পশ্চিমবঙ্গে ভেজাল দুধের রমরমা ছেয়ে গিয়েছে। আপনি বা আপনার পরিবারের জন্য রোজ যে দুধ আপনি কিনছেন তা ভেজাল অধিকাংশ ক্ষেত্রে। ছোটবেলা থেকে আমরা সবাই পড়ে এসেছি যে দুধ হল সুষম খাদ্য। আমরা আমাদের শরীরের জন্য প্রয়োজনীয় যাবতীয় উপাদান দুধ থেকে পেতে পারি। তাই আপনি খুব নিশ্চিন্তে আপনার সন্তানকে দুধ খেতে দিচ্ছেন। কিন্তু, জানেন কী! এই দুধেই মিশে আছে এমন কিছু উপাদান যা আমাদের সবার শরীরে প্রবেশ করলে আমাদের নানারকম মারাত্মক রোগ হতে পারে। যে দুধকে আমরা ভাবছি আমাদের শরীর গঠনের পক্ষে অত্যন্ত সহায়ক, সেই দুধই আমাদের শরীরকে ভিতরে ভিতরে ক্ষয় করে দেয়। কীভাবে? আসুন দেখে নেই।
দুধের স্যাম্পেল পরীক্ষা করে জানা যাচ্ছে
আমরা সবাই B.E.S.U ( Bengal Engineering and Science University )’র নাম জানি। Times of India’র পক্ষ থেকে B.E.S.U কে অনুরোধ করা হয়েছিল কিছু দুধের স্যাম্পেল পরীক্ষা করার জন্য। জানেন সেই পরীক্ষার ফল কী হয়েছে? আমাদের ব্যবহৃত বেশিরভাগ দুধই ভেজাল দুধ! জানতে ইচ্ছে করছে তো কী এমন থাকে ভেজাল হিসাবে। শুনুন তাহলে, ফর্মালিন, ক্যান স্যুগার, স্টার্চ, সেলুলোজ, ইউরিয়া, অ্যামোনিয়াম সালফেট, সোডিয়াম ক্লোরাইড, কার্বোনেট বা বাইকার্বোনেট, হাইড্রোজেন পেরক্সাইড। টেস্ট বলছে যে রাজ্য সরকার চালিত ব্র্যান্ড যেমন হরিণঘাটা বা মাদার ডেয়ারী সরকার চালিত বলে নিশ্চিন্ত হবার কোন কারণ নেই। আমূলও তাই। কিন্তু, মেট্রো ডেয়ারীতে পায়নি বেসু কিছু। F.S.S.A.I-ও উপরোক্ত সংস্থাগুলো থেকে ভেজাল পেয়েছে।
সাপ্লায়ারদের কারচুপি
আসলে পশ্চিমবঙ্গে বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই দুধে ভেজাল মেশানো হয় ডেয়ারীতে সঠিক দুধটা যাবার আগেই।
সাপ্লায়াররা ডেয়ারীতে S.N.F (Solid Non-Fat ) প্রতি কেজি ১৫০ টাকা দিয়ে বিক্রি করে। তাই সাপ্লায়াররা এখানেই কারচুপি করে থাকে। হরিণঘাটায় দুধে ৪.৬% ক্যান সুগ্যার ও ১.৮২% সোডিয়াম ক্লোরাইড পাওয়া গেছে। মাদার ডেয়ারীতে সেলুলোজের পরিমাণ বেশি পাওয়া গেছে। যদিও মাদার ডেয়ারীর চিফ জেনারেল উদয়ভাণু গাঙ্গুলী পরীক্ষার পদ্ধতি নিয়েই প্রশ্ন তুলেছেন।
দুধ ভেজাল কিনা তা প্রমাণ করা যায়
দুধে ভেজাল আছে কিনা তা দেখার জন্য Milcosean পদ্ধতি ব্যবহার করা যেতে পারে। এতে কয়েক মিনিটে দুধে ভেজাল আছে কিনা তা প্রমাণ করা যায়। রাজ্যে এমত অবস্থাতেও মাত্র দু’টো ডেয়ারী কোম্পানি এই পদ্ধতি ব্যবহার করে। বাকি কোম্পানিগুলো Grevimetric পদ্ধতি ব্যবহার করে যাতে পরীক্ষা করতে ৩০-৪০ মিনিট সময় লাগে।
Milk Fedaration’র ভাদ্র মাসের রিপোর্ট অনুযায়ী এই রাজ্যে ৫.৪ লক্ষ কেজি দুধ চারটে ডেয়ারী দ্বারা ফিরিয়ে দেওয়া হয়েছে। শুনলে অবাক হবেন, মাদার ডেয়ারী গড়ে প্রতিদিন ৫৫ টন পাউডার দুধকে ৬ লক্ষ লিটার দুধে রূপান্তরিত করে।
আসল দুধটা সরিয়ে রাখা হয় শীতে। তাকে পাউডার আকারে আনা হয় ও সেটা দুধে মেশানো হয় যখন দুধের যোগান কম হয়। এটা অবশ্য দিল্লীর পরিসংখ্যান। কিন্তু, কলকাতায় অবস্থা যে খুব আলাদা তা তো নয়।
ডিটারজেন্ট মেশানো হয়
The National Survey of Milk Adulteration ২০১১ সালে যে রিপোর্ট দেয় তাতে দেখা যায় যে বেশীরভাগ রাজ্যই ভেজাল পরীক্ষায় ফেল করেছে। ১৪% ডিটারজেন্ট পাওয়া গেছে ঝাড়খন্ড, বিহার, উড়িষ্যা ও পশ্চিমবঙ্গে।
আমরা জানি যে এই ডিটারজেন্ট দুধের ঘনত্ব বাড়াতে কাজে লাগে। অনেকসময় সাদা রঙের জন্যও ব্যবহৃত হয়।
এত সবের পরেও একটা আশার জায়গা এটাই যে প্রাণীসম্পদ উন্নয়ন মন্ত্রী স্বপন দেবনাথ বলেছেন যে এর বিরুদ্ধে তদন্ত ও কড়া ব্যবস্থা নেওয়া হবে। আমরা আশা করব যে ভবিষ্যতে হয়তো আমরা পরিশুদ্ধ দুধ আমাদের সামনে পাবো।
মন্তব্য করুন