২০২০ সাল সত্যিই আমাদের জন্য বিষের বছর হিসেবে রয়ে গেছে। মৃত্যু, কর্মহানি, আশঙ্কা, প্রাকৃতিক দুর্যোগ, সব মিলিয়ে এমন ভয়ঙ্কর বছর সম্ভবত আমরা আর কাটাইনি। একটা বছর প্রায় ঘরে বসেই কেটে গেল আমাদের। কিন্তু এখন নতুন বছর-২০২১। পুরনো বছর থেকে নতুন বছরে আসার সময়ে নিতে হয় কিছু শপথ, ইংরেজিতে বলতে গেলে ‘রেজোলিউশন’। ২০২০ থেকে শিক্ষা নিয়ে ২০২১-এ কি কি হতে পারে সেই রেজোলিউশন!
১. প্রত্যেক সময়ের মধ্যে সুখ খুঁজে নিন
একটা ডিনার বাইরে, একটু ঘুরতে যাওয়া, একটা সিনেমা দেখে আসা- ২০২০ সালের আগে এইগুলোই ঠিক করত আমাদের সুখ। কিন্তু ২০২০ সালে তো আমরা ঘরে বসেই কাটিয়ে দিলাম। এই ঘরে বসে থাকা আমাদের কী শেখালো!
শেখালো বাইরে গিয়েই সবসময়ে সুখ খোঁজার কিচ্ছু নেই। ঘরে বসে একসঙ্গে একটা সিনেমা দেখা, রান্না করে একসঙ্গে খাওয়া, ছাদে গিয়ে বিকেলে গল্প করা, বৃষ্টির দিনে একসঙ্গে আড্ডা মারা এই সবই আপনাকে সুখ এনে দিতে পারে ঘরে বসেই। সুখের জন্য অপেক্ষা করবেন না, নিজে সুখের মুহূর্ত তৈরি করে নিন এই বছরে।
২. নিজেকে একটু গুরুত্ব দিন
এটা করতে গেলেই আমাদের মনে হয় লোকে আমাদের স্বার্থপর বলবে, বলবে আত্মকেন্দ্রিক। কিন্তু সবসময়ে অন্যের কথা ভেবে চললে আসলে আমাদের ইচ্ছেগুলোকে মেরে ফেলতে হয়। তখন আদতে আমরা নিজেরাই ভাল থাকি না। আর নিজে ভাল না থাকলে কাউকে ভাল রাখা যায় না। তাই এই বছরে নিজের ইচ্ছে, স্বপ্ন, ভাললাগা এগুলোকে একটু গুরুত্ব দিন।
৩. নিজেকে দিন এক ঘণ্টা
হ্যাঁ, নিজেকে গুরুত্ব দেওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই চলে আসে নিজেকে সময় দেওয়ার কথাও। আপনি হয়তো কাজ করেন সারাদিন, ঘর সামলান, বাচ্চা সামলান আর দিনের শেষে নিজেকে বলেন আমার তো সময়ই নেই নিজের জন্য।
আর লুকিয়ে লুকিয়ে মন খারাপ করে নিজের ছোটবেলার নাচের ছবি দেখেন, গানের প্রাইজ দেখেন বা শুকিয়ে যাওয়া রঙের প্যালেটের দিকে তাকিয়ে থাকেন। নতুন বছরে তাই নিজেকেই নিজে অজুহাত দেওয়া বন্ধ করুন আর মাত্র এক ঘণ্টা নিজের জন্য বের করুন। দেখবেন জগতটা অন্যরকম লাগছে।
৪. মেডিটেশন করুন
নিজেকে সময় দেওয়ার মধ্যে কিন্তু এটাও আসে। দিনের যে কোনও একটা সময়ে ফাঁকা শান্ত জায়গায় চুপ করে বসে মেডিটেশন করুন মাত্র দশ মিনিট। নিজের মনকে এক জায়গায় আনুন। দেখবেন এতে একাগ্রতা বাড়বে, মন শান্ত হবে, দুশ্চিন্তা কমবে। এই একাগ্রতা বাড়ার ফল আপনি আপনার সব কাজে দেখতে পাবেন।
৫. কৃতজ্ঞতাবোধ বাড়ান
এটাও কিন্তু শেখার জিনিস। আমরা সারা জীবনে নানা মানুষের থেকে নানা ভাবে উপকৃত হই। কিন্তু আমরা হয়তো সেই মানুষদের প্রতি কৃতজ্ঞ থাকি না বা তাঁদের উপকারের জন্য ধন্যবাদ জানাতে ভুলে যাই। অনেকে বলবেন ঈশ্বরকে ধন্যবাদ জানাতে রোজ। আমরা বলব শুধু ঈশ্বর কেন, মা, বাবা, শিক্ষক এদের প্রত্যেকের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানাতে শপথ নিন আজ থেকেই।
৬. শরীরের দিকে যত্ন
করোনা আমাদের বুঝিয়েছে যে ভিতর থেকে সুস্থ না থাকলে যে কোনও রোগ অনেক বেশি ক্ষতি করে আমাদের। তাই রোজ নিয়ম করে শরীরচর্চা করুন। যোগ ব্যায়াম, জিম, প্রাণায়াম এই সব করুন। আর অবশ্যই ডায়েট করুন। ঠিক পরিমাণে দরকারি সব উপাদান খাবারে রাখুন। একটা সুস্থ শরীর এই বছর নিজেকে উপহার দিন।
৭. পরিচ্ছন্নতার সঙ্গে আপোষ নয়
করোনা কিন্তু আমাদের পরিচ্ছন্নতা নিয়ে অনেক শিক্ষা দিল। তাই নিজের শরীরের পাশাপাশি নিজের ঘর পরিষ্কার রাখুন। অনেক সময়ে আমাদের ঘরে এমন জিনিস থাকে যা আমরা ব্যবহার করি না। ফেলে দিন সেই সব জিনিস। এগুলো নেগেটিভ এনার্জি বাড়ায় বাড়িতে। তাই ঘর পরিষ্কার রাখুন, আলো-বাতাস ঘরে খেলার ব্যবস্থা করুন।
৮. হবি রাখুন
নিজের একটা হবি থাকা খুব দরকার। এটা আপনার মুক্তি বলুন, রিল্যাক্স করা বলুন সবই। এই হবি আপনার মন ভাল রাখবে। মনের স্বাস্থ্য ভাল রাখা কিন্তু খুব দরকার। ২০২০ সালে ডিপ্রেশন একটা বড় জায়গা নিয়েছিল আলোচনার ক্ষেত্রে। হবি আপনাকে একাকিত্ব থেকে অনেকটা দূরে রাখবে।
৯. স্কিন কেয়ার রোজ
এটা কিন্তু কোনও লাক্সারি নয়, দরকার। কথায় বলে স্কিন হল মনের আয়না। আপনার মন ভাল কিনা, শরীর ভাল কিনা তা জানা যায় আপনার স্কিন দেখেই। তাই বেশি কিছু না হলেও রোজ ক্লিনসিং, টোনিং আর ময়েশ্চারাইজিং অবশ্যই করুন। এতে নিজেকে বেশ ফ্রেস লাগবে।
১০. মানুষের সঙ্গে থাকুন
অনেক তো হল নিজের কাজ নিয়ে ব্যস্থ থাকা। লকডাউন আমাদের বুঝিয়েছে মানুষের সান্নিধ্য আমাদের কতটা দরকার। মানুষের সান্নিধ্য আমাদের ভাল রাখে, সুস্থ রাখে। তাই মানুষের সঙ্গে মিশুন, হাসুন, গল্প করুন।
এই দশটি সঙ্কল্প করুন নিজের কাছে এই বছরে। দেখবেন বছরের শেষে আপনার এই বছর রঙিন হয়ে থাকবে।
মন্তব্য করুন