পিরিয়ড হলেই নিশ্চয়ই মাসের ওই কটা দিন খানিক সমস্যায় পড়ে যান আপনি? রাস্তাঘাটে বেরোলে তো অসুবিধার একশেষ, নয়তো মাঝে মাঝে প্যাড পাল্টানোর জ্বালা—ভোগান্তির আর শেষ নেই। আর তা যাও বা আপনি আজকাল মা-ঠাকুমাদের কাপড়ের আমল পেরিয়ে স্যানিটারি ন্যাপকিনে স্বস্তি খুঁজেছেন, কিন্তু তাতেও চিন্তার শেষ নেই। প্যাড, বা যাকে বলা হয় ন্যাপকিন, তা আদৌ ব্যবহার করা উচিত কিনা, কী তার অসুবিধা তা নিয়েও নানা প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে এই নিয়ে।
প্যাডই তো বেস্ট!
এমনিতেই মেয়েরা সাধারণত কিছু আর্টিফিশিয়াল জিনিস তাঁদের যোনিতে ঢোকাতে চান না। ট্যাম্পন বা মেন্সট্রুয়েশন কাপ কিন্তু ঢোকাতেই হয়। আর সেখানেই প্যাড অনেক এগিয়ে। ভেতরে ঢোকাতেও হয় না। জাস্ট আন্ডারওয়্যারে লাগিয়ে নিলেই হল! আর ক্যারি করাও কিন্তু সোজা। এখন অনেক পাতলা প্যাড বেরিয়ে গেছে, যা লাগিয়ে আপনি বুঝতেও পারবেন না যে আদৌ কিছু লাগিয়েছেন!
➡ পিরিয়ড হওয়ার আগেই বুঝুন প্রেগন্যান্ট কিনা
TSS-এর সমস্যা?
প্যাড ব্যবহার করলে কিন্তু TSS বা টক্সিক শক সিনড্রোমের সমস্যা বা ফাঙ্গাল ইনফেকশনের সমস্যা অনেকটাই কমে। ট্যাম্পন ব্যবহার করলে কিন্তু এই সম্ভাবনা অনেকটাই বেড়ে যায়।
সত্যি কি তাই?
অক্ষয় কুমারের ‘প্যাডম্যান’ সিনেমাটা নিশ্চয়ই আপনারা এর মধ্যেই অনেকে দেখে ফেলেছেন। সিনেমাটা করতে গিয়েই নাকি জানা গিয়েছিল ভারতের খুব কম সংখ্যক মেয়েই নাকি এখনও প্যাড ব্যবহার করেন পিরিয়ডের সময়, আর গ্রামে-গঞ্জে নাকি প্রায় ১০% মেয়েই এখনও পিরিয়ডের সময় ছাই ব্যবহার করে থাকেন! তাহলেই বুঝে দেখুন। তবে আপনি যদি প্যাড ব্যবহার করে থাকেন, তাহলে কিন্তু নিশ্চিন্ত হবেন না একদমই। কেন?
কি সর্বনাশ!
সম্প্রতি বিভিন্ন সমীক্ষায় জানা গেছে, একজন মেয়ে কিন্তু তাঁর জীবনে মোটামুটি ১০০০০ স্যানিটারি ন্যাপকিন ব্যবহার করে থাকেন। আর এই ন্যাপকিন কিন্তু সহজে যাকে বলে বায়ো-ডিগ্রেডেবল—একদম নয়। আর সমস্যার সূত্রপাত ওখানেই। প্যাড তো আপনি ব্যবহার করলেন, তারপর ডাস্টবিনে ফেলেও দিলেন। ময়লা ফেলার গাড়ি এসে তাকে তুলে নিয়ে গেল। আপনি নিশ্চিন্ত। কিন্তু তারপর? আজ্ঞে এই প্যাড কিন্তু পোড়ানো সহজ নয়। পোড়াতে গেলে উৎপন্ন হয় বিষাক্ত গ্যাস, আর তাও যদি আপনি ৮০০ ডিগ্রি সেলসিয়াসের বেশী তাপমাত্রায় পোড়াতে পারেন তো ভালো! আর যদি না পারেন? তাহলে ওর গতি হবে মাটিতে। কিন্তু মাটির সাথে পাকাপাকি ভাবে মিশতে তার সময় লাগবে পাক্কা ৫০০-৮০০ বছর। তদ্দিন ওই বিষাক্ত জিনিসগুলো মাটিতে মিশতে থাকে। মানে দূষণের এক্কেবারে একশেষ।
এক প্যাডে ৮-১০ ঘণ্টা!
এ তো নাহয় গেল। কিন্তু আরও বড়সড় বিপদ কিন্তু আপনার জন্য অপেক্ষা করছে। টি.ভি.-তে তো অ্যাড দেখেছেনই, একটা ছোট্ট পাতলা প্যাড নাকি আপনাকে মোটামুটি ৮-১০ ঘণ্টার মতোও নিশ্চিন্তি দিতে পারে। সেই দেখে আপনিও মনের আনন্দে কিনে ফেললেন। ব্যাস, ঘন ঘন প্যাড পাল্টানোর জ্বালা থেকে মুক্তি। কিন্তু ডাক্তাররা বলছেন অন্য কথা।
মুম্বাইয়ের বিখ্যাত গাইনোকোলোজিস্ট ডক্টর দুরু শাহর মতে, স্যানিটারি ন্যাপকিন যদি আপনি ৩-৪ ঘণ্টা ছাড়া ছাড়া চেঞ্জ না করতে পারেন, তাহলে কিন্তু বিপদ। কারণ ওর থেকে ইনফেকশন পর্যন্ত হতে পারে। আর তাছাড়া বাজে গন্ধ, র্যাশ তো আছেই।
ক্যান্সারের সম্ভাবনা!
প্যাড সাধারণত তুলো, প্লাস্টিক, সিন্থেটিক মেটিরিয়াল দিয়ে তৈরি হয়। আর ওই সিন্থেটিক মেটিরিয়ালের মধ্যেই থাকে ব্লিচিং এজেন্ট। তাই দীর্ঘ ২০-৩০ বছর ধরে যদি আপনি ব্যবহার করতে থাকেন, তাহলে কিন্তু সার্ভিক্যাল ক্যান্সার আর জরায়ুর ক্যান্সার হতেই পারে। তাই বুঝতেই পারছেন বিপদ!
মেন্সট্রুয়েশন কাপ? সেটা কী?
প্যাডের গপ্প তো এতক্ষণ ধরে শুনলেন, কিন্তু আপনি কি মেন্সট্রুয়েশন কাপের নাম শুনেছেন? মেন্সট্রুয়েশন কাপ প্রথম পেটেন্ট নেওয়া হয়েছিল ১৯৩২ সালে। তারপর ২০০২ নাগাদ এর প্রথম সিলিকন বেসড মডেলটি বিক্রি হয়। আর নিছকই হাল আমলে সবাই মেন্সট্রুয়েশন কাপ নিয়ে মাথা ঘামাচ্ছে। বাইরের দেশে অনেকে তো স্বাস্থ্য আর পরিবেশের কথা ভেবে রীতিমতো এর ব্যবহারও শুরু করে দিয়েছেন।
মেন্সট্রুয়েশন কাপ দেখতে কিন্তু খানিকটা বলের মতো, আর এটা মূলত কালেক্টর। প্যাডের মতো মেন্সট্রুয়াল ব্লাড সোক করে নেয় না। ভ্যাজাইনাল ক্যানালে লাগিয়ে নিলেই হল, তারপর সেখান থেকে বিনা বাধায় ব্লাড কালেক্ট করে নেয়।
সুবিধা অনেক!
আর এর সুবিধাও অনেক। তবে আপনার যদি আপনার যোনিতে কিছু লাগাতে সমস্যা হয়, তাহলে কষ্ট করে খানিক অভ্যেস নাহয় করেই ফেলুন এবার। এই ইকো ফ্রেন্ডলি মেন্সট্রুয়েশন কাপ ব্যবহার করা কিন্তু খুব সোজা। ঝামেলাও কম। এতে কোনো কেমিক্যাল বা সিন্থেটিক পদার্থও নেই। ফলে নিশ্চিন্তে ব্যবহার করতে পারেন। আর প্যাডের মতো একবার ব্যবহার করেই ফেলে দেওয়া নয়। একটা মেন্সট্রুয়েশন কাপ আপনি অনেকদিন ধরে ব্যবহার করতে পারবেন। জাস্ট কন্টেনারটা ভরে এলেই ফেলে দিন ব্লাডটা (তাও সাধারণত ১০-১২ ঘণ্টার আগে ভরে না!), আর তারপর ভালো করে ধুয়ে নিলেই আবার রেডি! সমীক্ষা বলছে, প্যাড বা ট্যাম্পনের তুলনায় মেন্সট্রুয়েশন কাপ প্রায় ২.৮ গুণ কম পাল্টাতে হয়। বুঝে দেখুন, আপনার কত্ত টাকা বেঁচে যাবে!
হাইজিন?
ভেবে দেখুন, মেন্সট্রুয়েশন কাপে কিন্তু কোনো কেমিক্যাল বা সিন্থেটিক জিনিস নেই। আর কোনো ব্লিচিং এজেন্টও দেওয়া নেই। ফলে ব্যবহার করতেই পারেন। ফলে র্যাশ বা ইনফেকশন—কোনোটাই হবার সম্ভাবনা নেই।
এবার ভেবে দেখুন তাহলে প্যাড না কাপ—কোনটা আপনি ব্যবহার করবেন আপনার নেক্সট পিরিয়ডে? চুজ কিন্তু আপনাকেই করতে হবে।
অতিরিক্ত সাদা স্রাব শরীরের জন্য ভালো না, ঘরোয়া উপায়গুলি ও খাবারে বিশেষ নজর দিন
মন্তব্য করুন