আপনি কী কুসংস্কার এ বিশ্বাসী না বিজ্ঞানে? কিন্তু জানেন কী কিছু কিছু কুসংস্কার এর পিছনে ও বৈজ্ঞানিক কারণ লুকিয়ে আছে! কী করে বুঝবেন বিজ্ঞান কতখানি কুসংস্কার এর সঙ্গে জড়িত?
আমাদের সমাজে প্রচলিত এমন কিছু ধারণা আছে, যে গুলোর কিছু কিছু আমরা মানি বা কিছু আমরা মানি না l যার কোনো যুক্তি, ব্যাখ্যা হয় না l কিন্তু প্রজন্মের পর প্রজন্ম ধরে এই কুসংস্কার গুলি চলে আসছে l তবে এই সমস্ত কারণ গুলির কিছুর পিছনে লুকিয়ে রয়েছে বৈজ্ঞানিক কারণ l সেগুলো কী আসুন আমরা জেনে নিই l
বিড়ালের রাস্তা কাটা
আমরা পথে চলার সময় হঠাৎ যদি একটা বিড়াল রাস্তা কেটে চলে যায়, আমরা তৎক্ষণাৎ দাঁড়িয়ে পড়ি l কেন? কারণ হিসেবে ধরা হয় বিড়ালের রাস্তা কাটা নাকি অশুভ যাত্রা l আসলে যাত্রা কালে বিড়াল বা অন্য কোনো পশু সামনে এলে দুর্ঘটনা ঘটতে পারে l
ভাঙা আয়না তে মুখ দেখা
ভাঙা আয়না য় মুখ দেখতে নেই, তাতে নাকি অশুভ কিছু ঘটার সম্ভাবনা থাকে এর বিজ্ঞান সম্মত কারণ হিসেবে বলা যেতে পারে, ভাঙা আয়না বাড়িতে রাখলে দুর্ঘটনা বশত হাত কেটে যেতে পারে l আর একটি কারণ হল প্রাচীন কালে রোমের মানুষেরা বিশ্বাস করত যে, প্রতি ৭ বছর অন্তর জীবন বদলায় l তাই রোমের মানুষেরা বলা শুরু করেন আয়না ভাঙলে ৭ বছরের দুর্ভাগ্য বয়ে নিয়ে আসে l
শবদাহের পর স্নান করা
আমরা শ্মশানে শবদাহ করে ফিরে আসার পর স্নান করি l কিন্তু কেন? এই প্রশ্নটি আমাদের মনে আসতেই পারে l আসলে যখন কোনো প্রাণীর মৃত্যু ঘটে, তখন তার দেহ কে প্রকৃতির সঙ্গে বিয়োজিত করবার জন্য অনেক বএকটেরিয়া এসে একত্রিত হয় l সেই দেহ পোড়ানোর সময়ে সেই বএকটেরিয়া, জীবাণু, পরিবেশে ছড়িয়ে পড়ার সম্ভাবনা দেখা যায় l তাই শ্মশানে শবদাহ করার পর আমাদের স্নান করা উচিত l
উত্তর দিকে মাথা করে শোওয়া খারাপ
আমাদের মা, রা বলে থাকেন উত্তর দিক করে মাথা করে ঘুমোতে নেই l এই কুসংস্কার এর পিছনে ও কিছু বৈজ্ঞানিক ভিত্তি আছে l পৃথিবীর দুটি চৌমবক ক্ষেত্র বা মেরু অঞ্চল রয়েছে l উত্তর মেরু ও দক্ষিণ মেরু l আমাদের মানব দেহে ও একই পজিশন এ সমান্তরাল দুটি চৌমবক ক্ষেত্র রয়েছে l এই দু’টি চৌমবক ক্ষেত্রে র একটি পজিটিভ ও একটি নেগেটিভ l চুম্বক এর ধর্ম মেনে সম মেরু বিকরষণ করে ও বিপরীত মেরু আকর্ষণ করে l ঠিক এই কারণেই উত্তর দিকে মাথা করে ঘুমোতে নেই l
পিরিয়ডস এর সময়ে মহিলাদের মন্দিরে প্রবেশ নিষেধ
আমরা এই 2021 সালে বাস করেও এখনো পর্যন্ত পিরিয়ডস এর সময়ে মেয়েদের মন্দিরে প্রবেশ নিষেধ l এর পিছনে বৈজ্ঞানিক কারণ হিসেবে দেখা যেতে পারে, এই সময়ে মেয়েদের বিভিন্ন ধরণের শারীরিক সমস্যা দেখা যায় l পিটুইটারি গ্রনথই থেকে নানা ধরণের হরমোন ক্ষরিত হয় l মেয়েদের শারীরিক বিভিন্ন ধরণের পরিবর্তন ঘটে l তাই এই সময়ে বাড়ির বাইরে বেরোলে তাদের নানা ধরণের অসুবিধা র সম্মুখীন হতে হবে l সেই জন্য ই এই নিয়মের কথা বলা হয় l যদি ও বর্তমানে সএনিইটারি নএপকিন আবিষ্কার হওয়ার ফলে এই নিয়মের কোনো অস্তিত্ব নেই।
লেবু লংকা ঝোলানো
অনেক সময় দেখা যায় আমরা আমাদের বাড়ির মূল দরজা য় বা ব্যবসার জায়গায় লেবু লংকা ঝুলিয়ে রাখি l আমাদের বিশ্বাস এতে অশুভ শক্তির প্রবেশ ঘটবে না l কিন্তু আপনি কী জানেন এর পিছনে বৈজ্ঞানিক কারণ রয়েছে? লেবু ও লংকা য় কিছু কীটনাশক উপাদান আছে যে গুলি পোকা কে কাছে আসতে দেয় না l ফলে আপনার বাড়ি বা দোকান পোকার হাত থেকে রক্ষা পাবে l
সূর্যাস্তের পর নখ কাটতে নেই
সন্ধ্যা র পর নখ কাটতে বসলে বাড়ির বড় রা বারণ করে থাকেন l এ প্রসঙ্গে যুক্তি যুক্ত উত্তর হিসেবে দেওয়া যেতে পারে, তখনকার দিনে সন্ধ্যা র পর ইলেকট্রিক থাকত না l নখ কাটতে বসলে আঙুল কাটার বা যে কোনো ধরণের বিপদ ঘটার সম্ভাবনা থাকত l অথবা নখ খাবারে পড়ে যাওয়ার ও সম্ভাবনা থাকত
শনি – বৃহস্পতিবার ও নিরামিষ খেতে হয়
শাস্ত্রে বলা হয় শনি মহারাজ খুব রাগী ঠাকুর l তাই তুষ্ট করার জন্য অনেকেই শনিবার নিরামিষ খেয়ে থাকেন l আবার মঙ্গলবার মঙ্গলের দোষ এড়িয়ে যাওয়ার জন্য এবং যথাক্রমে বৃহস্পতিবার বাড়িতে মা লক্ষ্মী র আগমন হয়, এবং মা লক্ষ্মী যাতে তুষ্ট হন l তিনি যাতে চপলা না হয়ে যান l সেজন্য এই দিন গুলো আমরা নিরামিষ খেয়ে থাকি l কিন্তু এর পেছনে যদি কোনো বিজ্ঞান সম্মত কারণ আমরা খুঁজে থাকি, তাহলে আমরা দেখতে পাব যে আমাদের পূর্বপুরুষদের একটা ধারণা ছিল যে আমাদের পেট ঠিক রাখবার সপ্তাহের এই কটা দিন নিরামিষ খাওয়া জরুরি l
যে কোনো শুভ কাজে বেরোনোর আগে দই চিনি
আমরা স্কুল, কলেজে পরীক্ষা দিতে যাওয়ার আগে বাড়ির মা, ঠাকুমা রা সবসময় আমাদের দই চিনি খাইয়ে পরে পরীক্ষা দিতে পাঠাতেন l আমাদের মনের বিশ্বাস যে তাতে কাজে সাফল্য আসবেই l কিন্তু বিজ্ঞানী রা বলছেন এবং তার সাথে সাথে আয়ুরবেদ শাস্ত্র বলছে দই আসলে ঠান্ডা জিনিস, তা আমাদের শরীর কে গরম হতে দেয় না, এবং এর থেকে আমরা এনার্জি পাই l
রাত্রে বেলায় গাছের পাতায় হাত দিতে নেই
রাত্রে বেলায় গাছের পাতায় হাত দিতে নেই, বা গাছের তলায় বসতে নেই l আসলে গাছ দিনের বেলায় অক্সিজেন ত্যাগ করে, এবং রাত্রে বেলায় ঠিক এর উল্টো কাজ টি করে অর্থাৎ অক্সিজেন নেয় l তাই এরকম বলা হয়ে থাকে l আরও একটি কারণ হিসেবে আমরা বলতে পারি গাছের মধ্যে অনেক বিষাক্ত পোকামাকড় থাকে, সেই জন্য ও রাত্রে বেলায় গাছের পাতায় হাত দিতে নেই l
গ্রহণ চলাকালীন রান্না করা বা খাবার খাওয়া উচিত নয়
গ্রহণ রান্না করা বা খাবার খাওয়া উচিত নয় l কারণ হিসেবে ব্যাখ্যা দেওয়া যেতে পারে, সূর্য গ্রহণ এবং চন্দ্র গ্রহণ এ সব ই মহাজাগতিক ব্যাপার l আর এই সব মহাজাগতিক ঘটনা কে কেন্দ্র করে বিকিরণ ঘটে থাকে l যার মধ্যে বিভিন্ন ধরণের কণা থাকে l যা আমাদের শরীরের ক্ষেত্রে ক্ষতিকর l এর সাথে বেশ কিছু ক্ষতি কারক জীবাণু আসে যা থেকে সেই জীবাণু মিশে আমাদের শরীর কে ক্ষতিগ্রস্ত করতে পারে।
পিছন থেকে ডাকা
কোনো মানুষ কে বলা হয় পিছু ডাকতে নেই l এতে নাকি যাত্রা কালে অশুভ ঘটনা ঘটে l এটি কে আমরা অন্য ভাবে ও বলতে পারি যে, পিছন থেকে ডাকলে, কোনো ধরণের বিপদ ঘটতে পারে l সেই বিপদ কে এড়িয়ে যাবার জন্য আমরা বলতে পারি পিছন থেকে ডাকতে নেই l
তাহলে আমার লেখা এই আর্টিকেল টি পড়ে জানতে পারলেন যে সমস্ত কুসংস্কার ধর্মীয় অথবা আমাদের সমাজে বহুকাল ধরে প্রচলিত আছে, সেগুলি নিছক গল্প কথা নয় l এগুলির পিছনে যথেষ্ট বৈজ্ঞানিক কারণ আছে l সেগুলি উপযুক্ত তথ্য সহ আপনাদের সামনে তুলে ধরার চেষ্টা করলাম l এগুলি জেনে আপনাদের ধারণা র সামান্যতম পরিবর্তন ঘটেছে কি না সেটা জানার অপেক্ষায় থাকলাম l আপনাদের ফিডব্যাক অতি অবশ্যই জানাবেন l ভালো থাকবেন, সুস্থ থাকবেন l
মন্তব্য করুন