আসাম সিল্ক, তসর সিল্ক, চান্দেরি সিল্ক, বমকাই সিল্ক, কাঞ্জিভরম, বেনারসী, বালুচরী, পৈঠানি সিল্ক, ভাগলপুরী সিল্ক, মাইসোর সিল্ক, নাহ! হাতের কর শেষ হয়ে যাবে, কিন্তু সিল্কের শাড়ির নাম গুণে শেষ করা যাবে না।
আর বাঙালি নারীর আলমারির ৯০ শতাংশ জায়গাই তো নিয়ে রাখে সিল্কের শাড়ি। তবে সিল্কের শাড়ি পরলেই তো হল না, যত্ন নেওয়াও দরকার। সিল্কের শাড়ির কাজ, সুতো, জেল্লা সব বজায় রাখতে হবে। কিন্তু কীভাবে নেবেন যত্ন?
শাড়ি কীভাবে ধোবেন?
সিল্কের শাড়ি কখনোই ঘষে ঘষে হ্যান্ড ওয়াশের উপযোগী নয়। এতে শাড়ির সুতো একে অন্যের সঙ্গে জট পাকিয়ে যায়। শাড়ির কাজ নষ্ট হয়ে যায়। আবার ওয়াশিং মেশিনেও এই শাড়ি পরিষ্কার করা যাবে না।
সেখানেও একই কথা প্রযোজ্য। ওয়াশিং মেশিনের হিট আর একসঙ্গে অন্য কাপড়ের সঙ্গে সিল্কের শাড়ি পরিষ্কার করলে এই শাড়ির আর কোনও কাজই আস্ত থাকবে না। সবচেয়ে ভাল হল লন্ড্রিতে দিয়ে দেওয়া। সেখানে এই শাড়ি ড্রাই ক্লিন করানো।
আলমারিতে কীভাবে রাখবেন?
সিল্কের শাড়ি আলমারিতে থাকে। আর এই ভাল শাড়ি আপনি রোজ রোজ তো আর পরেন না। তাই দীর্ঘ দিনের জন্য ভাল রাখতে আলমারিতে সিল্কের শাড়ি রাখুন নির্দিষ্ট নিয়ম মেনে।
- শাড়ি কখনোই আলমারিতে বেঁধে রাখবেন না কিছু দিয়ে। এতে শাড়ির জড়ি বা সুতো একে অন্যের সঙ্গে মিলে যাবে আর খুলে আসবে।
- অনেক সময়ে জায়গায় না কুলালে আমরা একটু গুঁজে শাড়ি রেখে দিই। সিল্কের শাড়ির ক্ষেত্রে এটা করা যাবে না। এরকম করে সিল্কের শাড়ি রাখলে অত্যধিক ভাঁজ পড়ে শাড়ি খারাপ দেখতে হয়ে যাবে।
- অনেক সময়ে আলমারিতে শাড়ি ঝুলিয়ে রাখার সময়ে আমরা একটা হ্যাঙ্গারে একসঙ্গে তিন-চারটে শাড়ি রেখে দিই। সিল্কের শাড়ি এভাবে রাখতে নেই। কারণ একদম নিচের শাড়িতে তাহলে চাপ পড়ে আর দাগ হয়ে যায়। বেনারসী, কাঞ্জিভরম এরকম ভারী শাড়ি হলে একটা হ্যাঙ্গারে একটা করে শাড়ি রাখুন। আর অন্য সিল্কের শাড়ি হলে দুটির বেশি রাখবেন না একসঙ্গে একটা হ্যাঙ্গারে।
- সবচেয়ে ভাল হয় যদি সিল্কের শাড়ি আপনি হাল্কা কটনের কাপড়ের মধ্যে রাখতে পারেন। এর ফলে শাড়ি ঘেমে যাবে না বা একটা যে ভ্যাপসা ভাপ আসে, সেটা আসবে না। আর শাড়ির সুতো, কাজ সব ভাল থাকবে।
- অনেকে দোকান থেকে যে প্লাস্টিকে শাড়ি দেয় তাতেই শাড়ি রেখে দিন পরার পর। এটা করবেন না। এতে শাড়ির গোল্ডেন সুতো বা জড়ি কালো হয়ে যায়।
শাড়ির ঔজ্জ্বল্য বজায় রাখবেন কীভাবে?
- অনেক দিন পরার পর মনে হয় যেন সিল্কের শাড়ি ঠিক সেরকম আর জেল্লাদার নেই। এই সময়ে কী করবেন!
- একটা সলিউশন বানান বাড়িতে। ভিনিগার আর উষ্ণ জলের সলিউশন। একটা বালতিতে এক লিটার হাল্কা উষ্ণ জল নিন। তাতে এক টেবিল চামচ ভিনিগার দিন। এটাই হল অনুপাত। এবার ওই জলে সিল্কের শাড়ি ৫ মিনিট মতো ভিজিয়ে রাখুন।
- শাড়ি তুলে ঠাণ্ডা আর রানিং ওয়াটার মানে কল বা শাওয়ার খুলে সেই জলে ভাল করে ধুয়ে নিন। যেন ভিনিগারের গন্ধ না থাকে শাড়িতে। হাল্কা হাতে চিপে নিন।
- এবার ঘরের মধ্যে, যেখানে খুব একটা রোদ আসে না বা পাখার নিচে শাড়ি মেলে দিন। সরাসরি রোদে সিল্কের শাড়ি দেবেন না। এতে রঙ ফেটে যাবে। সিল্কের শাড়ি তাড়াতাড়িই শুকিয়ে যায়।
- যদি আপনার মনে হয় আয়রন করে নিলে ভাল হয় তাহলে পুরো শুকিয়ে যাওয়ার জন্য অপেক্ষা করতে হবে না। একটু একটু ভিজে থাকতেই শাড়ির পিছনের দিকের থেকে আয়রন করে নিন। এতে শাড়ি আবার পুরনো জেল্লা ফিরে পাবে।
নরম ভাব বজায় রাখতে
সিল্কের শাড়ির অন্যতম বড় গুণ হল এটি খুবই নরম। তাই পরেও খুব আরাম। কিন্তু অনেক সময় দেখা যায় এই নরম ভাবটা হয়তো কোনও কারণে চলে যাচ্ছে। এর থেকে রেহাই পাওয়ারও উপায় আছে। যেদিন পরবেন শাড়ি তার আগের দিন ঠাণ্ডা জলে ৩০ মিনিট শাড়ি ভিজিয়ে রাখুন। তারপর তুলে ভাল করে জল ঝরিয়ে, শুকিয়ে স্টিম আয়রন করে নিন। এতে সেই নরম মখমলে ভাব আবার চলে আসবে।
আরও কিছু টিপস
- প্রতি তিন মাসে একবার শাড়ির ভাঁজ পরিবর্তন করুন। এতে পাকাপাকি দাগ আসবে না।
- ন্যাপথলিন ব্যবহার করতে পারেন আলমারিতে। শাড়ির মধ্যে ভ্যাপসা গন্ধ বা পোকা আসবে না।
- ব্র্যান্ড নিউ শাড়ি হলেও পরার আগে একটা হাল্কা আয়রন করে নিন। শাড়ির জেল্লা বেড়ে যাবে। শাড়ি ভালও থাকবে।
এভাবে সিল্কের শাড়ির যত্ন করলে সিল্কের শাড়ি অনেক দিন পর্যন্ত ভাল থাকবে। তার জেল্লাও বজায় থাকবে।
মন্তব্য করুন