“ওরে নবমী-নিশি, না হইও রে অবসান”, এটাই তো আমাদের সবার মনের একান্ত কথা হয়ে থাকে নবমীর দিনে। সারা বছর ধরে যে উৎসবের জন্য আমরা অপেক্ষা করে থাকি, তার বিদায় ঘন্টাটা বাজিয়ে দেয় এই নবমী নিশি। তাই নবমী নিশিকে আমরা সবাই ধরে রাখতে আকুতি জানাই। কিন্তু, তাও নবমী পূজার গুরুত্ব তো আছেই, আছে সেই পুজো করার পর ফলের আকাঙ্ক্ষাও। আসুন তাহলে জেনে নেই নবমী পুজোর মাহাত্ম্য ও বিধি।
মহানবমীর বিশেষ গুরুত্ব
আমাদের সমস্ত তিথি-নক্ষত্র হিসাব করা হয় চন্দ্রের অবস্থান দেখে। সেই অনুযায়ী মাসের তিরিশ দিনকে শুক্ল ও কৃষ্ণ এই দুই ভাগে ভাগ করা হয়েছে। মহানবমী এই শুক্লা নবমী যাকে শাস্ত্রে বলে ‘উগ্রপদা’। নবমী তিথিতে মানুষের নাকি উত্তেজনা বাড়ে অর্থাৎ মানুষের মধ্যে অপরাধের প্রবণতা বাড়ে, অশুভত্বের দিকে মানুষ নবমীতে বেশী ঝুঁকে যায়। কিন্তু, এই অশুভত্বকে বিনাশ করে শুভশক্তির জয়ের জন্য আমরা সেই দেবী দুর্গারই শরণ নেই। তাই এই মহানবমী তিথিকেই অন্য নবমী তিথির মধ্যে শুভ ধরা হয়। জপ, তপ, উপাসনা এইসব তাই এই তিথিতে বেশি করে করতে বলা হয়।
পূজা বিধি
এমনিতে তো দুর্গা পূজা বিধি খুবই জটিল। কিন্তু, তার খানিকটা এখানে বলা হল।
সন্ধিপুজো
নবমী তিথি শুরুই হয় সন্ধিপুজো দিয়ে। আমরা সবাই জানি যে সন্ধিপুজো হয় অষ্টমী তিথির শেষ ২৪ মিনিট ও নবমীর সূচনার প্রথম ২৪ মিনিট জুড়ে। মূলত দেবী চামুন্ডার পূজা হয় এই সময়ে। একশো আটটি মাটির প্রদীপ জ্বালিয়ে ও একশো আটটি পদ্মফুল নিবেদন করা হয় দেবীর চরণে। নিবেদন করা হয় রান্না করা ও কাঁচা সবজি, ফল ইত্যাদিও।
অঞ্জলি
অষ্টমীতেই মূলত অঞ্জলি দেওয়া হয়, সেটাই প্রশস্ত। কিন্তু, নবমীতেও অঞ্জলি দেওয়া হয়ে থাকে। আসলে অষ্টমী এই ক’দিনের তুঙ্গ মূহুর্ত বলেই এই দিনে সাধারণত দেওয়া হয় অঞ্জলি। নবমীর অঞ্জলির আলাদা কোনো নিয়ম নেই, তা অষ্টমীরই মতো। তিনবার পুষ্পাঞ্জলি দিয়ে প্রণাম করতে হয়, ‘ওঁ সর্বমঙ্গল মঙ্গল্যে শিবে সর্বার্থসাধিকে শরণ্যে ত্রম্ব্যকে গৌরী নারায়ণী নমস্তুতে’ ইত্যাদি মন্ত্রে।
হোম-যজ্ঞ
নবমীর বিশেষত্ব যদি কিছু থাকে তা হল এই হোম-যজ্ঞ অনুষ্ঠানের মধ্যে। নবমীতেই মূলত হোম হয়ে থাকে, ব্যতিক্রমী নিয়মও থাকতে পারে। মূলত আঠাশটা বা একশো আটটা নিখুঁত বেলপাতা লাগে। বালি দিয়ে যজ্ঞের মঞ্চ বানিয়ে বেলকাঠ ঠিকভাবে নিয়মমতো সাজিয়ে পাটকাঠি দিয়ে আগুন ধরিয়ে ঘি’তে চুবিয়ে বেলপাতাগুলো নিবেদন করা হয়। তারপর সবার শেষে একটি কলা চেলীতে বেধে পান নিয়ে সেটা ঘি’তে চুবিয়ে পূর্ণাহুতি দেওয়া হয়। তারপর তার মধ্যে দই দেওয়া হয় ও দুধ দিয়ে আগুন নেভানো হয়।
আপনাদের সামনে এই মোটামুটি নবমী তিথি নিয়ে বললাম। কিন্তু যাই বলুন, আমরা যতই নবমী তিথিকে বিদায় দিতে না চাইনা কেন, সে তো যাবেই। শুধু আমাদের মন বলে যাবে, “ যেয়ো না রজনি, আজি লয়ে তারাদলে”।
মন্তব্য করুন