দুর্গা পুজোর আর হাতে গোনা কয়েক দিন। এইসময় সকলেই নিজের ত্বকের পরিচর্যায় ব্যস্ত হয়ে পড়েন। পুজোর কয়েকটা দিন নিজেকে আর সবার থেকে স্পেশাল করে তুলবার জন্য, সুন্দর হয়ে উঠবার জন্য সকলেরই বিশেষ মাথা ব্যথা থাকে। এই চিন্তার অবসান ঘটাতে আজ আমি হাজির।
হ্যাঁ ঘরে বসেই যাতে পার্লারের মতো উজ্জ্বলতা পেতে পারেন তার জন্য শেহনাজ হুসেনের বলা পুজো স্পেশাল পাঁচটি ফেসপ্যাক এর কথা আজ আমি বলবো, যেগুলি ব্যবহার করলে ত্বকের উজ্জলতা বৃদ্ধি পাবে।
১. আমন্ড অয়েল ও দুধের ফেসপ্যাকঃ
জেল্লাদার ত্বক পাওয়ার জন্য ঘরোয়া এই ফেসপ্যাকের কথা বলে থাকেন শেহনাজ হুসেন। এক্ষেত্রে এক চামচ আমন্ড অয়েল, এক চামচ আমন্ড গুঁড়ো, অল্প একটু ওটমিল গুঁড়ো, এক চা চামচ মধু ও এক চা চামচ দুধ নিয়ে নিতে হবে।
এই ফেসপ্যাক কীভাবে ব্যবহার করবেনঃ
একটি পাত্রে আমন্ড অয়েল, আমন্ড গুঁড়ো, ওটমিল গুঁড়ো, মধু ও দুধ একসাথে মিশিয়ে একটি ফেসপ্যাক তৈরি করুন। এরপর এটি মুখ ঘাড় ও গলায় লাগিয়ে রাখুন। মিনিট পনেরো কুড়ি এটি রেখে দিন তারপর ত্বকে এই ফেসপ্যাকটি শুকিয়ে গেলে ঠান্ডা জল দিয়ে ধুয়ে ফেলুন। সপ্তাহে ২ বার এই ফেসপ্যাকটি ব্যবহার করলে ত্বকের উজ্জ্বলতা ফিরবে।
২. টমেটো ও দইয়ের ফেসপ্যাকঃ
এই ফেসপ্যাক বানানোর জন্য ৩ চামচ টমেটোর পেস্ট, ১ চামচ লেবুর রস ও ১ চামচ দই লাগবে।
কীভাবে ব্যবহার করবেন এই ফেসপ্যাকঃ একটি পাত্রে টমেটো পেস্ট নিয়ে এতে লেবুর রস দিন তারপর তাতে দই মেশান। এই বার তিনটি উপকরণ একত্রে মিশিয়ে মুখে মাখুন। তারপর এই ভাবেই রেখে দিন যতক্ষণ না এটা শুকিয়ে যায়। মিনিট পনেরো কুড়ি পর শুকিয়ে গেলে হালকা ঘষে ঘষে জল দিয়ে ধুয়ে ফেলুন। সপ্তাহে দুইদিন এই ফেসপ্যাক ব্যবহার করলেই হাতেনাতে ফল দেখতে পাবেন, মুখের উজ্জলতা বৃদ্ধি পাওয়ার সাথে সাথে সানট্যানও গায়েব হয়ে যাবে। এই ফেসপ্যাকটি বিকেলের পর বা রাতের দিকে ব্যবহার করতে পারলে বেশি ভালো ফল পাবেন। মুখ ধুয়ে ফেলার পর একটি ময়েশ্চারাইজার মুখে লাগিয়ে নিন।
৩. পুদিনা ও হলুদের ফেসপ্যাকঃ
এই ফেসপ্যাকটি বানানোর জন্য কয়েকটি পুদিনা পাতা ও এক চিমটে হলুদ গুঁড়ো বা বাটা লাগবে।
এই ফেসপ্যাক কীভাবে ব্যবহার করবেনঃ পুদিনা পাতা বেটে নিন ও তার মধ্যে কিছুটা হলুদ গুঁড়ো মিশিয়ে নিন। তবে হলুদ গুঁড়া ব্যবহার না করে যদি কাঁচা হলুদ বেটে নিতে পারেন সে ক্ষেত্রে আরও বেশি উপকার পাবেন। এইবার এই দুটি উপকরণ একটি পরিস্কার পাত্রে ভাল করে মিশিয়ে নিয়ে তা মুখে লাগান। মিনিট পনেরো কুড়ি রাখার পর ঠান্ডা জল দিয়ে ধুয়ে নিন। সপ্তাহে দু’দিন এই ফেস প্যাক ব্যবহার করলেন রোদে পোড়া ঝলসানো ভাব মুহূর্তে উধাও হয়ে যাবে।
৪. শসা ও অ্যালোভেরা জেলের ফেসপ্যাকঃ
এই ফেসপ্যাকটি বানাতে কয়েক টুকরো শসা ও এক চামচ অ্যালোভেরা জেল লাগবে।
এই ফেসপ্যাকটি কীভাবে ব্যবহার করবেনঃ
একটি পাত্রে এই দুটি উপকরণ একসাথে মিশিয়ে মুখে লাগিয়ে নিন। ১৫-২০ মিনিট এবার এই প্যাকটি মুখে লাগিয়ে রেখে দিন। এই ফেসপ্যাকটি মুখে শুকিয়ে গেলে জল দিয়ে ধুয়ে ফেলুন। এটি রোজ ব্যবহার করতে পারেন, সে ক্ষেত্রে ত্বক সব সময় প্রাণবন্ত ও তরতাজা থাকবে।
৫. ডিমের ফেসপ্যাকঃ
এই ফেসপ্যাকটি ব্যবহার করার জন্য একটা ডিমের সাদা অংশ, এক চামচ বেসন ও কয়েক ফোঁটা লেবুর রস দিয়ে দিন।
ডিমের ফেসপ্যাক কীভাবে ব্যবহার করবেনঃ
একটি পাত্র নিন তারমধ্যে ডিমের কুসুম বাদ দিয়ে শুধু সাদা অংশটি নিয়ে নিন। এইবার তার মধ্যে একটু লেবুর রস দিন। ভালো করে দুটি উপকরণ একসাথে মিশিয়ে নিন। এইবার এই পেস্ট মুখে-গলায় হাতে লাগিয়ে নিন। মিনিট পনেরো কুড়ি রেখে ধুয়ে ফেলবেন। এই ফেসপ্যাকটি সপ্তাহে একদিন ব্যবহার করবেন। এই ফেসপ্যাক ব্যবহার করলে ত্বক যেমন নরম থাকে তেমনি ত্বক কুঁচকে যায় না।
শেহনাজ হুসেনের পুজো স্পেশাল টিপসঃ
শেহনাজ হুসেনের মতে আমাদের ত্বক ও চুল তখনই সুন্দর হয় যখন আমরা ভেতর থেকে সুস্থ থাকি। সুন্দর হওয়ার জন্য আমাদের প্রতিদিন ঠিকমতো খাওয়া-দাওয়া করা উচিত এবং প্রতিদিন প্রচুর পরিমাণে শাকসবজি ও ফল খাওয়া উচিত। একসাথে দিনে অন্তত আট গ্লাস জল খাওয়া উচিত প্রত্যেকের। এতে শরীরে টক্সিন বেরিয়ে যায় এবং ত্বক ও চুল সুন্দর হয়ে ওঠে। এছাড়া তিনি মনে করেন বাইরের কোন কিছু প্রোডাক্ট কেনার আগে আমাদের ত্বক ও চুলের প্রকৃতি দেখে সেটি কেনা উচিত।
চুলের ক্ষেত্রে শেহনাজ হুসেনের পরামর্শঃ
শেহনাজ হুসেনের কথায়, বিজ্ঞাপন দেখে হুটহাট করে কোন কিছু কিনে নেওয়া উচিত নয়, আমাদের ত্বক সেনসিটিভ, কম্বিনেশন, ওয়েলি না নরমাল সেটি দেখে যেমন ত্বকের জিনিস কেনা উচিত তেমনি আমাদের চুলের ক্ষেত্রেও চুল শুষ্ক না তৈলাক্ত তাই দেখেই চুলের প্রোডাক্ট অর্থাৎ তেল ও শ্যাম্পু কেনা উচিত।
চুলের ক্ষেত্রে তিনি পরামর্শ দেন সপ্তাহে দুইবার নারকেল তেল মাথার তালুতে মেসেজ করে , হট টাওয়াল দিয়ে কিছুক্ষণ জড়িয়ে রাখুন। এর পর দশ মিনিট পর কোনো হারবাল শ্যাম্পু দিয়ে চুল ধুয়ে ফেলুন।
শেহনাজ হুসেন বলেন, আমাদের চুল শুষ্ক ও রুক্ষ হলে ক্যাস্টর অয়েল ও নারকেল তেল একসাথে মিশিয়ে লাগাতে পারেন। আর যদি কারো চুল ও মাথার তালু তৈলাক্ত হয় তাহলে আধমগ জলে একটি গোটা লেবুর রস মিশিয়ে চুল ধুয়ে নিন। সপ্তাহে একবার এটি করলেই চুল যেমন জেল্লাদার হবে, তেমনি ত্বকের অতিরিক্ত তৈলাক্ত ভাব থেকেও মুক্তি পাবেন।
মন্তব্য করুন