সৌরভ গাঙ্গুলি যদি মাঠের ক্যাপ্টেন হতে পারেন, তাহলে আপনি কেন ঘরের ক্যাপ্টেন হতে পারবেন না! আজ্ঞে হ্যাঁ। স্বয়ং সৌরভ গাঙ্গুলি মনে করেন একথা। তা দাদার পক্ষে এ কথা ভাবাই স্বাভাবিক। মাঠে যিনি অমন নিপুণভাবে সামলাতেন সবকিছু, তাঁর ঘরের গৃহবধূদের দেখে ক্যাপ্টেন বলে তো মনে হবেই। ভাবুন তো, আপনি কি নিজেও নিজেকে ক্যাপ্টেন বলবেন না?
বাইশ গজের ব্যাটলফিল্ড হয়
সকালে উঠে রান্না করছেন, বর, শ্বশুর-শাশুড়ির দেখভাল করছেন, বর-ছেলের টিফিন করে দিচ্ছেন, তাদের হাতের কাছে সবকিছু গুছিয়ে দিয়ে, তারপর আপনি অফিস যাচ্ছেন। আবার এসে সংসার সামলাচ্ছেন। ছেলে-মেয়ের হোমওয়ার্ক দেখছেন, আবার রাতে বিছানায় কর্তাবাবুকেও সন্তুষ্ট করছেন! আর আপনি যদি গৃহবধূ হন? ঘরের চার দেওয়ালই যদি আপনার বাইশ গজের ব্যাটলফিল্ড হয়! তাহলে সেখানেও আপনি সমান তালে ব্যাট করে যান। কেমন অনায়াসে!
সংসারের দশভুজা
রান্নাবান্না, সক্কলকে খেতে দেওয়া, সবাইকে সামলানো, আবার সবার মন যোগানো! আপনার ব্যাট থেকে চার-ছয় বেরোতেই থাকে! ভাবুন তো, মেয়েদের তো চিরকালই মা দুর্গার সাথে তুলনা করা হয়ে এসেছে। কেন বলুন তো? ওই যে মা দুর্গাকে তো দশভুজা বলা হয়েই থাকে। দশ হাতে তিনি দশ অস্ত্র ধরে অসুরকে মারেন। আবার দশ হাতে তিনি সামলানও। তাঁর পাগলা স্বামী শিবকে। সংসারকে।
আম্পায়ারের আঙুল তুলে আউট বলারও সাধ্য নেই
ভাবুন তো আপনারা যদি ওই দশ হাতে সংসারটাকে না আঁকড়ে ধরতেন তাহলে কিই না হত! বাড়ির ছেলেরা মুখে বলেন না ঠিকই, কিন্তু মনে মনে তাঁরাও যে জানেন এই হক কথাটি। বাড়ির বাইরে তিনি একমেবাদ্বিতীয়ম ক্যাপ্টেন হতে পারেন, কিন্তু ঘরের ক্যাপ্টেনসি যে আপনারই হাতে! সেখানে আপনারই কথা শেষ কথা। আপনারই সিদ্ধান্ত শেষ সিদ্ধান্ত। সেখানে আম্পায়ারের আঙুল তুলে আউট বলারও সাধ্য নেই!
আচ্ছা এবার নাহয় ভাবুন একটু যে ঘরের গৃহবধূরা আসলে কি কি কাজ করেন? আপনি ভাবছেন যে ঘরের কাজ আর কি এমন কাজ! এ তো সব মেয়েদেরই করতে হয়, এটাই স্বাভাবিক। উঁহু। ওখানেই যে আপনি একটু ভুল করে ফেললেন। কেউ কিন্তু বলে দেয়নি কোথাও যে ‘ঘরের কাজ’ একমাত্র মেয়েরাই করবে। ছেলেরাও করতে পারে।
কিন্তু ঘরের কাজ যে আসলে মেয়েরাই করবে এটা হয়েই আসছে অভ্যেসের মতো। আর আমরাও এটাকে মেনে নিয়েছি। তাই ঠিক সময়ে রান্না না হলেও বাড়ির বৌমাকে শাশুড়ির মুখঝামটা খেতে হয়, শ্বশুরের ওষুধ ঠিক টাইমে না দেওয়া হলে তাকে কথা শুনতে হয়, অফিস যাবার সময় বরের শার্ট-প্যান্ট গোছানো না থাকলেও তাকে দোষ দেওয়া হয়। আর ছেলে-মেয়ে যদি উচ্ছন্নে যায়? তাহলে তো কথাই নেই।
একসাথে সবাই যেন মাকে দায়ী করার জন্যই ঝাঁপিয়ে পড়ে। বাবার সেখানে যেন কোনো দায়ই নেই! তাহলে দেখছেন তো ক্যাপ্টেনসি করছি এটা বলা আদতে যতটা সহজ, করাটা মোটেই ততটাও সহজ নয়। আর জানেনই তো, কাউকে ক্যাপ্টেন বানানো মানে তার হাতে দায়িত্ব ছেড়ে দিয়ে এবার নিজে নিশ্চিন্তে থাকা। সেখানে মেয়েদের তাহলে কতগুলো দায়িত্ব সামলাতে হয়, এবার নিজেই বুঝে দেখুন। আর কি নিপুণভাবে ক্যাপ্টেনসিটাই তাঁরা করেন, যাতে সংসারের কোনো আঁচই আপনার গায়ে না লাগে!
তাহলে বুঝতেই তো পারছেন, কেন ঘরের গৃহবধূকে ঘরের ক্যাপ্টেন বলা হয়? কথা না বাড়িয়ে শিগগিরই আপনার মিষ্টি বউকে দশে দশ দিন। আর তাঁকে রান করতে দিন।
মন্তব্য করুন