নিজের পায়ের তলায় এক টুকরো জমির ঠাঁই? না! এটাও বোধহয় অনেক মানুষের কেবল স্বপ্ন হয়েই থেকে যায় সারাটা জীবন। এখানেই ঘটেছে মিরাকেল! পশ্চিমবঙ্গ সরকার এবার এইসব আশ্রয়হীন ও দরিদ্র মানুষদের সাহায্যে এগিয়ে এসে নিয়ে এসেছে “নিজ গৃহ নিজ ভূমি” প্রকল্প।
এই প্রকল্পে এবার বহু মানুষের নিজের জমিতে বসতবাড়ি করার সাধ সত্যি পূরণ হবে। প্রকল্পটি সরকারের অন্যান্য উন্নয়ন মূলক প্রকল্পের সাথে সামঞ্জস্য বিধানের দ্বারা সম্পন্ন করা হয়েছে। যাতে বেশি থেকে বেশি করে ভূমিহীন মানুষ এর কাছে এই সুবিধাটি পৌঁছাতে পারে।

প্রকল্পটি সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য
- পশ্চিমবঙ্গ ভূমি ও ভূমি সংস্কার এবং উদ্বাস্তু ও ত্রাণ দপ্তরের আনুকূল্যে এই প্রকল্পটি ২০১১ সালের ১৮ই অক্টোবর চালু হয়। চালু করেন মাননীয়া মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।
- একদিকে গৃহহারাদের বাসস্থান এর স্থায়করণ অন্যদিকে তাদের জীবনযাত্রার সামগ্রিক মানোন্নয়ন এই দুটি লক্ষ্য নিয়ে পথ চলা শুরু এই প্রকল্পের। তাই তাদের সমাজের মূল স্রোতে ফেরাতে প্রত্যেক পরিবার পিছু ৫ ডেসিমেল জমি বরাদ্দ করেছে সরকার।
এবার দেখে নেয়া যাক যে ঠিক কারা পেতে পারেন এই সুবিধে
- মূলত গ্রামাঞ্চলের জমিহীন ও গৃহহীন কৃষক, মৎস্যজীবী, শ্রমজীবী, কুটিরশিল্পী এবং এই সমস্ত পরিবারে যাদের সংসার এর রাশ রয়েছে মহিলাদের হাতে তারা এই প্রকল্পের সুবিধে পাবেন।
- এছাড়াও তফসিলি জাতি ও উপজাতির অন্তর্গত কৃষক, মজুর, কুটিরশিল্পী ও মৎস্যজীবী পরিবার ও এই প্রকল্পের আওতায় আসবেন।

অন্যান্য বিষয়
- পুরো ব্যাপারটির তদারকির দায়িত্বে রয়েছে বাংলার ভূমি ও ভূমি সংস্কার দপ্তর যারা রাজ্যসরকার এর পৃষ্ঠপোষকতায় প্রকল্পের ফান্ডিং করছে। তারা এটাও সুনিশ্চিত করছে যে প্রদত্ত জমিগুলির সঠিক বাজারমূল্য যাতে যাতে ঠিক করা যায়।
- যে জমিগুলি প্রদান করা হবে তার নির্দিষ্ট কিছু মাপকাঠি রয়েছে। যেমন- জমিগুলো বসবাসের অর্থাৎ গৃহস্থ মানুষের বাস করার উপযুক্ত হতে হবে। তাতে জীবনধারণের জন্য প্রয়োজনীয় ন্যূনতম পরিষেবা গুলি- রান্নাঘর, পশুপালনের জায়গা, বাগান ইত্যাদি প্রাথমিক চাহিদা পূরণ এর জায়গা রয়েছে কিনা।
- জমির জায়গাতে সুষ্ঠু নিকাশি ব্যবস্থা, পানীয় জল, আলো ইত্যাদির ব্যবস্থা দেখা হবে।
- আরো একটি গুরুত্বপূর্ণ নিরাপত্তার দিক প্রকল্পটি দিচ্ছে যা সত্যি সাধুবাদ জানানোর যোগ্য। জমির ভৌগোলিক অবস্থান এর কথা এরা বিবেচনা করে দেখেছেন।
- বাড়িটি কোনোভাবেই নদী বক্ষের কাছাকাছি অবস্থানের হলে চলবেনা এবং প্রাকৃতিক ভাবে ঝুঁকিপূর্ণ বা বিপর্যয়ের আশঙ্কা আছে এমন কোনো স্থানে মানুষদের জন্য জমি বরাদ্দ করা যাবেনা।
প্রকল্পটির অন্যতম আরেকটি দিক
- প্রকল্পটির অন্যতম আরেকটি দিক হলো এর আনুষঙ্গিক বিষয়ের প্রতি পর্যাপ্ত নজর দান।
- প্রদত্ত জমির প্রাপকরা যাতে সমাজ থেকে বিচ্ছিন্ন না অনুভব করেন সেই জন্য তারা এই সমস্ত মানুষজনের প্রতিবেশী তৈরির দিকেও দৃষ্টি দিয়েছে।
- একত্রে ১৫টি পরিবার বাস করে এরকম সন্নিহিত অঞ্চলে তারা তাদের পুনর্বাসনের উদ্যোগ নিয়েছেন।
জমি বরাদ্দ করার জন্য তিনটি ধাপে কাজ করা হবে
- স্বত্বভোগীদের নাম নথিভুক্তকরণ ও শর্ট লিস্টিং।
- জমিগ্রহনের কারণ এর যাচাই।
- স্বত্বভোগীদের জমি বিতরণ।
প্রকল্প সংক্রান্ত কিছু পরিসংখ্যান
২০১১-১২ সালে ৩১৫৭ জনকে, ২০১২-২০১৩ সালে ৬০,১৯৩ জনকে , ২০১৩-২০১৪ সালে ১০০৬৮৪০০৬৮৪ জনকে ও ২০১৪-১৫ সালে ৩২,৩৫০জনকে জমির পাট্টা প্রদানের কাজ করা হয়েছে।
মোটের ওপর তাই বলাই যায় যে প্রধানমন্ত্রী গ্রামীণ যোজনা, রাজীব গান্ধী বিদ্যুতায়ন যোজনা, ইন্দিরা আবাস যোজনার মতো প্রকল্পগুলির মতো সমাজ সংস্কারের কাজে অগ্রণী হয়ে থাকবে এই প্রকল্পটি। গৃহহীন মানুষদের আবাসের চাবিকাঠি দিয়ে ও তাদের চাষাবাদ ও ভবিষ্যত রোজগার এর পথ দেখিয়ে প্রজন্মের হাল ফেরাবার আশ্বাস বাণী অবশ্যই দিচ্ছে “নিজ গৃহ নিজ ভূমি” প্রকল্প।
মন্তব্য করুন