মানবদেহের সবচেয়ে সংবেদনশীল ও গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গের মধ্যে অন্যতম হচ্ছে চোখ। যত ধুলো-ময়লা বা যেখানেই থাকুন না কেন, চোখ কখনোই ঢেকে রাখতে পারবেন না। তাই চোখের যত্ন নেয়া অত্যন্ত জরুরি। তাছাড়া এখন এই মহামারী সংকটকালীন সময়ে আমরা প্রায় সবাই লকডাউনে ঘরে বন্দী হয়ে আছি। সময় কাটাতে বেশিরভাগ সময়েই আমরা বিভিন্ন রকমের ইলেকট্রনিক ডিভাইস যেমন – মোবাইল ফোন, কম্পিউটার, ট্যাব, টেলিভিশন এসব ব্যবহার করি। ঘরে বসে অফিস, অনলাইন ক্লাস, আত্নীয়দের সাথে ভিডিও কল – এসবও করি এসব ডিভাইসের মাধ্যমেই।
সেক্ষেত্রে চোখের উপরে প্রেশার পরে, চোখে শুষ্কতা ও খসখসে ভাব দেখা দেয়, চোখ দিয়ে পানি পরে, দৃষ্টি ঘোলাটে হয়ে যায়, ঘাড়-মাথা-পিঠে ব্যথা হয়। একে ‘কম্পিউটার ভিশন সিনড্রোম’ বা ‘ডিজিটাল আই স্ট্রেইন’ বলা হয়, যা থেকে পরবর্তীতে মারাত্নক রোগের সৃষ্টি হতে পারে। অতএব চোখকে ক্ষতির হাত থেকে রক্ষার জন্য চোখের যত্ন নেয়া অতীব জরুরি। চলুন জেনে নেই চোখের যত্ন সম্পর্কিত গুরুত্বপূর্ণ কয়েকটি বিষয় –
খাদ্যাভাস ঠিক করুন
‘ডিজিটাল আই স্ট্রেইন’ কমানোর জন্য আপনার খাদ্য তালিকায় নিয়মিত ভিটামিন ও খনিজ উপাদান সমৃদ্ধ খাবার থাকতে হবে। পত্রল শাক-সবজি, কুমড়া, গাজর, পেঁপে, খেজুর, আম, কলিজা, বাদাম, ডিম, দুধ ইত্যাদি ভিটামিন এ’র উৎকৃষ্ট উৎস যা চোখের সুস্বাস্থ্যের জন্য জরুরি। খাদ্য তালিকায় প্রচুর মাছ রাখুন, এতে প্রচুর ওমেগা-৩ রয়েছে। তাই প্রতিদিনের খাদ্যাভাসে এই খাবারগুলো রাখতে চেষ্টা করুন।
পর্যাপ্ত ঘুমান
চোখের সুস্থতা নিশ্চিত করতে প্রতিদিন রাতে সময় মতো ঘুমাতে হবে এবং অন্তত আট ঘন্টা নির্ভেজাল ঘুম নিশ্চিত করতে হবে। এতে চোখ বিশ্রাম পায়। ঘুমের অভাবে মাথা ও চোখে ব্যথা হয় এবং চোখ দিয়ে পানি পরে। তাই ঘুম ঠিকমত না হলে চোখের সুস্থতা বজায় রাখা সম্ভব নয়।
মোবাইল/পিসি/টিভি দূর থেকে দেখুন
মোবাইল, কম্পিউটার বা টেলিভিশন দেখার সময় তা চোখের খুব কাছে থেকে দেখবেন না। এতে চোখের যেমন ক্ষতি হয় বেশি তেমনি ডিভাইসের দিকে ঝুঁকে থাকার কারণে ঘাড়ে ও মাথায় ব্যথা হয়। তাই দূর থেকে দেখার অভ্যাস করতে শুরু করুন। ঘাড় বাঁকা না করে চোখের সমান্তরালে ডিভাইস রেখে দেখার অভ্যাস করুন। আর ডিভাইসের ব্রাইটনেস যেন চোখের জন্য সহনীয় হয় সেদিকেও অবশ্যই খেয়াল রাখুন।
চোখে পানি দিন
চোখ খুবই সংবেদনশীল অঙ্গ। চোখে ধুলোবালি, ময়লা যেয়ে এলার্জি বা অন্যান্য সমস্যার সৃষ্টি হতে পারে। তাই কিছুক্ষন পরপর পরিষ্কার ঠান্ডা পানির ঝাপটা দিয়ে চোখ পরিষ্কার করুন। এতে চোখের ময়লা পরিষ্কার হয়ে যায়।
সানগ্লাস ব্যবহার করুন
খুব বেশি সময় ধরে রোদের মধ্যে কাজ করলে সূর্যের অতি বেগুনী রশ্মি চোখের ক্ষতি করে। গরমে তাপমাত্রা বেড়ে যাওয়ায় চোখ শুষ্ক হয়ে ওঠে। এতে চোখ খচখচও করতে পারে বা অস্বস্তি দেখা দিতে পারে। সুতরাং প্রখর রোদ থেকে আপনার চোখকে রক্ষা করতে বাইরে গেলে আপনাকে অবশ্যই ভালো মানের সানগ্লাস অথবা চশমা ব্যবহার করুন। এতে সূর্যের অতি বেগুনী রশ্মি থেকে সুরক্ষা পাবেন এবং সেই সাথে চোখে সরাসরি ধুলোবালি ঢোকা থেকেও কিছুটা স্বস্তি মিলবে।
চোখের ব্যায়াম করুন
মাঝেমাঝে চোখ পিটপিট করুন। দুই হাতের তালু ঘষে তাপ উৎপন্ন করে আলতো ভাবে হাতের তালু দিয়ে চোখ ঢেকে রাখুন। রাতে ঘুমানোর আগে চোখ বন্ধ করে চোখের পাতা আঙুলের ডগা দিয়ে হালকা করে ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে কিছুক্ষন ম্যাসাজ করুন।
মেকআপ ব্যবহারে সতর্ক থাকুন
যারা মেকআপ করেন তারা অবশ্যই চোখের মেকআপের জন্য সব সময়ই খুব ভালো ব্র্যান্ড বা প্রোডাক্ট ব্যবহার করুন। এগুলো ব্যবহার করলে যদি কোনো সাইড ইফেক্ট দেখা দেয় তবে মেকআপ তুলে পানি দিয়ে ভালো করে চোখ ধুয়ে ফেলুন। দিনের বেলায় সান প্রোটেক্ট মেকআপ ব্যবহার করুন। রাতে ঘুমোবার আগে মেকআপ খুব ভালোভাবে তুলে ফেলুন।
পর্যাপ্ত পরিমানে পানি পান করুন
প্রতিদিন অন্তত আট থেকে দশ গ্লাস পানি পান করুন। বেশি পানি পান করলে তা আপনার চোখের আর্দ্রতা বজায় রাখতে সহায়তা করবে।
চোখকে বিশ্রাম দিন
কাজের ফাঁকে ফাঁকে চোখকে বিশ্রাম দিন। দুই কি তিন মিনিটের জন্য চোখ বন্ধ করে বসে থাকতে পারেন। অথবা এদিক-ওদিক হেঁটে আসুন। সারা দিনে বেশ কয়েকবার এরকম করুন। এতে আপনার চোখের রক্ত সরবরাহ বাড়বে এবং চোখের পেশি সক্রিয় থাকবে। এক নাগাড়ে অনেক সময় ডিভাইসের সামনে বা একই কাজে বসে থাকবেন না।
প্রকৃতি উপভোগ করুন
বিশেষজ্ঞরা বলেন, প্রতিদিন কিছুক্ষণ সবুজের দিকে তাকিয়ে থাকলে চোখ সুস্থ থাকে। কাজের ফাঁকে ক্লান্ত লাগলে কিছুক্ষণ তাকিয়ে থাকুন সবুজ প্রকৃতির দিকে। কাজের স্থানে ফুলের গাছ বা ইনডোর প্ল্যান্ট রাখতে পারেন। তাছাড়া সকালের এবং বিকেলের হালকা রোদ চোখের জন্য খুবই উপকারী।
চোখ স্পর্শ করা কমান
যখন তখন চোখে হাত দেবেন না। অনেকেরই ঘনঘন চোখে হাত দেবার, চোখ ঘষার বা চোখ কচলানোর অভ্যাস আছে যা চোখের জন্য খুবই ক্ষতিকর। এ থেকে চোখে কর্নিয়াল সমস্যা বা ইনফেকশনও হতে পারে। চোখে সংক্রমন ঝুঁকি কমাতে এধরনের বদ অভ্যাস ত্যাগ করুন।
ধূমপান ত্যাগ করুন
ধূমপান চোখের জন্য খুবই ক্ষতিকর। চোখ ডেবে যাওয়ার অন্যতম প্রধান কারন হচ্ছে এই ধূমপান। তাই যত দ্রুত সম্ভব এই বাজে অভ্যাস পরিহার করুন।
এছাড়া চোখের যে কোনো ধরনের সমস্যা হলে যত দ্রুত সম্ভব একজন চক্ষু বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নিন। যেহেতু চোখ মানবদেহের খুবই সেনসেটিভ অংশ, সুতরাং এ নিয়ে কোনো অবহেলা করবেন না।
মন্তব্য করুন