পুজো তো চলে এলো বলুন! জানি এই কয়েকটা দিন কলকাতা ছেড়ে যেতে ইচ্ছে করে না। পূজোয় ঘোরাঘুরির জায়গা খুঁজছেন তো? কিন্তু, আমরা পাতি মধ্যবিত্ত বাঙ্গালী। লম্বা ছুটি তো তেমন পাই না। এই পুজোতেই সেই ছুটি পাবার সুবর্ণ সুযোগ। তা কিছু প্ল্যান করছেন নাকি!
কোথায় যাবেন ভাবছেন তো! কোনো চিন্তা নেই। আমরা আপনাকে বলে দেবো পুজোর এই কয়েকটা দিন কোথায় গেলে ভালো সময় কাটানো যাবে। দেখুন সময়টা অক্টোবর মাস, বেশ মনোরম। চলুন, আপনাদের এই সময়ে বেড়িয়ে পড়ার সুলুক সন্ধান দিয়েই দি।
নৈনিতাল , উত্তরাখন্ড
কলকাতার ঘিঞ্জি পরিবেশ থেকে দূরে স্বচ্ছ লেকের ধারে আপনি প্রিয়জনেদের সঙ্গে সময় কাটাচ্ছেন। ভাবুন তো! এই সময়ে খুব একটা ঠান্ডা ওখানে থাকে না। আর ওখানে গেলে কিন্তু সূর্যাস্ত দেখাটা ভুলবেন না। ছবি তোলার শখ আছে বুঝি খানিক! তাহলে তো এই জায়গা আপনার জন্য স্বর্গরাজ্য। স্বচ্ছ লেকের ধারে পাহাড়, চারিদিকে সবুজ, আর তার মাঝে মন্দির, দেবী নয়নার মন্দির। তার নামানুসারেই নাম নৈনিতাল। এখানে আপনি বোটিং, ট্রেকিং, ঘোড়ায় চড়া সবই পাবেন। যদি নতুন দম্পতি হন আর এই আপনাদের প্রথম পুজো হয়, তাহলে এর থেকে ভালো ও নিরিবিলি জায়গা কিন্তু আর পাবেন না। সামনেই মার্কেট পেয়ে যাবেন, যেখানে স্থানীয় হস্তশিল্পর সম্ভার আপনাকে মুগ্ধ করবেই। সঙ্গে ভীমতাল লেকটাও দেখে নেবেন।
গণপতিপুল, মহারাষ্ট্র
সমুদ্রের ধারে তো অনেক গেলেন। সেই কবে থেকে বাঙ্গালী পুরী, দীঘা, বর্তমানে গোয়াতেও যাচ্ছেন বৈকি! কিন্তু, এমন সমুদ্রতটে যাবেন নাকি যেখানে একটু শান্ত পরিবেশ পাবেন, খানিক কম লোক! তাহলে আপনার ডেস্টিনেশন হতেই পারে মহারাষ্ট্রের গণপতিপুল। সেপ্টেম্বর মাস বা তার আগে বৃষ্টিটা হয়ে যাবার জন্য পরিবেশ বেশ স্বচ্ছ হয়ে যায়। এখানে সমুদ্রের মধ্যে অনেকটা জায়গা জুড়ে সাদা নুড়ি-পাথর দিয়ে একটা পথ মতো তৈরি হয়েছে যেটা দেখতে অনেকটা গণেশের শুড়ের মতো। ২৬ কিমি দূরে রত্নগিরি শহর, ১ কিমি দূরে মালগুন্ডা গ্রাম এই সব কিন্তু দেখতেই হবে। এই বীচে যে গণেশের মুর্তি আছে তা নাকি ৪০০ বছরের প্রাচীন। স্বয়ম্ভূ গনপতি মন্দির খুবই বিখ্যাত।
ওয়ানাদ, কেরালা
আমরা বোধহয় প্রত্যেকেই কেরালার মনোরম পরিবেশে একবার গিয়ে অন্তত মুগ্ধ হব এই আশা রাখি। তাহলে আর দেরী কেন! চলে যান কেরালার ওয়ানাদে। আপনাকে নাগরিকতা থেকে মুক্তি দেবেই এই জায়গা। চারিদিকে সবুজ, পাহাড় এই সবই আপনার জন্য অপেক্ষা করছে। বেঙ্গালুরু থেকে ২৫০ কিমি দূরে, কেরালার উত্তরদিকে এই জায়গা। মাইসোর ন্যাশনাল হাইওয়ে এর পাশ দিয়েই গেছে। আপনি কিন্তু এখানে ঘুরতে গিয়ে ছেম্বরা পিক ও ওয়ানাদ ন্যাশনাল পার্কের মধ্যে ট্রেকিং করতে, নীলিমালা ভিউপয়েন্ট, মীনমুত্তি ওয়াটার ফল দেখতে ভুলবেন না যেন।
জিরো, অরুণাচলপ্রদেশ
একটু অন্যরকম ঘোরা হবে। জিরো হল অরুণাচলপ্রদেশের পূর্বদিকে অবস্থিত একটা ছোট টাউন। চারিদিকে পর্বত, মাঝে সবুজ ধান ক্ষেত, হাল্কা রোদ বা খানিক মেঘলা আকাশ সবই আপনাকে মুগ্ধ করবে। এখানে একটা উপজাতি বাস করে। এবারে পুজো সেপ্টেম্বরে। এই সেপ্টেম্বরে এখানে মিউসিকাল ফেস্টিভাল হয়। আপনার কিন্তু সেটা মিস করা ঠিক হবে না। তাছাড়া বর্ষা চলে গেছে আর কিছুদিন পরে শীত আসবে এখানে। এই দু’ইয়ের যাতায়াতটা কিন্তু আপনি বুঝতে পারবেন। ইটানগর থেকে ১১৫ কিমি আর সবচেয়ে কাছের রেল স্টেশন হল আসাম-আরুণাচলপ্রদেশের সীমান্তে নর্থ লখিমপুর স্টেশন যা ১০০ কিমি দূরে এই অঞ্চল থেকে। ডোলোমান্ডো, মিডে, পাঁচ হাজার বছরের পুরনো মেঘনা গুহা মন্দির এই সব কিন্তু অবশ্যই দেখবেন। তাহলে আর দেরী কিসের!
পাঁচমারি, মধ্যপ্রদেশ
এটা মধ্যপ্রদেশের একমাত্র হিল স্টেশন। একে এর সৌন্দর্য্যের জন্য সাতপুরা পর্বতের রাণীও বলা হয়। ১১০০ মিটার উচ্চতায় এটা অবস্থিত। মধ্যপ্রদেশের তথা সাতপুরার সর্বোচ্চ অঞ্চল ধূপগড় এখানেই অবস্থিত। ‘মারি’ কথার অর্থ হল গুহা। বলা হয় পান্ডবরা নাকি এখানে পাঁচটি গুহা নির্মাণ করেন। সেখান থেকেই এই নাম। এখানে আপনারা দেখতে পারেন রজতপ্রতাপ ফলস, অপ্সরা ফলস, পান্সি পুল, পিকাডেলি সার্কাস, দ্রৌপদী কুন্ড। ওয়াইল্ডলাইফের সম্ভারও অসাধারণ। ভোপালের হাবিবগঞ্জ থেকে বাসে করে ৫-৬ ঘন্টার মধ্যে এখানে চলে আসা যায়।
তাহলে আর কী! পুজোটা সপরিবারে ভালোভাবে কাটান। যাত্রা শুভ হোক।
নীল তিমির (Blue Whale) হাত থেকে বাঁচাতে চলে এলো গোলাপি তিমি (Pink Whale)
মন্তব্য করুন