রাতে খাওয়া দাওয়া করে তাড়াতাড়ি শুয়ে তো পড়েছেন, এ দিকে ঘড়ির কাঁটা প্রায় সকাল হবো হবো করছে। আর কিছুক্ষণ পরেই ঘড়ির অ্যালার্ম নয়, পাখির ডাক শুনতে শুনতেই আপনাকে বিছানা ছাড়তে হল– এভাবে রাতটা কেটে গেল না ঘুমিয়েই। কিন্তু এই গল্পটা একদিন নয়, দিনের পর দিন যদি চলতে থাকে, তাহলে তার প্রভাব তো আপনার শরীর-মনের ওপর পড়বেই, সারাদিনের কাজও প্রভাবিত হবে এর ফলে। আর তাই, এক্ষুনি এর একটা তুরন্ত সমাধান দরকার।
অধিকাংশ ক্ষেত্রেই আপনার ঘুম না হওয়ার কারণ হয়ে থাকে আপনার মানসিক চাপ অথবা টেনশন। হ্যাঁ, হতে পারে অফিসের কাজটা গুছিয়ে উঠতে পারেননি বলে কাল বসের কাছে প্রবল বকুনি খাওয়ার চান্স আছে, অথবা বাড়ির অশান্তিতে নাজেহাল অবস্থা- এই সব চিন্তাগুলো ভিড় করছে মাথায় আর আপনাকে ঘুমোতে দিচ্ছে না। এমনটা যদি হয়, তাহলে সমস্যার সমাধান রয়েছে।
আর তা ছাড়া যদি কোনও হরমোনাল সমস্যা বা অন্য কোনও গভীরতর শারীরিক সমস্যা এর কারণ হয়ে থাকে, তাহলে উচিত ডাক্তার দেখানো। তবে আপাতত এখানে আমরা কিছু উপায়ের কথা জানবো, যেগুলোর নিয়মিত অভ্যাস আপনাকে এই সমস্যা থেকে মুক্তি দিতে পারে। আসুন, কিছু ব্যায়ামের কথা জেনে নেওয়া যাক।
➡ রাতে কেন ভালো ঘুমের প্রয়োজন।
পদ্ধতি ১
রাতে ঘুমোনোর আগে আপনাকে এই ব্যায়ামটি করতে হবে। প্রথমে আপনি শিরদাঁড়া সোজা করে বসুন।তারপর চাইলে আপনি চোখ বন্ধ করতেও পারেন, নাও পারেন। এবারে আপনি মন দিয়ে নিজের নিঃশ্বাস ও প্রশ্বাসের শব্দ শুনুন মন দিয়ে। এবারে ধীরে ধীরে সেই নিঃশ্বাস ও প্রশ্বাসকে গোনা শুরু করুন। এভাবে চেষ্টা করুন মিনিট পাঁচেক টানা গুনে যেতে। এক্ষেত্রে আপনার মনের একাগ্রতা কিন্তু বজায় রাখতে হবে। প্রথম প্রথম ধৈর্য ধরে রাখা খুব কষ্টকর হলেও চেষ্টা চালিয়ে যেতে হবে পাঁচ মিনিট এক নাগাড়ে এই অভ্যাসটি চালিয়ে যাওয়ার। তারপর তাড়াহুড়ো না করে ধীরে সুস্থে শুয়ে পড়ুন। দেখুন, কাজ ঠিক হবে।
পদ্ধতি ২
এক্ষেত্রে পদ্ধতি খানিক একরকম। মানে শারীরিক ভাবে আপনাকে আগের মতই শোয়ার আগে শিরদাঁড়া সোজা করে বসতে হবে। এবারে আপনি চোখ বন্ধ করুন। মনে মনে চেষ্টা করুন কোনও একটি ছবিকে কল্পনা করতে। সেই ছবিটির দিকে মনকে একভাবে ধরে রাখুন। সময়ের দিক থেকে প্রায় দশ মিনিট করে রোজ করুন। প্রথম দিকে টানা অতক্ষণ সম্ভব না হলেও আস্তে আস্তে সময়ের সীমাটা বাড়ান। তাড়াহুড়ো না করে ধীরেসুস্থে শুয়ে পড়ুন। ঘুম ঠিক আসবে।
পদ্ধতি ৩
এই ব্যায়ামটি করার জন্য আপনাকে বিছানায় শুতে হবে। তবে সাধারণভাবে শুলে হবে না। আপনি দেয়াল থেকে ৬ ইঞ্চি দূরে দেয়ালেরই দিকে মুখ দিয়ে বসুন। এবারে ঐ অবস্থায় আপনাকে বিছানায় শুয়ে পড়ে দেয়ালের গা বেয়ে পা দুটিকে ছাদের দিকে উর্ধ্বমুখী করে তুলে দিতে হবে। এই অবস্থায় আপনাকে ছাদের দিকে চোখ রেখে, দুটি হাত শরীরের দুপাশে রেখে পা দুটিকে দেয়ালের গা বরাবর ছাদের দিকে ওপরে তুলে দিয়ে মিনিট তিনেক শুয়ে থাকতে হবে। এতে আপনি কোমরের দিকে ও পিঠে চাপ অনুভব করবেন, কিন্তু চেষ্টা করে দেখুন- কাজ হবে।
পদ্ধতি ৪
আপনি প্রথমে হাঁটু ভাঁজ করে বিছানায় চিত হয়ে শুয়ে পড়ুন। তারপরে হাঁটু দুটি আড়াআড়িভাবে ভাঁজ করা অবস্থাতেই দুটি পায়ের পাতাকে একসাথে সম্পূর্ণভাবে স্পর্শ করান। অর্থাৎ, এক্ষেত্রে আপনার পা দুটি ত্রিভুজাকৃতি থাকবে। দুটি হাত শরীরের দুই দিকে ছড়িয়ে দিন আর চোখের দৃষ্টিকে নিবদ্ধ রাখুন ওপরে ছাদের দিকে। এতে আপনার খুবই হালকা ও রিল্যাক্স বোধ হবে। এই অবস্থায় আপনি শুয়ে থাকুন টানা মিনিট তিনেক। দিন কয়েক অভ্যাস করুন, অনিদ্রা দূর হবে।
পদ্ধতি ৫
চিত হয়ে বিছানায় শুয়ে পড়ুন পা লম্বা করে। এবারে আপনি হাঁটু দুটোকে ভাঁজ করে বুকের কাছে নিয়ে আসুন। এবারে হাত দিয়ে ভাঁজ করা হাঁটুদুটিকে ধরে টেনে বুকের কাছে আনার চেষ্টা করুন। এভাবে এনে বেশ কিছুক্ষণ হাঁটুদুটিকে ধরে রেখে আবার ছেড়ে দিন। আবার একইভাবে দুই হাত দিয়ে ভাঁজ করা হাঁটু দুটিকে বুকের কাছে আনুন। প্রক্রিয়াটি চালিয়ে যান বেশ কয়েকবার। তারপর ধীরে সুস্থে ঘুমোনোর চেষ্টা করুন।
এই প্রতিটি ক্ষেত্রে আপনার শরীর ও মন দুই ক্ষেত্রেই পজিটিভ প্রভাব পড়বে। এর ফলে শোয়ার পরে মন ইতস্তত বিক্ষিপ্ত হয়ে যাওয়ায় যে চিন্তাগুলি আপনাকে ঘুমোতে দেয় না, সেগুলো আসাও বন্ধ হয়ে যাবে। তবে আবারও একটা কথা বলার, সমস্যা যদি গুরুতর হয় ডাক্তারের সাহায্য নিন। কেননা, অনিদ্রা থেকে নানান সমস্যা তৈরি হয় পরবর্তীকালে। আগে আপাতত এই ব্যায়ামগুলো নিয়মিত অভ্যাস করতে থাকুন, আশা করি আপনার অনিদ্রার সমস্যা মিটবে।
মন্তব্য করুন