মুসলিম ধর্মাবলম্বীদের কাছে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ এবং পবিত্র হল রমজান মাস। ধর্মপ্রাণ মুসলিমরা এই সময়ে রোজা তথা উপবাস রাখেন। টানা এক মাস ব্যাপী চলে এই উপবাস রাখার অনুষ্ঠান। এক মাস পর চাঁদের দেখে ভঙ্গ হয় উপবাস। আর এই দীর্ঘ রমজান মাসের শেষে পালিত হয় ইদ-উল-ফিতর। সেদিন নতুন পোশাক এবং সুস্বাদু সব খাবার খেয়ে উদযাপন করা হয়।
রমজান কী?
রমজান চন্দ্রবর্ষের নবম মাসে পালিত হয়। প্রত্যেক ধর্মপ্রাণ মুসলিম ব্যক্তি এই সময় রোজা রাখেন। রমজান মাসের প্রতিটি দিন প্রাপ্ত বয়স্করা সূর্যদয় থেকে সূর্যাস্ত পর্যন্ত গোটা সময়টা উপবাস করে কাটান। তবে যাঁরা সন্তানসম্ভবা, অসুস্থ, ডায়াবেটিক রোগী এবং ঋতুমতী নারী তাঁদের ক্ষেত্রে এই নিয়ম কিছুটা হলেও ছাড় দেওয়া হয়েছে।
সূর্যদয়ের আগেই তাঁরা সারা দিনের মতো খাওয়া-দাওয়া সেরে নেন। যাকে বলা হয় শেহরি এবং সূর্যাস্তের পর আবার খাদ্য গ্রহণ করেন, যাকে বলে ইফতার। ইফতার উপলক্ষ্যে রসনাতৃপ্তের জন্য বিভিন্ন স্পেশাল, সুস্বাদু খাবার-দাবার রান্না করা হয়ে থাকে। ইফতারের খাওয়া-দাওয়াটা সকলে পরিবার, পরিজন, আত্মীয় –স্বজন এবং বন্ধুবান্ধবদের সঙ্গে খেয়ে থাকেন।
ইফতারকে কেন্দ্র করে নানা দেশে নানারকমের সংস্কৃতি গড়ে উঠেছে। এক একজন এক একরকমের খাবার দিয়ে ইফতার পালন করেন। অনেক দেশেই ইফতার উপলক্ষ্যে পার্টির আয়োজন করা হয়ে থাকে। পাশাপাশি এই ইফতারেই আত্মীয়-স্বজনদের দাওয়াত দিয়ে খাওয়ানো হয়। এছাড়া সব দেশেই মুসলিম সমাজে রমজানে গরীব মানুষকে সাহায্য করার রীতি প্রতলিত রয়েছে।
তবে রমজান যেহেতু গ্রীষ্মকালে অনুষ্ঠিত হয় সেজন্য শিশুদের রোজা পালন থেকে বিরত রাখা হয়। পাশাপাশি বারো বছরের কম বয়সী মেয়ে এবং পনেরো বছরের কম বয়সী ছেলেদের উপবাস রাখতে দেওয়া হয় না। তবে সাধারণ মানুষও কেউ যদি রোজা রাখতে না পারেন, তাহলে কোনও গরীব, অসহায়, ক্ষুধার্ত মানুষকে পেট ভরে খাওয়াল সকল পাপ খন্ডন হয়। এই সময় প্রতিটি মসজিদগুলি থেকে দরিদ্র মানুষকে ইফতার বিলানো হয়ে থাকে।
রমজানের সময় ধনী মুসলিমরা দরিদ্রদের কিছু দানসামগ্রী দান করেন, জাকাত নামে তা পরিচিত। যারা আর্থিক ভাবে সচ্ছল সেই মুসলিম ব্যক্তি তার আয়ের অর্থ ও সম্পদের পরিমাণের ওপর ভিত্তি করে নির্দিষ্ট পরিমাণ অর্থ বা পণ্য জাকাত হিসেবে দান করেন।
রমজান মাসে দিনের বেলা মুসলিমরা কেবল খাদ্য ও পানীয় গ্রহণ থেকে বিরত থাকে এমনটা নয়। পাশাপাশি ধূমপান করা থেকেও বিরত থাকেন এবং যৌন সঙ্গমও করেন না। সকল প্রকার কুকর্ম, আবেগ এবং রাগ দমন করে এই সময়টা শুদ্ধ ও পবিত্র শরীর এবং মনে সকল মুসলিম ধর্মাবলম্বীরা আল্লাহের কাছে দোয়া করেন।
কেন রোজা অনুষ্ঠিত হয় রমজান মাসেই?
ইসলামের পাঁচটি স্তম্ভের মধ্যে অন্যতম হল রোজা। পবিত্র কোরান ধর্মগ্রন্থে প্রত্যেকটি শারীরিক এবং মানসিকভাবে সুস্থ প্রাপ্তবয়স্কদের জন্য রোজা রাখার নিয়ম রয়েছে। আর সেই কারণেই আল্লাহের সান্নিধ্য লাভের আশায় রোজা রাখেন মুসলিমরা। তবে রোজা যে কেবল ধর্ম পালনের মাধ্যম তা-ই নয়। রোজার মুসলিমদের আরও বেশি করে সংযমী হতে শেখায়, পাশাপাশি যাবতীয় বদঅভ্যাসের ত্যাগ করা শেখায়। সেইসঙ্গে এই সময়ে খারাপ চিন্তা করা এবং খারাপ কথা বলাও নিষিদ্ধ করা হয়েছে কোরানে। ধর্মপ্রাণ মুসলিমরা এই সময় কাউকে মিথ্যা কথাও বলেন না। অন্যান্য মাসের চেয়ে রমজান মাসকে পবিত্র বলে আখ্যা দিয়েছেন স্বয়ং আল্লাহ।
রমজান ২০২০ সালে কবে?
শ্রী মদন গুপ্তের ফুল পঞ্জিকা অনুসারে, ১২ বৈশাখ (ইংরেজি ২৫ এপ্রিল) শনিবার রমজান মাস আরম্ভ। ইসলাম ধর্মাবলম্বীদের অদ্য হইতে মাস ব্যাপী রোজা আরম্ভ। তবে এই দিন এবং সময় পরিবর্তন হতে থাকে। শুক্লপক্ষের প্রথম চাঁদ দেখার পরই রোজা শুরু হয় এবং সেই দিন থেকে এক মাস পর্যন্ত চলে রমজান।
মন্তব্য করুন