অ্যালার্ম বেজে বেজে বন্ধ হয়ে যায়, কিন্তু তবুও ঘুম থেকে উঠতে ইচ্ছা করেই না। কিংবা যদিও বা কষ্ট করে ওঠা হয়, কিন্তু ঘুম যেন ছাড়তে চায় না। ঘুম ঘুম ভাব, বিশেষ করে দুপুরে তো চোখে ঘুম ছাড়তেই চায় না। কি, ঠিক বললাম তো? এই সমস্যা অনেকেরই। আজ শেয়ার করছি তাই পাঁচটি টিপস, কীভাবে এই অতিরিক্ত ঘুম কাটিয়ে উঠতে পারবেন।
১. জল খান
ঘুম থেকে উঠেই এক থেকে দু’গ্লাস জল খান। জল শরীরকে সতেজ করে তোলে। মস্তিষ্কও উজ্জীবিত হয়ে ওঠে। ঘুম ঘুম ভাব অনেকটাই কেটে যায়। এছাড়াও বেশী ঘুম পেলে, চোখে ঠাণ্ডা জলের ঝাপটা দিন। ঘুম থেকে উঠেই চোখে মুখে ঠাণ্ডা জলের ঝাপটা দিন। এতে ঘুম একদম কেটে যায় এবং হালকা গরমজলে ভালো করে স্নান করুন। ভালো করে স্নান করলে, শরীর অনেকটা ফ্রেশ লাগে।
এছাড়াও অ্যালার্ম যেটা সেট করে রাখবেন, সেটা যেন বেশ জোড়ে বাজে। কানে লাগে। এরম শব্দ কানের কাছে কাছে হঠাৎ বেজে উঠলে ঘুম ভাঙতে বাধ্য। সকালে হালকা গরমজল করে নিয়ে ভালোভাবে স্নান করুন। তবে খুব গরমে তো গরমজল সম্ভব নয়, তখন স্নানের জলে গোলাপজল মিশিয়ে নিন। গোলাপজল শরীরকে তরতাজা রাখতে সাহায্য করে।
২. চা, কফি
চা, কফি তো এমনিতেই সকালে খান। কিন্তু ঘুম পেলে একটু বেশীই খান। মানে সকালের পর দুপুরের দিকে আরেকবার খান। এতে অতিরিক্ত ঘুমের সমস্যা কমবে। তবে সন্ধ্যাবেলা খাবেন না। তাহলে আবার রাতে সহজে ঘুম আসবে না। রাতে শোবার ৬ ঘণ্টা আগে পর্যন্ত চা, কফি খাবেন না। এই চা, কফির সাথে একটা হেলদি ব্রেকফাস্ট মেনে চলুন।
এমন কিছু খাবার খান, যেটা শরীরে এনার্জি বাড়াতে সাহায্য করবে। যেমন রুটি, সাথে কলা বা অন্য ফল, টকদই এসব খান। বিটের রস খান মাঝে মাঝে। এটা এনার্জি বাড়াতে অসাধারণ কাজ করে। এছাড়াও বেশী করে প্রোটিন জাতীয় খাবার খান। এবং গরমকাল আসছে তাই প্রচুর পরিমাণে জল খান যেটা শরীরে এনার্জি ধরে রাখতে সাহায্য করবে।
এছাড়াও রাতে হালকা খাবার খান। কারণ গরমে প্রায়ই রাতে বদহজম হবার সম্ভবনা থাকে। তাই রাতে ভালো করে রিলাক্সে ঘুমোতে হালকা খাবার খান। যেটা সহজে হজম হয়ে যাবে।
৩. শরীরচর্চা করুন
শরীরের ফিটনেস বাড়াতে ব্যায়ামের থেকে ভালো কিছু হয় না। ব্যায়াম করুন, দৌড়ান। বাড়িতেই শরীরচর্চার কিছু যন্ত্রপাতি কিনে রাখুন। সেগুলো দিয়ে ব্যায়াম করুন যদি জিমে যাবার সময় না পান। এর সাথে মেডিটেশনও করুন।
সকালে বেশীক্ষণ না, ১০ মিনিটের জন্য মেডিটেশন করুন। প্রথমে চোখ বন্ধ রেখে, লম্বা শ্বাস নিন। এবার মনে মনে ৫ অবধি গুনুন। শ্বাস ধরে রেখে। এবার ৫ বলা হয়ে গেলে, ধীরে ধীরে শ্বাস ছাড়ুন।
৪. রাতে ভালো করে ঘুম দকার
রাতে ৭ থেকে ৮ ঘণ্টা ঘুম দরকার। তাই রাতে তাড়াতাড়ি শুয়ে পড়ুন যাতে এই সময়টা ঘুমটা হয়। রাতে ঠিকমত ঘুম না হাওয়া, বা যথেষ্ট ঘুম না হলেও দিনে ঘুম পায়। মনে রাখবেন সারাদিন কাজের পর রাতে শরীরের দরকার উপযুক্ত রেস্ট। সেটা পাওয়ার আগেই যদি আপনি আবার কাজ করতে শুরু করে দেন, তাহলে সারাদিন ক্লান্ত, লাগবেই।
শরীর পরিমিত রেস্ট পেলে, তবেই আপনাকে পরের দিনের কাজের জন্য রেডি করতে পারবে। এনার্জি দিতে পারবে। তাই রাত অবধি জেগে থাকার অভ্যাস বন্ধ করুন।
৫. ফোন বন্ধ রাখুন
রাতে ফোন নিয়ে শোয়াটাও আপনার সারাদিন ঘুম পাওয়ার একটা অন্যতম কারণ। কারণ রাতে ফোন নিয়েই অনেকটা সময় কেটে যায়। রাতে আপনি ঘুমোন কত দেরীতে সেটা খেয়াল আছে? তাই রাতে তো পর্যাপ্ত বিশ্রাম হয় না। সেই জন্যই সকালে ঘুম ভাঙতেই চায় না। আর সারাদিন ঘুম পায়।
এছাড়াও আমাদের ঘুম গাঢ় হবার জন্য মেলাটোনিন নামক হরমোনের ক্ষরণ হয়। ঘুম যত গাঢ় হয়, তত এই হরমোনটির ক্ষরণ হয়। ফোন থেকে একধরণের রে বেরোয়, যেটা এই হরমোনের ক্ষরণে বাধা দেয়। ফলে রাতের অনিদ্রা সমস্যা আরও বাড়িয়ে দেয়। ব্রেন ক্যান্সার পর্যন্ত ঘটাতে পারে। তাই ঘুমোবার আগে ফোন বন্ধ করে দিন বা দূরে রাখুন। মাথার পাশে ফোন নিয়ে একদম নয়।
আরও কিছু টিপস
- ঘুমোবার আগে ঘরের পরিবেশ ঠিক করুন। লাইট বন্ধ করে দিন। কোনো শব্দ যেন না আসে। শান্ত সুন্দর পরিবেশ হলে তবেই ঘুম আসবে।
- অতিরিক্ত টেনশন একদম নয়। সবকিছু ভুলে রাতে শরীরকে রেস্ট দিন। মনকে রিলাক্সে রাখতে মেডিটেশন করুন।
- পরের দিনের কাজগুলো ঘুছিয়ে রাখুন, নাহলে লিখে রাখুন সকালে উঠে পর পর কী করতে হবে। নিজেকে কাজে ব্যস্ত রাখুন। ঘুম পেলে অফিসে অন্যদের সাথে গল্প করুন। ঘুম পেলে চুপ করে বসে থাকলে কিন্তু আরও ঘুম পাবে।
- গান শুনুন। বিভিন্ন গবেষণা থেকে দেখা গেছে, গান মন ও মস্তিষ্ককে সক্রিয় করে তোলে। তাই যখনই ঘুম ঘুম ভাব লাগছে, নিজের সবচেয়ে প্রিয় গানগুলো শুনুন। ঘুম কেটে যাবে।
- তাহলে এবার আর সারাদিন ধরে ঘুম ঘুম ভাব নয়। চাঙ্গা থাকুন, জমিয়ে কাজ করুন।
Ashiq
খুব ভালো লাগলো