপাশের স্কিন ভালো রাখতে এই প্যাক ব্যবহার করতে পারেন। এতে চোখ ঠাণ্ডা থাকবে। চোখের চারপাশের স্কিনকে থাকবে হাইড্রেটেড।
কিছু পুদিনা পাতা থেঁতো করে নিন। রস বার করে নিন। এরসাথে শসার রস মেশান। তারপর কিচ্ছুক্ষণ এটা ফ্রিজে রেখে দিন। একটু ঠাণ্ডা হলে এবার তুলোয় করে নিয়ে এটা চোখের ওপর দিয়ে রাখুন। মিনিট ১৫ রাখুন।
মন্তব্য করুন