আমরা অনেকেই আজকাল খুব একটা ভাত খেতে চাই না। আমাদের স্বাস্থ্যের কথা ভেবে, ডায়েটের জন্য আমরা ভাতকে একটু দূরে সরিয়ে কাছে টেনে নিয়েছি আটাকে অর্থাৎ আটার রুটিকে। কিন্তু আপনারা কি জানেন যে আটার থেকেও বাজরা অনেক বেশি উপকারী? জানতেন না নিশ্চয়ই? তাহলে আসুন আজ জেনে নিই ঠিক কি কি কারণে আমাদের আটাকে একটু সরিয়ে রেখে বাজরাকে আপন করা উচিত।
কেন উপকারী বাজরা
আটা বা চালের থেকে বাজরায় অনেক বেশি ফাইবার থাকে। এছাড়াও এতে বেশ ভাল পরিমাণে প্রোটিন ও অ্যামিনো অ্যাসিডও থাকে। যদি আমরা তুলনা করতে চাই, তাহলে দেখব আটায় যেখানে আয়রন ৪.৯ মিলিগ্রাম থাকে, বাজরায় থাকে ৮ মিলিগ্রাম। এনার্জি আটা থেকে পেতে পারি ৩৪১ কিলো ক্যালরি, আর বাজরা থেকে পেতে পারি ৩৬১ কিলো ক্যালরি। কার্বোহাইড্রেটের পরিমাণ আটায় থাকে ৭১.২ গ্রাম, যেখানে বাজরায় থাকে ৬৭.৫ গ্রাম। তাহলে আপনারাই বুঝুন কোনটা উপকারী।
কীভাবে শরীরের উপকার করে বাজরা
বাজরা নানা ভাবে সাহায্য করে শরীরকে হেলদি রাখতে। অনেকেই আমরা জানি না এর নানা উপকারিতা সম্পর্কে। জানলে হয় তো রান্না ঘরে এবার থেকে বাজরার রুটি বানাবেন আপ্নারা। আসুন জেনে নেওয়া যাক।
১. ডায়াবেটিস কমায়
বাজরা ম্যাগনেসিয়ামের অত্যন্ত উৎকৃষ্ট একটি উৎস। আর ম্যাগনেসিয়াম আছে বলেই ডায়াবেটিসের আশঙ্কা কম হয়। রক্তে গ্লুকোজের সরবরাহও ঠিক থাকে। ম্যাগনেসিয়াম এমন অনেক এনজাইম তৈরি করে যা ইনসুলিনের মাত্রা নিয়ন্ত্রণ করে। তাই ডায়াবেটিসের কথা ভুলতে বাজরাকে সঙ্গী করতেই হবে।
২. হার্টকে যত্নে রাখে
বাজরায় একটি উপাদান আছে, যার নাম লিগনান্স। এই লিগনান্স ফারমেন্টেড হয় কিছু ব্যাকটেরিয়ার মাধ্যমে। তার থেকে তৈরি হয় এনটারোল্যাকটন বলে একটি উপাদান, যা হার্টের পক্ষে ভাল বলে গবেষণা করে জানা গিয়েছে। কোলেস্টেরল কমাতেও সাহায্য করে এই উপাদানটি। তাই হার্ট ভাল রাখতে বাজরার হাত ধরুন।
৩. গলব্লাডার স্টোন হওয়া আটকায়
সাম্প্রতিক গবেষণা দেখাচ্ছে যে বাজরা গলব্লাডার হওয়াও প্রতিরোধ করতে সক্ষম। রিপোর্ট বলছে, এতে থাকা ইনসল্যুবল ফাইবার গলব্লাডার স্টোনের ফলে হওয়া অপারেশনের সম্ভাবনা ১৩% কমিয়ে দেয়।
৪. ফলের সমান উপকারী
আমাদের স্বাস্থ্য ধরে রাখার জন্য ফল যে কতটা জরুরি সেটা তো আমরা সবাই জানি। আমাদের প্রত্যেক দিনের ডায়েটে আমরা তাই ফল রেখেই থাকি। কিন্তু জানেন কি, বাজরার মধ্যে আছে ফলের সমান উপাদান? ফল বা সবজির মধ্যে যে অ্যান্টি অক্সিডেন্ট উপাদান থাকে, তা সম পরিমাণে থাকে বাজরাতেও। তাই ফল খেলে যে উপকার আমরা পাই, তা আমরা সমান ভাবে পেতে পারি বাজরা থেকেও।
৫. পাচন তন্ত্র ভাল রাখে
খাবার ভাল ভাবে হজম না হলে অর্থাৎ আমাদের পাচন তন্ত্র ঠিক না থাকলে শরীরে অন্য অনেক সমস্যা দেখা দেয়। বাজরা এই পাচন তন্ত্র ভাল রাখতেই সাহায্য করে আমাদের। ১০০ গ্রাম বাজরা খেলে তার মধ্যে থেকে ৯ গ্রাম এমন ফাইবার পাই আমরা যা যে কোনও হজম জনিত সমস্যার সমাধান করে দেয়। সহজে খাদ্যকনা পরিপাক করতে সাহায্য করে। এর পাশাপাশি পেপটিক আলসার বা কোলন ক্যানসার প্রতিরোধ করতেও সাহায্য করে।
৬. ক্যানসার প্রতিরোধক
ক্যানসার হওয়ার প্রধান কারণ হল ফ্রি র্যাপডিক্যাল। বাজরার মধ্যে থাকা অ্যান্টি অক্সিডেন্ট আর কোয়ারসেটিন বা সেলেনিয়ামের মতো উপাদান ক্যানসার তৈরি করে যে কোষগুলো তাদের নষ্ট করে দেয়। গবেষণা বলছে, বাজরার ফাইবার ব্রেস্ট ক্যানসারের আশঙ্কা অনেক কম করে দেয়। তাই মহিলাদের বাজরার রুটি খাওয়া খুবই দরকার।
৭. অ্যানিমিয়া দূর করতে
মহিলাদের মধ্যে অ্যানিমিয়া বা রক্তাল্পতা খুবই সাধারণ একটা রোগ। অনেক ওষুধ খেয়েও হয়ত এর থেকে মুক্তি পাওয়া যায় না। কিন্তু বাজরার মধ্যে সেই উপাদান রয়েছে যা অ্যানিমিয়া কম করতে পারে। এতে থাকা ফলিক অ্যাসিড, ফোলেট, আয়রন রক্ত বাড়ানোর প্রধান উপাদান। এছাড়া বাজরা কপারেরও অন্যতম উপাদান যা লোহিত রক্ত কণিকা বাড়াতে সাহায্য করে।
৮. টক্সিন দূর করে
টক্সিন মুক্ত সতেজ শরীর আমাদের সকলেরই লক্ষ্য। তাই আমরা যদি নিয়মিত বাজরার সঙ্গে থাকি তাহলে আমাদের শরীর থেকে টক্সিন আমরা সহজেই দূর করতে পারি। টক্সিন অনেক জীবাণু বহন করতে পারে, যা বিভিন্ন গুরুতর রোগের জন্ম দেয়। তাই বাজরা নিয়মিত খাবারে রাখলে তার মধ্যে থাকা কোয়ারসেটিন টক্সিন দূর করে। ভিতর থেকে শরীর অনেক সতেজ থাকে।
আপেল খান রোজ একটা করে – সুস্থ থাকার হদিশ পান, রোগ থেকে থাকুন দূরে
মন্তব্য করুন