সংসার সুখের হয় রমণীর গুণে- কথাটি সেই সুপ্রাচীনকাল থেকেই প্রচলিত। তবে আজকের দিনে সেই বিষয়ে বিতর্কের অবকাশ আছে বৈকি! কারণ আজকের দিনে স্বামী-স্ত্রী উভয়ের গুণে একটা সংসার সুখের হয়ে থাকে।
স্বামীর সঙ্গে যাতে সুখে সংসার করতে পারে মেয়ে,বিয়ের আগে মেয়েকে কিছু বিশেষ পরামর্শ দেওয়ার ভার বর্তায় মেয়ের মায়ের ওপর। জেনে নিন এই ক্ষেত্রে একজন মায়ের কী কী পরামর্শ দেওয়া উচিত।
১) কম্প্রোমাইজ করা মানেই হেরে যাওয়া নয়
প্রাক্তন ছবির এই বিখ্যাত সংলাপ নাড়িয়ে দিয়েছিল গোটা সমাজকে। সত্যি এই সামান্য কথার মধ্যেই কিন্তু লুকিয়ে রয়েছে এক গভীর সত্য। কোনও কিছু ভালোর জন্য যদি নতি স্বীকার করতে হয়, তাহলে তাতে কোনও খেদ নেই।
বরং নিজের স্বার্থ চরিতার্থ করতে গিয়েই যত অঘটন ঘটে। তাই ক্ষেত্র বিশেষে বৃহত্তর স্বার্থের জন্য যদি কম্প্রোমাইজ করার প্রয়োজন পড়ে তাহলে তা করতে শেখানোর পাঠ একটা মেয়েকে দিতে পারে তার মা-ই।
২) পরিবার বলতে শুধু নিজের বাবা-মা নয়

বিয়ের আগে একজন মেয়ের জীবনে পরিবার বলতে বাবা-মা। কিন্তু বিয়ের পর সেই পরিবারের গণ্ডিটা অনেকটা বেড়ে যায়। স্বামীর বাবা-মা, তাঁর পরিবার পরিজনও সেই বৃহত্তর পরিবারে সামিল হয়।
কিন্তু আজকের নিউক্লিয়ার পরিবারের সবথেকে বড় সমস্যা হল একটা শিশু যখন ছোট থেকে একা একা বড় হয়, তখন একটা সময় আচমকা কোনও যৌথ পরিবারে গিয়ে নিজেকে মানিয়ে নিতে অসুবিধা বোধ করে। আর এই সময়েই একজন মায়ের ভুমিকা খুবই গুরুত্বপূর্ণ।
মেয়েকে বোঝানো উচিত যে, নিজের পরিবারের মতো করেই বরের পরিবারকেও তাঁর আপন করে নেওয়া উচিত। এতে সময় লাগতে পারে, কিন্তু অসম্ভব নয়।
৩) প্রয়োজনে ত্যাগ স্বীকার করা
অনেকসময় এমন হয় যে, বাড়ির বউ-এর ইচ্ছা গুরুত্ব পায় না। বিশেষত বিয়ের পর পর এমন ঘটনা ঘটলে খুব স্বাভাবিকভাবেই নতুন বউয়ের বিষয়টি পছন্দ না হওয়াটাই স্বাভাবিক।
সেক্ষেত্রে একজন মায়ের উচিত তাঁর মেয়েকে বোঝানো কিছু কিছু ক্ষেত্রে ত্যাগ স্বীকার করা ভালো। কারণ তাতে সম্মানহানি তো হয়ই না, বরং মাথা উঁচু করে বাঁচা যায়। তবে হ্যাঁ নিজের ইচ্ছেপুরনের বা স্বপ্নপূরণের বিষয় থাকলে তাহলে মায়ের মেয়েকে সম্পূর্ণ সাপোর্ট করা উচিত। মেয়ের স্বপ্নকেপূরণ করতে মার জামাই বা তার পরিবারের সাথে কথা বলে সমাধান করা জরুরি।
৪) বিয়ে মানেই সব সমস্যার সমাধান এটা ভাবা ভুল
অনেকেই মনে মনে ভাবেন বিয়ে হয়ে যাচ্ছেই মানে যাবতীয় সমস্যার অবসান। কিন্তু মনে রাখতে হবে সমস্যা হল জীবনের সঙ্গী, কারণ সমস্যা না থাকলে আনন্দের স্বাদটা অনুভব করা যায় না।
তাই বিয়ের আগে একজন মা তাঁর মেয়েকে অবশ্যই বোঝান যে সমস্যা নিয়েই জীবনের পথে চলতে হবে তাকে। বরং সমস্যায় বিচলিত না হয়ে নিজের জীবন সঙ্গীকে সাথে নিয়ে কীভাবে এগিয়ে চলতে হবে,ক সেই শিক্ষাই বিয়ের আগে নিজের মেয়েকে দেওয়া উচিত এক মায়ের।
৫) নিজেদের সমস্যা নিজেরা মেটাও

অনেকসময় এমন হয় যে বিয়ের পর স্বামী-স্ত্রীর সম্পর্কে কোনও ছোটখাটো অশান্তি দেখা দিলে দুই পরিবারের মা-বাবাই ছেলে-মেয়েদের মধ্যে ঢুকে পড়েন। এতে করে অশান্তি না কমে অনেক বড় আকার ধারণ করতে পারে।
তাই এক্ষেত্রে একজন মায়ের উচিত নিজের মেয়েকে বোঝানো কোনও অশান্তির আবহ তৈরি হলে তাকেই নিজের স্বামীর সঙ্গে পরামর্শ করে মিটিয়ে নেওয়া উচিত।
কথায় কথায় বাবা-মাকেও নিজেদের ব্যক্তিগত সমস্যায় জড়িত করা ঠিক নয়। আর মেয়েকেও বুঝতে হবে যে বাবা-মায়ের বয়স হচ্ছে।
৬) সুখী দাম্পত্যের মূল চাবিকাঠি হল কম আশা করা
এক্সপেকটেশন থাকবে, কিন্তু চাহিদা-আশা-আকাঙ্খা যতই বাড়তে থাকে, সেগুলি পূরণ না হলে রাগও বাড়তে থাকে। আর অহেতুল রাগ-জেদের বশবর্তী হয়ে স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে প্রেমের সম্পর্ক তিক্ততায় পরিণত হতে পারে।
বিশেষত আজকের প্রজন্মের দম্পতির মধ্যে এই সমস্যাটা খুবই গুরুতর। বাড়তে থাকা আশা-আকাঙ্খার ওপর লাগাম টানা উচিত। আপনার স্বামী আপনার আশা-আকাঙ্খা পূরণ করতে কতখানি সক্ষম সেই দিকটাও ভেবে দেখা উচিত।
আপনি তার ওপর কিছু চাপিয়ে দিচ্ছেন না তো। দিনের পর দিন এই সুক্ষ সুক্ষ বিষয়গুলি চলতে থাকলে সম্পর্ক থেকে হারিয়ে যেতে পারে প্রাণের টান। আর এই সাধারণ ফর্মুলাটি একটা মেয়েকে বোঝাতে পারে কেবল তার মা-ই। কারণ মনে রাখতে হবে সম্পর্ক থেকে যত কম আশা করবেন ততই ভালো থাকবেন।
মন্তব্য করুন