কিছুদিন আগেই মুক্তি পেয়েছে ‘মোহমায়া’ ওয়েব সিরিজের চ্যাপটার২। পরিচালক কমলেশ্বর মুখোপাধ্যায় সাইকোলজিক্যাল থ্রিলার দিয়ে ওয়েব দুনিয়ায় শুরু করেন যাত্রা। এই সিরিজের চিত্রনাট্য লিখেছেন সাহানা দত্ত। সম্প্রতি মুক্তি পেয়েছে এর চ্যাপটার ২। ফের আবারও একবার স্বস্তিকা মুখোপাধ্যায় ও অনন্যা চট্টোপাধ্যায় একসাথে। প্রথম সিজনেরই বেশ কিছু বাকি থাকা পর্ব মুক্তি পেল। বাকি থাকা রহস্যের কি সমাধান হল এবারের পর্বে?
প্রথম পর্বে
আগের পর্ব গুলিতে দেখানো হয়েছিল অরুনার সংসারে পেইং গেস্ট হিসাবে আসে ঋষি। এবং ঋষির ছোটবেলাটা একটু অন্যরকম। সে তার মাকে হারায় কিন্তু মাকে কিছুতেই ভুলতে পারেনা। সবসময় যেন সে দেখতে পায় তার মাকে। কিন্তু অরুনার বাড়িতে এসে অরুনার মায়াভরা রূপ দেখে সে অরুনার মধ্যে তার মাকে দেখতে পায় তাকে মা হিসাবে দেখতে চায়। কিন্তু এই ব্যাপারটা বাড়ির বাকিদের ভালো লাগেনা। তাদের ঋষিকে একটু অন্যরকম লাগে। এভাবেই এগোতে থাকে গল্প।
দ্বিতীয় পর্বে
দ্বিতীয় পর্বে দেখা যাচ্ছে সে অরুনার সাথে আরও বেশী জড়িয়ে পড়ে। তার মৃত মা সবসময় তার ভাবনায় থাকলেও, সে রক্ত মাংসের একজন মা চায় এবং অরুনাকে সেই মা হিসাবে পেতে চায়। কিন্তু এই ব্যাপারটা বাড়িতে যাদের পছন্দ নয়, তাদের ঋষি তার পথের কাঁটা ভাবে। সে চায় না তার আর অরুনার মাঝে কেউ আসুক। সে অদ্ভুত আচরন করতে থাকে। এছাড়াও তার যে একটা অন্ধকার অতীত আছে সেটা প্রথম সিজনে বোঝা গিয়েছিল দ্বিতীয় সিজনে সেটা আরও ভালো ভাবে দেখানো হয়েছে। মানে ঋষি যখন ছোট ছিল কি ঘটেছিল তার সাথে, তার মায়ের সম্পর্কে দেখানো হয়েছে।
এবং দ্বিতীয় পর্বের বেশীরভাগ এপিসোডেই দেখানো হয়েছে সে অরুনার সাথে এতোটাই জড়িয়ে পড়ে যে, যেই তার আর অরুনার মাঝে আসছে এবং ঋষির সত্য খুঁজে পেতে চাইছে তাকেই ঋষি তার রাস্তা থেকে সরিয়ে দিতে থাকে। তার নিজের সত্য লুকোতে প্রথমেই সে খুন করে অরুনার পুত্রের বান্ধবী বৈশালীকে।
গল্পে এলো অরুনার বড় ছেলে
এরপর গল্পে আসে অরুনার বড় ছেলে। প্রথম পর্বে যাকে দেখানো হয়েছিল সে বিদেশে থাকে। বিদেশ থেকে ফিরেই তার সাথে তার মায়ের দ্বন্দ্ব হতে থাকে। এবং ঋষি ও অরুনার মধ্যেও চলে আসে সে। যার ফল খুন হয় অরুনার বড় ছেলে। সমানতালে দেখানো হয় ঋষির ছোটবেলা এবং তার মৃত মাকে। এইভাবেই এগোতে থাকে গল্প।
প্রত্যাশা কি মিটল?
স্বস্তিকা মুখোপাধ্যায় ও অনন্যা চট্টোপাধ্যায়ের মত শক্তিশালী কাস্টিং থাকা সত্ত্বেও চ্যাপটার ২ কতটা প্রত্যাশা পূরণ হল সেই বিষয়ে সন্দেহ থেকেই যাচ্ছে। কারণ ট্রেলার দেখে যা আশা ছিল সেই প্রত্যাশা তো পূরণ হলই না, বরং এই পর্ব যেন আরও জটিল আরও বেশী নাটকীয়।
কিছু অতি নাটকীয় দৃশ্য দেখে মনে হতেই পারে বাংলা সিরিয়ালের সাথে এর কোন তফাৎ নেই। ওয়েব সিরিজকেও সিরিয়ালের মত করে তোলা হয় তাহলে আলাদা করে ওয়েব সিরিজ দেখার মানে নেই। এতো নাটকীয় করার কোন দরকার ছিল বলে মনে হল না।
যুক্তিগ্রাহ্য হল না
এছাড়াও কিছু দৃশ্য, কিছু বিষয় যুক্তিগ্রাহ্য লাগেনি। যেমন একটি ছেলে বাইরে থেকে এসেও আরুনার কাছে এতো প্রিয় হয়ে গেল বাড়ির বাকিদের ঋষির নানা ব্যবহারে অস্বাভাবিক লাগলে অরুনাকে বারংবার বোঝালেও সে কিছুই বুঝতে পারছেনা। এছাড়াও ফোনে স্ক্রীন লক না থাকা এইসব বেশ কিছু বিষয় আজকের দিনে একদমই যুক্তি গ্রাহ্য নয়।
সিরিজ এগিয়েছেন দুই অভিনেত্রী
এইসব ফাঁকফোকর সত্ত্বেও এই সিরিজ এগিয়ে নিয়ে গেছেন একমাত্র দুজন অভিনেত্রী। অবশ্যই স্বস্তিকা মুখোপাধ্যায় ও অনন্যা চট্টোপাধ্যায়। এই দুজনের জন্যই তবুও একটু দেখা যেতে পারে। এরা দুজন কত বড়মাপের অভিনেত্রী এই ওয়েব সিরিজটি দেখলেই বোঝা যায়। এই চিত্রনাট্যেও এরা দুজন সমানতালে চেষ্টা করে গেছেন। যতবারই পর্দায় স্বস্তিকা মুখোপাধ্যায় এসেছেন তার থেকে চোখ ফেরানো দায়।
তেমনই অনন্যা চট্টোপাধ্যায় স্বল্প পরিসরে তিনি অভিনয়ে সকল সুযোগকে কাজে লাগিয়েছেন। এছাড়াও ভালো লেগেছে অরুনার স্বামীর চরিত্রে সুজন মুখোপাধ্যায়কেও। এই তিনজনের অভিনয় ছাড়া বাকিদের অভিনয় নিয়ে বলার মত কিছু নেই। ঋষি আরেকটু ভালনারেবল হলে ভালো লাগতো। এছাড়াও ঋষির ক্লোজআপ শট বারবার ব্যবহার করা হয়েছে যেটা একটু একঘেয়ে।
সবশেষে চ্যাপটার৩ এরও আভাস রয়েছে। এবারের পর্বে অরুনার ছোট ছেলে মিকিকে দেখানো হয়নি। পরের চ্যাপটারে হয়তো সে ফিরবে। সে ফিরে কি উদ্ধার করতে পারবে অরুনা ও তার পরিবারকে? অরুনা কি বুঝতে পারবে ঋষির গোপন সত্যি? সেই উত্তরের জন্য আপাতত অপেক্ষা করতে হবে পরের পর্বের জন্য।
মন্তব্য করুন