৩রা মার্চ পশ্চিমবঙ্গ সরকারের পাবলিক সার্ভিস কমিশনের মিস্লেনিয়াসের প্রিলিমিনারি পরীক্ষার তারিখ ঘোষণা করা হয়ে গেছে, আপনারা জানেন। অনেকেই হয়তো বসছেন এবারের পরীক্ষায়। প্রস্তুতিও প্রায় শেষ মুহুর্তে। সরকারি চাকরির সুবিধা এবং নিরাপত্তা আপনারা সবাই জানেন বেসরকারি চাকরিতে নেই। তাই এই পরীক্ষায় ভিড়ও অনেক বেশী। আর আমাদের মতো জনবহুল রাজ্যে প্রতিযোগিতা বেশী বলেই আপনার দক্ষতা যত বাড়াবেন, সাফল্যের তত কাছাকাছি যাবেন আপনি। তাই এই শেষ মুহূর্তে এসে আপনাকে পরীক্ষা সংক্রান্ত সামান্য কিছু টিপস। আশা করি কাজে লাগবে।
ঠিক কোন চাকরির জন্য আপনি পরীক্ষা দেবেন, জানুন
পরীক্ষার প্রস্তুতি নেওয়ার আগে আপনাকে চাকরি করার মানসিকতাও তৈরি রাখতে হবে। আর এই পরীক্ষা দিয়ে ঠিক কোন ধরনের সরকারী চাকরি আপনি পেতে পারেন, না জানলে প্রস্তুতিতেও উৎসাহ পাবেন না। পাবলিক সার্ভিস কমিশনের মিস্লেনিয়াস পরীক্ষা দিয়ে আপনি ঠিক কী ধরণের সরকারী চাকরি পেতে পারেন ? আসুন জেনে নিই।
১. অ্যাসিস্ট্যান্ট চাইল্ড ডেভেলপমেন্ট প্রোজেক্ট অফিসার।
২. ডিজাস্টার ম্যানেজমেন্ট অফিসার/ ব্লক ডিজাস্টার ম্যানেজমেন্ট অফিসার।
৩. ব্লক ইয়ুথ অফিসার/ মিউনিসিপ্যাল ইয়ুথ অফিসার।
৪. সাব ইন্সপেকটর অব এক্সাইস। ( শুধু মাত্র পুরুষদের জন্য)।
৫. ব্লক ওয়েলফেয়ার অফিসার/ ওয়েলফেয়ার অফিসার।
৬. ইন্সপেকটর, ব্যাকওয়ার্ড ক্লাসেস ওয়েলফেয়ার।
৭. অ্যাসিস্ট্যান্ট এগ্রিকালচারাল মার্কেটিং অফিসার।
৮. অ্যাসিস্ট্যান্ট প্রোগ্রাম অফিসার।
৯. কন্ট্রোলার অব কারেকশনাল সার্ভিসেস।
১০. কনজিউমার ওয়েলফেয়ার অফিসার।
১১. সেভিং ডেভেলপমেন্ট অফিসার।
১২. পোস্ট ইন ওয়েস্ট বেঙ্গল সাব অর্ডিনেট লেবার সার্ভিসেস।
১৩. অডিটর অব কো অপরেটিভ সোসাইটিস।
১৪. ইন্সপেকটর অব এগ্রিকালচারাল ইনকাম ট্যাক্স।
১৫. অ্যাসিস্ট্যান্ট অডিটর, বোর্ড অব রেভিনিউ।
১৬. এক্সটেনশন অফিসার, মাস এডুকেশন এক্সটেনশন।
১৭. লেডি এক্সটেনশন অফিসার, মাস এডুকেশন এক্সটেনশন।
১৮. অ্যাসিস্ট্যান্ট কন্ট্রোলার অব কারেকশনাল সার্ভিসেস।
১৯. ইনভেস্টিগেটিং ইন্সপেকটর।
২০. রেভিনিউ ইন্সপেকটর, ইত্যাদি।
এই পোস্টগুলিতে ঠিক কতগুলো খালি পদের জন্য হচ্ছে এবারের পরীক্ষা, তা এখনও ঘোষণা করা হয়নি সরকারের তরফ থেকে। তবে জেনে যাবেন খুব শিগগির। আপাতত প্রস্তুতি চালিয়ে যান। স্পষ্টভাবে জেনে নিন প্রশ্নপত্রের ধরণ।
আপনাকে এই পরীক্ষা দিয়ে চাকরি পেতে হলে তিনটি ধাপের মধ্যে দিয়ে যেতে হবে- প্রিলিমিনারি, মেইন এবং ইন্টারভিউ বা পার্সোনালিটি টেস্ট। প্রতিটি ধাপেই পরের ধাপের জন্য পরীক্ষার্থী বেছে নেওয়া হবে। অর্থাৎ প্রতিটি ধাপেই বাদ দিতে দিতে এগোনো হয়ে থাকে। প্রিলিমিনারির জন্য ধার্য নম্বর থাকে ২০০, মেইনের জন্য থাকে ৪৫০ নম্বরের পরীক্ষা আর মেইনের পরীক্ষা উৎরে গেলে ১০০ নম্বরের ইন্টারভিউ পাশ করে যেতে পারলেই আপনার চাকরি পাক্কা। আগে আসুন দেখে নিই প্রিলিমিনারিতে ঠিক কী ধরণের প্রশ্ন থাকে-
১. জেনারেল স্টাডিসের ক্ষেত্রে প্রশ্নের সংখ্যা ৭৫ আর নম্বর ১৫০।
২. অঙ্কের ক্ষেত্রে প্রশ্ন সংখ্যা ২৫ আর নম্বর হল ৫০। সুতরাং মোট ১০০ টি প্রশ্নের জন্য থাকবে ২০০ নম্বর।
প্রিলিমিনারি পরীক্ষা হবে ১ ঘন্টা ৩০ মিনিটে। যদি আপনি এতে পাশ করেন, তাহলে আপনি বসতে পারবেন মেইন পরীক্ষায়।
মেইন পরীক্ষার তিনটি পেপারের জন্য মোট ধার্য নম্বর ৪৫০। এটিতে প্রিলির মতো অবজেকটিভ প্রশ্ন থাকবে না, এতে ব্যাখ্যা ধর্মী প্রশ্নই থাকবে বেশী। মেইনের পরীক্ষার প্রশ্নপত্রের ধাঁচে আসুন চোখ বোলানো যাক।
১. পেপার ১ ইংরেজি, তার জন্য নম্বর থাকবে ১৫০ আর সময় হল ৯০ মিনিট।
২. পেপার ২ বাংলা/ হিন্দি/ উর্দু/ নেপালি/ সাঁওতালি, তার জন্য নম্বর থাকবে ১৫০ আর সময় থাকবে ৯০ মিনিট।
৩. পেপার ৩ জেনারেল স্টাডিস, নম্বর থাকবে ১০০ আর তার জন্য সময় ১৫০ মিনিট।
৪. অঙ্ক ৫০ নম্বর থাকবে। তাহলে মোট নম্বর হল ৪৫০।
এই হল মেইন পরীক্ষার মোটের ওপর প্রশ্নের ধাঁচ। প্রস্তুতি শুরুর আগে এই ছকটিকে সামনে রাখুন, সেই মতো ঘরে বসে আগের বছরের প্রশ্নপত্রে যদি সময় ধরে প্রস্তুতি নেওয়া শুরু করেন, আশা করাই যায় আপনি সফল হবেন। ঘরে বসে মক টেস্ট দিন। ভালো পরীক্ষা দিতে হলে পরীক্ষার প্রশ্ন সম্পর্কে ধারণা তৈরি করাই যথেষ্ট নয়, প্রয়োজন তার ঘরে বসে নিয়মিত অনুশীলন। তাই আপনাকে ঘড়ি ধরে পরীক্ষা দিতে হবে। এ ক্ষেত্রে আপনি আগের বছরের প্রশ্নপত্রের ব্যবহার করতে পারেন, তা ছাড়াও আপনার জন্য আছে অনলাইনে মক টেস্টের ব্যাবস্থা। অনলাইনে মক টেস্টের জন্য রয়েছে একাধিক সাইট। আসুন, আপনাকে এমনই কিছু সাইটের হদিশ দিই। নিচের এই সাইটগুলোর লিংকে ক্লিক করলেই আপনি অনলাইন মক টেস্ট সম্পর্কিত যাবতীয় তথ্য পেয়ে যাবেন।
১. https://www.toppersexam.com/STATE-LEVEL-EXAMS/WBPSC-MISCELLANEOUS-EXAM_805.html
২. http://www.icsgwbcs.com/wbcs-online-mock-test-series/wbpsc-miscellaneous-service-exam-mock-test/
৩. https://www.prep.youth4work.com/State-Public-Service-Commission
নিয়মিত মক টেস্ট দিতে থাকলে আপনার আত্মবিশ্বাস অনেক বেড়ে যাবে আশা করা যায়। প্রয়োজনে উপযুক্ত কোচিং সেন্টার বেছে নিন। কারণ অনেক সময় আপনার হয়ত গাইডেন্সের প্রয়োজন হতে পারে। বাড়িতে বসে উপযুক্ত গাইডেন্স আপনি নাই পেতে পারেন। এ ক্ষেত্রে আপনাকে বাইরে কোনও কোচিং সেন্টারের সাহায্য নিতে হবে। আপনাকে আমরা হদিশ দেবো এমনই কিছু কোচিং সেন্টারের। আসুন, দেখে নেওয়া যাক।
১. রাইস এডুকেশন (RICE Education)
১১/১,বি.টি. রোড, রথতলা, কলকাতা- ৭০০০৫৬।
যোগাযোগ- ০৩৩ ২৫৬৪ ৪৩৪০, ২৫৬৪ ০৬০৪।
ওয়েবসাইট- http://riceindia.org/
২. মাইস (MIES)
২এ, মহাত্মা গান্ধী রোড, দ্বিতীয় তল, শিয়ালদহ, কলকাতা- ৭০০০০৯।
যোগাযোগ- ০৩৩ ২৩৬০ ৬১২৭।
ওয়েবসাইট- http://www.miesgroup.com/
৩. কেরিয়ার লঞ্চার
১, শিয়ালদহ কমার্শিয়াল কমপ্লেক্স, শিয়ালদহ, কলকাতা- ৭০০০১৪।
যোগাযোগ – ৯১৫২১৬৬৮৬৩
ওয়েবসাইট – http://www.careerlauncher.com/kolkata/
৪. ভিশন আই এ এস
২৬বি, নীলকন্ঠ বিল্ডিং ,ফ্ল্যাট ১চ, ক্যামাক স্ট্রিট , বর্ধন মার্কেটের কাছে।
যোগাযোগ – ৯১৫২১৬৬১২৫
ওয়েবসাইট – http://iasvision.com/
বই কিনে ঘরে বসে প্র্যাকটিস করুন। চাইলে আপনি ঘরে বসে বই কিনে প্রাথমিক প্রস্তুতি শুরু করতে পারেন। বাজার চলতি বইয়ের হদিশ তো আপনাদের জানাই আছে, অনলাইন বইয়ের কিছু সন্ধান দিই আসুন।
১. প্রিভিয়াস ইয়ার কোয়েশ্চেন পেপার অ্যান্ড আনসার এক্সাম বুক
দাম- ১৭০/-
২. ওয়েস্ট বেঙ্গল জেনারেল নলেজ
দাম ৪৫/-
৩. জেনেরাল নলেজ– মনোহর পান্ডে
দাম- ২৫/-
৪. জেনারেল নলেজ– ডঃ বিনয় কর্না
দাম – ১৪৪/-
সব শেষে একটাই কথা- পরিশ্রমের কোনও বিকল্প হয় না। পরীক্ষা প্রায় চলেই এল। এখন তাই শেষ মুহুর্তের প্রস্তুতি নিতে সকলেই ব্যাস্ত। তার আগে আমাদের এই সামান্য পরামর্শ আপনাদের আশা করি কাজে লাগবে। আপাতত রুটিন করে নিয়মিত অনুশীলন চালিয়ে যান। পরীক্ষার জন্য আগাম শুভেচ্ছা রইলো।
মন্তব্য করুন