আজকাল আমরা সবাই কম বেশি স্বাস্থ্য সচেতন। কেউ জিমে গিয়ে কসরত করছি তো কেউ বা ডায়েট কন্ট্রোল করতে আগ্রহী। এই সচেতনতা ভালো। কিন্তু শরীরে কোন উপাদানের পরিমান সঠিক ভাবে কতটা থাকা উচিত? তা জেনে তবেই ক্যালারি বার্ন করুন বা আর্ন করুন।
প্রোটিনের মাত্রা কমে গেলে শরীর ভেঙ্গে যাবে তা মনে রাখবেন। আমাদের সারাদিনের যাবতীয় কাজে শরীরকে এনার্জি যোগাতে প্রোটিনের অবদান অনেকখানি।
তাই ডায়েট নিয়ে সচেতন হতে গিয়ে খাবার থেকে প্রোটিন যেন বাদ না পরে বা কমে না যায়। কি কি খাবার খেলে প্রোটিনের মাত্রা সঠিক ভাবে শরীরে বজায় রাখা সম্ভব জেনে নিন।
প্রোটিনের উৎস
কোন কোন খাবার প্রোটিনের উৎস বা সোর্স? সাধারণত প্রোটিন জাতীয় খাবারের উৎসগত দিক হল দুটি:
- প্রাণীজ প্রোটিন
- উদ্ভিজ্জ প্রোটিন
প্রাণীজ প্রোটিন
প্রাণী জগৎ অর্থাৎ আমিষ বা মাংসাশী খাবার থেকে আমরা যে প্রোটিন লাভ করি তাকে বলে প্রাণীজ প্রোটিন। সেক্ষেত্রে মাংস, মাছ, ডিম, দুধ ইত্যাদি হল প্রাণীজ প্রোটিন। এগুলিকে প্রথম শ্রেণীর প্রোটিনও বলা হয়ে থাকে।
উদ্ভিজ্জ প্রোটিন
উদ্ভিদ জগৎ অর্থাৎ নিরামিষ খাবার থেকে আমরা যে প্রোটিন লাভ করি তাকে বলে উদ্ভিজ্জ প্রোটিন। সেক্ষেত্রে নানা রকমের শাক – সবজি, ডাল, বাদাম, সয়াবিন, ইত্যাদি হল উদ্ভিজ্জ প্রোটিন। এগুলিকে দ্বিতীয় শ্রেণীর প্রোটিন বলা হয়ে থাকে।
ভৌত, রাসায়নিক গুনাগুন ও দ্রবনীয়তার দিক থেকে প্রোটিনের শ্রেণি বিভাগ
ভৌত, রাসায়নিক গুনাগুন ও দ্রবনীয়তার ভিত্তিতে তিন ভাগে প্রোটিনকে ভাগ করা হয়:
- সরল প্রোটিন
- যুগ্ম প্রোটিন
- উৎপাদিত প্রোটিন
সরল প্রোটিন দ্রবনীয়তার ভিত্তিতে আবার ৭ ভাগে বিভাজিত হয়:
- অ্যালবিউমিন
- গ্লোবিউলিন
- গ্লুটোলিন
- প্রোলামিন
- হিস্টোন
- প্রোটামিন
- স্ক্লোরোপ্রোটিন
যুগ্ম প্রোটিনকে ৮ ভাগে ভাগ করা হয়:
- ক্রোমোপ্রোটিন
- নিউক্লিওপ্রোটিন
- লিপোপ্রোটিন
- গ্লাইকোপ্রোটিন বা মিউকোপ্রোটিন
- মেটালোপ্রোটিন
- ফ্লাভোপ্রোটিন
- ফসফোপ্রোটিন
- লৌহ-প্রোফাইরিন প্রোটিন
প্রোটিনের মাত্রা ও কার্যকারিতা
মানব দেহে শরীরের ওজন অনুযায়ী প্রোটিনের মাত্রা নির্ভর করে। সাধারণত একজন প্রাপ্তবয়স্ক পুরুষের দেহে রোজ ৫৬গ্রাম প্রোটিন থাকা উচিত। প্রাপ্তবয়স্ক মহিলাদের ক্ষেত্রে এই পরিমান ৪৬ গ্রাম। আসলে একগ্রাম প্রোটিন থেকে আমাদের শরীর চারকিলো ক্যালরি অর্জন করে থাকে। ফলে প্রোটিনের মাত্রা সঠিক পরিমানে না থাকলে শরীর দুর্বল হয়ে যেতে পারে। তাই প্রোটিনের প্রয়োজনীয়তা মানব দেহের জন্য আবশ্যিক।
প্রোটিনের কার্যকারিতা মানবদেহের এক একটি অংশের সাথে জরিত। আমাদের মাথার চুল থেকে শুরু করে পায়ের নখ সব কিছুর সাথে রয়েছে প্রোটিনের সম্পর্ক। মানসিক বিকাশ থেকে শুরু করে দৈহিক বিকাশেও প্রোটিনের ভূমিকা রয়েছে। বিশেষ করে বাচ্চাদের দৈহিক গঠন ও মানসিক বিকাশে সঠিক মাত্রায় প্রোটিন থাকা জরুরি। শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাও নির্ভর করে প্রোটিনের উপর। তাই প্রোটিন জাতীয় খাবার খাওয়ার বিকল্প আর কিছু নেই সুস্থ্য থাকার জন্য।
প্রোটিন জাতীয় খাবার
রোজ আমাদের শরীরের প্রয়োজনীয় ক্যালরির ২০ থেকে ২৫ ভাগ আমরা অর্জন করি প্রোটিন জাতীয় খাবার খাওয়ার মধ্যে দিয়ে। তাই শরীরে প্রোটিনের মাত্রা প্রয়োজন অনুযায়ী বজায় রাখতে আমিষ ও নিরামিষ দুই খাবার খাওয়া জরুরি। দেখে নিন কি কি খাবেন।
ডিম রোজ একটি করে খাওয়া উচিত। কারণ ডিমে ৭ থেকে ৮ গ্রাম প্রোটিন অবস্থান করে, যা মস্তিষ্কের বিকাশে সাহায্য করে।
দুধ বা দুগ্ধজাত খাবার। এতেও ৭ গ্রাম মত প্রোটিন থাকে যা শরীরের দৈনিক প্রোটিনের ঘাটতি পুরণ করতে সক্ষম।
মাছ ও মাংস জাতীয় খাবারে সবচেয়ে বেশি মাত্রায় প্রোটিন থাকে। ২০ গ্রাম মত। তাই প্রাণীজ প্রোটিন খাবার পরামর্শ বেশি করে দেন ডাক্তাররা।
এছাড়াও নানারকমের সবুজ শাক – সবজি, ডাল, বাদাম, ফল ইত্যাদিতেও থাকে প্রোটিন। তাই কমবেশি এগুলো সবই খাওয়া খুব জরুরি। প্রোটিন জাতীয় খাবার খাওয়া মানে সুস্থ্য থাকা ও সুস্থ্য বাঁচা।
মন্তব্য করুন