ইসলাম ও খ্রিস্টধর্ম পুনর্জন্ম না মানলেও আমাদের সনাতন হিন্দু ধর্মে পুনর্জন্মের বিষয়টি দৃঢ়তার সাথেই মানা হয় আর পুনর্জন্মের এই বিষয়টি পুরোপুরি নির্ভর করে কর্মফলের উপর। যে যেমন কর্ম করে সে সেইরকম ফল ভোগ করার জন্যই মৃত্যুর পর অপর যোনি প্রাপ্ত হয়। এখন আধুনিক মনস্ক অনেক মানুষ আছেন যারা মৃত্যুর পর পুনর্জন্মের বিষয়টিতে বিশ্বাস করেন না, তবে এই বিষয়টি কিন্তু প্রমানিত সত্য।
এমন বহু মানুষ আছেন যারা জাতিস্মর হয়ে জন্মেছিলেন এবং পরলোক ও পুনর্জন্মের সত্য ঘটনা বর্ণনা করে গিয়েছেন। ‘কল্যান’ পত্রিকার বিশেষ সংখ্যায় স্বর্গীয় রামশরণদাসজী মহাশয় পরলোক ও পুনর্জন্মের কিছু সত্য ঘটনাবলী সংগ্রহ করে তা ক্রমান্বয়ে প্রকাশ করেছিলেন। আজকে সেই সকল সত্য ঘটনাবলীর মধ্যে থেকে একটি ঘটনার কথা তুলে ধরবো আপনাদের সামনে।
এই ঘটনার সত্যতা!
দিল্লির ‘হিন্দুস্থান’ নামক দৈনিক পত্রিকায় ১৯৬৬ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি এই পুনর্জন্মের ঘটনাটি প্রকাশিত হয়েছিল, যেখানে এমন একজন ব্যক্তির পুনর্জন্মের কথা তুলে ধরা হয়েছিল যিনি পরপর তিন জন্মের সত্য কাহিনী ব্যক্ত করেছিলেন। জাতিস্মর রূপে জন্ম গ্রহণ করা সেই ব্যক্তি প্রথম জীবনে ছিলেন স্কুল মাস্টার, তারপরের জীবনে তিনি গরু হয়ে জন্মান ও তৃতীয় জন্ম গ্রহণের সময় যোনি পরিবর্তিত হয়ে তিনি এক বালিকার রূপে জন্মগ্রহণ করেন। কিন্তু আশ্চর্যের বিষয় হলো এই যে, তার তিন জন্মের কথায় হুবহু মনে ছিল এবং পরবর্তীকালে তার বাড়ির লোক এই ঘটনার সত্যতা যাচাই করতে গিয়ে হাতেনাতে প্রমাণ ও পেয়েছিলেন।
চঞ্চলকুমারীর সত্যি কাহিনি
চঞ্চলকুমারী নামের সেই বালিকা নিজের পূর্ব জন্মের ঘটনা বলে মা-বাবা ও গাঁয়ের লোকদেরকে অবাক করে দিয়েছিলো। তার মা একদিন প্রতিবেশীদের ঘরে সৎসঙ্গ শুনতে গিয়েছিলেন। যখন নাম গান শুনে তিনি ফিরে আসেন তখন চঞ্চল কুমারী তাকে জিজ্ঞেস করে, ‘ মা কি শুনে এলে? ’
এরপর মা উত্তর দেন, ‘ আমার কিছু মনে নেই। ’ মেয়ে তখন মাকে অবাক করে বলে যে, ‘ মা ! তুমি তো এর মধ্যেই ভুলে গেলে কিন্তু আমার তো আগের জন্মের সব কথা মনে আছে। ’
প্রথম জন্মের কথা?
৯ বছরের সেই মেয়ে চঞ্চল কুমারী তখন তার পূর্ব জন্মের কথা বলতে শুরু করে, “ আগের জন্মে আমি পানিপথের এক স্কুলে মাস্টার ছিলাম। আমার নাম তখন ছিল কৃষ্ণলাল। আমার বাবার নাম ছিল রামপিয়ারা নাগপাল। ২৫ বছর বয়সে পেটের রোগে আমি মারা যাই। আমার বিয়ের সম্বন্ধ হয়েছিল কিন্তু বিয়ে হয়নি। আমার ভাইদের নাম আমার মায়ের নাম সব মনে আছে আমার। ”
প্রথম জন্মের কথা বলার পর চঞ্চলকুমারী তার দ্বিতীয় জন্মের কথাও বলে। তার কথায়, কৃষ্ণলাল মারা যাবার পর পরবর্তী জন্মে সে গোরু হয়ে একটি মুসলমান পরিবারে জন্মগ্রহণ করেছিল। গোরুটা কম দুধ দিতো বলে একদিন তার মালিক তাকে লাঠি দিয়ে বেধড়ক পেটাতে থাকে, এইভাবে বেধড়ক পেটানোর ফলে গোরুটা মারাত্মকভাবে জখম হয়ে মারা যায়। গোরু রূপে মরবার পর সে পুরবাঁপুর গ্রামে চঞ্চল কুমারী হয়ে জন্মেছে।
নিজের স্কুলের বিল্ডিং দেখে সে চিনতে পারে
এরপর চঞ্চলকুমারী তার বাড়ির লোকদেরকে জেদ করতে থাকলে তার বাড়ির লোকজন তাকে পানিপথ নিয়ে গিয়েছিল। পানিপথে নিজের স্কুলের বিল্ডিং দেখে সে চিনতে পারে ও তার পুরনো ঘরও সে সকলকে চিনিয়ে দেয়। উল্লেখ্য চঞ্চল কুমারীর আগের জন্মের আত্মীয়-স্বজনরা এখন আর কেউ পানিপথে থাকেন না।
এই গলিতে কয়েক বছর আগে একজন স্কুল মাস্টার সত্যিই থাকতেন!
তারা সকলেই রোজগারের জন্য অন্যত্র চলে গিয়েছিলেন। তবে চঞ্চল কুমারীর কথা যে সত্য সেই প্রমান ও মিলেছে স্থানীয় লোকদের কথায়। সেই অঞ্চলের কিছু লোকেরা এরপর জানায় যে, এই গলিতে কয়েক বছর আগে একজন স্কুল মাস্টার সত্যিই থাকতেন যিনি পেটের যন্ত্রনায় মারা গিয়েছিলেন।
তবে বন্ধুরা শুধু চঞ্চলকুমারীই একমাত্র নন, এরকম আরও বহু জাতিস্মরের সত্য ঘটনার কথা রামশরণদাসজি মহাশয় তার গ্রন্থে উল্লেখ করেছেন। তোমাদের ভালো লাগলে কমেন্টে জানিও, বাকি গল্পগুলোও না হয় অন্য আরেকদিন বলবো।
মন্তব্য করুন