আপনি এর মধ্যেই বেশ কয়েক বার এই বিষয়টির জন্য অপ্রস্তুত হয়ে পড়েছেন অনেকের মধ্যে। আপনার বাড়ির লোকজন, বা হস্টেলের বন্ধুরা বেজায় বিরক্ত আপনার প্রতি। এই সমস্যার জন্য রাতে আপনার পাশে কেউ শুতেই চান না। কী ভাবছেন! আমি নাক ডাকার কথা বলছি? একদমই না। আমি বলছি ঘুমের মধ্যে কথা বলার কথা। এটি কিন্তু ছোট থেকে বড়, অনেকের মধ্যেই দেখা যায়। কিন্তু এটা কী আদতে কোনও রোগ? আসুন জেনে নিই বিস্তারিত।
ঘুমের মধ্যে কথা বলা- বিষয়টা কী?
ঘুমের মধ্যে আমরা যখন অসচেতন ভাবেই কথা বলি, তখন তাকে বলে স্লিপিং টক। এই সময়ে শুধু যে মানুষ কথা বলে তা নয়। সে হাসতে পারে, বিড়বিড় করতে পারে আবার চিল্লিয়ে উঠতেও পারে। আর এই কথা কিন্তু ৩০ থেকে ৪০ সেকেন্ডের বেশি হয় না। তাই অনেকে এটি বুঝতে পারেন না ভালো করে। গবেষণা বলছে এই কথার বেশির ভাগ অংশ অতীতের কোনও ঘটনার সঙ্গে যুক্ত থাকে। এটাও দেখা গেছে যে শিশু এবং পুরুষরাই বেশি সমস্যায় পড়েন এই ক্ষেত্রে।
কেন হয় এটি?
আসলে ঘুমের মধ্যে কথা বলা নিজে কোনও রোগ নয়। কিন্তু এর মুলে যা যা থাকে তা কিন্তু বড় কোনও রোগের আকার নিতে পারে। তাই আগে জেনে নিই কী কী কারণে হয় এই বিষয়টি।
ক. অনিদ্রা
আমাদের যদি নিয়ম করে ঘুম না হয়, অর্থাৎ নির্দিষ্ট সময়ের জন্য ঘুম না হয় তাহলে বেশ কয়েক দিন পর থেকে এই সমস্যা হয়।
খ. চিন্তা
আমাদের মধ্যে কেই বা আজ আছে যার চিন্তা নেই। আর আমরা অনেক সময়ে কিছু কিছু চিন্তা সবার সঙ্গে ভাগ করে নিতে পারি না। আর এমনই কিছু চিন্তা গভীর আকার নিয়ে ডিপ্রেশনের জায়গা নেয়। আর এটি আমাদের সাবকনসাশের মধ্যে থেকে যায়। রাতে যখন আমাদের নার্ভ দুর্বল থাকে, তখন এই চিন্তা বাঁ না বলতে পারা কথা ঘুমের মধ্যে বেরিয়ে আসে।
গ. দুঃস্বপ্ন
আমরা অনেকেই দুঃস্বপ্ন দেখি রাতে। সেই দুঃস্বপ্নের সময়েও কিন্তু আমরা কথা বলে থাকি নিজের মনেই।
ঘ. অত্যধিক মদ্যপান
মদ খেলে এবং তা নিয়ম করে, আমাদের নিজেদের নার্ভের উপর কন্ট্রোল চলে যায়। নার্ভ দুর্বল হয়ে যায়। তখন রাতে ঘুমনোর সময়ে আমাদের কিছু স্মৃতি বেরিয়ে আসে।
ঙ. বিশেষ ওষুধ
আমরা অনেক সময়েই ঘুম না হলে ওষুধ খেয়ে নিই। এটা সাময়িক ভাবে হলে ঠিক আছে। কিন্তু দীর্ঘ দিন ধরে কেউ ঘুমের ওষুধের উপর নির্ভর করে থাকলে তাঁর এই সমস্যা হতে পারে।
সমাধানের উপায়
দেখুন আমরা যদি সমস্যার কারণগুলো ভালো করে দেখি, তাহলে তার মধ্যেই সমাধানের পথ খুঁজে পাব।
ক. ভালো করে ঘুমোন
রোজ নিয়ম করে ৭-৮ ঘণ্টা ঘুমোতেই হবে। নইলে কিন্তু আপনার নার্ভ আর মাথা যথেষ্ট বিশ্রাম পাবে না। ফলে এই সমস্যা হবেই। খুব বেশি খেলে ঘুম ভালো হয় না। তাই ঘুমোতে যাওয়ার ৩ ঘণ্টা আগে খাওয়া শেষ করুন। ভালো নরম বালিশ ব্যবহার করুন।
খ. চিন্তা কম করুন
চিন্তা তো থাকবেই। কিন্তু চেষ্টা করুন খুশি থাকার। আর দরকার হল চিন্তার বিষয়টা ভাগ করে নিন কাছে মানুষের সঙ্গে। তাহলে অনেকটা হাল্কা লাগবে।
গ. অ্যালকোহল বন্ধ
অ্যালকোহল তো খুব একটা ভালো জিনিস নয়। তাহলে খাবেন কেন? দেখুন অ্যালকোহল খেয়ে খানিক ঝিমিয়ে চিন্তা থেকে সাময়িক মুক্তি মেলে, কয়েক ঘণ্টার জন্য। নেশা কাটলে আপনি আবারও সেই চিন্তার মধ্যে। তার থেকে বরং নেশা বন্ধ করুন আর সমস্যার সুস্থ সমাধান খুঁজুন।
ঘ. কফি কম খান
কফিতে ক্যাফেইন থাকে আর ক্যাফেইন ঘুমের জন্য ভালো নয়। তাই ক্যাফেইন যুক্ত খাবার বন্ধ করুন।
ঙ. প্রাণায়াম করুন
শরীরের আগেও দরকার মন ভালো রাখা। আর মন ভালো রাখতে দরকার একাগ্রতা। প্রাণায়াম আপনার সেই একাগ্রতার শক্তি বাড়াতে সাহায্য করবে। মন ভালো রাখবে। তাই সকালে ঘুম থেকে উঠে নিয়ম করে করুন এটা।
এবার তাহলে আর স্লিপিং টকের জন্য কথা শুনতে হবে না। এগুলো করেই দেখুন আর নিয়ম করে চলুন। দেখবেন এতে সব দিক থেকেই ভালো হবে।
বুকে ব্যথা হওয়ার ১৫টি কারণ ওষুধ ছাড়াই ব্যথা কমানোর উপায় ১০ মিনিটে
মন্তব্য করুন