ঘটনা ১
১৬ই ডিসেম্বর ২০১২,দিল্লি- ২৩ বছর বয়সী একটি মেয়ে তার বন্ধুর সাথে রাতে বাড়ি ফেরার পথে একটি বাসে ড্রাইভার সহ আরো ৫ জনের হাতে ধর্ষিত ও অমানবিক ভাবে অত্যাচারিত হয়, এবং ২৯শে ডিসেম্বর ২০১২ তে তার মৃত্যু হয়| হ্যা ঠিকই ধরেছেন এই সেই নির্ভয়া কান্ড যার জন্য গত দেশ তোলপাড় হয়ে উঠেছিল, এবং যা আজও আমাদের শিহরিত করে|
ঘটনা ২
৫ই আগস্ট ২০১৭,চন্ডিগড়- ২৯ বছর বয়সী ভারনিকা তার নিজের গাড়িতে রাতে বাড়ি ফেরার পথে দুজন অন্য একটি গাড়িতে তাকে ফলো করে, তার গাড়িতে জোর করে ঢোকার চেষ্টা করে এবং নানা রকম ভাবে তার গাড়িটি থামানোর চেষ্টা করে, নিজের চেষ্টা ও সাহসিকতার জন্য মেয়েটি সুরক্ষিত বাড়ি ফিরে আসে| যারা এই কান্ডটি ঘটে তাদের মধ্যে একজন হরিয়ানা গরিষ্ঠ BJP নেতা সুভাস বাড়ালার পুত্র বিকাশ বাড়ালা|
ঘটনা ৩
১১ সেপ্টেম্বর দিল্লী,২৩ বছর বয়সী একটি মেয়ে তার ভাইয়ের সাথে দেখা করে বাড়ি ফেরার পথে| লেট হওয়াতে বাস স্ট্যান্ড যাবার সময় একজন ট্যাক্সি ড্রাইভার দ্বারা প্রতারিত ও ধর্ষিত হয়|
ঘটনা ৪
কলকাতা ১ই এপ্রিল, কলকাতা শহরের পার্কস্ট্রিট অঞ্চলে একটি নামী নাইট ক্লাব এ একজন ৩০ বছর বয়সী মহিলাকে মলেস্ট করা হয়|
এই ঘটনা গুলি এবং এরকম আরো অনেক ঘটনাই প্রতিদিন আমরা নিউস চ্যানেল ও নিউস পেপারের মাধ্যমে জানতে পারি| মেয়েদের সুরক্ষা আজও এক বড়সর প্রশ্নের সম্মুখিন| এর জন্য কাকে দায়ী করা উচিত— হালফ্যাসন মানে ছোটো ছোটো টাইট জামাকাপড় না সমাজে ভালো মানুষের মুখোশের আড়ালে লুকিয়ে থাকা কিছু মানুষের নিম্ন মানুষিকতা?
পোশাকের ভূমিকা
প্রথমে আসা যাক পোশাক নিয়ে| কোল্ড শোল্ডার, হট শোল্ডার, হল্টার নেক, টিউব টপ, ওয়ান পিস, হট প্যান্ট ইত্যাদি এগুলি হলো তথাকথিত সেই পোশাক যারা কিছু মানুষ কে না চাইতেও বাধ্য করে কিছু অপরাধ মূলক কাজ করতে| কিন্তু তাহলে শাড়ি পরা বা সালোয়ার কামিজ পরা মহিলারা কি ধর্ষিত হয় না? আমরা এরকম অনেক ঘটনাই পেপার বা ইন্টারনেট ঘাটলে পেয়ে যাব যেখানে রাতে কর্মক্ষেত্র থেকে ফেরার পথে বা কলেজ বা টিউশন থেকে ফেরার পথে এমন কি দিনের আলোয় ছোটো পোশাক না পরা বা সালোয়ার বা শাড়ি এমনকি বুরখা ধারী মহিলা বা মেয়েরাও ধর্ষিত বা মলেস্ট হচ্ছে| তাহলে এর কি উপায় সর্বক্ষণ ঘরে বন্দী হয়ে থাকা না নিজের পছন্দ মত পোশাক পরা বন্ধ করে দেওয়া| আমার মতে যারা এই ধরনের অপরাধ করে তাদের কাছে আমাদের পোশাক খুব একটা বেশি ম্যাটার করেনা|
সামাজিক মানুষিকতা
এবার আসা যাক সামাজিক মানুষিকতা বিষয়টিতে| আমাদের সমাজে এখনো কিছু মানুষ আছে যাদের মতে নারী শুধু মাত্র ভোগের বস্তু| তা সে যে রূপেই বা যে পোশাকেই তার সামনে আসুন না কেন| জোর পূর্বক বা বল পূর্বক মেয়েটি বা মহিলাটির ওপর অধিকার স্থাপন তাদের আনন্দ দেয়| এই ধরনের মানুষিকতার পেছনে তার বড় হয়ে ওঠা বা অসুস্থ মানুষিকতাই কাজ করে| কারণ সে হয়ত ছোট থেকেই শুনে আসছে যে এই মেয়েটি ছোটো পোশাক পরে তাই সে খারাপ বা মেয়েটি রাতে বাড়ি ফেরে তাই তার চরিত্র খারাপ বা সে ছেলেদের সাথে একটু বেশি মেশে তাই সে মোটেও ভালো ঘরের নয়| এই ধরনের বড় হয়ে ওঠা বা অসুস্থ মানুষিকতার জন্যই কিছু মানুষ তার ঘৃন্ন সুপ্ত বাসনাকে চরিতার্থ করার জন্য আমাদের চারপাশে ভালো মানুষ সেজে ঘুরে বেড়ায়|
আমদের সমাজে নারী সুরক্ষার দায় পুরোপুরি সমাজের ওপরই বর্তায়| যতদিন না এই ধরনের মানুষের মানুষিকতা পরিবর্তিত হচ্ছে ততদিন মহিলারা রাতে বা দিনে কখনই সুরক্ষিত নয়| তবে এটাও ঠিক যে আমাদের নিজেদের সুরক্ষা কিছুটা হলেও আমাদের নিজেদের হাতে| এরকম অনেক ঘটনাই শোনা যায় যেখানে মহিলারা মদ্যপ অবস্থায় রাতে নাইট ক্লাবে বা মদ্যপ অবস্থায় বাড়ি ফেরার পথে বিপদে পড়েছে| আমরা যখন জানি যে সমাজে কিছু মানুষ আমাদের ক্ষতি করার সুযোগে আছে তখন আমাদের নিজেদের সচেতন হওয়া উচিত| আর এই সচেতনতা কিছুটা হলেও আমাদের পোশাক ও আমাদের আচার আচরণের ওপর বর্তায়|
বর্তমানে নারী সুরক্ষার জন্য নানা ধরনের ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে| পুলিশ থেকে শুরু করে নানা রকম যান্ত্রিক ব্যবস্থাও নেওয়া শুরু হয়েছে| যেমন আপনি আপনার মোবাইলে সেফটিপিন, raksha, হিম্মত, ওম্যান সেফটি, স্মার্ট ২৪*৭ ইত্যাদি app গুলি ডাউনলোড করলে কোনো রকম বিপদে পড়লে তাড়াতাড়ি পুলিসের সহায়তা পেয়ে যেতে পারেন| আমাদের সমাজ যতই উন্নত হোক না কেন রাতে মেয়েদের সুরক্ষার বিষয়টি নিয়ে এখনো কিছু প্রশ্ন থেকে যায়, তবে আমাদের ও কর্ত্যব্য নিজেদের সম্পর্কে সচেতন হওয়া|
আমার দুর্গা সিরিয়ালের সঙ্ঘমিত্রা তালুকদারের রিয়াল লাইফের কিছু ছবি পর্ব- ২
মন্তব্য করুন