সৌন্দর্য শুধু মুখ দেখেই বিচার হয় না। বরং সামগ্রিকভাবে আপনি নিজেকে কতখানি সুন্দর রাখছেন, তার ওপরেও কিন্তু আপনার সার্বিক সৌন্দর্য নির্ভর করে। তেমনই হল নখ। আপনার হাতের নখগুলিকে ঝকঝকে করে তোলা ভীষণ প্রয়োজন।
অনেক সময়ে এমন হয় যে, আপনিই নখের উপরের পরত উঠে আসতে শুরু করে, যা দেখতে মোটেও ভালোলাগে না। এইভাবে নখের পরত উঠতে থাকার পর একসময়ে নখের ওই অংশ ভেঙে যায়। চিকিৎসার পরিভাষায় একে অনিকসিজিয়া (onicoschizia) বলা হয়।
এই রোগে কিন্তু আপনার নখ ক্ষতিগ্রস্থ হওয়ার বাহ্যিক এবং আভ্যন্তরীণ- দুই কারণই থাকতে পারে।
আভ্যন্তরীণ কারণগুলি হল
- রক্তাল্পতা (রক্তে লৌহকণিকার অভাব)
- জলশূন্যতা
- আন্ডার অ্যাকটিভ থাইরয়েড
- ফুসফুয়ের সমস্যাজনিত কারণে অনেকসময়ে নখ হলুদ হয়ে যেতে পারে।
- কিডনির অসুখ
- শরীরে ভিটামিন ই-এর অভাব
- বয়স বৃদ্ধি
- রক্তসঞ্চালন পদ্ধিতিতে সমস্যা
- ত্বকের সংক্রমণ
বাহ্যিক কারণগুলির মধ্যে রয়েছে
- অতিরিক্ত মাত্রায় হাত ধোয়া
- নেইল পলিশ রিমুভার ব্যবহার বা করেই নখ দিয়ে খুঁটে নেইল পলিশ তোলা
- জেল বা অ্যাক্রিলিক নেইল ব্যবহার করা (বিশেষত নেইল এক্সটেনশনের সময়ে)
- নখে যদি কোনও কেমিকেলজাতীয় কোনও পদার্থ লাগে
- প্রত্যেকদিন এমন কোনও কাজ করা যাতে নখের ওপর অতিরিক্ত চাপ পড়ে
- দিনের অধিকাংশ সময়ে কোনও গরম এবং আর্দ্র জায়গায় থাকা
- প্রয়োজনের চেয়ে অতিরিক্ত পরিমাণে নেইল পলিশ রিমুভার ব্যবহার করা
- নখ ফাইল করার সময়ে অতিরিক্ত চাপ দিয়ে ঘষা।
আপনার নখের এই সমস্যা কী থেকে হচ্ছে, কোনও আভ্যন্তরীণ কারণ, নাকি কোনও বাহ্যিক কারণ- তা যদি আপনি বুঝতে না পারেন, তাহলে আপনার হাত এবং পায়ের নখে আসা পরিবর্তন দেখেই বুঝতে পারবেন। যদি এই পরিবর্তন কেবলই আপনার হাতের নখে দেখা যায় বা কেবল পায়ের নখে দেখা দেয়, তাহলে তা বাহ্যিক কারণের জন্যই হয়েছে বুঝতে হবে।তবে চিন্তা করবেন না। সমস্যা যখন আছে তখন এর সমাধানও থাকবে।
সমস্যা থেকে মুক্তি পাবেন কীভাবে?
- বিশেষত গৃহবধুরা বাড়ির যেকোনও ধরণের কাজ করার সময়ে হাতে গ্লাভস পরে নিন।
- রাতে ঘুমোতে যাওয়ার আগে নখে তেল মালিশ করুন।
- নেইল পলিশ অবশ্যই পরুন। কিন্তু একটা অনেকদিন ধরে নখে নেইল পলিশ লাগিয়ে রাখবেন না। নখ দিয়ে স্ক্র্যাচ করে বা ঘষে কখনওই নেইল পলিশ তুলতে যাবেন না। নেইল পলিশ রিমুভারটি যেন ভালো মানের হয়, সেদিকে নজর দিন।
- অনেকেই ফাইলার কিনে বাড়িতে বসেই নেইল ফাইল করার চেষ্টা করেন। কিন্তু ফাইলারের ব্যবহার যদি আপনার না জানা থাকে , তাহলে কখনওই বাড়িতে বসে একা একা নেইল ফাইল করার চেষ্টা করবেন না। এর জন্য কোনও বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নিন।
- বিশেষত মহিলারা অনেকসময়েই রক্তাল্পতা বা অ্যানিমিয়ায় ভুগে থাকেন। আপনি যদি বুঝতে পারেন যে, অ্যানিমিয়ার কারণেই আপনার এই সমস্যা হচ্ছে, তাহলে খাদ্যতালিকায় অবশ্যই এমন সব খাবার রাখুন, যা অতিমাত্রায় লৌহসমৃদ্ধ যেমন বেকড আলু (খোসাসমেত), পালং শাক ইত্যাদি।
- শরীরকে সর্বদা হাইড্রেটেড রাখুন। শরীর ডিহাইড্রেটেড হলেই কিন্তু শরীরে নানাবিধ সমস্যা দেখা দেয়, সেইসঙ্গে অনিকসিজিয়াও মাথা চাড়া দিয়ে ওঠে। ফলে শরীরে জলের ঘাটতি যাতে না দেখা দেয়, সেজন্য প্রতিদিন নিয়ম করে পর্যাপ্ত পরিমাণে জল পান করুন।
- আপনার যদি ইতিমধ্যেই অনিকসিজিয়া শুরু হয়ে থাকে তাহলে বাড়িতেই করতে পারেন একটা সহজ টোটকা। এর জন্য প্রতিদিন ১০-১৫ মিনিট আপনার নখ অলিভ অয়েলে ভিজিয়ে রাখুন। এইভাবে অন্তত টানা এক মাস করুন।
মন্তব্য করুন