প্রতিবছর আমাদের দেশে প্রায় ৬-৭ লক্ষ মানুষ ওরাল ক্যান্সার, স্তন ক্যান্সার, স্টমাক ক্যান্সার লাং ক্যান্সার, স্কিন ক্যান্সার, ব্লাড ক্যান্সার, ওরাল ক্যান্সার ইত্যাদি দ্বারা আক্রান্ত হয়ে মারা যান। কিন্তু আপনি কি জানেন পেয়াজ ক্যান্সার নামক মারাত্মক রোগের সংক্রমন থেকে লড়তে সাহায্য করে? পেয়াজ সাধারণত আমরা রান্নায় ব্যবহার করে থাকি কিন্তু মুখে গন্ধ হওয়ার কারণে আমরা অনেকেই কাঁচা পেয়াজ খাওয়া পছন্দ করি না কিন্তু এই লেখাটি পড়ার পর আশা করছি আপনি নিজেকে শুধরে নেবেন। পেয়াজে এমন কিছু উপাদান আছে যেমন পলিফেনল, ফ্ল্যাবনয়েডস, tannins, ফেনলিক অ্যাসিড, quercetin, স্টেরোলস, alliin, সালফার প্রত্যেকটি ক্যান্সার প্রতিরোধে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। এবার একটু বিস্তারে জেনে নিন কাঁচা পেয়াজ কেন খাবেন।
প্রচুর পরিমানে আন্টিঅক্সিডেন্ট
পেয়াজে প্রচুর পরিমানে আন্টিঅক্সিডেন্ট থাকে যা আমাদের শরীরের সমস্ত দুষিত পদার্থ গুলিকে দেহের স্বভাবিক প্রক্রিয়ার মাধ্যমে দেহ থেকে দূর করতে সাহায্য করে। অতিরিক্ত মদ্যপান বা অন্যান্য নেশা করার বস্তু গুলি বা বিভিন্ন প্রসেসড ফুড আমাদের দেহে যে সমস্ত অশুদ্ধি গুলির জন্ম দেয় তা অনেক সময় ক্যান্সারকে ত্বরান্নিত করে। এতে বর্তমান সালফার আমাদের দেহে হরমনের কার্যকারিতা স্বাভাবিক রাখে এছাড়া এই সালফার রক্তের অশুদ্ধি গুলিকে দূর করতে সাহায্য করে। আমাদের দেহে খাবার হজম করতে সাহায্যকারী এনজাইম গুলির ক্ষরণ স্বাভাবিক রাখতে সাহায্য করে এই সালফার। এছাড়া আমাদের নার্ভ ও ব্লাড সেলের কর্মক্ষমতা বাড়িয়ে তোলে। এই প্রক্রিয়া গুলির যে কোনো একটি ক্ষতিগ্রস্ত হলেই আমাদের দেহে কারসিনোজেন তৈরী হতে পারে যার ফলে দেহের কোষ গুলি নষ্ট হয়ে ক্যান্সারের সংক্রমন ঘটার সম্ভাবনা থাকে।
Quercetin অ্যাসিড থাকে
পেয়াজে বর্তমান Quercetin অ্যাসিডটি আমাদের দেহ থেকে অতিরিক্ত ইস্ট্রোজেন দূর করে এর মাত্রা স্বাভাবিক করে তুলতে সাহায্য করে।
এছাড়া এই অ্যাসিড আমাদের লিভার থেকে কারসিনোজেন ও ইস্ট্রোজেন দূর করে। এই দুটি উপাদান আমাদের দেহে ক্যান্সার সংক্রমণের মূল কারণ।
পেয়াজে বর্তমান আন্টি ভাইরাস ও আন্টি ব্যাকটেরিয়াল
আল্লিসিন এমন একটি উপাদান যা আমাদের দেহে প্যাথোজেন্সকে নষ্ট করে দেয় ফলত আমাদের দেহের রোগ প্রতিরোধক ক্ষমতা কমে যায়, এমত অবস্থায় যেকোনো রকম ভাইরাস ও ব্যাকটেরিয়া দ্বারা দেহ আক্রান্ত হলে এই আল্লিসিন উপাদানটি তার সাথে যুক্ত হয়ে দেহে ক্যান্সারের সংক্রমনকে ত্বরান্নিত করে। পেয়াজে বর্তমান আন্টি ভাইরাস ও আন্টি ব্যাকটেরিয়াল উপাদান গুলি আমাদের দেহে যে কোনো রকম ভাইরাস ও ব্যাকেরিয়া গুলিকে দেহ থেকে দূর করে এবং আমাদের রোগ প্রতিরোধক ক্ষমতাকে বাড়িয়ে তোলে।
রক্তে ইনসুলিনের মাত্রা স্বাভাবিক
পেয়াজ আমাদের রক্তে ইনসুলিনের মাত্রাকে স্বাভাবিক রাখে,
ফলত আমাদের রক্তে গ্লুকোজের মাত্রা বাড়তে পারেনা। ফলত টাইপ ২ ডায়াবেটিসের হাত থেকে আমরা রক্ষা পেতে পারি। এই টাইপ ২ ডায়াবেটিস আমাদের শরীরে গ্লুকোজ মেটাবলিজমকে বাড়িয়ে তোলে যা আমাদের দেহে ক্যান্সার সংক্রমণের ওপর একটি কারণ।
Anthocyanins উপাদানটি পেয়াজ লাল বা গোলাপী হওয়ার কারণ। এই উপাদানটি অত্যন্ত কার্যকরী আন্টি অক্সিডেন্ট যা p53 যা আমাদের দেহে অক্সিডেটিভ স্ট্রেসকে বাড়িয়ে তোলে যা টিউমার হওয়ার মূল কারণ তাকে নষ্ট করে দেয় । এছাড়া একই ভাবে p21এর প্রবাহকে কম করে। এগুলি আমাদের দেহে স্কিন ক্যান্সার, ব্রেস্ট ক্যান্সার সংক্রমনকে ত্বরান্নিত করে। আমাদের দেহে এই p21 বেশি কার্যকরী হয়ে গেলে আমাদের দেহে গ্যাস্ট্রিক ক্যান্সার, ব্রেস্ট ক্যান্সার, ওরাল ক্যান্সার, লাং ক্যান্সার, প্যানক্রিয়েটিক ক্যান্সার, কলোরেক্টাল ক্যান্সার ইত্যাদি হওয়ার সম্ভাবনা তৈরী হয়। পেয়াজে বর্তমান anthocyanins ও quercetin এই দুটি উপাদান আমাদের দেহে p21 স্বাভাবিক রাখে।
পেয়াজে বর্তমান আন্টি অক্সিডেন্ট গুলি আমাদের দেহের কোষ গুলিকে ফ্রি রাডিকেল গুলিকে নষ্ট করে যা দেহের কোষ গুলিকে দুষিত করে কার্যক্ষমতাকে কমিয়ে দেয় এবং দেহে ক্যান্সার সংক্রমণের সম্ভাবনা বাড়িয়ে তোলে।
পেয়াজ আমাদের কাছে আর বাকি সবজির মতই সাধারণ একটি বস্তু। কিন্তু এই লেখাটি পড়ার পর নিশ্চই পেয়াজ সম্পর্কে আপনার ধারণা কিছুটা হলেও বদলে গিয়েছে। হাতের কাছে এমন একটি আশ্চর্য প্রাকৃতিক উপাদান থাকতে ক্যান্সারে আক্রান্ত হবার ভয় কেন। তবে এর জন্য আপনাকে প্রতিদিনের খাবারের সাথে একটুকরো পেয়াজ নিয়মত খাওয়ার অভ্যেস করতে হবে। তাই আজ থেকে প্রতিদিন পেয়াজ খাবার অভ্যেস করুন এবং আপনার প্রিয়জনদেরও এর গুন সম্পর্কে অবগত করুন ও ক্যান্সার সংক্রমন থেকে মুক্ত থাকুন।
https://dusbus.com/bn/silajit-ki-sudhu-purusder-jonno-na-meyeder-songeo-ache/
মন্তব্য করুন