চিরদিন সমানভাবে কাজ করার দক্ষতা কারোর থাকেনা। সময়ের সাথে পাল্লা দিয়ে বাড়ে স্বাস্থ্য ও আর্থিক সমস্যা। অন্যদিকে কর্মক্ষমতা হয় ক্রম হ্রাসমান। কোভিড-১৯ এর প্রেক্ষাপটে অর্থনীতির জটিল পরিস্থিতিতে দাঁড়িয়ে ৬০ এর গন্ডি পেরোনো বয়স্ক মানুষরা বিভিন্ন উদ্বেগে জর্জরিত হয়ে পড়ছেন।
এই সময়ে সঠিক জায়গায় উপযুক্ত অঙ্কের বিনিয়োগ আপনাকে আর্থিক ও মানসিক সুরক্ষা দিতে পারে। তাই দেরি না করে চট করে দেখে নিন বাছাই করা নির্বাচিত স্কিমগুলি যেখানে সঞ্চিত অর্থ রাখতে পারেন নিশ্চিন্তে।
আদর্শ বিনিয়োগের আধার চিহ্নিত করবেন কিভাবে?
একজন বিনিয়োগকারী হিসেবে আপনি নিশ্চয়ই চাইবেন যে আপনার ইনভেস্টমেন্ট একটা নিয়মিত আয়ের সাথে ভালো এমাউন্টও নিয়ে আসুক আপনার অবসর পরবর্তী জীবনে। কিছু বিনিয়োগ যেমন দুটো চাহিদাই পূরণ করে আবার আপনি যদি পেনশন হোল্ডার হন তবে প্রথম সুবিধের দিকে না তাকালেও চলবে। তবে যাদের পেনশনের সুবিধে নেই তাদের লক্ষ হওয়া উচিত রেগুলার রিটার্ন ও সেই সাথে ভারী অর্থের যোগান।
নিয়মিত মাসিক পেনশন এর জন্য অপশনঃ
১) রেকারিং ও ফিক্সড ডিপোজিটঃ
নাম শুনেই বুঝতে পারছেন যে এর মত নির্ভরযোগ্য বিকল্প হয় না। ব্যাঙ্ক সেভিংস একাউন্টের থেকে এই দুটো সঞ্চয়ে বেশি সুদ প্রদান করে থাকে। সেকশন ৮০টিটিবি অনুসারে বার্ষিক ৫০,০০০ টাকা পর্যন্ত সুদ। এরজন্য কোনোরকম ট্যাক্স পে করতে হয়না।
পোস্ট অফিসের ক্ষেত্রেও সমান ছাড় এর সুবিধা মেলে তবে তাতে সিকুরিটি আরো বেশি থাকে ডিপোজিটে কারণ পোস্ট অফিসের ফান্ড সরকার লেন্ড করে তাই পেমেন্ট পেতেও দেরি হয় না। এসএলআর, এমসিএলার এর প্রভাব এর উপর কম পড়ে। তাই ঝুঁকিবিহীন এই বিনিয়োগ।
২) প্রধানমন্ত্রী বয় বন্দনা যোজনাঃ
কেন্দ্র সরকারের একটি জনপ্রিয় স্কিম প্রধানমন্ত্রী বয় বন্দনা যোজনা এবং এলাইসি দ্বারা সরাসরি পরিচালিত সাশ্রয়ী ইনভেস্টমেন্ট পেনশন পরিকল্পনা। যারা জব করেন না তাদের জন্য এটি দারুন বিকল্প।
এর মেয়াদ সর্বোচ্চ ১০ বছর এর হতে পারে। বার্ষিক সুদের হার ব্যাংক গুলির থেকে অনেকটাই বেশি ৭.৪%। কমপক্ষে লগ্নির খাতা খুলতে গেলে মিনিমাম এমাউন্ট ১,৫৬,৬৫৮ টাকা রাখতে হয় যেটার বছরে সুদ দেয় ১২,০০০টাকা।
অপরদিকে সর্বোচ্চ ১,৫০,০০০ টাকা রাখা যায় যেখানে মাসিক সুদ হিসেবেই উপার্জন করতে পারেন ৯,২৫০টাকা। এই সুদ যদিও ৮০সি ধারা অনুযায়ী সম্পূর্ন করমুক্ত নয়।তবুও কিছু জিএসটি এর ছাড় পাওয়া যায়।
অসুস্থতা বা সঙ্গীর মৃত্যুর সময় স্কিম সারেন্ডার করলে ক্রয়মূল্য এর ৯৮% টাকা ফেরত পাওয়া যায়। সুতরাং ভীতি বা দ্বিধার জায়গা নেই এখানে। স্বচ্ছতার গ্যারেন্টি দিচ্ছে এই প্রকল্প।
৩) সিনিয়র সিটিজেন সেভিংস স্কিমঃ
সরকার পোষিত আরো একটি দীর্ঘমেয়াদী কিন্তু নিরাপত্তা প্রদানকারী স্কিম হলো এটি।পোস্ট অফিস থেকেই এর সুবিধা মেলে। রেগুলার ব্যাংক এর সেভিংস ও ফিক্সড ডিপোজিট এর তুলনায় এখানে ইন্টারেস্ট এর হার অনেকটাই বেশি। সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য যে সুবিধে এই স্কীমে তা হলো মাত্র ৫৫ বছর বয়স থেকেই আপনি বিনিয়োগ করতে পারেন।
এই স্কিমের ম্যাচুরিটির সময় হলো ৫ বছর। সুদের হার বার্ষিক ৭.৪%। মিনিমাম ১ হাজার থেকে শুরু করে সর্বোচ্চ ১৫ লাখ অব্দি ধনরাশি আপনি লগ্নি করতে পারেন।
ইনভেস্টমেন্ট এর উপর কর না চাপলেও সুদের পরিমাণ বার্ষিক ৫০,০০০ টাকা পেরোলে তার উপরে টিডিএস কাটা যাবে।
৪) পোস্ট অফিস মান্থলি ইনকাম স্কিমঃ
সরকারি সুরক্ষার সাথে আসা জনপ্রিয় এই স্কিমটিকে সবাই এমাইএস নামেই চেনেন। নিয়মিত মাসিক স্বচ্ছল একটা এমাউন্ট যদি আপনার নিশানা হয় তবে এটাই আপনার স্বপ্নের চাবিকাঠি।
এখানে ফিক্সড রেটে ৫ বছরের জন্য টাকা ঢালতে পারেন। বাৎসরিক সুদের পরিমাণ ৬.৬%। সিঙ্গেল একাউন্ট এ সর্বোচ্চ বিনিয়োগের পরিমাণ ৪.৫লাখ টাকা ও জয়েন্ট একাউন্ট এ সেটা ৯ লক্ষ টাকা। ১.৫ লক্ষ টাকা পর্যন্ত বিনিয়োগ এ কর ছাড় মেলে।
গ্রোথ ইনভেস্টমেন্টঃ
মোটা অঙ্কের রিটার্ন পেতে হলে এই ধরণের বিনিয়োগে ভরসা করতে পারেন কম ঝুঁকিতে।
১) মিউচুয়াল ফান্ডঃ
যদি সম্পত্তি বৃদ্ধি আপনার লক্ষ হয় তবে আপনার গন্তব্য হওয়া উচিত মিউচুয়াল ফান্ড কারণ অর্থের দ্রুত হারে বৃদ্ধি আর কোথাও এত তাড়াতাড়ি হয় না।
একই সাথে এটিতে থাকে ডবল ধামাকা – হাই রিটার্ন ও ট্যাক্স এ ছাড়। ১.৫ লাখ পর্যন্ত টাকায় পাওয়া যায় ট্যাক্সে ছাড়।
ইকুইটি ফান্ড এ অনেক কম রিস্কে ১ বছরের জন্য টাকা বিনিয়োগ করতে পারেন। এখানে বিনিয়োগ এর কোনো সীমাবদ্ধতা নেই। ১লাখ এর উপরে বিনিয়োগ হলে ১০% সুদ কাটা যায়।
২) ন্যাশনাল পেনশন স্কিমঃ
১৮-৬৫ বছরের লোকেরা নিশ্চিন্তে ইনভেস্ট অপশন হিসেবে বা বলা যায় অসময়ের ভরসা হিসেবে এই প্রকল্পের উপর বিশ্বাস করতে পারেন।
১.৫লাখ অব্দি ইনভেস্টমেন্ট এ ছাড় থাকে করের উপর। ৮০সিসিডি সেকশন এ এক্সট্রা বেনিফিট পাবেন ৫০,০০০টাকা অতিরিক্ত।
বন্ড বা ডেবট্ বন্ডে টাকা বিনিয়োগ করতে পারেন ইচ্ছে খুশি। তবে এখানে সুদের হার অনিয়মিত। আশাতীত রিটার্ন এতে পেতে পারেন।
মন্তব্য করুন