শীত আসছে, আর শীতের হাত ধরে সেও নিশ্চয়ই আসছে! আজ্ঞে হ্যাঁ, আমরা আপনার পা ফাটার কথাই বলছি! প্রতি শীতেই যার আবির্ভাব ঘটে নতুন অতিথির বেশে, আর যাকে সামলাতে হিমশিম খেয়ে আপনাকে শেষে বলতেই হয় ‘অতিথি, তুম কব জাওগে?’
জানি, আপনাদের অনেকেরই পা সারাবছরই প্রায় ফাটা থাকে, কিন্তু শীত এলেই তা আরও বেড়ে যায়! অনেক যত্ন আত্তি করে মাথা খুঁড়ে, হাজার দামী দামী ক্রিম মেখেও তো কোনো উপকার পাননি! তার থেকে এবার বাজারের ক্রিমকে টাটা বলুন আর খোদ কেয়া শেঠের থেকে জেনে নিন পা ফাটা সারানোর পার্মানেন্ট সলিউশন!
পা কেন ফাটে?
আপনার পা কিন্তু নানা কারণেই ফাটতে পারে। শীতকালে বাতাসে এমনিতেই আর্দ্রতা কম থাকে, তাই পা অল্পেই ফেটে যায়। আর তাছাড়া আপনার যদি ডি-হাইড্রেশনের ধাত থাকে,জল কম খান, তাহলে সারাবছরই কিন্তু ফাটতে থাকে। এছাড়া পায়ে অত্যধিক সাবান ব্যবহার করা,পা অনেক সময়ের জন্য গরম জলে ডুবিয়ে রাখা, ডায়াবেটিস, ওবেসিটি ইত্যাদি নানা কারণেও পা ফাটতে পারে।
মরা চামড়াই কি পা ফাটার কারণ!
আমাদের ত্বকের এপিডারমিসে একদম নীচের স্তরে থাকা চামড়া পরিণত হলে ওপরে উঠে আসে। এরপর তা মরে যায়। এই মরা চামড়াই পা ফাটার কারণ হয়, আর এক্সফোলিয়েশন না করলে শক্ত কেরাটিনাইজড হয়ে থাকে। এই শক্ত চামড়ায় ময়েশ্চার ঢোকে না, তার ফলে পা ফেটে যায়।
নানা ডাক্তার দেখিয়ে বা দোকান থেকে অনেক দামী দামী ক্রিম বা ময়েশ্চারাইজার ব্যবহার করেও নিশ্চয়ই সেরকম ফল পাননি? আসলে ওই ক্রিমগুলো আপনাকে ফাটা পা থেকে সাময়িক মুক্তি দিতে পারে। তাই ওই ক্রিমগুলো ব্যবহার করা বন্ধ করলেই আবার সমস্যা ফিরে আসবে। তার থেকে এবার কেয়া শেঠের ঘরোয়া টোটকায় ফাটা পায়ের যত্ন নিন, আর এক চুটকিতে ফাটা পা-কে বানান মোলায়েম।
১.ঘরে পাতা টক দই
আগেই বলেছি, ত্বক শুকিয়ে যাবার কারণেই বেশীরভাগ সময় পা ফাটে। তাই এক্ষেত্রে আপনার পা-কে ময়েশ্চারাইজড করতে চাইলে টক দই আপনার জন্যে বেস্ট অপশন হবে। টক দইতে থাকা এনজাইম পায়ের শক্ত কেরাটিনাইজড চামড়াকে নরম করে, আর ফাটা পায়ের সমস্যা দূর করে।
পদ্ধতিঃ
হালকা গরম জলে আগে আপনার পা-কে মিনিট ৫-১০ ভিজিয়ে রাখুন। এরপর শুকনো করে মুছে নিন। এরপর জল বের করে রাখা টক দই নিয়ে একটা মোটা লেয়ার পায়ের ফাটা জায়গায় মেখে নিন। ১৫-২০ মিনিট রেখে গরম জল দিয়ে ধুয়ে ফেলুন। প্রথমে দিনে অন্তত বার তিনেক করে দেখুন। তারপর পা ফাটার সমস্যা কমে গেলে একদিন ছাড়া ছাড়া করবেন।
২.এসেনশিয়াল আর ভেজিটেবল অয়েল ট্রিন্টমেন্টঃ
এসেনশিয়াল অয়েল কিন্তু আপনার পায়ের ওই ফাটা শক্ত চামড়ার মধ্যে খুব সহজেই প্রবেশ করে পা-কে নরম আর মসৃণ করে তুলতে সাহায্য করে। পা যদি খুব বেশী ফেটে যায় বা রক্ত পড়ে, তাহলে এই এসেনশিয়াল অয়েলের ট্রিটমেন্ট আপনার জন্যে বেস্ট হবে। যে কোনো একটা আপনি ব্যবহার করতেই পারেন।
চ্যামোমাইল এসেনশিয়াল অয়েলঃ
পায়ের চামড়া ফেটে গিয়ে যদি রুক্ষ হয়ে যায় বা লাল হয়ে যায়, তাহলে এই চ্যামোমাইল এসেনশিয়াল অয়েল আপনি নিশ্চিন্তে ব্যবহার করতেই পারেন। এই তেল আপনার পায়ের লাল ভাব কমিয়ে পা-কে নরম ও ময়েশ্চারাইজড করে তুলতে সাহায্য করে।তাছাড়া এই তেলের অ্যান্টি-ইনফ্লেমেটরি আর অ্যান্টি-ব্যাকটেরিয়াল গুণ আছে, যা পায়ের ব্যথা কমাতেও সাহায্য করে।
ক্যারট সিড এসেনশিয়াল অয়েলঃ
আপনার ত্বককে সজীব করে তুলতে কিন্তু ক্যারট সিড এসেনশিয়াল অয়েলের জুড়ি নেই। আপনার পায়ের চামড়াকে উজ্জ্বল, নরম আর স্মুদ করতে যদি চান, তাহলে ক্যারট সিড অয়েল আপনি ব্যবহার করুন।
বেসিল এসেনশিয়াল অয়েলঃ
বেসিল এসেনশিয়াল অয়েলের অ্যান্টি-সেপ্টিক প্রপার্টি আপনার ফাটা পা-কে তাড়াতাড়ি সারিয়ে তোলে। তাই বেসিল এসেনশিয়াল অয়েল কিন্তু আপনি ফাটা পা সারাতে ব্যবহার করতেই পারেন।
রোজমেরী এসেনশিয়াল অয়েলঃ
ত্বকের নানারকম সমস্যায় রোজমেরী কিন্তু বহু প্রাচীনকাল থেকেই ব্যবহৃত হয়ে এসেছে। রোজমেরী এসেনশিয়াল অয়েলের অ্যাস্ট্রিনজেন্ট প্রপার্টি কিন্তু রুক্ষ ত্বককে নরম করে ও ফাটা পায়ের সমস্যার সমাধান করে।
টি ট্রি এসেনশিয়াল অয়েলঃ
টি ট্রি এসেনশিয়াল অয়েলের অ্যান্টি-মাইক্রোবায়াল, অ্যান্টি-ফাঙ্গাল, অ্যান্টি-সেপ্টিক আর অ্যান্টি-ব্যাকটেরিয়াল গুণ আছে। ফলে আপনার ফাটা পায়ের জ্বালায় যদি নিয়ম করে এই টি ট্রি অয়েল ব্যবহার করতে পারেন, তাহলে দেখবেন মাত্র কয়েকদিনের মধ্যেই আপনার পা সুন্দর নরম হয়ে উঠেছে!
কীভাবে এসেনশিয়াল অয়েল ব্যবহার করবেন?
এসেনশিয়াল অয়েলগুলো আপনি এমনিই ব্যবহার করতে পারেন। তবে যদি চান,তাহলে ভেজিটেবল অয়েলের সাথে মিশিয়েও ব্যবহার করতে পারেন। তাতে আরও বেশী কাজ দেবে।
উপকরণঃ
- যে কোনো একটা এসেনশিয়াল অয়েল ১/২ চামচ
- আর ক্যাস্টর অয়েল বা সানফ্লাওয়ার অয়েল ২ চামচ
পদ্ধতিঃ
এসেনশিয়াল অয়েল আর যে কোনো একটা ভেজিটেবল অয়েল নিয়ে মেশান। তারপর পায়ে টক দই ব্যবহার করার পরে এই তেলের মিশ্রণটি ব্যবহার করে ফেলুন। দেখবেন পায়ের ফাটা কয়েক সপ্তাহেই গায়েব হয়ে যাচ্ছে।
‘কেয়া’র স্পেশাল কেয়ারঃ
আর আপনি যদি এক নিমেষে পায়ের ফাটা দূর করতে চান?তাহলে আপনাকে সেই শরণাপন্ন কিন্তু হতেই হবে কেয়া শেঠের! কেয়া শেঠের ‘হিল হিলিং লোশন’, কিন্তু এসেনশিয়াল অয়েল, ভেজিটেবল অয়েল আর টক দইয়ের এক্সট্র্যাক্ট দিয়ে তৈরি।তাছাড়া এতে অ্যালোভেরা আর গ্লিসারিনও আছে যা আপনার পা-কে শুধু ফাটার হাত থেকে মুক্তি দেবে না, পা নরম আর মসৃণও করবে। তাই এটা নিয়ম করে দিনে অন্তত দুবার করে লাগান। উপকার পাবেনই।
তাহলে দেখলেন তো,কত সহজে আপনি ফাটা পায়ের বিচ্ছিরি সমস্যাকে তাড়াতে পারবেন? এবার শীতে দেরী না করে পায়ের যত্ন নিন,তাহলে দেখবেন পার্টি-পিকনিকে আপনাকে আর ঢাকা জুতোয় পা লুকতে হচ্ছে না! স্টাইলও হচ্ছে আর পায়ের যত্নও হচ্ছে।
মন্তব্য করুন