মানুষের শরীরের মধ্যে সবথেকে স্পর্শ কাতর অঙ্গ হল চোখ। এই চোখের সৌন্দর্যের মধ্যেই মানুষের সার্বিক সৌন্দর্য লুকিয়ে থাকে। নিখুঁত সুন্দর চেহারা পেতে গেলে অবশ্যই সুন্দর চোখের অধিকারী হতে হবে আর চোখের তলায় যদি থাকে কালো দাগ বা ডার্ক সার্কেল, তাহলে চোখের সৌন্দর্য সেইভাবে প্রকাশ পাবে না।
চোখের নীচের কালো দাগ দূর করতে গেলে অনেকেই বিভিন্ন রকম ক্রিম ব্যবহার করেন তবে আজ বলবো ঘরোয়া পদ্ধতিতে কীভাবে চোখের নীচের ডার্ক সার্কেল থেকে মুক্তি পেতে পারেন।
১. ডার্ক সার্কেল হওয়ার কারণঃ
অনেকেরই দেখা যায় চেহারা খুব সুন্দর থাকলেও চোখের চতুর্দিকে একটা ডার্ক সার্কেল তৈরি হয়। অতিরিক্ত মানসিক টেনশন ও পর্যাপ্ত পরিমানে না ঘুমানোর জন্য চোখের নিচে ডার্ক সার্কেল পরে। এই ডার্ক সার্কেলের জন্য ত্বকের ওপরে একটা প্রভাব পড়ে।
২. ডার্ক সার্কেলর জন্য চিকিৎসাঃ
চোখের নীচের অংশ ও পাতার অংশ ধীরে ধীরে কালো হয়ে গেলে তাকে ডার্ক সার্কেল বলে। এই ডার্ক সার্কেল দূর করার জন্য অনেকেই কসমেটিকসের দোকানে গিয়ে নানান রকম ক্রিম ব্যবহার করেন তবে এই সকল জিনিস ব্যবহারের ফলে ত্বকে ভালো হওয়ার বদলে অনেক সময় খারাপ হয়ে যায়। তাই প্রাকৃতিক উপাদান ব্যবহার করলে যেমন কোনরকম সাইডএফেক্ট থাকবে না তেমনি সহজেই এই ডার্ক সার্কেলের হাত থেকে মুক্তি পাওয়া যাবে। চলুন আজ জেনে নিন ঘরোয়া উপায়ে কীভাবে ডার্ক সার্কেল এর হাত থেকে মুক্তি পাবেন।
৩. কতগুলো প্রাকৃতিক জিনিস যা ডার্ক সার্কেল কমায়ঃ
ক. শসা ও টমেটোর প্যাকঃ
সুন্দর ও নিখুঁত ত্বক পাওয়ার ক্ষেত্রে শসা ও টমেটোর যে একটি বিশেষ ভূমিকা আছে সে কথা সকলেই জানে। ত্বকের কালো দাগ, কুঁচকে যাওয়া চামড়া মসৃণ করতে অনেকেই শসা ও টমেটো মিক্সড করে মুখে ব্যবহার করেন, একইভাবে এই দুটি উপাদান যদি আপনি ডার্ক সার্কেলের জায়গায় ব্যবহার করেন, তাহলেও ডার্ক সার্কেলের থেকে মুক্তি পাবেন।
শসা ও টমেটো ব্যবহার করার উপায়ঃ
প্রথমে একটি ব্লেন্ডারে শসাকে থেতলে নিয়ে তার থেকে ২ চামচ রস বের করে নিন। এরপর একটি পাকা টমেটো থেতলে তার থেকে আবার দুই চামচ রস বের করে নিয়ে একসাথে মিশিয়ে নিন। এই মিশ্রণের মধ্যে এক চামচ চালের গুঁড়ো ও আধা চামচ হলুদ গুঁড়ো দিন, তারপর এই মিশ্রণটা চোখের নিচের কালো অংশে ব্যবহার করুন।
এই মিশ্রণে শসা, টমেটোর পাশাপাশি চালের গুঁড়ো ও হলুদের গুঁড়োর ব্যবহার এন্টি অক্সিডেন্ট হিসেবে কাজ করবে, যার ফলে চোখের চারপাশের মরা চামড়াকে উজ্জ্বল করে তুলবে। এই মিশ্রণটি আলতোভাবে হাতের সাহায্যে লাগান, ১৫ থেকে ২০ মিনিট এই মিশ্রণটি চোখের নীচে রেখে তারপর ঠান্ডা জল দিয়ে ধুয়ে ফেলুন। সপ্তাহে তিনদিন এই মিশ্রণ ব্যবহার করলে উপকার পাবেন।
খ. অ্যালোভেরা ও আলুর প্যাকঃ
চোখের নীচের কালো দাগ থেকে মুক্তি পেতে অ্যালোভেরা ও আলু ব্যবহার করতে পারেন। ত্বকের মধ্যে থাকা যে কোনো কালো দাগ তুলতে এই দুই উপাদান ভীষণ কার্যকরী হয়। চোখের নীচের কালো দাগ তুলতে যদি এটি ব্যবহার করেন, তাহলে ডার্ক সার্কেল ওঠার পাশাপাশি চোখের ত্বককে মসৃণ ও কোমল হয়ে ওঠে।
অ্যালোভেরা ও আলু ব্যবহার করার উপায়ঃ
ব্লেন্ডারের সাহায্যে প্রথমে একটি আলুকে ভালোমতো থেঁতলে নিয়ে তার থেকে এক চামচ রস আলাদা পাত্রে রাখুন। তারপর এই পাত্রের মধ্যে এক চামচ এলোভেরা জেল দিয়ে মিক্সড করে নিন। এই মিশ্রণের সাথে এইবার দুটি ভিটামিন ই ক্যাপসুল ও এক চামচ গ্লিসারিন দিয়ে ভালো করে মিক্সড করে নিন।
চোখের নীচের ডার্ক সার্কেলে এইবার তুলার সাহায্যে এই মিশ্রণটি লাগিয়ে নিন। সবথেকে ভালো হয় যদি রাত্রে ঘুমানোর আগে এটি লাগিয়ে সারারাত রেখে সকালে জল দিয়ে ধুয়ে ফেলুন। বাজারজাতও যেকোনো কসমেটিকসের চাইতে এই প্যাক ব্যবহার করলে হাতেনাতে অনেক ভালো ফল পাবেন। সপ্তাহে দুই থেকে তিনবার এই প্যাকটি ব্যবহার করুন।
গ. লেবু ও শসার প্যাকঃ
ডার্ক সার্কেল কমানোর ক্ষেত্রে লেবু ও শসার প্যাক ব্যবহার করলে খুব তাড়াতাড়ি উপকার পাবেন। লেবুতে যে ভিটামিন সি ও অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট রয়েছে তা ডার্ক সার্কেল
কমাতে অত্যন্ত উপকারী। এছাড়া শসায় থাকা ভিটামিন বি , ভিটামিন সি ও জিঙ্ক চোখের ত্বককে সতেজ রাখে।
লেবু-শসার প্যাক প্রস্তুতের প্রণালীঃ
একটা পাত্রের মধ্যে এক চামচ লেবুর রস ও শসার রস নিয়ে নিন। (আবার অনেকে এই প্যাকে শসার রসের পরিবর্তে টমেটোর রস ব্যবহার করেন) এই মিশ্রণের মধ্যে আবার এক চামচ আলুর রস দিয়ে মিক্সড করুন।
এইবার এই মিশ্রণটি একটি তুলোর বলের সাহায্যে আপনার চোখের চারপাশের অংশে লাগিয়ে নিন ও চোখের চারপাশে ভালোমতো ম্যাসেজ করুন। মিনিট দশেক এইভাবে ম্যাসেজ করবার পর জল দিয়ে চোখ ধুয়ে ফেলুন।
ঘ. কলা ও শসার প্যাকঃ
কলাতে আয়রন প্রোটিন রয়েছে তাই কলা ও শসার প্যাক মিশিয়ে চোখের নীচের ডার্ক সার্কেলে ব্যবহার করলে বেশ উপকার পাবেন। কলা ও শসার প্যাক ত্বকের উজ্জ্বলতাও বৃদ্ধি করে।
কলা ও শসার প্যাক প্রস্তুত প্রণালীঃ
কলা ও শসার প্যাক প্রস্তুত করবার জন্য একটি পাকা কলাকে ভালো করে চটকে নিন। এইবার এই কলার পেস্টের সাথে দুই চামচ শসার পেস্ট ভালো মতো মিশিয়ে নিন।
এই মিশ্রণ চোখের নীচের ডার্ক সার্কেলের অংশে ১০ মিনিটের জন্য লাগিয়ে রাখুন। মিনিট দশেক হয়ে গেলে ঠান্ডা জল দিয়ে ধুয়ে ফেলুন। এই প্যাকটি সপ্তাহে তিন দিন ব্যবহার করুন।
ঙ. আলু ও শসার প্যাকঃ
চোখের নীচের ডার্ক সার্কেল ব্যবহার করতে আলু ও শসার প্যাক ব্যবহার করুন।
আলু ও শসার প্যাক ব্যবহারের প্রণালীঃ
এই প্যাক টি ব্যবহার করতে প্রথমে আলু ছোট করে কেটে থেতলে রসটা বার করে একটি আলাদা পাত্রে রাখুন। এরপর শসাকে ব্লেন্ড করে রসটা নিয়ে আলুর রসের সাথে মিক্স করে নিন।
আলু ও শসার রসের এই মিশ্রন তৈরি করে তুলোর বলের সাহায্যে চোখের নীচের ডার্ক সার্কেলে লাগিয়ে নিন, মিনিট খানেক রেখে জল দিয়ে ধুয়ে ফেলুন। একটানা পরপর তিনদিন এই প্যাকটা ব্যবহার করলে ডার্ক সার্কেল থেকে মুক্তি পাবেন সহজেই।
৪. চিকিৎসকদের পরামর্শঃ
চোখের নীচের কালো দাগ দূর করতে চিকিৎসকরা কতগুলি পরামর্শ দিয়ে থাকেন, সেগুলো যদি ঠিকমতো মেনে চলেন তাহলেও ডার্ক সার্কেল কমে যাবে।
চ. মোবাইলের ব্যবহার কমাতে হবেঃ
অতিরিক্ত মোবাইলের ব্যবহার কমাতে হবে। মোবাইলের অতিরিক্ত ব্যবহারের ফলে চোখের নীচের তলায় কালি পড়ে।
ছ. প্রতিদিন পর্যাপ্ত ঘুমঃ
রোজ পর্যাপ্ত পরিমাণে ঘুমোতে হবে। প্রতিদিন একজন ব্যক্তির সাত থেকে আট ঘণ্টা গভীর ঘুমের প্রয়োজন। ঘুমের পরিমাণ কম হলে চোখের তলায় কালি পড়ে।
উপরিউক্ত এই ঘরোয়া উপায়গুলি ঠিকমতো অবলম্বন করলে ও চিকিৎসকদের পরামর্শ মেনে চললে এক সপ্তাহের মধ্যেই চোখের ডার্ক সার্কেল কমে যাবে।
মন্তব্য করুন